দেহ উদ্ধারের এক সপ্তাহের মধ্যে মুখ খুলেছিলেন শিল্পীর বাবা, মা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, শিল্পীকে খুন করা হয়েছে। যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি গৌতমের পরিবার।

এই রহস্যমৃত্যুর আঁচ পড়ে রাজনীতির আঙিনাতেও। যে বিধায়কের আবাসনের গ্যারাজ থেকে শিল্পী এবং গৌতমের দেহ উদ্ধার করা হয়, সেটি ছিল তৎকালীন বিধায়ক সাধু যাদবের।

সাধুর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদবের শ্যালক। সেই সময় বিহারের মসনদে ছিল আরজেডি। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন লালু-পত্নী রাবড়ি দেবী। ফলে এই জোড়া রহস্যমৃত্যু ঘিরে সরগরম হয়েছিল বিহারের রাজনীতি।

শিল্পী এবং গৌতম কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন? নাকি তাঁদের খুন করা হয়? এ নিয়ে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। যেমন, গ্যারাজটি ভিতর থেকে তালাবন্ধ ছিল। ফলে বাইরের কারও পক্ষে তা জানা অসম্ভব ছিল যে, ওই গ্যারাজে গাড়ির মধ্যে দু’টি মৃতদেহ রয়েছে। তা হলে কে খবর দিল পুলিশে? কে-ই বা জানলেন যে, গাড়িতে মৃতদেহ রয়েছে? রহস্যের এই জট কাটেনি।

তৎকালীন পুলিশ সুপার এম এস ভাটিয়া দাবি করেছিলেন, ঘুমের ওষুধ বা বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন শিল্পী এবং গৌতম। তবে সেই দাবি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

শিল্পী এবং গৌতমের রহস্যমৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে শেষমেশ এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় বিহার সরকার। আর এর পরই এই ঘটনায় এক নয়া তথ্য প্রকাশ্যে আসে।

তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরই শিল্পীর ‘ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড’ সংগ্রহ করে তা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠায় সিবিআই। এর পর রক্তের নমুনার জন্য আরজেডির এক যুব নেতাকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তদন্তে সহযোগিতা করেননি।

ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে দাবি করা হয়, মৃত্যুর আগে শিল্পীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এক জন নয়, অনেকে মিলে তাঁকে ধর্ষণ করেছিল। হইচই পড়ে যায় বিহারের রাজনীতিতে। কিন্তু কারা ধর্ষণ করেছিল? তা জানা যায়নি।

জল্পনা ছড়ায় যে, অন্যত্র খুন করা হয়েছিল শিল্পী এবং গৌতমকে। তার পর তাঁদের দেহ ওই গ্যারাজে গাড়ির মধ্যে রাখা হয়। এই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে সাধু যাদবের নাম উঠে আসে। সেই সময় বিরোধী দলনেতা সুশীল মোদী অভিযোগ করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়ই অভিযুক্ত। সাধু আবার গৌতমের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। তাঁরা একসঙ্গে একটি রেস্তরাঁ চালাতেন।

শোনা যায়, সাধুই নাকি সেই যুবক, যিনি ডিএনএ পরীক্ষা করাতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে এর স্বপক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনেকে এমন অভিযোগও করেন যে, অপরাধীদের আড়াল করতে স্থানীয় থানার পুলিশ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে।

৪ বছর ধরে তদন্ত চালানোর পর মামলাটি ক্লোজ় করে দেয় সিবিআই। প্রাথমিক রিপোর্ট অস্বীকার করে আশ্চর্যজনক ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, এটা আত্মহত্যাই। ধর্ষণ বা খুন নয়।

সিবিআইয়ের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়নি শিল্পীর পরিবার। শিল্পীর বাবা, মা মনে করেন তাঁদের কন্যা এবং গৌতমকে খুন করা হয়েছিল। যদি আত্মহত্যাই হয়ে থাকে তা হলে তা জানাতে ৪ বছর ধরে কেন সময় নিল সিবিআই? এই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।

দেশে অনেক অপরাধের খবরই প্রকাশ্যে আসে। যা ঘিরে হইচইও হয়। আবার সেই অপরাধ রহস্যের চাদরেই ঢাকা পড়ে থাকে। বিহারের শিল্পী এবং গৌতমের মৃত্যুও তেমনই এক রহস্য। যার কিনারা অধরাই থেকে গিয়েছে।