আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একটি ‘গুলাবি মিনাকারি’ ব্রোচ এবং কাফলিঙ্ক সেট উপহার দিয়েছেন মোদী। এই কাফলিঙ্কগুলি রাষ্ট্রপতির জন্য এবং মানানসই ব্রোচগুলি আমেরিকার ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের জন্য তৈরি করা হয়। গুলাবি মিনাকারি উত্তর প্রদেশের বারাণসীর একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। খাঁটি রুপো দিয়ে এগুলি তৈরি করা হয়। রুপো গলিয়ে একটি নির্দিষ্ট আকার দিয়ে তার উপর পছন্দমতো নকশা বসানো হয়। এর পর এই নকশার উপর মিনা কাচ এবং বেদানার বীজ গুঁড়ো আঠা দিয়ে আটকানো হয়। পরে এই শিল্পকর্মকে আঁচ দিলে, তা হালকা গোলাপি রঙ ধারণ করে। এ জন্যই এই শিল্পকর্মের নাম ‘গুলাবি মিনাকারি’।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলা বিখ্যাত হাতে এঁকে নকশা করা বিভিন্ন জিনিসপত্রের জন্য। সেই শিল্পকর্মই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্ল্যাটিনাম রঙের উপর হাতে নকশা করা একটি চায়ের কাপ-প্লেট এবং কেটলির সেট উপহার দিয়েছেন তিনি। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের দ্বিতীয়-এর সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তিকে সম্মান জানাতেই এই বিশেষ রঙের কাপ-প্লেটের সেটটি উপহার দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে হাতে তৈরি একটি কাশ্মীরের সিল্কের কার্পেট উপহার দিয়েছেন মোদী। সিল্কের কার্পেট মূলত কারুকার্যের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। তবে সমস্ত সিল্ক কার্পেটের মধ্যে কাশ্মীরি সিল্ক কার্পেটের বিশেষ নাম রয়েছে। বিশেষ সৌন্দর্য এবং কারুকার্যের জন্য কাশ্মীরি সিল্কের কার্পেট বিশেষ ভাবে পরিচিত। কাশ্মীরি সিল্ক কার্পেট প্রধানত শ্রীনগরে তৈরি হয়। সূক্ষ্ম কারুকার্য এবং বিশেষ রঙের ব্যবহারের জন্যও কাশ্মীরি কার্পেটের নাম রয়েছে। এই কার্পেটগুলি দিনের বেলায় দেখলে এক রকম রং মনে হয়, আর রাতে দেখলে অন্য রকম রঙের বলে মনে হয়।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁকে লখনউতে তৈরি একটি জারদোজি বাক্সে সুগন্ধি আতর উপহার দিয়েছেন মোদী। জরির কাজ করা এই জারদোজি বাক্সটি ফরাসি জাতীয় পতাকার রঙের। খাদি সিল্ক এবং সাটিনের কাজও রয়েছে এই বাক্সটিতে। বাক্সটিতে নীল রঙের ধাতব তার দিয়ে পদ্ম ফুলের নকশাও করা রয়েছে। এই বাক্সের মধ্যে চন্দনের আতর, আতরের মাটি, জুঁই তেল-সহ মোট ছ’টি শিশি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিকে মার্বেলের উপর নকশা করা একটি টেবিলের উপরিভাগ উপহার দিয়েছেন। এই বিশেষ ধরনের মার্বেলের কাজ মূলত আগ্রাতে দেখতে পাওয়া যায়। ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া এই মার্বেলের কারুকার্যে ফুলের নকশার পাশাপাশি বিভিন্ন পাথর খোদাই করা রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে ইতালির মার্বেল শিল্পের বিশেষ মিল রয়েছে।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজকে মোরাদাবাদের খোদাই করা ধাতবপাত্র উপহার দিয়েছেন মোদী। নিকেলের আস্তরণে ঢাকা এবং হাতে খোদাই করা এই পিতলের পাত্রের জন্য মোরাদাবাদ বিখ্যাত। মোরাদাবাদ উত্তর প্রদেশের ‘পিতল নগরী’ নামেও পরিচিত। পিতলের পাত্রগুলিকে আকার দেওয়ার পর, যে নকশাটি খোদাই করা হবে, তা প্রথমে কাগজে আঁকা হয়। এর পর ওই পাত্রের উপর হাতে নকশা খোদাই করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে একটি ডোকরা শিল্পকর্ম উপহার দিয়েছেন মোদী। ডোকরা শিল্প হল লোহা ব্যতীত অন্য বিভিন্ন ধাতু ঢালাই করে তৈরি শিল্প। এই শিল্প চার হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। কঠিন এবং ফাঁপা ধাতু দিয়ে এই বিশেষ শিল্পকর্মগুলি তৈরি করা হয়। প্রধানত মধ্য ও পূর্ব ভারতের কারিগরদের তৈরি ডোকরা শিল্পের দেশ-বিদেশে বিপুল চাহিদা রয়েছে। সিরিলকে উপহার দেওয়া ডোকরাটি ছত্তীসগঢ়ের। হাতিতে চড়ে লক্ষ্মণ, সীতা এবং হনুমানের সঙ্গে রামের যাত্রা এই শিল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডোকে লাক্ষা দিয়ে তৈরি রামচন্দ্রের রাজসভার একটি মূর্তি উপহার দিয়েছেন মোদী। লাক্ষা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের বিশেষ এই শিল্পের নিদর্শন মেলে উত্তর প্রদেশের মন্দির-নগরী বারাণসীতে। কাঠের মূর্তির উপর লাক্ষার আস্তরণ দিয়ে এই বিশেষ শিল্পকর্ম তৈরি হয়। ডুমুরজাতীয় গাছের কাঠ দিয়ে এই মূর্তিগুলি তৈরি হয়। ভারতের মতো ইন্দোনেশিয়াতেও রামচন্দ্রের অস্তিত্বকে সত্যি বলেই মনে করা হয়। আর সেই কারণেই ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতিকে মোদী এই বিশেষ মূর্তি উপহার দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সালকে মুঞ্জ ঘাসের ঝুড়ি এবং সুতির পাপোশ উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ, সুলতানপুর এবং অমেঠী জেলায় একই ধরনের বিশেষ ঝুড়ি তৈরি করা হয়। তবে যে ঝুড়িটি উপহারে দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়াগরাজে তৈরি। উত্তর প্রদেশের সীতাপুরই হাতে বোনা সুতির পাপোশ এবং কার্পেটের জন্য প্রসিদ্ধ। সেই সুতির পাপোশই উপহার পেলেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট।
প্রসঙ্গত, জি-৭ বৈঠকে যোগ দেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের যে উপহারগুলি মোদী দিয়েছেন, সেখানেও প্রাধান্য পেয়েছে উত্তর প্রদেশই। উপহার দেওয়া হস্তশিল্প সামগ্রীগুলির আটটিই যোগীরাজ্যের। একটি শিল্পকর্ম কাশ্মীরের এবং দু’টি ছত্তীসগঢ়ের। তবে অনেক ক্ষেত্রের মতোই এখানেও ব্রাত্য থেকে গেল বাংলা-সহ অন্য রাজ্যের শিল্প। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, জি-৭ বৈঠকের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের বৈঠকে অন্য রাজ্যের শিল্পগুলিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল দেশের প্রধানমন্ত্রীর।
মূলত ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন এবং আমেরিকা নিয়ে জি-৬ তৈরি হয়। পরে সংযোজন হয় কানাডার। সেই থেকেই জি-৭। রাশিয়া স্থান পেলেও যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করে ইউক্রেন সীমান্তে হামলা চালানোর জন্য ২০১৪ সালে রাশিয়াকে এই বিশেষ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জি-৭-এ বিভিন্ন দেশের প্রধান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। ভারত জি-৭ দলের সদস্য না হলেও আরও বেশ কিছু দেশের প্রধানের পাশাপাশি মোদীকেও এই বৈঠকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy