Mia Khalifa vocal against a 'crime against humanity' following a major fire and riot at a notorious prison in Iran dgtl
Mia Khalifa
ইরানের হিজাব-বিরোধীদের মৃত্যু ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’, এ বার গর্জে উঠলেন মিয়া খলিফা
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ১২:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
হিজাব-বিরোধীদের সমর্থনে এ বার গর্জে উঠলেন প্রাক্তন পর্ন-তারকা মিয়া খলিফা। যদিও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হননি তিনি। তবে ইরানের কুখ্যাত ইভিন কারাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সমাজমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। হিজাব-বিরোধীরাই যে এই অগ্নিকাণ্ডে বলি হয়েছেন, সে ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়া। তাঁর দাবি, এই ঘটনা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’।
০২১৯
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪ জন কারাবন্দির মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন মোট ৬১ জন। যদিও প্রকৃত সংখ্যাটি বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
০৩১৯
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ইভিন কারাগার থেকে আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়ায় তেহরানের আকাশ ঢাকা পড়েছে। কারাগারের ভিতর থেকে বিস্ফোরণ এবং গুলির আওয়াজও শোনা গিয়েছে।
০৪১৯
‘কারারক্ষীদের সঙ্গে বন্দিদের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে’ আনতে জেলে গুলি চালানো হয়েছে বলে দাবি। যদিও ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ় এজেন্সি’ (আইআরএনএ)-র পাল্টা দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে জেলবন্দি অপরাধীরাই দায়ী।
০৫১৯
ইরানে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে এক সুতোয় জুড়েছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, ওই কারাগারে হাজারো বিক্ষোভকারীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে। যদিও দু’টি ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে আইআরএনএ।
যদিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, কারাগারের বাইরে ‘একনায়কের মৃত্যু’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন বহু মানুষ। প্রসঙ্গত, হিজাব-বিরোধীদের কণ্ঠে এই স্লোগানটিই বার বার শোনা গিয়েছে।
০৮১৯
মাসখানেক ধরে হিজাবের বিরোধিতায় উত্তাল হয়েছে ইরান-সহ বিশ্বের নানা প্রান্ত। যার সূত্রপাত, পুলিশি হেফাজতে ইরানের ২২ বছরের তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনা। ১৩ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার পথে মাহশার গাড়ি আটকান ইরানের নীতি-পুলিশেরা। মাহশার ‘অপরাধ’, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পোশাক-বিধি অমান্য করে হিজাব ছাড়াই বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন তিনি।
০৯১৯
অভিযোগ, পুলিশি হেফাজতে মাহশার উপর অকথ্য অত্যাচার চলে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ১৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় মাহশার। যদিও ইরান পুলিশের দাবি, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাহশা।
১০১৯
মাহশা-মৃত্যুর অভিঘাতে হিজাব-বিরোধিতার ঝড় ওঠে ইরানে। প্রকাশ্যেই হিজাব পুড়িয়ে, নিজেদের চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হন অগণিত মহিলা-সহ সাধারণ নাগরিকদের একাংশ। বিশ্বের বহু দেশেও বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে।
১১১৯
প্রতিবাদীদের দমাতে হাজারো বিক্ষোভকারীর উপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তথা আমেরিকার ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি’ (এইচআরএএনএ)-র দাবি, ২৩৩ জন প্রতিবাদীকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন ১৮ জন। যদিও এই পরিসংখ্যান স্বীকার করে না ইরান প্রশাসন।
১২১৯
ইভিন কারাগারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরব হয়েছেন মিয়া। টুইটারে তাঁর শেয়ার করা ফুটেজে গিয়েছে, ওই কারাগারের বাইরে পথ অবরোধে বসেছেন বহু মানুষ। জেলের ভিতরে ‘বিদ্রোহের অভিঘাত’ কমাতে যাতে কারারক্ষীরা ভিতরে ঢুকতে না পারেন, সে জন্যই অবরোধ বসে বলে দাবি।
১৩১৯
হিজাব-বিরোধীদের সমর্থনের আগেই সরব হয়েছিলেন মিয়া। সেপ্টেম্বরে ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্টে ইরান সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তিনি।
১৪১৯
ইভিন কারাগারে অগ্নিকাণ্ডের পরেও টুটটারে গর্জে উঠেছেন মিয়া। একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই হল সেই কারাগার, যেখানে ওঁরা (ইরান প্রশাসন) রাজনৈতিক বন্দি, প্রতিবাদী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আটকে রাখেন। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আপনারা যদি এ বিষয়ে মুখ না খোলেন, তবে নিত্য দিন যে পড়ে পাওয়া স্বাধীনতা নিয়ে ঘোরাফেরা করেন, তার যোগ্য নন।’’
১৫১৯
লেবানিজ়-আমেরিকান মিয়া অবশ্য আগেও নানা আন্দোলনের সমর্থনে বার বার গর্জে উঠেছেন। তা সে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন হোক বা আমেরিকার মাটিতে অ-শ্বেতাঙ্গদের অধিকারের লড়াই— সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন তিনি।
১৬১৯
মোদী সরকারের তিন বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী কৃষকদের হয়েও মুখ খুলেছেন মিয়া। আন্দোলনকারীদের দমাতে দিল্লির আশপাশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অভিযোগ করে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তিনি। এতে মানবাধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে টুইটও করেছিলেন মিয়া। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘কৃষকদের হত্যা করা বন্ধ করুন!’’
১৭১৯
২০২০ সালের ৪ অগস্ট বেইরুট বন্দরে বিস্ফোরণে ২১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা-সহ ৩ লক্ষের বেশি ঘরহারাদের নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মিয়া। মাতৃভূমিতে মৃতদের পরিবারের জন্য অর্থসাহায্যও করেন তিনি। তাঁর অভিনীত বেশির ভাগ পর্ন ভিডিয়োয় যে রোদচশমা পরে থাকতেন তিনি, সেটি নিলামে তুলে দেন। বেইরুট রেড ক্রসের কাছে সেই অর্থও তুলে দেন মিয়া।
১৮১৯
আমেরিকা থেকে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়া ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারস’ আন্দোলনের পক্ষ নিয়েও সরব হন মিয়া। ২০২০ সালের ২৫ মে আমেরিকার মিনিয়োপোলিসের রাস্তায় জর্জ ফ্লয়েড নামে এক ব্যক্তির গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার জেরে মৃত্যু হয়েছিল ওই অ-শ্বেতাঙ্গর। ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ড ধরে পুলিশ আধিকারিক ডেরেক শভিনের হাঁটুর চাপে শ্বাসরোধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফ্লয়েড। ওই ঘটনার পর কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকারের দাবি নিয়ে আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে। তাতে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন মিয়াও।
১৯১৯
পর্ন-তারকা থাকাকালীন ওই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের বিভ্রান্তকর চুক্তিতে ‘গরমিলে’র অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মিয়া। এখানে মহিলাদের সম্মতিকে যে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সে অভিযোগ তুলে এ নিয়ে প্রচারও শুরু করেন তিনি। এ বার আরও এক বার মিয়ার প্রতিবাদী চেহারা দেখা গেল সমাজমাধ্যমে!