Oldest gold of humankind found in varna necropolis was buried 6,500 year ago dgtl
Varna Necropolis
সমাধিতে ছড়ানো কেজি কেজি সোনা! নতুন ইতিহাসের সন্ধান দিয়েছিল রহস্যময় ৪৩ নম্বর সমাধি
বুলগেরিয়ার ভারনায় এই সমাধিক্ষেত্রকে বলে ভারনা নেক্রোপলিস, যা আবিষ্কারের পর চোখ কপালে উঠেছিল ইতিহাসবিদদের। ৬ হাজারেরও বেশি বছর আগে এত সোনা!
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ১৫:১১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এত পুরনো সমাধিক্ষেত্র পৃথিবীর বুকে আর খুব বেশি নেই। থাকলেও তা এ ভাবে নেই, যা ভারনায় রয়েছে। বুলগেরিয়ার ভারনায় এই সমাধিক্ষেত্রকে বলে ভারনা নেক্রোপলিস, যা আবিষ্কারের পর চোখ কপালে উঠেছিল ইতিহাসবিদদের। ৬ হাজারেরও বেশি বছর আগে এত সোনা! আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছিল। সমাজে শ্রেণিবৈষম্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল সেই সমাধি। ভেবেই হতবাক হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।
০২২০
মনে করা হয়, ৬০০০ থেকে ৬,৫০০ বছর আগে পৃথিবীর বুকে ছিল ভারনার এই সমাধিক্ষেত্র। তাম্রযুগে ভারনার বুকে গড়ে ওঠা কোনও এক সভ্যতার মানুষদের সমাধি দেওয়া হয়েছিল এখানে।
০৩২০
এখন পর্যন্ত এই ভারনা নেক্রোপলিস থেকে মোট ২৯৪টি সমাধি উদ্ধার করা হয়েছে। বুলগেরিয়ার প্রত্নতত্ত্ববিভাগ জানিয়েছে, এই সমাধিক্ষেত্র থেকে মোট ৩ হাজার সোনার জিনিস উদ্ধার হয়েছে। তবে সব সমাধি থেকে কিন্তু সোনা উদ্ধার হয়নি।
০৪২০
অত বছর আগে পৃথিবীর বুকে যে সোনার ব্যবহার ছিল, তা ভেবেই অবাক হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। অনেকেই মনে করেন, এই সভ্যতার মানুষেরাই পৃথিবীতে প্রথম সোনার ব্যবহার করতেন। যদিও এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
০৫২০
২৯৬টি সমাধির মধ্যে ৪৩ নম্বর সমাধিটি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। সব থেকে বেশি সোনা মিলেছিল সেখানেই। মনে করা হয়, কোনও দলনেতা বা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে সেখানে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু সমাধি ছিল একেবারেই ছাপোষা।
০৬২০
১৯৭২ সালে অদ্ভুত ভাবেই আবিষ্কার করা হয়েছিল এই সমাধি। কারখানা তৈরির কাজ চলছিল। এক্সক্যাভেটর যন্ত্র দিয়ে মাটি খুঁড়ছিলেন রেকো মারিনোভ। তাঁর বয়স তখন ছিল ২২ বছর।
০৭২০
মাটি খুঁড়তে গিয়ে বেশ কিছু শিল্পসামগ্রী দেখতে পান রেকো। সেগুলি জুতোর বাক্সে ভরে নিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। কয়েক দিন পর তাঁর কিছু একটা খটকা লাগে। ওই জিনিসগুলি নিয়ে তিনি প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের জানান, কী ভাবে সে সব তিনি পেয়েছেন।
০৮২০
এর পরেই প্রত্নতত্ত্ববিভাগ অনুসন্ধান শুরু করেন। খোঁজ মেলে ২৯৪টি কবরের। সেগুলি কত বছরের পুরনো জানতে, রেডিওকার্বন ডেটিং করানো হয়। জানা যায়, খ্রিস্টজন্মের ৪,৫৬০ থেকে ৪,৪৫০ বছর আগে ওই কবরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল মানুষজনকে। অনেকে মনে করেন সেগুলি ৬,৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো।
০৯২০
এই সময়কাল থেকে ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, পরিযায়ী কৃষকের প্রথম দলটি ইউরোপে যাওয়ার কয়েকশো বছর পরেই গড়ে উঠেছিল এই সমাধি। ইতিহাসবিদদের দাবি, ওই এলাকায় যত সমাধি রয়েছে, তার মাত্র ৩০ শতাংশ এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। এখনও অনেকটাই উদ্ধার হওয়া বাকি।
