ট্রেনযাত্রীদেরও অনেকেই জানিয়েছেন যে, সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরাও কিছু ‘ব্যাখ্যাতীত’ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ০৯:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
ভারতের মধ্যে যে কয়েকটি জায়গায় নৈসর্গিক সৌন্দর্য লক্ষ করা যায়, তাদের মধ্যে শিমলা একটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য শিমলাকে সমস্ত পাহাড়ি শহরের ‘রানি’ বলা হয়। আর সৌন্দর্যের কারণেই এই জায়গাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
০২১৫
শিমলায় ঘুরে দেখার মতো একাধিক জায়গা রয়েছে। তবে এর অন্যতম আকর্ষণ ট্রেনে করে এই পাহাড়ি শহর ঘুরে দেখা। যাত্রীদের নিয়ে এই পাহাড়ি শহর ঘোরার সময় ট্রেনগুলিকে বেশ কিছু সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে ছুটে যেতে হয়।
০৩১৫
সুড়ঙ্গগুলির মধ্যে দীর্ঘতম সুড়ঙ্গটি রয়েছে শিমলা-কালকা রুটে। এই সুড়ঙ্গ পেরোতে দু’মিনিটেরও বেশি সময় লাগে।
০৪১৫
এই সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে ট্রেনে চেপে যাওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা হলেও, এক বিশেষ কারণে এই সুড়ঙ্গের বদনামও রয়েছে। এটি নাকি ভারতের সব থেকে ভুতুড়ে সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গে বাস করেন তেনারা। শিমলা-কালকা রুটে থাকা এই সুড়ঙ্গ পরিচিত ‘টানেল-৩৩’ বা ‘বারোগ টানেল’ নামে।
০৫১৫
এই সুড়ঙ্গের নামকরণ কর্নেল বারোগের নামানুসারে হয়েছে। মনে করা হয় যে, বারোগের আত্মাও এই সুড়ঙ্গে রয়েছে।
০৬১৫
১৮৯৮ সালে বারোগকে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বারোগ রেলের এক জন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁকে পুরো সুড়ঙ্গটি তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
০৭১৫
সুড়ঙ্গ তৈরি নিয়ে বেশ কিছু হিসাব-নিকাশ করে বারোগ সুড়ঙ্গ তৈরির কাজে থাকা সমস্ত শ্রমিককে পাহাড়ের উভয় প্রান্ত থেকে গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দেন। তিনি ভেবেছিলেন, এই ভাবে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
০৮১৫
তবে পরে তিনি দেখেন যে, তাঁর করা হিসাবে কোনও কাজ দেয়নি। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়াও দু'পাশ থেকে খুঁড়তে শুরু করা শ্রমিকেরাও এক জায়গায় এসে কাজ শেষ করেননি।
০৯১৫
বারোগের মূর্খতার কারণে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সরকারের তরফে জরিমানাও করা হয় তাঁকে। তাঁর ভুলের জন্য শ্রমিকরাও তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। অপমানিত বারোগ হতাশ হয়ে পড়েন। অপমানও সহ্য করতে পারেননি তিনি।
১০১৫
শোনা যায় যে, এই ঘটনার কিছু দিন পরে এক রাতে তাঁর পোষা কুকুরের সঙ্গে বেড়াতে বেরোন বারোগ। সঙ্গে ছিল তাঁর পিস্তলও। ওই সুড়ঙ্গের কাছাকাছি এক জায়গাতেই নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন তিনি।
১১১৫
মালিককে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিৎকার শুরু করে বারোগের পোষা কুকুর। কিন্তু যখন মানুষ তাঁকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন, ততক্ষণে তিনি মারা গিয়েছেন।
১২১৫
বারোগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁকে ওই অসম্পূর্ণ সুড়ঙ্গের বাইরেই সমাধিস্থ করা হয়। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস যে, তিনি কখনও ওই সুড়ঙ্গের মায়া এবং অপমানের কথা ভুলতে পারেননি। ওই সুড়ঙ্গেই ঘুরতে থাকে বারোগের অতৃপ্ত আত্মা।
১৩১৫
বারোগের মৃত্যুর পর সুড়ঙ্গ শেষ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় এইচএস হার্লিংটনকে। হার্লিংটন রেলের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। এক জন স্থানীয় সাধু ভাখোমুখি হতে হয়। তবে প্রথমে সুড়ঙ্গটি যেখানে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ হয়। লকু-র সহায়তায় সুড়ঙ্গের কেন্দ্র খুঁজে বের করে কাজ শেষ করেন তিনি। তবে তাঁকেও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
১৪১৫
শিমলার স্থানীয়দের বিশ্বাস, বারোগ এখনও সুযোগ পেলেই সুড়ঙ্গে ঘুরে বেড়ান। বারোগ বেশ কিছু মানুষকে দেখা দিয়েছেন বলেও স্থানীয়দের দাবি। ট্রেনযাত্রীদেরও অনেকেই জানিয়েছেন যে, সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরাও কিছু ‘ব্যাখ্যাতীত’ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। পাশাপাশি হার্লিংটনের নেতৃত্বে কাজ করা শ্রমিকরাও একাধিক বার বারোগের ‘ভূত’-এর পাল্লায় পড়েছিলেন বলেও দাবি করেন।
১৫১৫
ভূতের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে যাওয়ার পর সরকারের তরফে অসম্পূর্ণ সুড়ঙ্গ অনেক বার বুজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে কোনও অজানা কারণে তা করা সম্ভব হয়নি। তবে বারোগের আত্মা কারও ক্ষতি করে না বলেও এলাকার বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন।