কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মাল্টিপ্লেক্সের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এই এলাকার প্রতিটি সিঙ্গল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহ একে একে বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র মিনার ও স্টার ছাড়া আর বাকি প্রেক্ষাগৃহ এখন স্মৃতিচিহ্ন। মাল্টিপ্লেক্সের যুগে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত সিনেমা পাড়ার ঐতিহ্য এক টুকরো খড়ের মতো বাঁচিয়ে রেখেছে মিনার এবং ষ্টার।
১৯৩১ সালে ২৫ এপ্রিলে অমর চৌধুরী (বাঁ দিকে) পরিচালিত বাংলা ভাষার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাইষষ্ঠী’-র মুক্তি দিয়ে পথচলা শুরু হয় শ্রী-র। তার পর উত্তরার মতোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই সিনেমা হল। আবার উত্তরার মতো ৩১ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যায় শ্রী। শেষ ছবি ছিল হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির ‘আশ্রয়’।এখন এই জায়গার নাম হয়ে গিয়েছে ‘শ্রী মার্কেট’ (ডান দিকে)।
‘বিলাসবহুল’ বলার কারণ হল, তখনকার দিনে রূপবাণী ছিল শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, দর্শকদের প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য ছিল তিনটি লবি, গাড়ি পার্ক করানোর জন্য আলাদা জায়গা, সুসজ্জিত একটি বাগান এবং মহিলাদের জন্য বিশ্রামগৃহ। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জৌলুস হারিয়ে অবশেষে মাল্টিপ্লেক্সের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে রণে ভঙ্গ দেয় সিঙ্গল স্ক্রিন হল রূপবাণী।
১৯৩১ সালে বিএন সরকারের হাত ধরে পথ চলা শুরু হয় হাতিবাগানের আরও একটি সিঙ্গল স্ক্রিন হলের, যার নাম রাখা হয় ‘চিত্রা’। নিউ থিয়েটার্স স্টুডিয়োর এই হলের উদ্বোধন করেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সেই বছরই মুক্তি পাওয়া প্রেমাঙ্কুর আতর্থী পরিচালিত বাংলা সবাক ছবি ‘দেনা পাওনা’-র স্ক্রিনিং হয়েছিল এই সিনেমা হলে।
উত্তর কলকাতার বিধান সরণীর আরও একটি সিনেমা হল ছিল ‘রাধা’। ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই হলের তৎকালীন মালিক স্বর্গীয় বলাইচাঁদ বিশ্বাস শুধুমাত্র বাংলা ছবি দেখানোর নিয়ম করেছিলেন। বাংলা ছবি ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’-এর মুক্তি দিয়ে পথচলা শুরু হয় এই সিনেমা হলের। পরবর্তী কালে দর্শকসংখ্যা দিন দিন কমতে থাকলে অবশেষে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় এই হলের।
একটা সময় ছিল যখন কোনও সংলাপ ছাড়াই দর্শকদের হাসাতে হাসাতে পেটে খিল ধরিয়ে দিত চার্লি চ্যাপলিনের প্রায় প্রতিটি ছবি। ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় তেমনই একটি আমেরিকান ছবি ‘সিটি লাইটস’। আর এই ছবি দেখানো হয়েছিল হাতিবাগানের বিধান সরণীর আরও একটি ঐতিহ্যশালী সিনেমা হল ‘দর্পণা’য়। আর এই ছবি দেখতে হলের বাইরে উপচে পড়েছিল ভিড়। রাজ কপূর অভিনীত বাংলা ছবি ‘একদিন রাত্রে’-র স্ক্রিনিং হয়েছিল দর্পণায়। বাকি হলগুলির মতো এই প্রেক্ষাগৃহটিও একদিন বন্ধ হয়ে যায়। সিনেমা হলটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
‘সিনেমাপাড়া’-র অন্তর্ভুক্ত ছিল ‘খন্না’, ‘বিধুশ্রী’ ও ‘পূর্ণশ্রী’ নামে তিনটি সিনেমা হল। বাকি হলগুলির মতো এই তিনটি সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এক সময়কার বিখ্যাত ‘খন্না’ সিনেমা হল বর্তমানে মানুষের স্মৃতিতে একটি বাস স্টপের নাম হয়ে রয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy