Surgeon Robert Liston, the fastest surgeon in the 19th century dgtl
Robert Liston
এক অস্ত্রোপচারে তিন জনের মৃত্যু! বিরলতম নজির গড়েছিলেন চিকিৎসক
রবার্ট লিস্টন। ঘড়ি দেখে নিখুঁত অস্ত্রোপচারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। অজ্ঞান করার কোনও ওষুধ তখনও আবিষ্কার না হওয়ায় যিনি দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে পারতেন, তাঁরই ছিল বিপুল চাহিদা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
সময়কাল ১৯ শতক। সেই সময়ে স্কটল্যান্ডের নামকরা চিকিৎসক ছিলেন রবার্ট লিস্টন। দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য বিখ্যাত ছিলেন তিনি। অজ্ঞান করার কোনও ওষুধ তখনও আবিষ্কৃত না হওয়ায় যিনি দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে পারতেন, তাঁরই ছিল বিপুল চাহিদা। কিন্তু এক দিন এই দ্রুত অস্ত্রোপচারই তাঁর কেরিয়ারে ইতি টানে।
০২১৫
সেই সময় অচেতন করার ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই রোগীদের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকাকালীনই অস্ত্রোপচার করা হত। যত বেশি সময় ধরে অস্ত্রোপচার চলত, তত বেশি সময় যন্ত্রণা সহ্য করতে হত রোগীদের। দ্রুত অস্ত্রোপচার করায় রবার্ট রোগীদের কাছে ভগবানের সমান ছিলেন। রোগীদের কম সময়ের জন্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হত।
০৩১৫
এক রোগী পায়ের অস্ত্রোপচার করাতে এসেছিলেন রবার্টের কাছে। ছুরি এবং করাত নিয়ে অস্ত্রোপচার করার জন্য তৈরিও ছিলেন রবার্ট। তিনি প্রতি বার কোনও অস্ত্রোপচার করার আগে তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশে বলতেন ‘টাইম মি’ (‘আমাকে সময়ে বেঁধে দাও’)। ঘড়ি দেখে অস্ত্রোপচার করতেন তিনি।
০৪১৫
কত ক্ষণ সময়ে কত জটিল অস্ত্রোপচার করতে পারেন তা নিজে থেকে পরখ করে দেখতেন রবার্ট। কিন্তু সময়ের সঙ্গে খেলা করতে গিয়েই ঘটল বিপদ। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে এক সহযোগীর হাতের আঙুলই কেটে ফেললেন তিনি।
০৫১৫
আঙুল কাটার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আর এক সহযোগী হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ মারা যান। তার পরেও অস্ত্রোপচার করেন রবার্ট। কিন্তু অস্ত্রোপচারের সময় যে যন্ত্রপাতিগুলি চিকিৎসক ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলি ভাল ভাবে ‘স্যানিটাইজ়়’ করা ছিল না। এর ফলে সংক্রমণের শিকার হন ওই রোগী।
০৬১৫
অস্ত্রোপচারের সময় যে সহযোগীর আঙুল কাটা পড়েছিল, তিনিও সংক্রমণের শিকার হন। সহযোগী এবং রোগী দু’জনেই এই সংক্রমণের কারণে কয়েক দিন পরে মারা যান। যে চিকিৎসককে সকলে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতেন তাঁর কাছে এই ঘটনার পর যাওয়া বন্ধ করে দিলেন তাঁরা।
০৭১৫
ধীরে ধীরে রবার্টের নামডাক কমতে শুরু করে। ৩ মিনিটে জটিল অস্ত্রোপচার সেরে ফেলা চিকিৎসক নিজের চেম্বারে বসে রোগী দেখার অপেক্ষা করতে থাকেন।
০৮১৫
১৮৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে লন্ডনে নিজের বাড়িতেই মারা যান রবার্ট। ধমনীতে রক্তক্ষরণের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সেই রোগই তাঁর জীবন কেড়ে নেয়।
০৯১৫
রবার্টের মৃত্যুর পর তাঁকে সম্মান জানাতে মার্বেলের মূর্তি বানানো হয়েছিল। রবার্ট তাঁর জীবনে যে ভাবে চিকিৎসা করেছেন তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অনেকে পড়াশোনাও করেছেন। ১৪ বছর বয়সে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে চর্চা শুরু করেছিলেন রবার্ট।
১০১৫
১৭৯৪ সালের ২৮ অক্টোবর স্কটল্যান্ডে জন্ম রবার্টের। মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করবেন বলে ১৮০৮ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তি হন তিনি। সেই সময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক জন বার্কলের সহযোগী হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।
১১১৫
৬ বছর জন বার্কলের সঙ্গে কাজ করার পর লন্ডনে পাড়ি দেন রবার্ট। সে যুগের আর এক খ্যাতনামী চিকিৎসক উইলিয়াম ব্লিজার্ডের কাছে আরও এক বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি।
১২১৫
সেই সময় অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন মারা যেতেন। কিন্তু রবার্ট যখন অস্ত্রোপচার করতেন, তখন নাকি ১০ জনের মধ্যে ১ জন মারা যেতেন।
১৩১৫
অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, অন্য চিকিৎসকরা যখন রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তখন রবার্ট তাঁদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছেন।
১৪১৫
স্কটল্যান্ডে শিক্ষকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন রবার্ট। তাঁর প্রশংসা শুনে এডিনবরার রয়্যাল ইনফার্মারিতে তাঁর ডাক পড়ে। চিকিৎসক জর্জ বেলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ৪ বছর কাজ করার পর সেখানে দুই চিকিৎসকের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় চাকরি ছাড়েন রবার্ট।
১৫১৫
তাঁর কেরিয়ার যখন অস্তমিত, তখন রবার্ট ‘রয়্যাল সোস্যাইটি’তে যুক্ত হন। মৃত্যুর ৬ বছর আগে পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেই দিনযাপন করতেন তিনি।