The American Couple who found love in Antarctica dgtl
Antarctica
Love: দুনিয়ার শেষ প্রান্তে প্রেম! আন্টার্কটিকায় রোমান্সে ডুবলেন দম্পতি
আন্টার্কটিকার ধু ধু প্রান্তে মন হারালেন নিকোল ম্যাকগ্রাথ এবং কোল হাইঞ্জের। বরফরাজ্যে কী ভাবে বাঁধা পড়লেন দু’জনায়?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এ-ও কি সম্ভব! দুনিয়ার শেষ প্রান্তেও এত চমক লুকনো? চারপাশ বরফ-কঠিন। তবে তার মাঝেই হৃদয়ের উষ্ণতা খুঁজে পেলেন আমেরিকার এক দম্পতি। আন্টার্কটিকার ধু ধু প্রান্তে মন হারালেন নিকোল ম্যাকগ্রাথ এবং কোল হাইঞ্জের। বরফরাজ্যে কী ভাবে বাঁধা পড়লেন দু’জনায়?
ছবি: রেবেকা অসগুড।
০২২০
কলেজের পাঠ চুকিয়ে কাজকর্মের খোঁজ করছিলেন বছর পঁচিশের নিকোল। সালটা ২০১৩। তলানিতে আমেরিকার আর্থিক অবস্থা। সে সময়েই তাঁর চোখে পড়েছিল একটি চাকরির বিজ্ঞাপন— আন্টার্কটিকার ম্যাকমার্ডো স্টেশনে কাজের জন্য লোক চাই! সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আবেদন করে বসলেন নিকোল। কিছু দিনের মধ্যে চাকরিও পেয়ে যান।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
০৩২০
ফ্লোরিডার রোদ ঝলমলে শহর মায়ামি থেকে দুনিয়ার শেষ প্রান্তে বরফরাজ্যে চাকরি! হতবাক মুখগুলিকে নিরস্ত করেছিলেন নিকোল। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে তিনি বলেন, ‘‘আরে বাবা! আন্টার্কটিকায় চাকরি করতে যাচ্ছি, এ কথা বলার সুযোগই বা ক’জন পায়! এমনটা তো আমি কখনও শুনিনি। ফ্লোরিডার বাসিন্দা হওয়ায় ঠান্ডার মধ্যেও থাকিনি।’’
প্রতীকী ছবি।
০৪২০
আন্টার্কটিকার রস দ্বীপের আগ্নেয়শিলার উপর গড়ে উঠেছে ম্যাকমার্ডো স্টেশন। আমেরিকার সেই গবেষণাগারে ডাইনিং এজেন্ট হিসাবে কাজে লেগে পড়লেন নিকোল। স্টেশনের কিচেনে বাসনপত্র ধোওয়া থেকে ম্যাকমার্ডো স্টেশনের কর্মীদের খাবার পরিবেশন করা— সবই করতে হত তাঁকে।
ছবি: সংগৃহীত।
০৫২০
ম্যাকমার্ডো স্টেশনে নিকোলের মতো ততটা আনকোরা নন কোল হাইঞ্জ। নিকোলের মতো আনকোরাদের ট্রেনিং দেওয়ার দায়িত্ব বর্তেছিল হাইঞ্জের উপর। তাঁরাই জড়ো হয়েছিলেন স্টেশনে। দু’জনার প্রথম দেখার মুহূর্তগুলি আজও স্পষ্ট হাইঞ্জের। একঝাঁক ট্রেনিদের ভিড়েও নজর কেড়েছিলেন নিকোল। একই দশা হয়েছিল নিকোলেরও।
ছবি: সংগৃহীত।
০৬২০
কেমন ছিল প্রথম দেখার অনুভূতি? নিকোলে ভেসে যাওয়া হাইঞ্জের কথায়, ‘‘ট্রেনিংয়ের জন্য ঘরে ঢুকতেই মেয়েটিকে চোখ পড়েছিল— উফ্!’’ হাইঞ্জকেও বেশ মিষ্টি লেগেছিল নিকোলের। তিনি বলেন, ‘‘বেসবল টুপির তলায় লালচে চুলের টেক্সানকে দেখে মনে হয়েছিল, ওহ্! দেখতে বেশ কিউট তো!’’ প্রথম দিন বিশেষ কথাবার্তা না হলেও একসঙ্গে লাঞ্চ করেছিলেন দু’জনে।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
০৭২০
আরও অনেক কথাই মনে রয়েছে নিকোলের। এক বার মজা করেই হাইঞ্জকে বলেছিলেন, ‘‘আমি তো এখানে সঙ্গী খুঁজতে এসেছি।’’ তাতে হো হো করে হেসে ফেলেছিলেন হাইঞ্জ। স্টেশনের ৭৫ শতাংশ কর্মী পুরুষ। যদিও ম্যাকমার্ডো স্টেশনে সঙ্গীর খোঁজ পাওয়াটা সহজ। তবে একান্তে সময় কাটানোটা কঠিন। আশপাশের পরিবেশ যেন কলেজ ক্যাম্পাসের মতো। ওয়াই-ফাই নেই। মোবাইল ফোনের সিগনাল পাওয়া যায় না। সকলেই তো নিজের ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে। ফলে একত্রে সিনেমা দেখা, খাওয়াদাওয়া, ওঠাবসা। হাত বাড়ালেই বন্ধু। তবে ‘বিশেষ’ বন্ধুর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো যায় না। কারণ, সকলেই সব সময় একসঙ্গে সময় কাটান।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
০৮২০
শত ব্যস্ততার ফাঁকেও কিচেনে গিয়ে নিকোলের সঙ্গে গল্পগাছা করে আসতেন হাইঞ্জ। তুষার-ঢাকা পাহাড়ি পরিবেশে কখন যেন মন গলেছিল দু’জনেরই। ফলে প্রথম ‘ডেট’-ও বেশ জলদিই এল। নিকোলের কাজে যোগ দেওয়ার তিন দিনের মাথায়!
প্রতীকী ছবি।
০৯২০
প্রথম ‘ডেট’-এ আন্টার্কটিকার অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে হাইঞ্জকে ‘হাট পয়েন্ট’ দেখতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন নিকোল। ১৯০১-০৪ সালে আন্টার্কটিকা অভিযানে যেখানে পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী রবার্ট এফ স্কট। পা রেখেছিলেন ব্রিটিশ অভিযাত্রী আর্নেস্ট শেকলটনও। নিকোল বলেন, ‘‘১০০ বছর পরেও প্রায় একই রয়েছে ‘হাট পয়েন্ট’। নির্জন পরিবেশেও সমান সুন্দর।’’ সেখান থেকে বেরিয়ে কফি হাউস। গল্পে গল্পেই কেটেছে সময়। সারা দিনে বিস্তর বোর্ড গেমও খেলেছেন। এর ফাঁকে তাঁদের প্রথম চুমু!
ছবি: সংগৃহীত।
১০২০
এক সময় দু’জনেরই মনে হয়েছিল, ফ্লোরিডা বা টেক্সাসের সঙ্গে আন্টার্কটিকায় প্রেমে পড়ার তফাৎ রয়েছে। নিকোল বলেন, ‘‘ম্যাকমার্ডো স্টেশনে প্রেম খুঁজে পেলে প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটানো মুশকিল। তার জন্য দু’জনকেই নানা উপায় খুঁজে বার করতে হত।’’ তবে তারই ফাঁকে হাইঞ্জকে স্টেক রেঁধেও খাইয়েছেন নিকোল।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
১১২০
ম্যাকমার্ডো থেকে প্রতি দিনই মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় নিকোলের। হাইঞ্জের সম্পর্কে মাকে কিছুই জানানো হয়নি। তবে নিকোলের মা বেশ বুঝতে পারেন— মেয়ের ‘বিশেষ’ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। নিকোলের পাঠানো প্রায় প্রতিটি ছবিতেই যে লালচে চুলের এক জন ভেসে থাকেন!
ছবি: রেবেকা অসগুড।
১২২০
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পরস্পর প্রেমের কথা উচ্চারণ করেন। কে প্রথম কাছে এসেছিলেন? তা বলা না গেলেও নিকোলই প্রথম বলেছিলেন— ‘‘ভালবাসি।’’ হাইঞ্জ বলেন, ‘‘অস্ফুটে কী যেন বলেছিল নিকোল। জিজ্ঞাসা করায় সেই তিনটে শব্দ ফের শুনিয়েছিল। এ বার একটু উঁচু স্বরে।’’ নিকোল বলেন, ‘‘এক সময় আন্টার্কটিকাকে রূপকথার মতো বলে মনে হয়।’’
ছবি: রেবেকা অসগুড।
১৩২০
নিকোল-হাইঞ্জের জীবনে সমস্তটাই অবশ্য রূপকথার গল্প ছিল না। এক সময় ম্যাকমার্ডো স্টেশনে নিকোলের চাকরির মেয়াদ ফুরিয়ে আসে। হাইঞ্জের থেকে দূরে যেতে হয়েছিল নিকোলকে। নিউজিল্যান্ডে ছ’মাস ছুটি কাটানোর কথা ভাবছিলেন নিকোল। সে সময় হাইঞ্জকে বলে বসেন, ‘‘আমার সঙ্গে আসবে?’’ তবে শীতের মরসুম স্টেশনেই কাটাতে চান হাইঞ্জ। তা নিয়ে সেই সময় বেশ টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল দু’জনের সম্পর্কে।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
১৪২০
তবে দু’দিন ছাড়াছাড়ি হতেই হাইঞ্জের মনে হয়েছিল, ‘‘আর কখনও নিকোলকে দেখতে পাব না, এটা ভেবেই মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল।’’ এর পর নিকোলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের পথে যেতে রাজি হন হাইঞ্জ। নিউজিল্যান্ডে একটি ক্যাম্পার ভ্যান ভাড়া নিয়ে দু’জনে চুটিয়ে ঘোরাফেরা করেছেন। সেখান থেকেই স্কাইপি-র মাধ্যমে টেক্সাসের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে নিকোলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। হাইঞ্জের মা-বাবাও তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে দু’সপ্তাহের জন্য নিউজিল্যান্ডে চলে আসেন।
প্রতীকী ছবি।
১৫২০
এক সময় ছুটি ফুরিয়ে যায়। নিকোলের সঙ্গে আর দেখা হয় না হাইঞ্জের। তবে তত দিনে আরও কাছাকাছি চলে এসেছেন পরস্পর। ছুটির পরের পাঁচ মাস ফোনালাপেই কেটে যায় দু’জনের। নিকোল সেই সময় আমেরিকায় শিক্ষানবিশ হিসাবে নগরোন্নয়নের কাজে। হাইঞ্জ কাজে আন্টার্কটিকায়। এক সময় ফের কলোরাডোয় ছুটি কাটাতে যান দু’জনে। সেখানেই নিকোলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন হাইঞ্জ।
প্রতীকী ছবি।
১৬২০
বিয়ের কথায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন নিকোল। তিনি বলেন, ‘‘জানতাম, ওকে ভালবাসি। বিয়েও করতে চাই। তবে কী ভাবে আমাদের বিয়ে টিকবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। দু’জনেই তো একে অপরের থেকে দূরে থাকি।’’
প্রতীকী ছবি।
১৭২০
২০১৬ সালে ফের আন্টার্কটিকায় যান দু’জনে। এ বার শীত-গ্রীষ্ম, দুই মরসুমেই ম্যাকমার্ডো স্টেশনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁরা। পরের বছর জানুয়ারিতে বিয়ে করার কথাও ঠিক করে ফেলেন নিকোল-হাইঞ্জ।
প্রতীকী ছবি।
১৮২০
বিয়েটা জাঁকজমক করেই হয়েছিল নিকোল এবং হাইঞ্জের। অতিথিদের জন্য গেস্টবুক নয়, আন্টার্কটিকার মানচিত্রে স্বাক্ষরের ব্যবস্থা করেছিলেন দু’জন। জামার বোতামে ম্যাকমার্ডো স্টেশনের আকৃতিও খোদাই করে নিয়েছিলেন হাইঞ্জ। ছিল ‘হাট পয়েন্ট’-এর আদলে একটি খুদে ঘরও। তাতে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র জমা রেখেছিলেন অতিথিরা।
ছবি: রেবেকা অসগুড।
১৯২০
বিয়ের পর নবদম্পতি টেক্সাসে বসবাস শুরু করেন। নিকোল সেখানে নগরোন্নয়ন নিয়ে স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শুরু করেন। তাঁর পরীক্ষার সময় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন নিকোল। এক সময় জন্ম হয় সামান্থার। তাঁদের প্রথম সন্তান!
ছবি: রেবেকা অসগুড।
২০২০
সম্প্রতি বিয়ের পাঁচ বছর ধুমধাম করে কাটিয়েছেন নিকোল-হাইঞ্জ। আজকাল নিউ ইয়র্কে থাকেন তাঁরা। আন্টার্কটিকার বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে দম্পতির। নিকোলের কথায়, ‘‘আন্টার্কটিকাকে কী করে ভুলব? ওখানেই তো আমরা প্রেম খুঁজে পেয়েছি!’’