Maharashtra Crisis: Before Maharashtra, same situation arrived for other states too, supreme courts keep its believe in floor test every time dgtl
Maharashtra Crisis
Maharashtra Crisis: মহারাষ্ট্রের মতো সঙ্কট তৈরি হয়েছিল আরও অনেক রাজ্যে, কিসে আস্থা রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট
মহারাষ্ট্রের মতো পরিস্থিতি আগেও বহু রাজ্যে তৈরি হয়। ক্ষমতায় কারা থাকবে ঠিক করতে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা সঠিক উপায় বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৯:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
একনাথ শিন্ডে-সহ একাধিক বেসুরো বিধায়কের চাপের মুখে পড়ে টালমাটাল অবস্থা মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ অঘাড়ী সরকারের। সেই রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমশই জলঘোলা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একাধিক জল্পনা। পরিস্থিতি সামলিয়ে উদ্ধবই মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, না সেই পদে বসবেন অন্য কোনও ব্যক্তি, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে উঠে আসছে শিন্ডের নাম। তবে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিত্বে যদি কোনও রকম রদবদল হয়, সে ক্ষেত্রে একাধিক আইনি সমস্যা এবং জটিলতাও তৈরি হতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি এই প্রথম বার তৈরি হয়নি। এর আগে একাধিক রাজ্য এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট।
০২২২
বিভিন্ন রাজ্যে এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর বছরের পর বছর ধরে বিশেষ নজর রেখেছে শীর্ষ আদালতও। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় কোন সরকার থাকবে, তা ঠিক করার জন্য বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা ‘আস্থা ভোট’ই সঠিক উপায় বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে রাজ্যপালের ক্ষমতা, বিদ্রোহী বিধায়কদের শাস্তি এবং দলত্যাগ বিরোধী আইন সংক্রান্ত কিছু জটিলতা এখনও রয়ে গিয়েছে বলে আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত।
০৩২২
১৯৯৮ সালে উত্তরপ্রদেশে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশের ১২ জন বিধায়ক দলের সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে ক্ষমতাসীন বিজেপির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, কে ক্ষমতায় থাকবে তা নির্ধারণ করতে অবিলম্বে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করতে হবে।
০৪২২
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বিজেপির কল্যাণ সিংহকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন তৎকালীন রাজ্যপাল। সরকার গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয় লোকতান্ত্রিক কংগ্রেস নেতা জগদম্বিকা পালকে।
০৫২২
তবে শপথগ্রহণের পর ফের জগদম্বিকার থেকে সমর্থন সরিয়ে বিজেপিকেই সমর্থন করেন লোকতান্ত্রিক কংগ্রেসের নরেশ অগ্রবাল-সহ বাকি বিধায়করা। এক দিনের ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হন জগদম্বিকা। ফের সরকার গঠন করেন কল্যাণ।
০৬২২
২০০৫ সালে ঝাড়খণ্ডের বিধানসভাতেও শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অভিযোগ উঠেছিল, বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সত্ত্বেও ঝাড়খণ্ডের তৎকালীন রাজ্যপাল সৈয়দ রাজি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা শিবু সোরেনের নাম ঘোষণা করেন। এর পরই সুপ্রিম কোর্ট অবিলম্বে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দেয়।
০৭২২
রাজ্যপাল বিধানসভার স্পিকার পদে সাময়িক ভাবে এক বিধায়ককেও নিযুক্ত করেন। এরও বিরোধিতা করে বিজেপি। বিজেপির অর্জুন মুন্ডা এবং অজয়কুমার ঝা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সে বছরের ১০ মার্চ ঝাড়খণ্ড বিধানসভা অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এই অধিবেশনেই শপথগ্রহণের কথা ছিল বিধায়কদের। তবে ১১ মার্চ বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই শক্তিপরীক্ষায় বিজেপি জিতে যায়। ১০ দিন মুখ্যমন্ত্রী থেকে পদ থেকে সরে আসেন শিবু। মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির অর্জুন।
০৮২২
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার বেসুরো বিধায়ক এবং রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে নবাম রাবিয়ার মামলাটি ওঠে। এ ক্ষেত্রে, ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের ৪৭ বিধায়কের মধ্যে ২১ জন রাজ্যপালের কাছে গিয়ে দাবি করেন যে, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নবম টুকিকে সমর্থন না করার কারণে তাঁদের আসন থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
০৯২২
সরকার এই বিধায়কদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করে। অরুণাচল প্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ ওঠার পর তিনি বিধানসভা অধিবেশনের ডাক দেন। নির্দেশ দেন, তৎকালীন স্পিকার, নবম রেবিয়াকে অপসারণের প্রস্তাব অধিবেশনের এজেন্ডা হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত হয় মুখ্যমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার কোনও সুপারিশ ছাড়াই। সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন নবম রেবিয়া।
১০২২
পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, দলত্যাগী কংগ্রেস বিধায়কেরা বৈধ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক দল গঠন করেননি। বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের প্রতিবাদ এবং তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে রাজ্যপাল ‘সময়ের আগে’ বিধানসভা অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন না বলেও স্পষ্ট করে সুপ্রিম কোর্ট।
১১২২
