ডেবডেনের টাঁকশালে নোট ছাপায় ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড। ২০০৬ সালে সেই নোট বিলির জন্য পাঁচটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয় তারা। পাঁচটি সংস্থার মধ্যে একটি ছিল সিকিউরিটাস। নতুন তৈরি হওয়া নোটগুলি টাঁকশাল থেকে এনে টনব্রিজের ডিপোতে রাখত সংস্থাটি। সেই ডিপো থেকেই চুরি গিয়েছিল বিপুল পরিমাণ নোট, যার বেশির ভাগের হদিস আজও মেলেনি।
ওই ডিপোর ম্যানেজার ছিলেন কলিন ডিক্সন। স্ত্রী এবং এক শিশুসন্তানকে নিয়ে হার্ন বেতে থাকতেন তিনি। চাকরির খাতিরেই কোথায় থাকতেন, তা কাউকে বলা বারণ ছিল কলিনের। এক এক দিন এক এক রাস্তা দিয়ে কাজে যেতেন, যাতে কেউ ধাওয়া করতে না পারেন। দফতরের তরফে নির্দেশ ছিল, কাজে যাওয়ার সময় কখনও পুলিশ তাঁর পথ আটকালে যেন গাড়ি থেকে না নামেন কলিন। বদলে একটি চিরকুটে নিজের কাজের বর্ণনা দিয়ে যেন তা তুলে দেন পুলিশের হাতে। এর পরেও কিছু প্রয়োজন হলে তিনি যেন সরাসরি হাজিরা দেন থানায়।
তখন কলিনের সামনে অন্য কোনও পথ ছিল না। তাঁকে দুষ্কৃতীরা ভয় দেখিয়েছিলেন, কথা না মানলে স্ত্রী এবং সন্তানকে খুন করবেন। পরের দিন, ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কলিনকে নিয়ে সিকিউরিটাস ডিপোতে যান এক দুষ্কৃতী। পরেছিলেন পুলিশের উর্দি। কলিনের সঙ্গে ওই ‘পুলিশ আধিকারিক’-কে দেখে আপত্তি জানাননি নিরাপত্তা রক্ষীরা। এর পর দুষ্কৃতীরা সদলবলে ঢুকে পড়েন ডিপোতে।
কলিনদের পিছু পিছু ডিপোতে ঢুকে পড়েন দুষ্কৃতী দলের বাকিরাও। তাঁদের সঙ্গে ছিল একে-৪৭ রাইফেল, হ্যান্ডগান, শটগান। কলিন, তাঁর পরিবার আর বাকি কর্মীদের ভয় দেখিয়ে টাকা রাখার খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন দুষ্কৃতীরা। দু’ঘণ্টা ধরে চলেছিল লুট। এত নোট লুট করেছিলেন দুষ্কৃতীরা যে, তা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেননি। ১৫৪ মিলিয়ন পাউন্ড ফেলে রেখেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য ১,৫২৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকারও বেশি।
এক কর্মীর কাছে খাঁচার চাবি ছিল। তিনি সেই খাঁচা খুলে বার হন। এর পর বাকিদের মুক্ত করেন। খবর দেন থানায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। অভিযুক্তদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে ২০ লক্ষ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হবে, ঘোষণা করেছিল পুলিশ। ডিপোর কর্মীদের জেরা শুরু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে তল্লাশি অভিযান চালায় কেন্ট পুলিশ। ওয়েলিংয়ের একটি বাড়ি থেকে মিলেছিল ৯০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। লি রুসা নামে এক ব্যক্তির আত্মীয়ের গ্যারাজে তল্লাশি চালিয়ে মিলেছিল ৮০ লক্ষ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৬৬ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই লি রুসাও অন্যতম অভিযুক্ত। বাকি টাকা কোথায়, সেই হিসাব আজও মেলেনি।
হায়সেনাজের বন্ধু জেটমির বাকপাপা বহু মাস ধরে রেইকি করেছিলেন ডিপোর ম্যানেজার কলিনকে। তাঁর বাড়ির উপরও নজর রাখতেন। এই বাকপাপা আদতে আলবানিয়ান। টনব্রিজেই থাকতেন। দরজা সারাতেন। গাঁজা বিক্রি করে বাড়তি রোজগারও করতেন। তবে ওই ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণকারী অনেকের খোঁজ আজও মেলেনি। ধৃতদের জেরা করেও লাভ হয়নি। ফলে এই ঘটনার অনেকাংশই এখনও রহস্যাবৃত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy