THAAD anti missile system will send by US to Israel amid conflict with Hezbollah and Iran dgtl
THAAD Anti-Missile System
ইজ়রায়েলের হাতে আমেরিকার ‘থাড’, সঙ্গে সেনাও! পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের মোড় ঘোরাবে এই হাতিয়ার?
লেবাননের হিজ়বুল্লা ও ইরান লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলের উপর। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার থেকে ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা হাতে পাচ্ছে ইহুদি ফৌজ।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:২৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
একাধিক ফ্রন্টে লড়ছে ইজ়রায়েল। যার জেরে বিপদ বেড়েছে ইহুদি সেনার। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শত্রুদের ছোড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র আগের মতো মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে পারছে না তাঁদের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম)। ফলে নাগরিকদের জীবন রক্ষা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ইজ়রায়েলের ফৌজি জেনারেলদের।
০২১৭
সম্প্রতি, লেবানন থেকে ইরান সমর্থিত শিয়া জঙ্গি গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার ছোড়া একের পর রকেট আছড়ে পড়ে উত্তর ইজ়রায়েলের একাধিক শহরে। এর বেশির ভাগই আটকাতে ব্যর্থ হয় ইহুদিদের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। শুধু তা-ই নয়, রকেট হামলার সময়ে নাগরিকদের সতর্ক করে সাইরেন পর্যন্ত বাজেনি বলেও খবর এসেছে।
০৩১৭
ইজ়রায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, হিজ়বুল্লার ওই রকেট হামলায় জীবনহানি না হলেও শহরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর জেরে ইহুদিদের একটি তেলের গুদামে আগুন ধরে যায়। যার ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
০৪১৭
এই আবহে ইহুদিদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে আমেরিকা। খুব দ্রুত ইজ়রায়েলের হাতে ‘থাড’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। এটি পরিচালনার জন্য ইহুদি ভূমিতে আমেরিকান সৈন্যদের পা পড়বে বলেও জানা গিয়েছে।
০৫১৭
আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগন সূত্রে খবর, থাডের মতো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা চালানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। যা এখনই ইহুদি ফৌজকে দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই ইজ়রায়েলে বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। যদিও তার সংখ্যা স্পষ্ট করেনি পেন্টাগন।
০৬১৭
চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর ইহুদি ভূমিতে থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পাঠানোর কথা খোলাখুলি ভাবে সংবাদমাধ্যমকে জানান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইজ়রায়েলকে রক্ষা করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
০৭১৭
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, আমেরিকার এই পদক্ষেপ পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধকে আরও তীব্র করতে পারে। কারণ, ইহুদি ভূমিতে ওয়াশিংটন সেনা নামালে ফল ভাল হবে না বলে কয়েক দিন আগেই হুমকি দিয়েছিল ইরান। তাই মনে করা হচ্ছে, থাডের পিছন পিছন আমেরিকান সৈন্য ইজ়রায়েলে ঢুকলে নতুন করে আক্রমণ শানাতে পারে তেহরান।
০৮১৭
পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার বলেছেন, ‘‘থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইজ়রায়েলের সুরক্ষাকে বাড়িয়ে তুলবে। ইরান ও ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ইহুদি ভূমিতে যে ক্রমাগত হামলা হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ওই আক্রমণ আমেরিকার বাসিন্দাদের উপরেও নেমে আসছে। যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’
০৯১৭
অন্য দিকে, এই ইস্যুতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘‘ইজ়রায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন করতে গিয়ে আমেরিকা তাঁদের সৈনিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছে। আমরা এই এলাকায় সর্বাত্মক যুদ্ধ আটকানোর সব রকমের চেষ্টা করেছি। কিন্তু স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইরানি জনগণের স্বার্থরক্ষায় কোনও লক্ষ্মণরেখা মানব না।’’
১০১৭
ওয়াশিংটনের তৈরি থাডের পুরো কথাটি হল, ‘টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’। ২০০৮ সাল থেকে যা ব্যবহার করে আসছে আমেরিকান ফৌজ। এটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম হল ‘লকহিড মার্টিন’। ১৯৯৮ সালে এর নকশা তৈরি করে ওই আমেরিকান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী সংস্থা।
১১১৭
স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে থাড তৈরি করা হয়েছে। এটি মূলত স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সব ধরনের আবহাওয়াতেই এটি কাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
১২১৭
১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে থাডের। ছ’টি লঞ্চার বিশিষ্ট হাতিয়ারকে ট্রাকে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়। থাডে আছে ৪৮টি ইন্টারসেপ্টর, রেডিয়ো ও রাডার সরঞ্জাম। এটিকে চালানোর জন্য অন্তত ১০০ জন সৈনিকের প্রয়োজন হয়।
১৩১৭
এ বছরের ১ অক্টোবর প্রায় ২০০ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইজ়রায়েলের উপর হামলা চালায় ইরান। শিয়া মুলুক থেকে উড়ে আসা সেই ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলিই ইহুদি ভূমিতে আছড়ে পড়েছিল। ফলে বাধ্য হয়ে বাঙ্কারে আশ্রয় নেন সেখানকার বাসিন্দারা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, থাড হাতে এলে ইজ়রায়েলের উপর এই ধরনের হামলা চালাতে দু’বার ভাবতে হবে তেহরানকে।
১৪১৭
ইজ়রায়েলের হাতে বর্তমানে তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। সেগুলি হল, আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং আর অ্যারো। যা দিয়ে স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশে ধ্বংস করে ইহুদি সেনা। পাশাপাশি, যুদ্ধবিমানও এগুলির সাহায্যে গুলি করে নামাতে পারে তারা।
১৫১৭
১ অক্টোবর ইরান থেকে মারাত্মক হামলা হওয়ার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সেখানে তেহরানের উপর প্রত্যাঘাতের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
১৬১৭
সূত্রের খবর, পারস্য উপসাগরের তীরের শিয়া মুলুকের তেলের ভান্ডার ও পরমাণু ক্ষেত্রগুলিকে উড়িয়ে দিতে চাইছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। কিন্তু তাতে আপত্তি রয়েছে ওয়াশিংটনের। আমেরিকা চাইছে তেহরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস বা আইআরজিসির সেনা ছাউনিগুলিতে হামলা চালাক ইহুদি ফৌজ।
১৭১৭
সে ক্ষেত্রে ইজ়রায়েলের উপর ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রত্যাঘাত করতে পারে ইরান। কারণ, শিয়া ফৌজের হাতে দূরপাল্লার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। আর তাই তিনটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা হাতে থাকা সত্ত্বেও থাড নেতানিয়াহুর সেনার হাতে তুলে দিচ্ছে আমেরিকা, জানিয়েছেন সমর বিশেষজ্ঞেরা।