১০২০
প্রত্নতত্ত্ববিদেরা মনে করেন, এ সব সমাধি ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। নব্য প্রস্তর যুগে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আজ যেখানে বুলগেরিয়া, সম্ভবত সেখানেই ছিল এই সভ্যতা। সংলগ্ন বলকান অঞ্চল, নিম্ন দানিউব উপত্যকাতেও ছড়িয়ে পড়েছিল সেই সভ্যতা।
১১২০
ভারনার সমাধিক্ষেত্র থেকে সোনা ছাড়াও আরও কিছু জিনিস পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা, যা থেকে তাঁদের মনে হয়েছে সুদূর কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল এই সভ্যতার। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গেও বাণিজ্য করতেন এই সভ্যতার মানুষজন।
১২২০
ভারনার সমাধিক্ষেত্রে স্পন্ডিলাস নামে এক ধরনের কাঁটাযুক্ত অয়স্টার মিলেছে। এই অয়স্টার পাওয়া যায় ভূমধ্যসাগরে। ইতিহাসবিদদের মতে, ওই অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সময় আদানপ্রদান হত এই অয়স্টারের।
১৩২০
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ভারনায় নব্য প্রস্তর যুগের সেই সভ্যতায় মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করা হত স্পন্ডিলাস। সে কারণেই সে সব রাখা থাকত সমাধিতেও। তারা ভাবত, মৃত্যুর পরেও রয়েছে জীবন। সেই জীবনে ব্যবহারের জন্যই সমাধিতে রাখা হত সোনা, মুদ্রা।
১৪২০
ভারনার বেশ কিছু সমাধিতে বহু সোনা এবং মুদ্রা মিলেছে। সঙ্গে ব্যবহারের জিনিস। সব সমাধিতে কিন্তু এ সব মেলেনি। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, নব্য প্রস্তর যুগের ওই প্রাচীন সভ্যতায় রাজতন্ত্র ছিল। রাষ্ট্রের ধারণাও ছিল তাঁদের। যে সব সমাধিতে প্রচুর পরিমাণ সোনা, মুদ্রা রয়েছে, সেগুলি আসলে রাজাদের।
১৫২০
ভারনার সমাধিক্ষেত্রে থেকে মোট ৩ হাজার সোনার জিনিস মিলেছে। সেগুলির ওজন প্রায় সাড়ে ৬ কেজি।
১৬২০
২৯৬টি সমাধির মধ্যে সব থেকে আকর্ষক ৪৩ নম্বর সমাধিটি। ১৯৭৪ সালে এই সমাধি আবিষ্কার করা হয়। মনে করা হয়, ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সি কোনও পুরুষকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল এখানে। তাঁর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।
১৭২০
ওই সমাধি থেকে প্রায় দেড় কেজি সোনা উদ্ধার হয়েছে। ১০টি বড় বড় সোনার পাত, আংটি, বালা, গলার দু’টি হার-সহ আরও কিছু সোনার জিনিস। সঙ্গে একটি পাথর এবং একটি তামার কুঠার, যা সোনা দিয়ে বাঁধানো।
১৮২০
এ সব থেকেই প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, ৪৩ নম্বর সমাধিটি কোনও সম্রাট বা দলপতির। সকলের থেকে তিনি যে আলাদা, তা বোঝাতেই সমাধিতে ও সব দামি জিনিস।
১৯২০
এ রকম দামি জিনিস মিলেছে ভারনার ১, ৪ এবং ৫ নম্বর সমাধিতেও। মনে করা হয়, সেগুলিও বিশেষ কারও। এ সব সমাধি দেখে ইতিহাসবিদদের ধারণা, হাজার হাজার বছর আগের সেই ভারনা সভ্যতাতেও ছিল শ্রেণিবৈষম্য। এর আগে কোনও সভ্যতায় এ ভাবে শ্রেণিবৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠেনি।
২০২০
কী ভাবে ধ্বংস হয়েছিল সেই সভ্যতা? মনে করা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তনই প্রধান কারণ। সেই জন্যই মানুষ পূর্ব থেকে ক্রমে পশ্চিমে এগিয়েছিল। স্থানীয় জনজাতিদের উপদ্রবের কারণেও অনেকে ঘর ছেড়ে পশ্চিমমুখী হয়েছিলেন। তার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল সভ্যতা আর সমাধি।