জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ঢুকতে না পেয়ে মূল ফটকের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকেন সব্যসাচী এবং অন্য দুই কাউন্সিলর। তাঁদের আসার কারণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বুঝিয়ে বলেনও সব্যসাচীরা। যদিও ভিতরে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। তার পরই নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয় দুই কাউন্সিলরের। বাঙালির ঐতিহ্য মেনে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এর মধ্যেই মন্ত্রীর বাড়িতে এই তল্লাশি অভিযান নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইডির গোয়েন্দারা তল্লাশির নামে চিনির কৌটো উল্টে দেয়। ঘিয়ের শিশি উল্টে দেয়। বাড়ির মেয়েদের কত রকম পোশাক-আশাক থাকে, তাদের ক’টা শাড়ি আছে, তারও তল্লাশি নেয়। এই সব আমরা সহ্য করব না। বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাকনাম) সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয়, তা হলে আমি বিজেপি এবং ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’
এর পর ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ম্যারাথন তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর বনমন্ত্রীকে রাত ৩টে নাগাদ তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে সিজিও-দফতরে নিয়ে যায় ইডি। গ্রেফতার করা হয় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে। ইডি সূত্রে খবর, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। রেশন বণ্টনে দুর্নীতি মামলায় এই প্রথম কোনও মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন।
শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য জ্যোতিপ্রিয়কে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতায় ইডির দফতর সিজিও কমপ্লেক্স থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ জ্যোতিপ্রিয়কে নিয়ে জোকার উদ্দেশে রওনা দেন ইডি আধিকারিকরা। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোনোর সময় বালু (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাকনাম) আবারও বললেন, চক্রান্তের কথা। মন্ত্রী জানান, তিনি চক্রান্তের শিকার। যে চক্রান্তের নেপথ্যে বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সিজিও কমপ্লেক্স থেকে জোকা যাওয়ার সময় জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। বিজেপি এবং শুভেন্দু অধিকারী চক্রান্তে জড়িত।’’
রেশন বণ্টনের সময় কী ভাবে আটা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটা ধারণা মিলেছে ইডির নথি থেকে। ইডির নথিতে বলা হয়েছে, মিল মালিকেরা সরকারি অর্থ মিলিয়ে নিতেন কড়ায়-গণ্ডায়। কিন্তু তার বিনিময়ে সরবরাহকৃত রেশনের হিসাব মিলত না। প্রতি ১ কেজি আটার দামে অন্তত ২০০ গ্রাম কম আটা দিতেন আটা কলের মালিকেরা। বাংলার রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে।
ইডি সূত্রে খবর, এই সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে জ্যোতিপ্রিয় এবং বাকিবুরকে। পাশাপাশি, তাঁরা একে অপরকে কী ভাবে চেনেন, দু’জনের সম্পর্ক কী, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। রেশন নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে কে কে জড়িত, টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা কী ভাবে হয়েছে— তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
আপাতত বালুর গ্রেফতারিতে সরগরম রাজনীতি। ইতিমধ্যেই বনমন্ত্রীর গ্রেফতারি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল থেকে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘‘রেশন দুর্নীতির কিংপিনকে অবশেষে ধরা হল...। সত্য সামনে আসবেই।’’ জ্যোতিপ্রিয়ের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘কান এল, এ বার আসবে মাথা।’’
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই গ্রেফতারি স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী জানতেন। তাই বলেছেন, ওঁর (জ্যোতিপ্রিয়) কিছু হলে এফআইআর করব। উনি দিল্লি থেকে সব খবর পান। যদি মনে করেন অন্যায় হয়েছে, তা হলে সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাও করলেন না কেন? মন্ত্রিসভা এবং দলটা এমন ভাবে করা হয়েছে, যাতে লুটেরারাই প্রাধান্য পান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy