: Neeru Yadav, the first female Panchayat President of Lambi Ahir village in Rajasthan, also known as ‘Hockeywali Sarpanch’ is helping girls in learning hockey dgtl
Hockeywali Sarpanch
শ্বশুরবাড়ির গ্রামের প্রথম মহিলা প্রধান, গ্রামের মেয়েদের হকি শেখাচ্ছেন ‘হকিওয়ালি সরপঞ্চ’
ভিন্রাজ্যে বিয়ের পর স্বামীর ঘরে গিয়ে অবশ্য বকলমে নিজের আশ মেটাচ্ছেন নীরু যাদব। গোটা দেশের কাছে যাঁর পরিচিতি রাজস্থানের ‘হকিওয়ালি সরপঞ্চ’ নামে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
জয়পুরশেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩ ১১:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, হকি স্টিক হাতে দেশের নামোজ্জ্বল করবেন। তবে হকি নয়, পড়াশোনায় মন দিতে বলেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ভিন্রাজ্যে বিয়ের পর স্বামীর ঘরে গিয়ে অবশ্য বকলমে নিজের আশ মেটাচ্ছেন নীরু যাদব। গোটা দেশের কাছে যাঁর পরিচিতি রাজস্থানের ‘হকিওয়ালি সরপঞ্চ’ নামে।
ছবি: সংগৃহীত।
০২২০
শ্বশুরবাড়ির গ্রামের মেয়েদের হকি খেলা শেখাচ্ছেন নীরু। তাদের জন্য হকি প্রশিক্ষকেরও বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। তাঁর আশা, নিজের স্বপ্ন অধরা থাকলেও এক দিন দেশের জার্সিতে হকি খেলবে গ্রামের মেয়েরা।
ছবি: সংগৃহীত।
০৩২০
গ্রামের মহিলাদের উন্নয়নেও নানা পদক্ষেপ করেছেন তিনি। সে উদ্যোগে ঢেলেছেন পঞ্চায়েতপ্রধান হিসাবে প্রাপ্ত নিজের ভাতার অর্থও। গত সেপ্টেম্বরে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ শোয়ে অমিতাভ বচ্চনের উল্টো দিকের আসনে বসে ৬ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জেতার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, গ্রামের মেয়েদের খেলাধুলো-সহ পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সে অর্থ ব্যয় করবেন।
ছবি: সংগৃহীত।
০৪২০
আদতে হরিয়ানার বাসিন্দা নীরুর বিয়ে হয়েছিল রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলায়। সেই ২০১৩ সালে। বিয়ের পর স্বামী অশোক যাদবের সঙ্গে ঝুনঝুনুর লম্বী অহীর গ্রামে পাড়ি দেন তিনি। তার সাত বছর পর ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম মহিলা প্রধান (সরপঞ্চ) হিসাবে নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
ছবি: সংগৃহীত।
০৫২০
গ্রাম পঞ্চায়েতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন নীরু। পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ের পর আক্ষরিক অর্থেই ক্ষমতার রাশ রেখেছেন নিজের হাতে। তিনি জানিয়েছেন, দেশের বহু গ্রামে মহিলারা পঞ্চায়েত প্রধানের আসনে বসলেও বকলমে তা পরিচালনা করেন তাঁদের স্বামীরা। তবে নীরুর ক্ষেত্রে তা হয়নি।
ছবি: সংগৃহীত।
০৬২০
২০২০ সালের অক্টোবরে পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর মনস্থির করে নিয়েছিলেন নীরু। দেশের বহু গ্রামের মহিলা প্রধানের মতো পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্তে তাঁর স্বামীর কোনও ভূমিকা থাকবে না।
ছবি: সংগৃহীত।
০৭২০
সংবাদমাধ্যমের কাছে নীরু বলেন, ‘‘বহু গ্রামেই লোকজনের মনে এই ছবিটা গেঁথে রয়েছে যে, পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবে পুরুষদের হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে। ফলে আমি ক্ষমতা লাভের পর কয়েক জনের আঁতে লেগেছিল। বেশ কয়েক জন অসন্তুষ্টও হয়েছিলেন। তবে তাঁরা যখন আমার কাজ দেখলেন, তখন আমাকে মেনে নিতে তাঁদের অসুবিধা হয়নি।’’
ছবি: সংগৃহীত।
০৮২০
গ্রামোন্নয়নের পাশাপাশি স্থানীয় মেয়েদের হকির প্রশিক্ষণের কাজে মনোযোগ দিয়েছিলেন নীরু। নিজের যে স্বপ্ন অধরা ছিল, তা অন্য মেয়েদের মধ্যে দিয়ে পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। হকি খেলার কথা তো দূরের কথা, গ্রামের বেশির ভাগ মেয়েদেরই কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার চল ছিল। তবে সে প্রথায় রাশ টানতে পেরেছেন নীরু।
ছবি: সংগৃহীত।
০৯২০
