John McEnroe, once a top ranked Tennis player known for his infamous temper, substance abuse and colourful life dgtl
John McEnroe
John McEnroe: রাগ কমাতে দেখান ৩৭ মনোবিদকে, নারী, মাদকে মত্ত ছিলেন সাত গ্র্যান্ড স্লামজয়ী ম্যাকেনরো
কোর্টের ভিতরে ম্যাকেনরোর ‘রণং দেহি’ রূপ তো অনেকেই দেখেছেন। কোর্টের বাইরে তাঁর আচরণ কী রকম ছিল?
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২২ ১১:২০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৫
ফুটবল বা ক্রিকেট মাঠের তুলনায় টেনিস কোর্টে দর্শকদের তেমন একটা চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায় না। তবে ব্যতিক্রমী ছবিও রয়েছে। জন ম্যাকেনরো খেলতে নামলে হামেশাই চিৎকার-চেঁচামেচি, ঝামেলা করে ‘কোর্ট মাতাতেন’। তুমুল রেগে র্যাকেট ভাঙতেন। কখনও বা চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি জুড়ে দিতেন।
০২২৫
কোর্টের ভিতরে ম্যাকেনরোর ‘রণং দেহি’ রূপ তো অনেকেই দেখেছেন। কোর্টের বাইরে তাঁর আচরণ কী রকম ছিল? সাত বারের গ্র্যান্ড স্লাম জেতা টেনিস খেলোয়াড়ের রক্তমাংসের চেহারা একটি তথ্যচিত্রে দেখাতে চেয়েছেন ইংরেজ পরিচালক বার্নি ডগলাস।
০৩২৫
‘ম্যাকেনরো’ নামে ওই তথ্যচিত্রটি আমেরিকার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তি পাবে ১৫ জুলাই। যদিও ১০ জুন ট্রাইবেকা চলচ্চিত্র উৎসবে তা প্রথম বার প্রকাশ্যে এসেছে।
০৪২৫
টেনিস দুনিয়ার অন্যতম বর্ণময় চরিত্র— ম্যাকেনরোর নামের সঙ্গে এ তকমা এঁটে গিয়েছে। কোর্টের বাইরে তাঁর রঙিন জীবন নিয়েও কৌতূহল কম নয়।
০৫২৫
কোর্টের ভিতরে তিনি ওপেন যুগের অন্যতম কিংবদন্তি। কোর্টের বাইরেও কম ‘গুণপনা’ দেখাননি ম্যাকেনরো। কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন মাদকসেবনে মত্ত থেকেছেন। নাইট ক্লাবের চক্কর কেটেছেন। এক কালে একাধিক নারীসঙ্গে লিপ্ত হয়ে নিজের বিবাহিত জীবনকে প্রায় খাদেও ঠেলে ফেলে দিয়েছিলেন।
০৬২৫
কোর্টের বাইরের সেই রঙিন জীবন নিয়ে আজ আক্ষেপের শেষ নেই ম্যাকেনরোর। ডগলাসের তথ্যচিত্রের ফুটেজ দেখতে দেখতে প্রকাশ্যেই বলেছেন, কত বোকামিই না করেছেন!
০৭২৫
আশির দশকে কোর্টের বাইরেও শিরোনাম কেড়ে নিয়েছিলেন ম্যাকেনরো। ঝাঁকড়া চুলের ২৬ বছরের ম্যাকেনরোকে দেখামাত্রই প্রেমে পড়েছিলেন অস্কারজয়ী নায়িকা টেটাম ও’নিল। সে সময় টেটামের বয়স ছিল ২২।
০৮২৫
ম্যাকেনরোর সঙ্গে তাঁর রোম্যান্স নিয়ে পরে আমেরিকার টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকারে টেটাম বলেছিলেন, ‘‘অত্যন্ত সুদর্শন ছিল ও (ম্যাকেনরো)। একেবারে মন জয় করে নিয়েছিল। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।’’
০৯২৫
খ্যাতির নিরিখে ম্যাকেনরোর থেকে কিছু কম যান না টেটাম। অস্কারজয়ী বাবা রায়ান ও’নিলের সঙ্গে হলিউডে প্রবেশ মাত্র ১০ বছর বয়সে। ‘পেপার মুন’ ছবির জন্য ওই বয়সেই অস্কার জিতে নেন টেটাম।
১০২৫
এ হেন টেটামের সঙ্গে ম্যাকেনরোর প্রেম তো শিরোনামে উঠে আসবেই! তবে সে সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ালেও বেশি দিন টেকেনি।
১১২৫
১৯৮৬ সালে কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন টেটামের সঙ্গে বিয়ে। টেটামের সঙ্গে দাম্পত্যে তিন সম্তানের বাবা হয়েছিলেন ম্যাকেনরো।
১২২৫
তবে টেটাম-ম্যাকেনরোর জুটি ভেঙে গিয়েছিল ১৯৯২ সালে। সে বছর থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন তাঁরা। বছর দুয়েক পরে পাকাপাকি ভাবে সে জুটি ভেঙে খান খান।
১৩২৫
ম্যাকেনরো-টেটামের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নব্বইয়ের দশকে কম তোলপাড় হয়নি। কম বয়স থেকেই মাদকে আসক্ত ছিলেন টেটাম। বিচ্ছেদের পরেও তা নিয়ে নিজের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। সেটাই কি তাঁদের বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ? তা বোধ হয় নয়।
১৪২৫
