UK should relinquish UNSC seat to India as it is no longer a great power, says former Singaporean diplomat dgtl
United Kingdom
সরে যাক ব্রিটেন! রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের জন্য জায়গা ছাড়তে বলছেন রাষ্ট্রপুঞ্জেরই প্রাক্তন প্রধান
সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন কূটনীতিবিদের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি আন্তর্জাতিক স্তরে দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্রিটেন? সেই জায়গায় অন্যতম শক্তিধর হিসাবে উঠে আসছে ভারত, যার উপর এককালে প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করেছিল ব্রিটেন!
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ বা ইউএনএসসির স্থায়ী সদস্যের আসন ছেড়ে দেওয়া উচিত ব্রিটেনের। সেই জায়গায় বসা উচিত ভারতের! তেমনটাই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রাক্তন প্রধান তথা সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন কূটনীতিবিদ কিশোর মাহবুবানি।
০২২১
কিশোরের এই মন্তব্যে হইচই পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি আন্তর্জাতিক স্তরে দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্রিটেন? সেই জায়গায় অন্যতম শক্তিধর হিসাবে উঠে আসছে ভারত, যার উপর এককালে প্রায় ২০০ বছর রাজত্ব করেছিল ব্রিটেন!
০৩২১
পুরো বিষয়টি বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ বা ইউএনএসসি কী। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ হল রাষ্ট্রপুঞ্জের ছ’টি প্রধান শাখার একটি।
০৪২১
আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা, নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দেওয়া ইউএনএসসির মূল কাজ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে যে কোনও পরিবর্তন অনুমোদন করার ক্ষমতাও রয়েছে এই পরিষদের হাতে।
০৫২১
ইউএনএসসি হল রাষ্ট্রপুঞ্জের একমাত্র শাখা, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলির উপর বাধ্যতামূলক নিয়ম জারি করার ক্ষমতা রাখে।
০৬২১
রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো বিশ্বশান্তি বজায় রাখার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৈরি করা হয়েছিল ইউএনএসসি। ১৯৪৬ সালের ১৭ জানুয়ারি এই সংস্থার প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
০৭২১
কিন্তু পরবর্তী দশকগুলিতে আমেরিকা এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে এই সংস্থা কার্যত পঙ্গু হয়ে যায়। যদিও কোরিয়ান যুদ্ধ এবং কঙ্গো সঙ্কটে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং সাইপ্রাস, পশ্চিম নিউ গিনি ও সিনাই উপদ্বীপে শান্তিরক্ষা অভিযান চালিয়েছিল তারা।
০৮২১
তবে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইউএনএসসির গুরুত্ব নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়। কুয়েত, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, রোয়ান্ডা, সোমালিয়া, এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে প্রধান সামরিক ও শান্তিরক্ষা অভিযানের দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ।
০৯২১
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ ১৫টি সদস্য দেশ নিয়ে তৈরি। যার মধ্যে পাঁচ স্থায়ী সদস্য এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য। অস্থায়ী সদস্যেরা আঞ্চলিক ভিত্তিতে দু’বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হয়। প্রতি মাসে সদস্য দেশগুলির মধ্যে থেকেই কাউকে সংস্থার প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়া হয়।
১০২১
ইউএনএসসির পাঁচ স্থায়ী সদস্য হল— চিন, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকা। স্থায়ী সদস্যেরা রাষ্ট্রপুঞ্জে নতুন সদস্য দেশের প্রবেশ বা সেক্রেটারি জেনারেল পদের জন্য কাউকে মনোনীত করা-সহ নিরাপত্তা পরিষদের যে কোনও মূল প্রস্তাবকে ভেটো (বাতিল করতে বা আপত্তি জানাতে পারে) দিতে পারে।
১১২১
ইউএনএসসির জন্মলগ্ন থেকেই সংস্থার স্থায়ী সদস্য হিসাবে রয়েছে ব্রিটেন। সেই ব্রিটেনেরই এ বার নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের পদ ছাড়া উচিত বলে মন্তব্য করলেন ইউএনএসসির প্রাক্তন প্রধান তথা সিঙ্গাপুরের প্রাক্তন কূটনীতিবিদ কিশোর।
১২২১
১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের সিঙ্গাপুরের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন কিশোর। এর পর আবার ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জে সিঙ্গাপুরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইউএনএসসির প্রসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৩২১
কিন্তু কেন ব্রিটেনকে ইউএনএসসির স্থায়ী সদস্যের পদ ভারতের জন্য খালি করে দিতে বলছেন প্রাক্তন কূটনীতিবিদ?
১৪২১
প্রকৃতপক্ষে কিশোর রাষ্ট্রপুঞ্জের কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এবং নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে ভারতের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
১৫২১
কিশোরের যুক্তি, আমেরিকা এবং চিনের পরে তৃতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হিসাবে ব্রিটেনের পরিবর্তে ভারতের বসা উচিত ইউএনএসসির স্থায়ী সদস্যপদে। তিনি দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক স্তরে আর আগের মতো গুরুত্ব বহন করে না ব্রিটেন।
১৬২১
একই সঙ্গে, ব্রিটেনের অর্থনীতির যে ভাবে পতন হচ্ছে, তাতে সে দেশের ইউএনএসসির স্থায়ী সদস্যের পদ ধরে রাখা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন কিশোর।
১৭২১
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিশোর বলেন, ‘‘এতে কোনও সন্দেহই নেয় যে, আমেরিকা এবং চিনের পরে ভারত আজ বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী দেশ। এবং সেই ‘গ্রেট ব্রিটেন’ আর ‘গ্রেট’ নয়।’’
১৮২১
কিশোর যোগ করেছেন, কী ফল হতে পারে এই ভয়ে ব্রিটেন ভেটো প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। একই কাজ করছে ফ্রান্স। কিন্তু ফ্রান্স এই মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বেসর্বা। আর সেই কারণেই তাদের রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে থাকা উচিত, ব্রিটেনের নয়। আর সেই কারণেই ব্রিটেনের উচিত নিজের পদ ভারতকে ছেড়ে দেওয়া।
১৯২১
রাষ্ট্রপুঞ্জে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করার সময় কিশোর এ-ও নজরে এনেছেন যে, রাষ্ট্রপুঞ্জ তৈরির সময় বলা হয়েছিল যে, বিভিন্ন সময়ে শক্তিধর দেশগুলিই বিশ্ব জুড়ে শান্তিরক্ষার কাজ করবে।
২০২১
কিশোর বলেছেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলি বিশ্বাস করেছিল যে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বর্তমান শক্তিধরেরা, অতীতের শক্তিধরেরা নয়। দুর্ভাগ্যবশত, তারা সময়ে সময়ে পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা তৈরি করেনি।’’
২১২১
পাশাপাশি কিশোরও এ-ও জানিয়েছেন, ব্রিটেন যদি নিজের জায়গা ভারতকে ছেড়ে দেয়, তা হলে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে তারা।