They fell in love and lost each other in South America, finally reunited dgtl
love
মিলন থেকে বিচ্ছেদ! দু’জনকে আবার মিলিয়ে দেয় বন্ধ দরজায় রাখা একটা চিরকুট
আচমকা দেখা দু’জনের। তার পর প্রেম। তার পর একে অপরকে হারিয়ে ফেলেন দু’জন। শেষে একটা চিরকুট মিলিয়ে দেয় দু’জনকে।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
দু’জনের বাস ছিল পৃথিবীর প্রায় দু’প্রান্তে। আচমকা দেখা দু’জনের। তার পর প্রেম। তার পর একে অপরকে হারিয়ে ফেলেন দু’জন। শেষে একটা চিরকুট মিলিয়ে দেয় দু’জনকে। এর পর তাঁদের জীবন চলে গিয়েছিল অন্য পথে। সেই গল্প আজও মনে করে শিহরিত হন ট্রেসি ফারেল এবং টিম জ়িক।
০২২২
১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর। ট্রেসির তখন ২৬ বছর বয়স। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। ঠিক করেছিলেন এক বছর ধরে ঘুরবেন দক্ষিণ আমেরিকা। করবেন ভাষাচর্চা।
০৩২২
ট্রেসি প্রথমে গিয়েছিলেন ইকুয়েডর। তার পর যাওয়ার কথা ছিল কুয়েনকা। ইকুয়েডরে একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন ট্রেসি। পিছনের দিকে একটি ঘরে একটি টেবিলে বসেছিলেন। টেবিলের উপর ছড়ানো ছিল পোস্টকার্ড। একটার পর একটা কার্ড তুলে নিয়ে চিঠি লিখে চলেছিলেন ট্রেসি। পরিবারের উদ্দেশে। ট্রেসি এবং তাঁর পরিবার থাকতেন আমেরিকায়।
০৪২২
কাছেই একটি টেবিলে বসেছিলেন টিম। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে। টিমের হাতের বইটি দেখছিলেন ট্রেসি। তাকিয়েছিলেন তাঁর মুখে দিকে। তখনই মুখ তুলে ট্রেসির দিকে তাকান টিম। দু’জনের চোখাচোখি হয়।
০৫২২
টিমকে প্রথম দেখাতেই ট্রেসির মনে হয়েছিল, ছেলেটা বেশ ‘মিষ্টি’! তখনই ক্লাবের পোষ্য একটি জার্মান শেফার্ড ছুটে আসে টিমের দিকে। টিম তাকে দেখে আদর করতে শুরু করেন। বিষয়টি বেশ ভাল লেগেছিল ট্রেসির। যাঁরা পশুদের পছন্দ করেন, তাঁদের এমনিতেই একটু বেশি পছন্দ করেন ট্রেসি।
০৬২২
ট্রেসি নিজেই এগিয়ে এসে টিমের সঙ্গে কথা শুরু করেন। টিমের তখন ৩২ বছর বয়স। তিনি আদতে নিউ জ়িল্যান্ডের বাসিন্দা। তার আগে কয়েক বছর ধরে পড়াচ্ছিলেন লন্ডনের একটি কলেজে।
০৭২২
ছ’মাসের জন্য ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন টিম। ভবিষ্যতে কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কোনও পরিকল্পনা ছিল না। ভেবেছিলেন, লন্ডনে পড়ানোর চাকরি ছেড়ে নিউ জ়িল্যান্ডে ফিরে যাবেন।
০৮২২
টিম এবং ট্রেসি এর পর কাছের এক রেস্তোরাঁয় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করেন। ভ্রমণ, বই, নিজেদের অভিজ্ঞতা— এ সব নিয়ে। নিউ জ়িল্যান্ড নিয়ে দারুণ আগ্রহ ছিল ট্রেসির। কারণ তার আগে নিউ জ়িল্যান্ডের কোনও বাসিন্দার সঙ্গে কখনও কথা হয়নি তাঁর। এ সব কথা বলেই কেটে গিয়েছিল কয়েক ঘণ্টা।
০৯২২
