President of Democratic Republic of Congo offered ownership of minerals to US may trigger a new conflict in Africa dgtl
DR Congo Conflict
বিদ্রোহীদের হানা ঠেকাতে ট্রাম্পকে অদ্ভুত প্রস্তাব! ছোট্ট দেশের প্রেসিডেন্টের আজব কাণ্ডে হতবাক বিশ্ব
রুয়ান্ডার মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে চলে গিয়েছে দেশের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের সমস্ত খনির অংশীদার করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলিকে খোলা প্রস্তাব দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
দেশের একাংশ কব্জা করেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠী। অন্য দিকে দেশজ খনিজ সম্পদের উপর প্রায় একচ্ছত্র দখলদারি চালাচ্ছে ড্রাগন। এই অবস্থায় দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। খনির মালিকানা দেওয়ার টোপ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপকে এক রকম ‘ঘরজামাই’ রাখতে চাইছেন তিনি। তাঁর এ-হেন পদক্ষেপে স্বার্থের সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।
০২২৫
মধ্য আফ্রিকার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো (ডিআরসি)। দীর্ঘ দিন ধরেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি রয়েছে সেখানে। চলতি বছরে সেই সুযোগকে কাজে লাগায় রুয়ান্ডা সমর্থিত স্বশস্ত্র গোষ্ঠী। অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ডিআরসির বিশাল ভূখণ্ড দখল করে তারা।
০৩২৫
এ ভাবে হঠাৎ করে জমি হাতছাড়া হওয়ায় নড়েচড়ে বসেন মধ্য আফ্রিকার দেশটির প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি। ওই ঘটনার পর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ডিআরসির খনিগুলির অংশীদারি নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলিকে খোলা প্রস্তাব দেন তিনি। বর্তমানে এই ক্ষেত্রটিতে রয়েছে চিনা আধিপত্য। ফলে প্রমাদ গুনছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।
০৪২৫
প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ বলা যেতে পারে। মধ্য আফ্রিকার দেশটির মাটির গভীরে মজুত রয়েছে দুনিয়ার অর্ধেকের বেশি কোবাল্ট ও কোল্টন। এ ছাড়া সোনা, তামা এবং লিথিয়ামের মতো খনিজ সম্পদের বিরাট ভান্ডার রয়েছে সেখানে।
০৫২৫
২১ শতকে দৈনন্দিন কাজকর্মের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিন যন্ত্রের উপর বাড়ছে নির্ভরশীলতা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোবাল্ট বা কোল্টনের মতো ধাতুর চাহিদা। কারণ কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হল কোবাল্ট। আর কোল্টন ব্যবহৃত হয় বৈদ্যুতিন গাড়ি (ইলেকট্রনিক্স ভেহিকল বা ইভি) নির্মাণে।
০৬২৫
এই অবস্থায় ডিআরসি প্রেসিডেন্টের তরফে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলিকে সরাসরি খনির অংশীদারির প্রস্তাবকে ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ তুলে দেওয়ার শামিল বলে ব্যাখ্যা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। সাক্ষাৎকারে অবশ্য এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন শিসেকেদি।
০৭২৫
দেশের বিরাট ভূখণ্ড রুয়ান্ডার মদতপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে চলে যাওয়াকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের অবস্থা এখন কিভের মতো। মস্কোর কায়দায় আমাদের ভূখণ্ড অবৈধ ভাবে কব্জা করা হয়েছে।’’ আর তাই রুয়ান্ডার উপর পশ্চিমি বিশ্বের চাপ বৃদ্ধি করতে খনিজ সম্পদের টোপ দিয়েছেন তিনি।
০৮২৫
ডিআরসি প্রেসিডেন্ট শিসেকেদি বলেছেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলি এই প্রস্তাব লুফে নিলে দ্রুত খনি চুক্তি সেরে ফেলা হবে। এর মূল লক্ষ্য হল স্থিতিশীলতা। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির থেকে অনেক বেশি নিরাপত্তা পাব আমরা।’’
০৯২৫
বর্তমানে কঙ্গোর খনিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বিনিয়োগ নেই, তা ভাবলে ভুল হবে। তবে ওয়াশিংটনের লগ্নি চিনের তুলনায় অনেক কম। অন্য দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সমঝোতায় রাজি হয়েছে রুয়ান্ডা সরকার। তারা ইইউভুক্ত দেশগুলিকে পাঠাবে সোনা, টিন এবং টাংস্টেন। বিনিময়ে মিলবে ৯৩ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার।
১০২৫
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রুয়ান্ডার মধ্যে হওয়া এই সমঝোতাকে ‘সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি’ বলে উল্লেখ করেছেন কঙ্গো প্রেসিডেন্ট শিসেকেদি। ইইউভুক্ত দেশগুলি তাঁর দেশের খনিজ সম্পদের উপর লুটপাট চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে পাল্টা যুক্তি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
১১২৫
ইইউভুক্ত দেশগুলির দাবি, এই সমঝোতার ফলে খনিজ সম্পদকে নিয়ে মধ্য আফ্রিকার দেশটিতে চলা লড়াইকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তবে প্রেসিডেন্ট শিসেকেদি অভিযোগ করায় এ বছরের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ডিআরসির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখানে রুয়ান্ডা চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকার খনিজ সম্পদ আপাতত গ্রহণ করবে না ইইউভুক্ত সমস্ত রাষ্ট্র।
১২২৫
এ বছরের গোড়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩-এর মুহুর্মুহু আক্রমণে কেঁপে ওঠে পূর্ব কঙ্গো। এই সংগঠনটির যোদ্ধার সংখ্যা আনুমানিক আট হাজার। প্রথম দিন থেকেই পর্দার আড়ালে থেকে এম২৩কে রুয়ান্ডা সরকার মদত দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। তাতে সিলমোহর দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপুঞ্জও।