নীরুর কথায়, ‘‘গ্রামের মেয়েদের খেলাধুলোর জন্য কোনও মাঠ ছিল না। ফলে গোড়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে এক জন কোচের সাহায্যে হকির প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছিলাম। মেয়েদের দল গড়ার জন্য আমার সরকারি ভাতার পুরোটাই দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই। শেষমেশ গ্রামেই নিজেদের একটা খেলার মাঠ হয়েছে।’’
ছবি: সংগৃহীত।
১০২০
বেশির ভাগ দিন কোচের পাশাপাশি নিজেই হকি স্টিক হাতে মাঠে নেমে পড়েন নীরু। কমবয়সি মেয়েদের ড্রিবলিং এবং ড্র্যাগিং করাও শেখান।
ছবি: সংগৃহীত।
১১২০
নীরু বলেন, ‘‘এখন আমাদের দলে প্রতি দিন দুই থেকে ২৫ জন মেয়ে নিয়মিত খেলে। দলের কয়েক জন আবার জেলা এবং রাজ্য স্তরেও খেলতে শুরু করেছে। আবার জাতীয় দলে নির্বাচনের লক্ষ্যেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কয়েক জন।’’
ছবি: সংগৃহীত।
১২২০
ছোটবেলায় হকি ছেড়ে পড়াশোনায় মন দেওয়ায় অবশ্য বিশেষ ক্ষতি হয়নি নীরুর। গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভের পর বিএড এবং এমএড করেছেন। এই মুহূর্তে পঞ্চায়েতের কাজকর্মের পাশাপাশি পিএইচডি লাভের চেষ্টায় রয়েছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
১৩২০
পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ের পর নীরুর প্রথম পদক্ষেপ ছিল ফারমার্স প্রডিউসার্স অর্গানাইজেশন (এফপিও) নামে এক সংগঠন গড়ে তোলা। ওই সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
ছবি: সংগৃহীত।
১৪২০
নীরু বলেন, ‘‘বীজ বা সার কেনার জন্য মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতেন গ্রামের চাষিরা। এর পর গ্রাম থেকে ১০ কিলোমিটারের বেশি হেঁটে বীজ, সার কিনতে যেতে হত তাঁদের। চাষিদের জন্য সরকারি প্রকল্পের সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানতেন না তাঁরা।’’ এফপিও-র মাধ্যমে এই ছবিটাই বদলাতে চান বলে জানিয়েছেন নীরু।
ছবি: সংগৃহীত।
১৫২০
গ্রামের মহিলাদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা’ (পিএমকেভিওয়াই) প্রকল্পের আওতায় নানা প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছেন তিনি। ওই প্রশিক্ষণের পর বহু মহিলাই জয়পুরে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নীরু।
ছবি: সংগৃহীত।
১৬২০
তিনি বলেন, ‘‘স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে সহযোগিতায় সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় মহিলাদের আর্থিক প্রকল্পের বিষয়ে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে। এমনকি, কী ভাবে মোবাইল বা ইউপিআই ব্যবহার করা যায়, তা-ও শেখানো হয়েছে তাঁদের।’’
ছবি: সংগৃহীত।
১৭২০
লম্বী অহীর গ্রামে আরও এক অভিনব প্রয়াস শুরু করেছেন নীরু। গ্রামে বিয়ে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের জমায়েতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে স্টিলের বাসনকোসন দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন তিনি। সে জন্য ‘বাসনের ব্যাঙ্ক’ও গ়ড়েছেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৮২০
পরিবেশ নিয়ে সচেতনতায়ও জোর দেন তিনি। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। এ ছাড়া, ক্ষমতায় আসার পর গ্রামের রাস্তাঘাট তৈরিতেও নজর দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নীরু। এমনকি, গ্রামবাসীদের জন্য নানা প্রকল্পের বাস্তবায়নে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও তৈরি করেছেন।
ছবি: সংগৃহীত।
১৯২০
এত ব্যস্ততার মধ্যে স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি নীরু। তবে তাঁর স্বপ্ন জুড়ে রয়েছে গ্রামের মেয়েরা। তাঁদের হকি খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা। তাঁদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা। এমনই দাবি করেছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
২০২০
নীরুর কথায়, ‘‘গ্রামে একটা স্টেডিয়াম গ়ড়াই আমার স্বপ্ন। যাতে দেশের হয়ে হকি খেলতে পারে গ্রামের মেয়েরা। এ ছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তাঁদের কোনও জায়গা নেই। তার বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি একটি পাঠাগার গড়ে তুলতে চাই আমি।’’