Salim Fruit: how a fruit seller become dreaded gangster of Dawood Ibrahim’s gang dgtl
Dawood Ibrahim
ফল বিক্রেতা থেকে দাউদের বিশ্বস্ত সঙ্গী, সিনেমাকেও হার মানাবে গ্যাংস্টার ‘সেলিম ফ্রুট’-এর কাহিনি
গ্যাংস্টার সেলিমের আসল নাম মহম্মদ সেলিম ইকবাল কুরেশি। দক্ষিণ মুম্বইয়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সেলিমের। সেলিমরা ছিলেন মোট সাত ভাই-বোন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
নাম ‘সেলিম ফ্রুট’। কুখ্যাত গ্যাংস্টার দাউদ ইব্রাহিমের অন্যতম বিশ্বস্ত শাগরেদ। নাম শুনে হাসি পেলেও আদপে তাঁর নামে এখনও থরথর করে কাঁপে মুম্বইয়ের অনেকে। সেলিম জীবন শুরু করেছিলেন ফল বিক্রেতা হিসাবে। ফল বিক্রির কারণেই তাঁর এই অদ্ভুত নাম। এর পর ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম। অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়া থেকে শুরু করে তোলাবাজি, একাধিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে জেলেও যেতে হয় সেলিমকে। কিন্তু কী ভাবে এক জন সাধারণ ফল বিক্রেতা থেকে সেলিম হয়ে উঠলেন অপরাধ জগতের ‘মুকুটহীন সম্রাট’?
০২২২
গ্যাংস্টার সেলিমের আসল নাম মহম্মদ সেলিম ইকবাল কুরেশি। দক্ষিণ মুম্বইয়ে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সেলিমের। তাঁরা ছিলেন সাত ভাই-বোন।
০৩২২
দশম শ্রেণি পর্যন্ত সইফি হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করার পর একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনার জন্য বুরহানি কলেজে ভর্তি হন সেলিম। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন। একটি ফলের দোকানে কাজ শুরু করেন সেলিম। পরে নিজের একটি ফলের দোকানও খোলেন তিনি।
০৪২২
শোনা যায়, এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে অপরাধজগতের সঙ্গে পরিচয় সেলিমের।
০৫২২
সেলিমের এক বন্ধুর দাবি, মাত্র ১৭ বছর বয়সে নকল সোনার গয়না-সহ বিভিন্ন জিনিস পাকিস্তানে পাচার করা শুরু করেন সেলিম। বার কয়েক সেলিম নিজেও জিনিসপত্র পাচার করতে পাকিস্তান গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়।
০৬২২
সেলিমের বন্ধু দাবি করেন, ওই সময় সেলিম বার বার দুবাই যাওয়া শুরু করেন। দুবাই যাওয়ার সময় বিমান করাচিতে থামলে নিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র পাচার করে তিনি আবার দুবাই উড়ে যেতেন।
০৭২২
এ রকম ভাবেই এক বার দুবাই যাওয়ার পথে সেলিমের পরিচয় হয় দাউদের ভাই আনিসের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে সেলিমের সখ্য গড়ে ওঠে। পরে আনিসের মাধ্যমেই দাউদের ডান হাত ছোটা শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেলিম।
০৮২২
এর বছর কয়েক পর শাজিয়াকে বিয়ে করেন সেলিম। শাজিয়া ছিলেন ছোটা শাকিলের স্ত্রী নাজমার বোন। সেই সময় শাকিল ডি-কোম্পানির বিভিন্ন কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। দাউদের মতো তিনিও নাম তুলেছিলেন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায়।
০৯২২
সেলিমকে পুলিশ এক বার গ্রেফতার করার পর তিনি দাবি করেন, শাকিলের স্ত্রীর বোনকে বিয়ে করার জন্যই পুলিশ তাঁকে হেনস্থা করছে।
১০২২
২০০১ সালে একটি তোলাবাজির মামলায় সেলিমের নাম আসার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেলিম, জামিল হাজি এবং মহম্মদ সাবির শেখের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেলিম নিজে ফোন করে এই টাকা চেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করে পুলিশ।
১১২২
মামলায় নাম জড়িয়ে পড়ার পরই সেলিম দুবাই পালিয়ে যান। সেখানে তিনি একটি সুপারমার্কেট খোলেন।
১২২২
২০১৬ সালে সেলিম দুবাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর তাঁকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভারতে ফিরে আসার পর মুম্বই পুলিশ ‘মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট’-এর আওতায় সেলিমকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।
১৩২২
২০১০ পর্যন্ত জেলেই ছিলেন সেলিম। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ২০১০ সালে তিনি মুক্তি পান। তবে মুক্তির পরই আবার পাচারের কাজে নামেন। বিদেশযাত্রার নাম করে একাধিক অবৈধ জিনিস দুবাইয়ে পাচার করা শুরু করেন। পাশাপাশি চালাতে থাকেন তোলাবাজি এবং আর্থিক তছরুপের কাজও।
১৪২২
শীঘ্রই, সেলিম পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন। নাল বাজারে একটি হোটেলও খোলেন তিনি।
১৫২২
এর পর ২০১৬ সালে আবারও গ্রেফতার হতে হয় সেলিমকে। ২০০৪ সালে এক চিকিৎসকের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা তোলা নেওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই বারেও প্রমাণের অভাবে তিনি বেকসুর খালাস হয়ে যান।
১৬২২
এর পর অপরাধ দমন শাখার তদন্তাধীন বিভিন্ন মামলায় সেলিমের নাম উঠে আসতে থাকে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে অপরাধ দমন শাখার তরফে কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব হয়নি।
১৭২২
২০১৪ সালেই ডি-কোম্পানিতে সেলিমের প্রাধান্য বাড়তে শুরু করে। এমনকি দলে দাউদের বোন হাসিনা পার্কারের সমান গুরুত্ব পেতে শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে হাসিনা মারা যাওয়ার পর দলের গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে সেলিমের উপর। ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি বাড়তে থাকে সেলিমের অপরাধের তালিকাও। পুলিশ তখন থেকেই সেলিমের উপর বিশেষ নজর রাখতে শুরু করে।
১৮২২
মুম্বই পুলিশের দাবি, ২০১৪ থেকে চিন, ব্যাঙ্কক, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা এবং তুরস্ক-সহ প্রায় ১৭-১৮টি দেশে সফর করেন সেলিম।
১৯২২
২০২২ সালের গোড়া থেকেই সেলিমের জীবনে কাল নেমে আসে। দাউদ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে মামলা রুজু করে এনআইএ। মুম্বইতে ডি-কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ থাকা ব্যক্তিদের এক এক করে গ্রেফতার করতে শুরু করে তদন্তকারী সংস্থা। গ্রেফতার হন সেলিমও।
২০২২
গ্রেফতারের ঠিক আগে, বিশাল কালে নামে এক ব্যক্তি সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সেলিমকে আশ্বাস দেন, উপযুক্ত টাকা পেলে তিনি তাঁকে গ্রেফতারির হাত থেকে বাঁচাতে পারেন।
২১২২
পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বিশালকে ৫০ লক্ষ টাকা দেন সেলিম। কিন্তু দুঁদে গ্যাংস্টার জানতেন না যে, বিশাল নিজেই এক জন ঠগ। পরে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার করায় বিশাল নিজেই গ্রেফতার হন।
২২২২
চলতি বছরে এনআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলেই রয়েছেন গ্যাংস্টার ‘সেলিম ফ্রুট’।