৬৩ বছরের ম্যাকেনরো স্বীকার করেন যে টেটামের সঙ্গে দাম্পত্যে থাকাকালীনই একাধিক নারীসঙ্গে মেতেছিলেন। সে সময় নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত নাইট ক্লাব ‘স্টুডিয়ো ৫৪’-এ নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়েছে। রয়েছে পরকীয়ার টানাপড়েন। সঙ্গে মাদকে আসক্তি।
১৫২৫
আশির দশকের সেই রঙিন জীবনই যে তাঁদের বিবাহিত জীবনে আঘাত হেনেছিল, তা মনে করেন খোদ ম্যাকেনরো। তবে সেকালের কথা উঠলে ৬৩ বছরের ম্যাকেনরো বলেন, ‘‘সে সময়টা দারুণ ছিল। রোজগারের জন্য দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো আর মেয়েদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় করা।’’ সবে মিলে টেটাম-ম্যাকেনরোর ডাবলস জুটিতে চিড় ধরতে দেরি হয়নি।
১৬২৫
ম্যাকেনরোর সেই উদ্দাম জীবনে অবশ্য বদল এসেছিল। টেটামের সঙ্গে আলাদা থাকার সময় একটি ক্রিসমাস পার্টিতে রক গায়িকা প্যাটি স্মাইথের আলাপ হয়েছিল ম্যাকেনরোর। ’৯৭-এ সঙ্গে প্যাটির সঙ্গেই ঘর বাঁধেন আশির দশকের ‘ব্যাড বয়’। ২৩ বছর একসঙ্গে কাটানোর পরেও দৌড় থামেনি সে জুটির।
১৭২৫
আশির দশকের সেই বদমেজাজি ম্যাকেনরো যে আজ অনেক শান্ত, সে শংসাপত্র দিয়েছেন খোদ তাঁর স্ত্রী প্যাটি। তিনি বলেন, ‘‘একটা বাজে ছেলেকে বিয়ে করেছিলাম। তবে দেখা গেল, সে আসলে দারুণ মানুষ!’’ জুটির দুই সন্তানও রয়েছে। সব মিলিয়ে পাঁচ সন্তানকে নিয়ে সুখেই ঘর কাটাচ্ছেন প্যাটি এবং ম্যাকেনরো।
১৮২৫
ম্যাকেনরোর দাম্পত্যজীবনের পাশাপাশি তাঁর বদমেজাজি চেহারা নিয়েও কম কাটাছেঁড়া হয়নি। আশির দশকে উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টের ফাইনালে বিয়ন বর্গের সঙ্গে তাঁর পাঁচ সেটের অতিমানবীয় যুদ্ধে চতুর্থ সেটটি গড়িয়েছিল ৩৪ পয়েন্টের টাই-ব্রেকারে। পঞ্চম সেটটি ৬-৮ গেমে ছিনিয়ে খেতাব জিতে নেন ম্যাকেনরো।
১৯২৫
বিজেতার ট্রফি হাতে ম্যাকেনরোর ছবি ছাপিয়েও ভেসে ওঠে টেনিস কোর্টে র্যাকেট ভাঙার দৃশ্য কিংবা চেয়ার আম্পায়ারের সঙ্গে তুমুল তর্ক জুড়ে দেওয়া উদ্ধত এক রাগী মুখ।
২০২৫
১৯৮১ সালের বর্গ বনাম ম্যাকেনরো ম্যাচে চেয়ার আম্পায়ারের দিকে ছুড়ে দেওয়া সেই কিংবদন্তি উক্তি, ‘‘ইউ ক্যাননট বি সিরিয়াস!’’ এ সবই ম্যাকেনরোকে টেনিসের লোকগাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
২১২৫
তিন বারের উইম্বলডনের পাশাপাশি চারটি যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। সঙ্গে যোগ করুন সিঙ্গলস এবং ডাবলসে শীর্ষস্থানে থাকা বা দুই ধরনের টেনিসে ৭০টি করে খেতাব। ম্যাকেনরো নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
২২২৫
পেশাদারি জীবনে সব সময় সেরাটা দিতে গিয়ে কি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন ম্যাকেনরো? কোর্টের ভিতর এত ঘন ঘন মেজাজ হারাতেন কেন? ম্যাকেনরো নিজেই স্বীকার করেছেন, কেরিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালীন ৩৭ জন মনোচিকিৎসক এবং মনোবিদের সাহায্য নিতে হয়েছে। সবই তাঁর বদমেজাজ সামলানোর জন্য।
২৩২৫
বাবা জন প্যাট্রিক ম্যাকেনরোর সিনিয়রের সুরায় আসক্তি কি ম্যাকেনরোর বদমেজাজে ইন্ধন জুগিয়েছিল? অথবা ১৯৮৬ সালে বাবাকে নিজের এজেন্ট পদ থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনাও কি ম্যাকেনরোর জীবনে প্রভাব ফেলেছিল? ম্যাকেনরো এক সময় বলেছিলেন, ‘‘আমার এজেন্ট হিসাবে সরানোটা সহ্য করতে পারেননি বাবা। মনে করেছিলেন, আমি তাঁকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছিলাম।’’
২৪২৫
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাকেনরোর বাবা মারা যান। শেষ দিন পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে তিক্ততা মেটেনি। সে বছরের অক্টোবরে মা ক্যাথরিনও ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে যান। এ সবই প্রভাব ফেলেছিলেন ম্যাকেনরোর জীবনে।
২৫২৫
’ ৮৬-তে বাবাকে নিজের এজেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর টেনিস থেকে ছ’মাসের বিরতি নিয়েছিলেন ম্যাকেনরো। তবে ওই বছর থেকে ম্যাকেনরো কখনও সিঙ্গলস খেলোয়াড় হিসাবে এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে পৌঁছতে পারেননি।