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায় যে, বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার ডাক দিতে পারতেন রাজ্যপাল। কিন্তু তিনি তা করেননি। মুখ্যমন্ত্রীকেও বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত। এর পরই রাজ্যপালের ডাকা বিধানসভা অধিবেশন এবং তৎকালীন স্পিকারকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাব খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।
১২২২
২০১৭ সালের গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের পরে, রাজ্যপাল বিজেপিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানালে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ছোট দলগুলির সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার গঠনের কথা বলছে বিজেপি। এই ছোট দলগুলির সমর্থন বিজেপির কাছে ছিল না বলেও কংগ্রেস দাবি করে।
১৩২২
মামলা ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। শীর্ষ আদালত উল্লেখ করে, ‘বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করা হলেই সম্ভাব্য সকল বিতর্ক দূর হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে ফলাফল অনেক বিশ্বাসযোগ্য হবে।”
১৪২২
২০১৮ সালে কর্নাটকেও একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কর্নাটক বিধানসভার তৎকালীন স্পিকার বিজেপির বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১৫ দিনের সময় দেন। কংগ্রেস এবং জনতা দল (সেকুলার) সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে দাবি করে যে, বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করার ক্ষেত্রে দেরি হলে প্রার্থী কেনাবেচা এবং দুর্নীতি হতে পারে। ইয়েদুরাপ্পা তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে নিয়েছিলেন। আর তা নিয়ে কংগ্রেস এবং জনতা দল (সেকুলার) আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে।
১৫২২
বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য মধ্যরাতে শুনানি শুরু হয়। তিন বিচারপতির বেঞ্চ অবিলম্বে বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। বিচারপতিরা উল্লেখ করেন, রাজ্যপালের এই ভাবে সরকার গঠনের ডাক দেওয়া বৈধ কি না, তা বিচার করা সময়সাপেক্ষ। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ই বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করার যথাযথ উপায় বলেও সুপ্রিম কোর্ট জানায়। পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করারও নির্দেশ দেয় বিচারপতিদের বেঞ্চ।
১৬২২
২০২০ সালে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-সহ কংগ্রেসের ২১ বিধায়ক দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তৎকালীন কমল নাথ সরকারের সঙ্কটে আস্থা ভোটের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। সরকার আস্থা ভোটের পরীক্ষা দিক, প্রথম এই দাবি তোলে বিজেপি। সেই নির্দেশ দেন রাজ্যপাল লালজি টন্ডনও। কিন্তু করোনার কারণে বিধানসভার অধিবেশন ২৬ দিনের জন্য পিছিয়ে দেন স্পিকার। তার পরেই এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। কংগ্রেস বিধায়কেরা ইস্তফা দিলেও স্পিকার নর্মদাপ্রসাদ প্রজাপতি জানান, তাঁর সামনে হাজির হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।
১৭২২
আস্থা ভোট নিয়ে কমলনাথ সরকারকে অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দেয় আদালত। বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বেশি সময় দেওয়া হলে, ‘ঘোড়া কেনাবেচা’র সুযোগ বাড়বে— এমন মন্তব্যও করে সুপ্রিম কোর্ট। ২০ মার্চ আস্থা ভোটের আগেই বিজেপিকে ‘গণতন্ত্র ঘাতক’ বলে ইস্তফা দেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ। এর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। আস্থা ভোটেও জয়ী হন তিনি।
১৮২২
মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ অঘাড়ী সরকারকে নিয়ে জলঘোলাও এই প্রথম নয়। একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরও। নির্বাচনের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি-শিবসেনা জোট ভেঙে যাওয়ার পরে, মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল প্রথমে বিজেপি-শিবসেনা এবং পরে এনসিপিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
১৯২২
এনসিপি, শিবসেনা এবং কংগ্রেসের জোট করে মহা বিকাশ অঘাড়ী তৈরি করে। রাজ্যপাল বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডনবীশকে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানালে শিবসেনা রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবিতে এবং অবিলম্বে বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আস্থা ভোট করার নির্দেশ দেয়। তবে এ ক্ষেত্রেও আস্থা ভোটের আগেই ফডনবীশ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পাশাপাশি আস্থা ভোটেও জেতেন উদ্ধব।
২০২২
তবে এ ক্ষেত্রেও সরকার গঠনের জন্য কোনও দলকে রাজ্যপালের আহ্বান জানানো এবং সরকার গঠনে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে যে প্রশ্ন শীর্ষ আদালতে উঠেছিল, তা এখনও বিচারাধীন।
২১২২
২০১৬ সালে একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। কিছু বিধায়ক সরকার থেকে সরে গেলে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হরিশ রাওয়াতের সরকার ভাঙনের মুখে পড়ে। রাওয়াতকে বিধানসভায় তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেয় উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই ৩১ মার্চ উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষা করার জন্য আস্থা ভোটের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
২২২২
রাওয়াত রাষ্ট্রপতি শাসন জারির বিরুদ্ধে নৈনিতালে হাই কোর্টে যান। আদালত রায় দেয় যে, সমস্ত বিধায়ককেই আস্থা ভোটে অংশ নিতে হবে। স্পিকার যে ন’জন বেসুরো বিধায়ককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছেন, তাঁরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আদালতের তরফে জানানো হয়। তবে বেসুরোরা ভোট দেবেন, আদালত কর্তৃক নিযুক্ত পর্যবেক্ষকের তত্ত্বাবধানে, এমনই নির্দেশ দেয় আদালত। আস্থা ভোটে জিতে যান রাওয়াত। পরাজয় হয় বিজেপির। তবে পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে হেরে যায় কংগ্রেস।