কাদম্বরীর মৃত্যু নিয়ে নানা চর্চা হয়েছে। সাহিত্যে, ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে এই মৃত্যু এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২২ ১৬:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
৫ জুলাই ২০২২। কাদম্বরী দেবীর জন্মদিন। ১৬৩ বছর পূর্ণ হল তাঁর। প্রায় ১৩৮ আগে আত্মহত্যা করেছিলেন নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী। ইংরেজি তারিখ ছিল ২১ এপ্রিল ১৮৮৪। বাংলা তারিখ ৮ বৈশাখ ১২৯১।
০২২৩
রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর নতুন বৌঠানের সম্পর্ক নিয়ে কম চর্চা হয়নি। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে কাদম্বরীর মৃত্যুর অভিঘাত কবিমানসে দীর্ঘ রেখাপাত করেছিল।
০৩২৩
সঙ্গত কারণেই এই মৃত্যু নিয়ে চর্চা হয়েছে বাংলার সাহিত্য, চলচ্চিত্রেও।
০৪২৩
জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে বিয়ের পর বালিকা বয়সে ঠাকুরবাড়িতে আসেন কাদম্বরী।
০৫২৩
বিচিত্রকর্মা স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ কাটিয়ে উঠেছিলেন দেওর রবির সঙ্গে সখ্য ও নৈকট্যের মধ্যে দিয়ে।
০৬২৩
নাট্যরচনা, অভিনয়, সঙ্গীতচর্চা, ‘ভারতী’ প্রকাশ— ইত্যাদির পাশাপাশি পাট-নীল ও জাহাজের ব্যবসা নিয়ে কাদম্বরীর স্বামী তখন খুব ব্যস্ত।
০৭২৩
স্বামী যখন এতটাই ব্যস্ত, তখন নিঃসন্তান কাদম্বরী বাড়ির তেতলার ছাদে বাগান করা, পশুপাখি পালন করায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন।
০৮২৩
কিছু দিন স্বর্ণকুমারী দেবীর ছোট মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো মানুষ করেছেন।
০৯২৩
হঠাৎ করে সেই মেয়েটির মৃত্যুতে ফের নিঃসঙ্গ হন কাদম্বরী। এই সময় ঠাকুরবাড়িতে আপন বলতে কাদম্বরীর ছিলেন শুধু রবি।
১০২৩
কী ভাবে আত্মঘাতী হন কাদম্বরী? ১৮৮৪-র ১৯ এপ্রিল কাদম্বরী অধিকমাত্রায় আফিম খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সম্ভবত ২০ বা ২১ এপ্রিল সকালে তিনি প্রয়াত হন।
১১২৩
শোনা যায়, প্রথা অনুযায়ী কাদম্বরীর দেহ মর্গে পাঠানো হয়নি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতেই বসানো হয়েছিল ‘করোনার্স কোর্ট’। গবেষকদের একাংশ মনে করেন, স্বয়ং মহর্ষির উদ্যোগেই রিপোর্ট লোপ করা হয়। লোপাট হয় ‘সুইসাইড নোট’ও। ৫২ টাকা ঘুষ দিয়ে মুখ বন্ধ করা হয় সংবাদমাধ্যমের। তাই কাদম্বরীর মৃত্যু সংবাদ তখন কোনও পত্রিকায় ছাপা হয়নি।
১২২৩
রবীন্দ্র-সৃষ্টিতে তার অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ‘জীবনস্মৃতি’-তেও এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কিঞ্চিৎ উল্লেখ রয়েছে।
১৩২৩
‘জীবনস্মৃতি’তে ‘মৃত্যুশোক’ অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ইতিপূর্বে মৃত্যুকে আমি কোনও দিন প্রত্যক্ষ করি নাই। কিন্তু আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয়…। তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদশোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া চলিয়াছে।’
১৪২৩
কাদম্বরীর প্রয়াণের কিছু দিন পর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নাম দিয়েছিলেন ‘আত্মা’।
১৫২৩
সেই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লেখেন, ‘যে-আত্মবিসর্জন করতে পারে, আত্মার উপর শ্রেষ্ঠ অধিকার শুধু তারই জন্মাতে পারে।’ এই প্রবন্ধ পড়ে এমন মনে হতে পারে যে ‘আত্মা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ যেন ইঙ্গিত দিলেন, কাদম্বরীর প্রয়াণ আসলে এক ‘আত্মবিসর্জন’।
১৬২৩
কাদম্বরীর মৃত্যু নিয়ে নানা চর্চা হয়েছে। সাহিত্যে, ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে এই মৃত্যু এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। যার মধ্যে থেকে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
১৭২৩
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসে এসেছে প্রসঙ্গটি। সুনীল লিখেছেন, ‘নতুন বউঠানের অভিমান অতি সাঙ্ঘাতিক। এই অভিমানে তিনি চেঁচামেচি করেন না, কাঁদেন না, তাঁর বিষাদে মগ্ন হয়ে যান। সেই সময় তিনি কথা বলতে চান না কিছুতেই। কিছু দিন আগে এই রকম এক অভিমানের সময় নতুন বউঠান আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন।’ এ ছাড়াও অনেক লেখকই কাদম্বরীকে নিয়ে নানা কাজ করেছেন।
১৮২৩
চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, সত্যজিৎ যখন ‘নষ্টনীড়’ থেকে ‘চারুলতা’ করেন, তখন সেই ছবিতে এই সম্পর্কের টানাপড়েন ছাপ ফেলেছিল।
১৯২৩
সুকান্ত রায়ের ছবিতে দেবশ্রী রায় কাদম্বরীর চরিত্রে অভিনয় করেন। তাঁর বিপরীতে ছিলেন যীশু সেনগুপ্ত। রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়।
২০২৩
তৈরি হয়েছে বন্দনা মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘চিরসখা হে’। এই ছবিতে কাদম্বরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দীপাঞ্জনা পাল। রবি ঠাকুরের চরিত্রে সায়নদীপ ভট্টাচার্য।
২১২৩
ঋতুপর্ণ ঘোষের তথ্যচিত্র ‘জীবনস্মৃতি’-তেও উঠে এসেছে প্রসঙ্গটি। কাদম্বরীর চরিত্রে অভিনয় করেন রাইমা সেন। সমদর্শী দত্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়।
২২২৩
এই সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়েই তৈরি হয় সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘কাদম্বরী’ ছবিটি। কঙ্কনা সেনশর্মা অভিনয় করেছিলেন কাদম্বরীর চরিত্রে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়।
২৩২৩
টেলিভিশনেও ভাবা হয়েছে ‘রবির নতুন বৌঠান’-এর মতো গল্প। লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ভেবেছেন এই সম্পর্ক নিয়ে কাজ করার কথা।