Tutankhamun's mysterious tomb in Egypt all you need to know about his curse dgtl
Tutankhamun
সৎবোনের সঙ্গে বিয়ে, ‘অভিশপ্ত’ মমি ঘিরে ‘অলৌকিক’ ঘটনা, রহস্যের নাম তুতানখামেন
মাত্র ৯ বছর বয়সে ফারাও হয়েছিলেন তুতানখামেন। ১০ বছর রাজত্ব করার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি। কিন্তু কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, সে নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা
কায়রোশেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৫২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
মিশরের ইতিহাসে সম্রাটদের বিচিত্র কাহিনি এখনও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আর এর মধ্যে অন্যতম হলেন প্রাচীন মিশরের সম্রাট বা ফারাও তুতানখামেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনও রহস্যাবৃত। বা বলা ভাল, তাঁর মমিকে ঘিরে অভিশাপের কাহিনি এবং তাঁর সমাধি থেকে প্রাপ্ত প্রবল দামি সব সামগ্রীর কথা আজও রোমাঞ্চিত করে অগণিত মানুষকে। ১০০ বছর আগে এই মমির হদিস পাওয়া গিয়েছিল। যা এখনও চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
০২২০
মাত্র ৯ বছর বয়সে ফারাও হয়েছিলেন তুতানখামেন। ১০ বছর রাজত্ব করার পর মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি। কিন্তু কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, সে নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে।
০৩২০
তুতানখামেনের মৃত্যুর পর মিশরের তৎকালীন রীতি মেনে তাঁকে মমি করা হয়। ১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর মিশরের ‘ভ্যালি অফ কিংস’ -এর রাজা ষষ্ঠ রামেসিসের সমাধির প্রবেশদ্বারের কাছে তুতানখামেনের মমির হদিস পান ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার।
০৪২০
সেই অভিযানে পাথরের তৈরি একটি বাক্স খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে মোট তিনটি শবাধার রাখা ছিল। তিনটি শবাধারের একটি ছিল পুরু সোনার তৈরি। ওই কফিনের মধ্যেই পাওয়া যায় তুতেনখামেনের প্রায় তিন হাজার বছর আগেকার মমি।
০৫২০
এর পর ওই মমি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে নানা গবেষণা চলেছে। এক সময় দাবি করা হয় যে, এক্স-রে রিপোর্টে তুতানখামেনের মাথার পিছনের দিকে আঘাত ও রক্ত জমাট বাঁধার চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হয় যে, তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।
০৬২০
কিন্তু পরে ডিএনএ পরীক্ষার ফলে আবার জানা যায় যে, মস্তিষ্কে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর সংক্রমণেই অকালমৃত্যু হয়েছিল কিশোর ফারাওয়ের। কোনও কোনও গবেষণায় আবার দাবি করা হয়েছে, মিশরের ওই ফারাওয়ের রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব ছিল। জিনগত সমস্যার কারণে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
০৭২০
আবার অনেকে দাবি করেছেন যে, ক্ষমতা দখলের লোভে তাঁর স্ত্রী আনেখসেনামুনই নাকি এক রথচালককে দিয়ে তাঁকে হত্যা করান।
০৮২০
তুতানখামেনের মৃত্যু নিয়ে যেমন নানা গল্পকথা রয়েছে, তেমনই তাঁর তথাকথিত অভিশাপ নিয়েও বিভিন্ন রটনা শোনা যায়। নানা অলৌকিক ঘটনার কাহিনিও এই সুবাদে বাজারে চলে।
০৯২০
ফারাওদের রাজমুকুটে ফণা তোলা গোখরো সাপের প্রতিকৃতি থাকত। শোনা গিয়েছিল, যেদিন তুতানখামেনের সমাধি উন্মুক্ত করা হয়, সে দিন ঘরে ফিরে কার্টার দেখেন যে, একটি মিশরীয় গোখরো তাঁর পোষা হলুদ ক্যানারি পাখিটিকে গিলে খাচ্ছে।
