Sabrina Siddiqui, the White house Correspondent who has been trolled incidentally after asking PM Narendra Modi a 'tough' question dgtl
Sabrina Siddiqui
সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা নিয়ে মোদীকে ‘কড়া’ প্রশ্ন করে ট্রোলড, পাল্টা জবাব দিলেন সাংবাদিক
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘কড়া’ প্রশ্নে বিদ্ধ করেছেন পাক-আমেরিকান সাংবাদিক সাব্রিনা সিদ্দিকি। ঘটনাটক্রে, তার পর থেকেই তিনি সমাজমাধ্যমে ট্রোলড!
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩ ১২:৩৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখলের পর কখনও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হননি নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালে এক বার সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বটে। তবে সে বার তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমেরিকা সফরে গিয়ে তার ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
০২২১
২২ জুন হোয়াইট হাউসে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মোদীর সঙ্গে ছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় মোদীকে ‘কড়া’ প্রশ্নে বিদ্ধ করেছেন পাক-আমেরিকান সাংবাদিক সাব্রিনা সিদ্দিকি। ঘটনাটক্রে, তার পর থেকেই তিনি সমাজমাধ্যমে ট্রোলড!
০৩২১
বৃহস্পতিবারের ওই সাংবাদিক সম্মেলনে সংখ্যালঘুদের অধিকাররক্ষায় মোদী সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছিলেন সাব্রিনা। এ দেশে তাঁদের বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় বিজেপি সরকার কী কী পদক্ষেপ করতে আগ্রহী, সে প্রশ্নও তুলেছিলেন।
০৪২১
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, দেশের সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। অভিযোগ, সাব্রিনার প্রশ্নে সে সুর শোনার পরই সমাজমাধ্যমে তাঁকে নানা ভাবে বিদ্ধ করছেন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা।
০৫২১
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাব্রিনার প্রশ্ন ছিল, ‘‘দেশের মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকারের রক্ষা ও বাক্স্বাধীনতা রক্ষায় আপনি ও আপনার সরকার কী কী পদক্ষেপ করতে আগ্রহী?’’
০৬২১
সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার তথা গণতন্ত্র রক্ষায় ভারত সরকার যে সদা সক্রিয়, সে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাব্রিনার প্রশ্নের উত্তরে মোদী জানিয়েছেন, সকলকে সঙ্গে নিয়ে পথচলাই তাঁর সরকারের মূল ভিত্তি। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের উন্নতিসাধন এবং তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করাই ভারত সরকারের লক্ষ্য।
০৭২১
প্রধানমন্ত্রীর জবাব ছিল, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক দেশ। ভারত এবং আমেরিকার ডিএনএতে গণতন্ত্র রয়েছে। গণতন্ত্র রয়েছে আমাদের মননে, প্রাণস্পৃহায় এবং তা আমাদের সংবিধানেও লিখিত... ফলে জাতি, ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে ভেদাভেদের প্রশ্নই ওঠে না। এ কারণেই সকলকে সঙ্গে নিয়ে, সকলের উন্নতিসাধনে, প্রয়াসে বিশ্বাসী ভারত।’’
০৮২১
মোদী আরও বলেন, ‘‘(সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস) এটিই আমাদের (সরকারের) মূলমন্ত্র। সরকারের সুযোগসুবিধাগুলি যোগ্য সকলের কাছেই পৌঁছচ্ছে। এগুলি সকলের কাছেই সহজলভ্য।’’
০৯২১
প্রশ্নোত্তর পর্ব মেটার পর থেকেই সাব্রিনাকে ‘নিশানা’ করেছেন বিজেপি নেতারা। সাব্রিনার প্রশ্নকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি নেতা তথা দলের আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়। সমাজমাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, ‘টুলকিট গ্যাং’ (ডিজিটাল মাধ্যমে যুথবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে এই শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়)-কে যোগ্য জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
১০২১
সাব্রিনার জন্মপরিচয় নিয়েও নানা তির ধেয়ে এসেছে তাঁর দিকে। জন্মসূত্রে তিনি আমেরিকার নাগরিক। বাবা জামির সিদ্দিকির এ দেশে জন্ম হলেও পরে পাকিস্তানে চলে যায় তাঁর পরিবার। পাক-আমেরিকান সাব্রিনাকে ‘ইসলামপন্থী’র তকমা দিয়ে ট্রোল করেছেন অনেকে।
১১২১
মোদীকে ‘কড়া’ প্রশ্নের মুখে ফেলার পর থেকে তাঁকে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল বেড়েছে সংবাদমাধ্যমের। রাতারাতি শিরোনামে উঠে এসেছেন সাব্রিনা। কে তিনি?