রাতের খাবার সেরে ট্রেসির হোটেলে যান টিম। দু’জনেই শুনেছিলেন রাতে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ রয়েছে। সেই অপেক্ষায় সারা রাত হোটেলের ছাদে কাটিয়ে দেন দু’জন। দেখেন হঠাৎই চাঁদটা হয়ে উঠেছে টকটকে লাল।
১০২২
পরের দিন সকালে বাস ধরে উত্তর ইকুয়েডরে যান দু’জন। সেখানে গিয়ে জাদুঘর, সৌধ ঘুরে দেখেন। সেগুলি দেখার আগ্রহ সঙ্গী পর্যটকদের হয়নি। কারণ সে সব ছিল খুব ‘সাধারণ’। তবু দু’জনেরই যেন সে দিন ‘অসাধারণ’ লেগেছিল।
১১২২
এর পর দু’জন ঠিক করেন ইকুয়েডরের শহর কুয়েনকা গিয়ে আবার দেখা করবেন। তার পর একসঙ্গে পেরু যাবেন। একটি গাইডবুক দেখে দু’জনে স্থির করে, কুয়েনকায় কোন হোটেলে থাকবেন। আরও কয়েকটি জায়গা ঘুরে আলাদা আলাদা ভাবে যাবেন দু’জন। তার পর সেখানে গিয়ে ফের দেখা করবেন। কুয়েনকার ওই হোটেলে জায়গা না পেলে দ্বিতীয় কোন হোটেলে থাকবেন, তা-ও ঠিক করে নেন ইকুয়েডরে বসে।
১২২২
সে সময় মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবা ছিল না। তাই একটু এ দিক-ও দিক হলেই দু’জনের বাকি জীবনে আর কখনও দেখা না-ও হতে পারত। হতেও চলেছিল তাই।
১৩২২
তিন সপ্তাহ পর কুয়েনকায় পৌঁছন ট্রেসি। যে হোটেলে টিমের সঙ্গে ওঠার কথা ছিল, সেই হোটেলের দরজায় কড়া নাড়েন। কিন্তু এ কী! হোটেল যে বন্ধ। তবু হাল ছাড়েননি ট্রেসি। বার বার দরজার কড়া নাড়েন। শেষে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন হোটেলের মালিক।
১৪২২
হোটেলের মালিক জানান, তিনি সপ্তাহান্তে অন্য শহরে যাচ্ছেন। তাই হোটেল বন্ধ। ট্রেসি নাছোড়। সঙ্গে ছিলেন এক বান্ধবী মোনিক। দু’জনেই জানান, হোটেলে থাকতে না দিলে রাস্তায় দিন কাটাতে হবে তাঁদের। হোটেলের মালিক তাঁদের থাকতে দিতে রাজি হন। জানান, তিনি চলে যাবেন, হোটেলেও বন্ধ থাকবে। তবে দুই মহিলা চাইলে ভিতরে থাকতে পারেন।
১৫২২
থাকার জায়গা যদি বা মিলল, কিন্তু সমস্যা মিটল না। এই হোটেলেই আসার কথা টিমের। কিন্তু বন্ধ হোটেল দেখে তিনি নিশ্চয়ই ফিরে যাবেন! তখন? ট্রেসির মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। তিনি হোটেলের বন্ধ দরজায় টিমের উদ্দেশে একটি চিরকুট লিখে রেখে দেন। তাতে লেখেন, ‘‘টিম, হোটেলটি বন্ধ। তবে আমি এবং মোনিক এখানে রয়েছি। তুমি কোথায় থাকছ, জানিয়ো।’’
১৬২২
ট্রেসির দিন কয়েক আগেই কুয়েনকায় এসে পৌঁছেছিলেন টিম। সেই হোটেল বন্ধ দেখে চলে গিয়েছিলেন অন্য হোটেলে। মনে মনে ভেবেছিলেন, এ জীবনে আর দেখা হবে না ট্রেসির সঙ্গে। তবে প্রায়ই ট্রেসির বলা সেই হোটেলে এসে ঘুরে যেতেন। ভাবতেন, যদি দেখা হয়! এক দিন সেই হোটেলের সামনে এসেই দরজায় খুঁজে পান সেই চিরকুট।
১৭২২
টিম যখন এসেছিলেন হোটেলের সামনে, সে সময় ভিতরে ছিলেন না ট্রেসি। তিনি ফিরে এসে দেখেন টিমের বার্তা। এর পর তাঁর বলা জায়গায় গিয়ে খুঁজে পান টিমকে। একটি রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছিলেন টিম। দু’জনে দু’জনকে দেখে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে আবার দেখা হল!
