জাপানি আগ্নেয়গিরি ‘মাউন্ট ফুজি’র চূড়ায় জমে নেই বরফ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই তুষারপাত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় আগ্নেয়গিরি। যার ত্রিশঙ্কু চূড়ায় জমে থাকা বরফ দেখতে ফি বছর ভিড় জমায় পর্যটকের দল। সেই ‘আগুনে পাহাড়’-এর ডগা থেকে বেমালুম উধাও বরফ। যা ভূবিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
০২১৬
জাপানের সুবিখ্যাত ‘মাউন্ট ফুজি’। তুষারবিহীন হয়ে থাকায় হঠাৎ করেই যা খবরের শিরোনামে চলে এসেছে। সন-তারিখের হিসাব বলছে, প্রায় ১৩০ বছর আগে দ্বীপরাষ্ট্রের আগ্নেয়গিরিটির এই বরফবিহীন দশা দেখা গিয়েছিল।
০৩১৬
সাধারণত প্রতি বছর অক্টোবরের গোড়া থেকেই মাউন্ট ফুজির মাথায় তুষার জমতে শুরু করে। সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর (২০২৩) ৫ অক্টোবরের মধ্যেই আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি বরফে ঢেকে গিয়েছিল।
০৪১৬
কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। পারদ এতটাই চড়েছে যে, নভেম্বরের মাঝামাঝিতেও মাউন্ট ফুজিতে তুষার দেখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান আবহবিদেরা। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি এ বারের গ্রীষ্মে রেকর্ড উষ্ণতা অনুভব করেছে জানা গিয়েছে।
০৫১৬
জাপানি আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ বছরের জুন এবং অগস্টে তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এই দুই মাসেই গড় উষ্ণতার থেকে ১.৭৬ সেন্টিগ্রেড ঊর্ধ্বমুখী হয় পারদ। সেপ্টেম্বরেও প্রত্যাশার চেয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বেশি গরম অনুভূত হয়েছে।
০৬১৬
জাপানের কোফু আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা ইউটাকা কাতসুতা বলেছেন, ‘‘তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে মাউন্ট ফুজিকে আমরা তুষারশূন্য অবস্থায় দেখছি। উপক্রান্তীয় এলাকার গরম বাতাস দ্বীপরাষ্ট্রের উপর দিয়ে নিরন্তর বয়ে চলেছে।’’
০৭১৬
মাউন্ট ফুজির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’বার সেখানে দেরিতে তুষারপাত দেখা গিয়েছে। দু’বারই ২৬ অক্টোবরের পর আগুনে পাহা়ড়ের চূড়া বরফে ঢেকেছিল। সালগুলি ছিল ১৯৫৫ এবং ২০১৬। এ বার ভাঙল সেই রেকর্ডও।
০৮১৬
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতসুতা বলেছেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে গরম এতটাই বেশি ছিল যে, ঠান্ডা বাতাস দ্বীপরাষ্ট্রে ঢুকতেই পারেনি। এই অবস্থায় ফুজি শৃঙ্গে কী ভাবে তুষার জমবে? আগ্নেয়গিরির বরফ ঢাকা সৌন্দর্য দেখতে হলে আমাদের হয়তো আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।’’
০৯১৬
জাপানি আবহাওয়া দফতর এ বছর অন্তত ১,৫০০টি এলাকাকে ‘অতি উষ্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে। অক্টোবরেও এই এলাকাগুলির তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি বা তার বেশি ছিল। আবহবিদদের কথায়, ‘‘তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামলে বৃষ্টির জল তুষারে পরিণত হবে। তখনই বরফে সেজে ওঠে মাউন্ট ফুজির চূড়া।’’
১০১৬
উল্লেখ্য, ১৮৯৪ সাল থেকে মাউন্ট ফুজির তুষারে ঢেকে যাওয়ার উপর নজর রেখে চলেছে টোকিয়ো প্রশাসন। এ বার ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির জন্য অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করতে নারাজ আবহবিদেরা। বরং এর জন্য বিশ্ব উষ্ণায়নকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন তাঁরা।
১১১৬
‘উদীয়মান সূর্য’-এর দেশটির সর্বোচ্চ পর্বত হল এই মাউন্ট ফুজি। যার চূড়ার উচ্চতা ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার। রাজধানী টোকিয়োর দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এর অবস্থান। ফুজির বিশেষত্ব হল আগ্নেয়গিরি হওয়া সত্ত্বেও বছরের বেশির ভাগ সময় এটি বরফে ঢাকা থাকে।
১২১৬
ফলে মাউন্ট ফুজিতে সারা বছর পর্বোতারোহীদের ভিড় লেগেই থাকে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, সেখানে হাইকিংয়ের শ্রেষ্ঠ সময়। বছরে গড়ে ২ লক্ষ ২০ হাজার পর্বতারোহীকে এখানে হাইকিং করতে দেখা যায়। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় অনেকে এখানে রাতেও ট্রেকিং করেন।
১৩১৬
প্রায় ৩০০ বছর আগে শেষ বার জেগে ওঠে মাউন্ট ফুজি। ১৭০৭ থেকে ১৭০৮ সালের মধ্যে এতে অগ্নুৎপাত হয়েছিল। জাপানের হনসু দ্বীপে এর অবস্থান। রাজধানী টোকিয়ো থেকে ফুজির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়।
১৪১৬
মাউন্ট ফুজি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম আগ্নেয়গিরি। প্রথম স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ‘মাউন্ট কেরিঞ্চি’। পৃথিবীর দ্বীপগুলির মধ্যে যে সব পর্বত রয়েছে, সেগুলির মধ্যে সপ্তম উচ্চতম হল মাউন্ট ফুজি। জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে যা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে।
১৫১৬
উদীয়মান সূর্যের দেশে তিনটি ‘পবিত্র পর্বত’ রয়েছে। ফুজিকে বাদ দিলে বাকি দু’টির নাম ‘মাউন্ট টাটে’ এবং ‘মাউন্ট হাকু’। ২০১৩ সালের ২২ জুন গোটা এলাকাটিকেই ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো।
১৬১৬
এ বছর ফুজিতে তুষারপাত না হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমেছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে টোকিয়ো। ওই এলাকায় যাওয়ার জন্য বিশেষ ফি নিয়ে থাকে জাপান সরকার। ফুজি বরফাবৃত না হলে সেই আয় যে অনেকটা কমবে, তা বলাই বাহুল্য।