১০২০
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুতানখামেনের সমাধির খোঁজে যখন আবার অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন কার্টার, সে সময় খননকার্যের জন্য অর্থসাহায্য করেছিলেন ব্রিটিশ ধনকুবের লর্ড কার্নারভন। কথিত আছে, দাড়ি কাটতে গিয়ে কার্নারভনের গাল কেটে গিয়েছিল। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এর জেরেই তিনি সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালের ৫ এপ্রিল কায়রোতে তাঁর মৃত্যু হয়।
১১২০
একই দিনে লন্ডনে তাঁর পোষা কুকুরটিরও মৃত্যু হয়। একই দিনে এই দুই মৃত্যু ঘিরে অলৌকিক কাহিনি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। অনেকে বলেন, কার্নারভন নাকি মৃত্যুর আগের দিন কিছু অতিপ্রাকৃত বিষয় লক্ষ করেছিলেন।
১২২০
তুতানখামেনের মমি উদ্ধারে খননকাজের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের পরিবারের কারও কিছু অঘটন ঘটলে মমির অভিশাপের গল্প জুড়ে দেওয়া হত। কার্নারভনের এক সৎভাইয়ের অন্ধ হয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও মমির অভিশাপকেই দায়ী করা হয়।
১৩২০
আবার কার্টারের এক সহযোগী আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় মারা যান, সেটাও নাকি মমির অভিশাপের কারণে। যদিও কার্টার সুস্থ শরীরে ৬৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।
১৪২০
শোনা যায়, তুতানখামেনের ছিলেন প্রভাবশালী ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ বা আখেনাটেনের পুত্র তথা জামাই। আখেননাতেনের অন্যতমা স্ত্রী ছিলেন সুন্দরী নেফারতিতি। তাঁদের পুত্রসন্তান ছিল না। শুধু মাত্র সাত কন্যা ছিল। তাঁদেরই এক কন্যার সঙ্গে তুতানখামেনের বিয়ে হয়। তবে তুতেনখামেনের পিতা ঠিক কে, তা আজও জানা যায় না।
১৫২০
তুতানখামেনের বাবা ও মা ভাইবোন ছিলেন। বাবা ও মায়ের দেখানো পথ অনুসরণ করেছিলেন তুতানখামেনও। সৎবোন আনেখসেনামুনকেই বিয়ে করেছিলেন তিনি। সেটাই ছিল সেই সময়কার মিশরীয় রাজবংশের রীতি।
১৬২০
মিশরের ১৮তম রাজবংশের সবচেয়ে কম দিনের ফারাও ছিলেন তুতানখামেন। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৪১ অব্দে সম্ভবত আমরানাতে তাঁর জন্ম।
১৭২০
তুতানখামেনের সমাধি থেকে বিপুল ঐশ্বর্যের সম্ভার পাওয়া গিয়েছিল। মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে ছোট এই সমাধির মধ্য থেকে পাওয়া গিয়েছে ৫৩৯৮টি অপরূপ সামগ্রী।
১৮২০
বহুমূল্য রত্নরাজি ছাড়াও উল্কাপিণ্ডের ধাতু দিয়ে নির্মিত সুদৃশ্য ছোরা, হাতির দাঁতের হাতল লাগানো উটপাখির পালকের হাতপাখাও পাওয়া গিয়েছিল।
১৯২০
এ ছাড়াও তাঁর সমাধি থেকে পাওয়া গিয়েছে অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ করা কাঠের মূর্তি। কাঠের তৈরি কিছু কাল্পনিক জীবজন্তুর মূর্তিও সেই সমাধি থেকে পাওয়া গিয়েছিল। তা নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে।
২০২০
তুতানখামেনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মিশরের ইতিহাসের ১৮তম রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু এত বছর পরও তাঁকে ঘিরে কৌতূহলের সমাপ্তি ঘটেনি। ‘অভিশপ্ত মমি’-র কাহিনিমালার জন্মই হয় মূলত তুতেনখামেনের মমি আবিষ্কারকে ঘিরে। তা নিয়ে অগণিত সাহিত্য রচিত হয়েছে, নির্মিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে রাশি রাশি সিনেমাও।