১৮২২
পরের দিনই টিম এবং ট্রেসি বেরিয়ে পড়েন পেরুর উদ্দেশে। সঙ্গে ছিলেন ট্রেসির বন্ধ মোনিক। এর পর বলিভিয়া, চিলে ঘুরতে যান তাঁরা। পরের তিন মাস দু’জনের কেটেছিল পথে। কখনও পাহাড়ে চড়ে, কখনও খরস্রোতা নদীতে র্যাফটিং করে, কখনও অ্যামাজনের জঙ্গলে ঘুরে। একে অপরের হাত ধরে। সেই হাত আর ছাড়েননি দু’জন।
১৯২২
এ দিকে টিমের ছুটি শেষ হয়ে আসছিল। তাঁকে লন্ডনে ফিরতে হবে। সেখানে পড়ানোর কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু ফিরে গেলে যোগাযোগ করবেন কী ভাবে? ট্রেসির দিন কাটে পথে ঘুরে। শেষ পর্যন্ত টিম ফিরে যান লন্ডন। আর মাস কয়েক পর ট্রেসি চাকরি নেন কোস্টা রিকায়। সেখানে এক সংবাদপত্রের দফতরে ট্রেসির নামে চিঠি পাঠাতেন টিম।
২০২২
ট্রেসির এক বছরের ভ্রমণ-পর্ব শেষ হয়। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে তিনি কলোরাডোয় ফিরে থিতু হন। টিম ঠিক করেন, লন্ডনে পড়ানোর চাকরি ছেড়ে নিউ জ়িল্যান্ড ফিরে যাবেন। পথে এক বার ট্রেসির সঙ্গে দেখা করবেন। তখনই দেবেন প্রেমের প্রস্তাব।
২১২২
পরের ক’দিন টিমকে কলোরাডো ঘুরিয়ে দেখান ট্রেসি। আর তখনই দু’জন বোঝেন, একে অপরকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। ১৯৯৭ সালের অগস্টে এক দুপুরে অফিস থেকে আধ বেলার ছুটি চান ট্রেসি। সেখান থেকে বেরিয়ে টিমের সঙ্গে বিয়ে সারেন। বিয়ের একমাত্র সাক্ষী ছিলেন তাঁর বস।
২২২২
এর পরের কয়েক দিন টিমের ভিসা জোগাড় করতে কেটে গিয়েছিল দু’জনের। তার পর সেখানেই স্থায়ী ভাবে থাকতে শুরু করেন দু’জন। কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেসি এখন অধ্যাপক। আর টিম একটি সংস্থার প্রোজেক্ট ম্যানেজার। ২৬ বছর হয়ে গিয়েছে বিয়ের। ১৭ বছরের এক মেয়েও রয়েছে। মেয়েকে বার বার শোনান নিজেদের প্রেমের গল্প। বলেন, হোটেলের দরজায় রাখা চিরকুট সে দিন উড়ে গেলে তার আর জন্মই হত না।