১৩২৫
গত জানুয়ারিতে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শহর, গোমা এবং বুকাভু দখল করে এম২৩। তাঁদের কব্জায় রয়েছে সেখানকার দু’টি বিমানবন্দর। এই আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছে মধ্য আফ্রিকার দেশটির কয়েক হাজার সৈনিকের। বর্তমানে এম২৩ কঙ্গোর আরও একটি শহর দখল করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
১৪২৫
গোমা ও বুকাভুতে রুয়ান্ডার মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও রয়েছে। ফলে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি এম২৩-এর এক মুখপাত্র এবং রুয়ান্ডা সরকারের এক মন্ত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। অন্য দিকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য ডিআরসি প্রেসিডেন্টের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে চলেছে রুয়ান্ডা।
১৫২৫
এম২৩-এর হাতে গোমা ও বুকাভুর পতনের পর রাজধানী কিনশাসার কয়েক হাজার মাইল পশ্চিমে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স। সেখানে কাঠের প্যানেলযুক্ত অফিসে বসে ভিডিয়ো কলে কথা বলছেন তিনি। শিসেকেদি জানিয়েছেন, এম২৩-এর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবেন না তিনি। বিদ্রোহী সংগঠনটিকে সাপের খোলসের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
১৬২৫
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, মুখে অনড় ভাব দেখালেও প্রেসিডেন্ট শিসেকেদির হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের সাহায্য না পেলে বিদ্রোহীদের ঠেকিয়ে রাখা তাঁর পক্ষে অসম্ভব। ফেলিক্স অবশ্য জাতীয় স্বার্থে রুয়ান্ডার সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন। ‘‘এম২৩-এর জন্মদাতা রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী। তাদের দিয়েই কঙ্গোর খনিজ সম্পদ লুট করা হচ্ছে। তাই বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনা-অর্থনীতি।’’ সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি।
১৭২৫
অন্য দিকে এই ইস্যুতে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে। তাঁর দফতর থেকে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডিআরসি প্রেসিডেন্ট মনগড়া গল্প বলছেন। আফ্রিকার আঞ্চলিক নেতাদের সিদ্ধান্ত তাঁর মেনে নেওয়া উচিত।
১৮২৫
ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর সমস্যা সমাধানে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। কিন্তু, তাতে যে খুব একটা কাজ হয়েছে, এমনটা নয়। ডিআরসির সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট কাগামের। আর তাই ওই এলাকায় বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা।
১৯২৫
স্থানীয় সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোমার উত্তরে অবস্থিত বুটেম্বো শহর দখল করতে একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছে এম২৩। সেই হামলা ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে সরকারি ফৌজ। বুটেম্বো কব্জায় এলে রাজধানী কিনশাসাকে পরবর্তী লক্ষ্য করা হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছে এম২৩। আর সীমিত ক্ষমতা নিয়েও গোমা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শিসেকেদি।
২০২৫
তবে বিদ্রোহীদের থেকে গোমা পুনর্দখল করতে ডিআরসি সফল হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে রুয়ান্ডার সম্পর্ক বেশ মজবুত। কেনড্রিক লামারের মতো তারকাকে এনে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং কনসার্টের আয়োজন করেছে আফ্রিকার এই দেশ। ফলে রুয়ান্ডার বিরাট আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার আশঙ্কা কম বলেই মনে করা হচ্ছে।
২১২৫
বছর ৩০ আগে রুয়ান্ডায় গণহত্যা চালায় হুটু জনজাতি। তাদের হাতে প্রাণ হারান প্রায় আট হাজার নিরীহ আফ্রিকাবাসী। এঁদের সিংহভাগই টুটসি উপজাতির লোক ছিলেন। পরবর্তী কালে রুয়ান্ডায় টুটসিরা ক্ষমতায় এলে হুটুরা বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে প্রতিবেশী ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোয় পালিয়ে আসেন।
২২২৫
এম২৩ বিদ্রোহীদের অভিযোগ, শিসেকেদি সরকার কঙ্গোনিজ় টুটসিদের বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। উল্টে সেখানে আশ্রয় পাচ্ছে গণহত্যাকারী হুটুরা। ডিআরসিতে টুটসি উপজাতি অবশ্য অন্য নামে পরিচিত। মধ্য আফ্রিকার দেশটিতে তাঁদের বলা হয় বানিয়ামুলেঞ্জ।
২৩২৫
গত ৩০ জানুয়ারি কঙ্গোর যুদ্ধকে ‘গুরুতর সমস্যা’ বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ব্যাপারে আর কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, কঙ্গোয় শান্তি সেনা পাঠানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে ওয়াশিংটন।
২৪২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের খনিজ সম্পদের উপর প্রবল আকর্ষণ রয়েছে। আর তাই কঙ্গো প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মধ্য আফ্রিকায় চিনের সঙ্গে দড়ি টানাটানিতে জড়াবে আমেরিকা। যদিও এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করেনি ওয়াশিংটনের ওভাল অফিস।
২৫২৫
কঙ্গোর প্রাকৃতিক এবং খনিজ সম্পদের উপর বিশ্বশক্তিগুলির লোভ দীর্ঘ দিনের। অন্য দিকে নানা কারণে দুনিয়ার গরিব দেশগুলির তালিকায় রয়েছে ডিআরসি। এর ফৌজিশক্তিও বেশ ঢিলেঢালা। এটাই দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ করেছে বলে মনে করেন তাবড় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ।