Stanislav Petrov: Russian soldier who saved the world 30 years ago dgtl
USSR
ভুল হলে হতে পারত মৃত্যুও, পেট্রোভের এক সিদ্ধান্তে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় পৃথিবী
স্ট্যানিস্লাভ পেট্রোভ। ৩০ বছর আগে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন রাশিয়ার এক সেনাকর্তা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন ধ্বংসের হাত থেকে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৩৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
স্ট্যানিস্লাভ পেট্রোভ। ৩০ বছর আগে পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন রাশিয়ার এক সেনাকর্তা। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, ধ্বংসের হাত থেকে। একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচিয়ে মানুষের চোখে ‘হিরো’ হয়ে উঠেছিলেন পেট্রোভ।
০২২০
১৯৮৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। আমেরিকা এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে তখন ঠান্ডা যুদ্ধের আবহ। সেই সময় এই দু’দেশের মধ্যে কোনও ছোটখাটো বিষয়ে খুটখাট লাগলেও সারা বিশ্বে তটস্থ থাকত, এই বুঝি পরমাণু যুদ্ধ শুরু হয়। তত দিনে হিরোশিমা-নাগাসাকি বিশ্বকে চিনিয়ে দিয়েছিল পরমাণু বিস্ফোরণের ভয়াবহতা।
০৩২০
২৬ সেপ্টেম্বর ভোরবেলা সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর কাছে কম্পিউটারে সতর্কবার্তা আসে, আমেরিকা থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে উড়ে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র।
০৪২০
সোভিয়েত ইউনিয়ন এ রকম পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, আমেরিকার তরফ থেকে তাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এলে তারাও পাল্টা পরমাণু হামলা চালাবে।
০৫২০
যখন এই সঙ্কেত আসে, সেই সময়ে ওই অফিসের ডিউটি অফিসার ছিলেন পেট্রোভ। শত্রুদেশের দিক থেকে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র তাঁদের দিকে উড়ে আসছে কি না, তা দেখাই তাঁর কাজ ছিল। কম্পিউটারের পর্দায় এই ধরনের কোনও তথ্য আসা মাত্রই ডিউটি অফিসারদের কাজ ছিল এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানানো।
০৬২০
কম্পিউটারের পর্দায় ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসার তথ্য দেখেও পেট্রোভ ঠিক করেন তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তাদের কাছে এই বিষয়ে কিছু জানাবেন না। কারণ এই তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর কী হতে পারে সে বিষয়ে একটু হলেও ওয়াকিবহাল ছিলেন পেট্রোভ। আর সেই কারণেই তিনি ঠিক করেন কিছু জানাবেন না। উল্টে তাঁকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান যে, আমেরিকা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পারে এ রকম কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই৷
০৭২০
পেট্রোভ জানতেন, কর্তৃপক্ষকে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়ে কিছু না জানিয়ে তিনি নিয়ম লঙ্ঘন এবং কর্তব্যের প্রতি অবহেলা করছেন। এ-ও জানতেন, পরে সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতারা এই বিষয়ে জানতে পারলে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের সাজাও হতে পারে।
০৮২০
পেট্রোভ বুঝতে পারেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কোনও খবর সোভিয়েত দেশের সামরিক বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে জানালে ১৯৮৩ সালের রাজনৈতিক আবহে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। অনেক উন্নত দেশ পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। আর সেই কারণেই তিনি এই বিষয়ে চুপ করে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
০৯২০
পেট্রোভের সামনেই সাইরেন বেজে ওঠে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমেরিকা থেকে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র উ়়ড়ে আসার সঙ্কেত আসে পেট্রোভের কাছে। এই সঙ্কেতে কোনও ভুল থাকতে পারে না বলেও কম্পিউটার তাঁকে সতর্ক করে।
১০২০
২৮টি নিরাপত্তা স্তর পেরোলে তবে পেট্রোভের কম্পিউটারে হামলার সঙ্কেত আসত। তাই তিনি এক প্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে এই হামলা হচ্ছেই।
১১২০
এর পর আমেরিকা থেকে একে একে আরও চারটি ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে আসার সঙ্কেত আসে পেট্রোভের কম্পিউটারে। কম্পিউটার বলছিল, এর মধ্যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নাকি উড়ে আসছিল পেট্রোভের দিকেই।
১২২০
পেট্রোভ বুঝতে পেরেছিলেন মৃত্যু আসন্ন। একের পর এক সিগারেট খেতে থাকেন তিনি।
১৩২০
দু’-এক বার পেট্রোভের এমনও মনে হয়, দেরি না করে এখনই এ বিষয়ে তাঁর ঊর্ধ্বতনদের জানানো উচিত।
১৪২০
পেট্রোভের মতো অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞই আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর নড়াচড়ার দিকে নজর রাখছিলেন। হামলার বিষয়ে নিশ্চিত হতে তাঁদের ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞাসা করেন পেট্রোভ। কিন্তু পেট্রোভকে চমকে দিয়ে তাঁরা জানান, তাঁদের কাছে হামলার বিষয়ে কোনও তথ্য নেই।
১৫২০
তাঁর অফিসের বাকিদের এই সঙ্কেত নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে পেট্রোভ বুঝতে পারেন, যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য কম্পিউটারে ভুল সঙ্কেত দেখাচ্ছে। পেট্রোভ এ-ও জানতেন, তিনি যদি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানান, তা হলে কিছু ক্ষণের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক বোমা আছড়ে পড়ত আমেরিকায়।
১৬২০
২৩ মিনিট উৎকন্ঠার সঙ্গে কাটানোর পর পেট্রোভ বুঝতে পারেন, আমেরিকার তরফে সত্যিই কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়নি। তাঁর কাছে ভুল সঙ্কেত এসেছিল।
১৭২০
পেট্রোভের মতে, তাঁর দলে তিনিই একমাত্র অফিসার ছিলেন যাঁর কাছে নৈতিক শিক্ষা সব থেকে বেশি ছিল। বাকি সকলেই পেশাদার সেনা ছিলেন। তাঁদের কেবলমাত্র বিনা বাক্যব্যয়ে আদেশ পালন করার কথা শেখানো হয়েছিল।
১৮২০
তাঁর জায়গায় সে দিন অন্য কোনও অফিসার থাকলে পরমাণু হামলা নিশ্চিত ছিল বলেও নিশ্চিত ছিলেন পেট্রোভ।
১৯২০
এই ঘটনার কথা বেশি দিন চাপা থাকেনি। পেট্রোভের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য তিনি প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিলেন।
২০২০
যদিও পেট্রোভ নিজেকে ‘হিরো’ মনে করেন না। তিনি যা করেছিলেন তা তাঁর কর্তব্য ছিল বলেই মনে করেন তিনি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর পেট্রোভ মস্কোর কাছে একটি ছোট শহরে বসবাস করতে শুরু করেন। ২০১৭ সালে ৭৭ বছরে সেখানেই মারা যান তিনি।