১২২১
সাব্রিনার সমর্থনে মুখ খোলার সময় ‘অল্ট নিউজ়’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জ়ুবেরের টুইট থেকে জানা গিয়েছে, তাঁর বৃদ্ধ প্রপিতামহ ছিলেন শিক্ষাবিদ স্যর সৈয়দ আহমেদ খান। এ দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে যাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আজও স্মরণীয়।
১৩২১
টুইটারে জ়ুবেরের মন্তব্য, দেশের অগণিত মুসলিমদের মতো স্যর সৈয়দ আহমেদ খানের বংশধরকেও আনুগত্যের প্রমাণ দিতে হয়। তিনি লিখেছেন, ‘‘কট্টর দক্ষিণপন্থীদের এটা পুরনো পন্থা। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করা হলেই আপনাকে দেশদ্রোহী, পাকিস্তানি, হিন্দু-বিরোধী, ভারত-বিরোধী ইত্যাদি তকমা দেওয়া হয়।’’
১৪২১
একটি পুরনো ছবি রি-পোস্ট করে তাঁর সমালোচকদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন সাব্রিনা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, টিম ইন্ডিয়ার জার্সি পরে বাবার সঙ্গে বসে টেলিভিশন দেখছেন তিনি। ২০১১ সালের ২ এপ্রিল সে ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। উপলক্ষ্য, এমএস ধোনির নেতৃত্বে ভারতের বিশ্বকাপ জয়। সে সময় ধোনিবাহিনীর বিশ্বকাপ জয়ের প্রার্থনা করেছিলেন তিনি। নিজের ছবি দিয়ে তার প্রমাণ রেখেছেন।
১৫২১
এত দিন পর আবার ওই ছবি পোস্ট করে তার সঙ্গে সাব্রিনা লিখেছেন, ‘‘অনেকেই যেহেতু আমার ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপটের একটি দিক নিয়ে কথাবার্তা বলছেন, তাই মনে হল সম্পূর্ণ চিত্রটা দেখানো যাক। যেমনটা মনে হয়, তা থেকেও আমাদের পরিচয়গুলো মাঝেমধ্যে বেশ জটিল।’’
১৬২১
সাব্রিনার পাশে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও। মোদীর নাম না করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা আপনার ব্যক্তিগত ট্রোল সেনাবাহিনী নয় তো? তা যদি হয়, তবে এদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত।’’ সাব্রিনার উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘চিন্তা করবেন না সাব্রিনা। আপনাকে কিছুই প্রমাণ করতে হবে না। সাংবাদিক হিসাবে দারুণ কাজ করেছেন। তাতে ফুল মার্কস পাবেন।’’
১৭২১
এই মুহূর্তে সাব্রিনার ব্যক্তিজীবন নিয়ে কম আগ্রহও নেই সংবাদমাধ্যমের। সে সূত্রে খবর, ১৯৮৬ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটনে জন্ম। সেখানেই পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা।
১৮২১
নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিল স্কুল অফ জার্নালিজ়ম থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পর ওয়াশিংটন ডিসি-তে কাজ শুরু করেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাব্রিনার কাজই হল বিডেন প্রশাসনের উপর খবরাখবর নিয়ে কাজ করা।
১৯২১
এর আগে ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে খবর সংগ্রহ করতেন সাব্রিনা।
২০২১
তারও আগে ‘হাফিংটন পোস্ট’-এ চাকরি করার সময় বারাক ওবামা প্রশাসনের খুঁটিনাটি নিয়ে খবর করার জন্যও ময়দানে নেমেছিলেন তিনি। অন্য দিকে, ‘ব্লুমবার্গ’-এর হয়ে হোয়াইট হাউস সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে সাব্রিনাকে।
২১২১
বছর চারেক আগে মহম্মদ আলি সৈয়দ জাফরির সঙ্গে সংসার পেতেছেন এই সাংবাদিক। দম্পতির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।