Man from ladakh climbed Everest, won Padmashri, battled against Chinese dgtl
Sonam Wangyal
চিনের বিরুদ্ধে লড়েন, এভারেস্টজয়ী দলের কনিষ্ঠতম সদস্য নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলেন একাকিত্বে!
১২ বছর পর, ১৯৬৫ সালের ২২ মে এভারেস্ট জয় করেন সোনম। তখন তাঁর বয়স ২৩। ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত বাহিনী (আইটিবিপি)-তে হাবিলদার পদে ছিলেন তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৩ ১৪:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
১৯৫৩ সাল। বয়স ছিল ১২। স্কুলে প্রথম বার শুনেছিলেন খবরটা। শুনেছিলেন, মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি। সে দিনই মনে জেগেছিল ইচ্ছাটা। ঠিক করেছিলেন, এক দিন স্পর্শ করবেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। সেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছিল সোনম ওয়াঙ্গিয়ালের। তবে সেই রাস্তাটা খুব একটা সহজ ছিল না।
০২২১
সোনম একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলের প্রধানশিক্ষক এভারেস্ট জয়ের খবরটা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বুঝিয়েছিলেন সেই পর্বত কতটা উঁচু। জানিয়েছিলেন, আকাশ ছুঁয়ে যায় এভারেস্ট। ছোট সোনম ভেবেছিলেন, এত উঁচু শৃঙ্গ নিশ্চয়ই তাঁর ঘর থেকেও দেখা যাবে। অনেক চেষ্টা করেও সফল হননি।
০৩২১
১২ বছর পর, ১৯৬৫ সালের ২২ মে এভারেস্ট জয় করেন সোনম। তখন তাঁর বয়স ২৩। ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত বাহিনী (আইটিবিপি)-তে হাবিলদার পদে ছিলেন তিনি।
০৪২১
লেহর টুকচা গ্রাম থেকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে। সে দিন আর কিছুতেই ঘুম আসছিল না সোনমের। স্লিপিং ব্যাগের ভিতর শুয়ে ভাবছিলেন অতীতের কথা। ঘুমোতে চাইছিলেন। তবু পারছিলেন না। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।
০৫২১
সঙ্গী সোনম গ্যাস্তের অবস্থা তখন শোচনীয়। চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল তাঁর। তখন দুই সোনম শুধু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ দিয়েছিলেন, বেঁচে রয়েছেন বলে।
০৬২১
ভারতের প্রথম এভারেস্ট অভিযানকারী দলের কনিষ্ঠতম সদস্য ছিলেন সোনম ওয়াঙ্গিয়াল। এভারেস্ট জয়ের পর তাই একের পর এক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। অর্জুন, পদ্মশ্রী দুই খেতাবই পেয়েছিলেন সোনম। কিন্তু তার জন্য কোনও দিন গর্বিত হননি। বরং তিনি আপ্লুত, এখনও বেঁচে রয়েছেন বলে।
০৭২১
সোনমের যখন ৮ বছর বয়স, তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। বাবা বেশির ভাগ সময় কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতেন। শৈশব তাই একাকিত্বে কেটেছে সোনমের। একা বাড়িতে থেকে অবসাদে ভুগতেন। এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন।
০৮২১
সোনমের বাবা-মা দু’জনেই পড়াশোনা করেননি। তাই চেয়েছিলেন, ছেলে অন্তত পড়াশোনা করুক। স্কুল পাশ করার পর ১৯৫৭ সালে বাসগো গ্রামের একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিযুক্ত হন তিনি।
০৯২১
সেই চাকরি ভাল লাগেনি সোনমের। বন দফতরের কেরানির কাজ নেন। এক বছর পর সেই চাকরিও ছাড়েন।
১০২১
শেষে আইটিবিপিতে যোগ দেন সোনম। চ্যাং চেনমো নদী উপত্যকায় নিয়োগ করা হয় তাঁকে। তার কাছেই ছিল ভারত-চিন সীমান্ত যা নিয়ে ক্রমেই বাড়ছিল সমস্যা।
১১২১
১৯৫৯ সালের ২১ অক্টোবর। চিনের সঙ্গে সম্মুখসমরে অংশ নেন সোনম। নেতৃত্বে ছিলেন সিআরপিএফের ডেপুটি সুপার এসপি ত্যাগী এবং ডেপুটি সেন্ট্রাল গোয়েন্দা অফিসার কর্ম সিংহ।
১২২১
খবর মেলে, ভারতীয় ভূখণ্ড বেআইনি ভাবে দখল করেছে চিন। ১৯ অক্টোবর এসপি ত্যাগী, সোনম, কে ডেচেন, চেরিং নোরবু টমটম টহল দিতে বেরিয়েছিলেন। টহল দিতে দিতে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে এনগাগজো থ্যাঙ এলাকায় নজর দেন। যদিও সেখানে চিনের বাহিনীর কোনও কার্যকলাপ চোখে পড়েনি তাঁদের।
১৩২১
২১ অক্টোবর চিনের বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়। তাতে মারা যান ১০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। আরও ১০ জনকে বন্দি করে চিন সেনা। সেই কারণে আজও গোটা দেশে ২১ অক্টোবর পুলিশ স্মারক দিবস পালন করা হয়।
১৪২১
চিনের সঙ্গে সেই সংঘর্ষে প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল সোনমের। সে কারণে আজও উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ দেন। পরের বছরই প্রথম বার পর্বত অভিযানের সুযোগ পান সোনম। তখন পাহাড়ে চড়ার কিছুই জানতেন না।
১৫২১
লেহর খাং লাজাল বা স্টোক কাংড়ি অভিযানে সামিল হন সোনম। ওই পর্বতের উচ্চতা ৬,১৫৩ মিটার। এর আগে ব্রিটিশ অভিযানকারী দল চেষ্টা করেও উঠতে পারেননি ওই দুর্গম পর্বতে।
১৬২১
সোনমদের কাছে পাহাড় চড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক ছিল না। ছিল না ঠিকঠাক জুতো। প্রশিক্ষণও তেমন ছিল না। তার পরেও মন এবং গায়ের জোরেই জিতেছিলেন লক্ষ্য। সোনম একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, পাহাড়ের চূড়ায় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলেন তাঁরা। একে অন্যের গা মালিশ করে গরম করছিলেন।
১৭২১
লক্ষ্যপূরণের পর সোনম ৫০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। কারণ ওই অভিযানকারী দলেও সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। দিল্লির নির্দেশে সীমান্তের ডিউটি থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। এর পর ১৯৬৩ সালে হাতি পর্বত অভিযান করেন তিনি। তার পর আরও ২২টি এ রকম পর্বত চড়েছিলেন।
১৮২১
১৯৬৪ সালে চিঠি আসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে। এভারেস্ট অভিযানকারী দলে সামিল করা হয়েছিল তাঁকে। চিঠিতে সেই কথাই লেখা ছিল। দার্জিলিঙের পর্বতারোহণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ চলেছিল তাঁর। এর পর লাদাখ ফিরে গিয়ে আরও তিন মাস চলে প্রশিক্ষণ।
১৯২১
১৯৬৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি যান সোনম। সেখানে কেন্দ্রীয় এভারেস্ট অভিযানকারী দলের সঙ্গে যোগ দেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী তাঁদের বিদায় জানান। এর পরেই বিহারের জয়নগর সীমান্ত দিয়ে নেপালে ঢোকেন তাঁরা। শুরু হয় অভিযান।
২০২১
১৯৬৫ সালের ২২ মে দুপুর সাড়ে ১২টায় এভারেস্টের শিখরে পৌঁছন সোনম ওয়াঙ্গিয়াল। সঙ্গী সোনম গ্যাটসো। সেখানে ৫৫ মিনিট কাটিয়েছিলেন তাঁরা। প্রচুর ছবি তুলেছিলেন। পরে বেসক্যাম্পে গিয়ে বুঝেছিলেন, ক্যামেরায় ফিল্মই লোড হয়নি ঠিক করে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সোনমের।
২১২১
যদিও তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এভারেস্ট বদলে দিয়েছিল জীবন। অভিযান শেষ করে আবার যোগ দেন আইটিবিপিতে। পদোন্নতি হয়ে আধিকারিক হন। দীর্ঘ দিন রক্ষা করেছিলেন সীমান্ত। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৪ বছর সিকিমের পর্বতারোহণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ছিলেন। অনেককে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন এভারেস্ট আর কাঞ্চলজঙ্ঘায়।