There’s a nuclear device hiding beneath the ice of Nandadevi Mountain for over 50 years dgtl
Nuclear Device on Nandadevi
খোঁজ মেলেনি বহু অভিযানেও, নন্দাদেবীর বরফে ৫০ বছর ‘লুকিয়ে’ সিআইএ-র পারমাণবিক যন্ত্র
কী ভাবে নন্দাদেবীতে একটি পারমাণবিক যন্ত্র হারিয়ে ফেলল আমেরিকার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)? কী হয়েছিল যার ফলে ঘটল এমন ঘটনা?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
সাল ১৯৬৪। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়। আমেরিকা এবং রাশিয়ার সম্পর্ক তলানিতে। অন্য দিকে ১৯৬২ সালের ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর প্রতিবেশী দেশ চিনকে নিয়ে তখন চিন্তিত ভারত।
০২২৫
এমন সময় ১৯৬৪ সালে জিনজিয়াং প্রদেশের লপ নূর হ্রদে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে চিন। চিন্তায় পড়ে ভারত এবং আমেরিকা।
০৩২৫
তখন পেন্টাগন সিদ্ধান্ত নেয়, বেজিংয়ের সমস্ত পারমাণবিক কার্যকলাপের ওপর নজরদারি চালানো হবে। সেই মতো একটি যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে তা হারিয়ে যায় নন্দাদেবী পর্বতের অতল বরফে।
০৪২৫
কিন্তু কী ভাবে নন্দাদেবীতে এই পারমাণবিক যন্ত্রটি ‘হারিয়ে ফেলল’ আমেরিকার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)?
০৫২৫
সাল ১৯৬৫। সিআইএ এবং আইবি যৌথ ভাবে চিনের ওপর নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দুই সংস্থা মিলে ঠিক করে একটি শক্তিশালী যন্ত্র বসানো হবে ভারত-তিব্বত সীমান্তে। এই যন্ত্রের সাহায্যে চিন থেকে আসা রেডিয়ো সঙ্কেতে নজর রেখে চিনের পারমাণবিক কার্যকলাপের ওপর নজরদারি চালানো যাবে। সিআইএ এবং আইবি-র এই যৌথ উদ্যোগের নাম ‘অপারেশন হ্যাট’।
০৬২৫
এই যন্ত্র বসানোর জন্য তিব্বত মালভূমির কাছে এমন একটি জায়গার দরকার ছিল, যেখানকার উচ্চতা অনেক বেশি এবং দৃশ্যমানতায় কোনও বাধা না পড়ে। এর পরেই বেছে নেওয়া হয় ভারতের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত নন্দাদেবীকে। যার উচ্চতা ২৫ হাজার ৬৪৩ ফুট বা ৭ হাজার ৮১৫ মিটার।
০৭২৫
যন্ত্রটির ওজন ছিল প্রায় ৫৬ কিলোগ্রাম। এত ভারী একটি যন্ত্র নন্দাদেবীর চূড়ায় তোলা তখনকার দিনে সহজ কাজ ছিল না। এতে ব্যবহৃত প্লুটোনিয়ামের পরিমাণ ছিল হিরোশিমায় ব্যবহৃত পরমাণু বোমায় ব্যবহৃত প্লুটোনিয়ামের অর্ধেক। যন্ত্রটি বসানোর জন্য লাগত একটি ১০ ফুটের অ্যান্টেনা, দু’টো রেডিয়ো এবং একটি বিশেষ ধরনের জেনারেটর। এই জেনারেটরটিকে যন্ত্রটি চালু রাখার কাজে ব্যবহার করা হত।
০৮২৫
এই কাজ করার জন্য ১৪ জন পর্বতারোহীর একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। সকল পর্বতারোহীকে ওই সময় এক হাজার ডলার মাসিক বেতন দেওয়া হয়। ওই দলে ছিলেন আমেরিকার পর্বতারোহী রবার্ট শ্যালার, টম ফ্রস্ট এবং জিম ম্যাকার্থি। ভারতের তরফ থেকে ছিলেন ক্যাপ্টেন এম এস কোহলী, সোনম ওয়াঙ্গাল, এইচ সি এস রাওয়াত এবং জি এস রাঙ্ঘু। এই চার জন ১৯৬৪ সালে ভারতের এভারেস্ট অভিযাত্রী দলের সদস্য ছিলেন।
০৯২৫
ক্যাপ্টেন এম এস কোহলীকে সিআইএ এবং আইবি-র এই যৌথ অভিযানকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়। কোহলী পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তাঁর দলের অভিযাত্রীর এই অভিযানের ব্যাপারে পুরো জানতেন না। শুধু জানতেন একটি যন্ত্রকে নন্দাদেবীর চূড়ায় তুলতে হবে।
১০২৫
১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাসে সাতটি প্লুটোনিয়ামের ক্যাপসুল এবং কিছু নজরদারি যন্ত্র নিয়ে ‘স্বর্গের সিড়ি’ নন্দাদেবীর উদ্দেশে রওনা দেয় অভিযাত্রী দল। অভিযানের গোপনীয়তা বজায় রাখতে কোনও রকম হেলিকপ্টার বা বিমানের সাহায্য নেওয়া হয়নি।
১১২৫
প্রবল ঠান্ডা, ভয়ঙ্কর উচ্চতায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, সঙ্গে ৫৬ কেজির ভারী যন্ত্র। অভিযাত্রীদের কাছে পরিস্থিতি ছিল বেশ প্রতিকূল। ক্যাপ্টেন কোহলী জানান, দলের সুরক্ষাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল। চূড়ার কাছে পৌঁছতেই প্রবল হাওয়া এবং তুষারঝড়ের দরুণ আবহাওয়া প্রতিকূল হতে শুরু করে।
১২২৫
পরিস্থিতি বিবেচনা করে পারমাণবিক যন্ত্রটিকে চূড়ার কাছে একটি গুহার মতো জায়গায় রেখে নীচে নেমে আসে অভিযাত্রী দল। পরের বছর অভিযাত্রী দল ওই জায়গায় গিয়ে দেখেন সেখান থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে যন্ত্রটি।
১৩২৫
এই খবরে চমকে যায় সিআইএ এবং আইবি। এই যন্ত্রে থাকা প্লুটোনিয়াম কোনও ভাবে প্রকৃতিতে মিশে গেলে জীবন বিপন্ন হতে পারে নন্দাদেবীর নিকটবর্তী জনবসতির বাসিন্দাদের। চিন্তায় পড়ে দুই গোয়েন্দা সংস্থা।
১৪২৫
এই অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৬৭ সালে নন্দাকোট পর্বতে অনুরূপ একটি যন্ত্র বসায় দুই গোয়েন্দা সংস্থা। এবং নিশ্চিত হয় যে চিনের কাছে কোনও রকম দূরপাল্লার পরমাণু অস্ত্র নেই।
১৫২৫
হারানো যন্ত্রের খোঁজে ১৯৬৮ সালে দু’টি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার আনানো হয় ভারতে। এই হেলিকপ্টার দু’টি ৩৪ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারত। কিন্তু এতেও কোনও ফল মেলেনি। এর পরেও নন্দাদেবীতে বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু যন্ত্রটির খোঁজ মেলেনি।
১৬২৫
অনেকে মনে করেন, তুষারধসের কারণে নন্দাদেবীতে হারিয়ে গিয়ে থাকতে পারে পারমাণবিক যন্ত্রটি। কিন্তু সেটিতে থাকা প্লুটোনিয়ামের আয়ু ১০০ বছর। অর্থাৎ আগামী ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত এটি বিপদ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে।
১৭২৫
এই তেজস্ক্রিয় পদার্থ যদি নন্দাদেবী থেকে তৈরি হওয়া নদীতে কোনও ভাবে মিশে যায় তবে তা বিপর্যয়ের সৃষ্টি করতে পারে। অনেকে মনে করেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরাখণ্ডের চামোলীতে হড়পা বানের জন্য এই যন্ত্রই দায়ী।
১৮২৫
নন্দাদেবীতে হিমবাহের ভাঙনের ফলে ঋষিগঙ্গা এবং ধৌলিগঙ্গার জলস্তর আচমকা অনেকটা বেড়ে যায়। এর ফলে চামোলীতে হড়পা বানের সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রায় ৮২ জনের মৃত্যু হয়, নিখোঁজ হন ২০০ জন। এই হড়পা বানে ঋষিগঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং এনটিপিসির তপোবন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯২৫
অনেকে প্রশ্ন করেন, হিমবাহে এত বড় অংশে ভাঙন ধরল কী ভাবে। হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্ত রেনি গ্রামের বাসিন্দারা এর জন্য ওই পারমাণবিক যন্ত্রটিকেই দায়ী করেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যেখানে হিমবাহের ভাঙন ধরেছিল তার কাছেই ১৯৬৫ সালে হারিয়ে যায় যন্ত্রটি।
২০২৫
এক সাক্ষাৎকারে ক্যাপ্টেন কোহলী দাবি করেন, হিমবাহের ভাঙনের জন্য ওই যন্ত্রটি দায়ী হতে পারে। ১৯৬৫ সালে কোহলী রেনি গ্রামেই কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তিনি পরবর্তী তিন বছর নন্দাদেবীতে ওই যন্ত্রের খোঁজ চালু রাখেন। ঋষিগঙ্গার জলে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপ করতে সেই জলও পরীক্ষা করেন। কিন্তু কোনও প্রমাণ মেলেনি। ২০২১-এর হড়পা বান ৫৫ বছরের পুরনো ভয়কে আবার জাগিয়ে তুলেছে।
২১২৫
২০১৮ সালে উত্তরাখণ্ডের পর্যটনমন্ত্রী সতপাল মহারাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী যন্ত্রটিকে খুঁজে বার করার পদক্ষেপে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন।
২২২৫
যন্ত্রটি হারিয়ে যাওয়ার পিছনে অনেকে অনেক তত্ত্ব দিয়েছেন। কারও মতে, পাকিস্তান যন্ত্রটিকে চুরি করেছে। আবার অনেকে বলেন, ভারতই যন্ত্রটিকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে এই দুই তত্ত্বের পক্ষেই কোনও প্রমাণ মেলেনি।
২৩২৫
১৯৭৬ সালে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ব রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি ঘোরতর হয় ভারতে। কিছু সময়ের জন্য নন্দাদেবী এবং তার আশপাশের এলাকা সাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়ে এবং যন্ত্রটির খোঁজে সামরিক অভিযান চালানো হয়। বহু বিদেশি পত্রপত্রিকাতেও বিষয়টি নিয়ে লেখা হয়েছিল।
২৪২৫
ঘরে-বাইরে চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং ব্যাখ্যা করেন কী ভাবে সিআইএ এবং আইবি মিলে এই যৌথ অভিযান চালিয়েছিল।
২৫২৫
বিপদ জানা সত্ত্বেও এই যন্ত্রটির বর্তমান অবস্থান জানা নেই কারও। যন্ত্রটি যদি এখনও নন্দাদেবীতে থেকে থাকে তবে তা যথেষ্ট বিপজ্জনক বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।