Not only iran football team, many atheletes, countries have protested for political reasons in past days dgtl
Protests in Sports Events
চুল খুলে খেলা দেখছেন ইরানের তরুণীরা! বিশ্বকাপ অভিনব প্রতিবাদ দেখেছে বার বার
খেলাকে রাজনীতির ছোঁয়াচ থেকে রক্ষা করার জন্য অবশ্য চেষ্টা হয়েছে বার বার। কিন্তু খেলার মাঠে প্রতিবাদ শাসকের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে বহু বার।
সংবাদ সংস্থা
দোহাশেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
খেলার সঙ্গে রাজনীতি বরাবরই হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে। ক্রীড়াঙ্গন যে নিছক খেলা আর বিনোদনের জায়গা নয়, তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে নানা ঘটনায়। খেলাকে রাজনীতির ছোঁয়াচ থেকে রক্ষা করার জন্য অবশ্য চেষ্টা হয়েছে বার বার। কিন্তু খেলার মাঠে প্রতিবাদ শাসকের মাথাব্যথার কারণ হয়েছে বহু বার।
০২২০
কাতার বিশ্বকাপে নজর কেড়েছে ইরানের সম্মিলিত প্রতিবাদ। গোটা বিশ্ব বিস্মিত হয়ে দেখেছে, সে দেশের ফুটবলাররা জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন না। মৌনব্রত নিয়েছে ইরানের সমর্থকে ঠাসা গ্যালারিও।
০৩২০
ইরানের কঠোর মৌলবাদী ইসলামিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মৌনতাকে অস্ত্র বানিয়েছেন ইরানের ফুটবলাররা। এই তাক লাগানো প্রতিবাদের পর দেশে ফিরলে তাঁদের সকলের জন্য মারাত্মক কিছু অপেক্ষা করছে, এটা জেনেও তাঁরা পিছু হটেননি।
০৪২০
মাস দুয়েক আগে হিজাব না পরার অপরাধে ইরানের নীতিপুলিশ আটক করে তরুণী মাহশা আমিনিকে। পুলিশি হেফাজতেই মৃত্যু হয় তাঁর। তার পর থেকেই সরকার-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে ইরান। বিশ্বকাপেও দেখা গিয়েছে মাহশা আমিনির নাম লেখা জার্সি পরে, চুল খুলে গ্যালারিতে বসে রয়েছেন ইরানের যুবতীরা।
০৫২০
এই বিশ্বকাপে নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে শিরোনামে এসেছে জার্মানির ফুটবল দলও। জাপানের কাছে ২-১ গোলে পরাস্ত হওয়ার পর প্রচারমাধ্যমের সামনে মূলারদের মুখে হাত দিয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। পরে জানা যায়, বিশ্বকাপের আয়োজক এবং ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফার একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এই কাজ করেছেন তাঁরা।
০৬২০
কাতারে সমকাম নিষিদ্ধ। সে দেশে সমকামীদের কার্যত অপরাধী হিসাবে দেখা হয়। ‘মুক্তমনা’ ইউরোপীয় দেশগুলি তাই ঠিক করেছিল বিশ্বকাপে রামধনু রঙা ‘ওয়ান লাভ’ আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামবে। যাতে ফিফা এবং কাতার প্রশাসনের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যায়।
০৭২০
কিন্তু ফিফার তরফে দেশগুলিকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, এ সব পরে মাঠে নামলে খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বার করে দেওয়া হবে। তার পরই রণে ভঙ্গ দেয় দেশগুলি। জার্মানি ‘ওয়ান লাভ’ ব্যান্ড খুলে ফেললেও ফিফার এই ফতোয়ার বিরুদ্ধে মুখ চাপা দিয়ে বার্তা দেয়। বার্তাটি এই যে, আমাকে আমার কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
০৮২০
অবশ্য এই প্রথম নয়, আগেও খেলার মঞ্চ থেকে নানা উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্রীড়াবিদরা। ১৯৩৬ সালে অলিম্পিক্সের আসর বসেছিল জার্মানিতে। সে দেশে তখন নাৎসি শাসন। নাৎসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমেরিকা সেই অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ না করার হুমকি দেয়। পরে অবশ্য অংশগ্রহণ করে।
০৯২০
আবার এই অলিম্পিক্সের মাধ্যমেই জার্মান জাত্যাভিমানকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন হিটলার। কিন্তু হিটলারের সেই গুমরকে চূর্ণ করে দিয়েছিলেন আমেরিকার আফ্রো-আমেরিকান দৌড়বিদ জেসি ওয়েন্স।
১০২০
তিনি একাই জিতেছিলেন চারটি মেডেল। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে তিনি এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে স্যালুট করেন। খুব সম্ভবত, হিটলার এবং নাৎসিবাদকে বিদ্রুপ করতে তিনি এই পথ বেছে নিয়েছিলেন।
১১২০
১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিক্সে আমেরিকার দুই কৃষ্ণাঙ্গ দৌড়বিদ টমি স্মিথ এবং জন কার্লোস যথাক্রমে সোনা এবং ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দু’জনকে।
১২২০
আমেরিকার বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দোলনে সংহতি জানাতেই এ পথ বেছে নেন তাঁরা। যদিও পরে তাঁদের জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।
১৩২০
১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেনি চিন। সে বার তাইওয়ানকে স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে খেলার ছাড়পত্র দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থা। তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে চিন এই অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেনি।
১৪২০
আবার হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের প্রতিবাদে এই অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেনি নেদারল্যান্ডস, স্পেন এবং সুইৎজ়ারল্যান্ড।
১৫২০
১৯৮০ সালের শীতকালীন অলিম্পিক্সে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বয়কট করার হুমকি দেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। সোভিয়েতের আফগানিস্তান অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রায় পঞ্চাশটি দেশের প্রতিনিধিরা জাতীয় পতাকার বদলে অলিম্পিক্সের পতাকা নিয়ে খেলতে নামেন।
১৬২০
সোভিয়েত ইউনিয়ন এর ‘মধুর’ প্রতিশোধ নেয় ১৯৮৪ সালের লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সে। সোভিয়েত প্রভাবাধীন দেশগুলি আমেরিকায় হওয়া এই অলিম্পিক্সকে বয়কট করেছিল।
১৭২০
২০০৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসেছিল জার্মানিতে। সেই বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে ইরানের তরফে দাবি তোলা হয়েছিল, ইজ়রায়েলকে এশিয়া থেকে ইউরোপে পাঠানো হোক। তার পরই ইউরোপের দেশগুলি ইরানকে বয়কট করার দাবি জানায়।
১৮২০
তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল এই বয়কটের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন। তবে ইরান-মেক্সিকো ম্যাচ চলার সময় গ্যালারিতে ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় দর্শকদের একাংশকে।
১৯২০
২০১৪ সালের রিও অলিম্পিক্সের সময় বিক্ষোভ দেখান ব্রাজ়িলের জনতার বড় একটা অংশ। তাঁরা জানান, দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অভুক্ত থাকলেও শুধু বাকি বিশ্বের সামনে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার জন্য অলিম্পিক্সের পরিকাঠামো নির্মাণে বিপুল টাকা খরচ করেছে ব্রাজ়িল সরকার।
২০২০
এই রিও অলিম্পিক্সেই অংশ নিয়েছিল শরণার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি দল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শরণার্থীদের নিয়ে গড়া দল সেই প্রথম কোনও অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েছিল। বিশ্ব জুড়ে দেশহীনরা যখন মাটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন খেলার মাধ্যমেই যেন প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছিল এই দল।