Irma Grese, infamously known as 'The Beautiful Beast' and 'Hyena of Auschwitz', committed crimes against Jewish inmates during Nazi Germany dgtl
Hyena of Auschwitz
মহিলা কয়েদিদের ধর্ষণ, মৃত ইহুদিদের চামড়া ছাড়িয়ে বাতিদান তৈরি করতেন ‘আউশভিৎজ়ের হায়েনা’
আউশভি়ৎজ় এবং বেলসেন শিবিরের কয়েদিদের প্রতি অত্যাচার এবং খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন ইরমা গ্রিজ়। ওই মামলায় মাত্র ২২ বছর বয়সি গ্রিজ়কে ফাঁসিকাঠে ঝোলায় ব্রিটিশ সরকার।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
বার্লিনশেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
এত উজ্জ্বল আর নিষ্পাপ দু’টি চোখ যেন কল্পনার অতীত। তাঁর নীলবর্ণ আঁখির দিকে তাকিয়ে এমনই মনে হত আউশভিৎজ়ের শিবিরে বন্দি জ়িজ়েলা পার্লের। এমন চোখধাঁধানো সুন্দরী তিনি কমই দেখেছেন বলে মত ওই মহিলা চিকিৎসকের।
০২২৪
নাৎসি শিবিরের সেই সুন্দরী রক্ষী ইরমা গ্রিজ়ের চোখ দু’টি যতই নিষ্পাপ হোক না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য ইহুদি বন্দির উপর অকথ্য অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল।
০৩২৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধী হিসাবে দোষী সাব্যস্ত হন ইরমা। আউশভি়ৎজ় এবং বার্গেন-বেলসেন বা বেলসেন শিবিরের কয়েদিদের প্রতি অত্যাচার এবং খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। ওই মামলায় মাত্র ২২ বছর বয়সে তাঁকে ফাঁসিকাঠে ঝোলায় ব্রিটিশ সরকার।
০৪২৪
বিংশ শতকে ইরমাই ছিলেন সবচেয়ে কমবয়সি অপরাধী, যাঁর ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী ফাঁসি হয়েছিল। গত শতকের চল্লিশের দশকে র্যাভেনসব্রাক এবং আউশভিৎজ়-বারকেনউ শিবিরে প্রহরার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ ছাড়া, বার্গেন-বেলসেনের শিবিরে ওয়ার্ডেন হিসাবেও কাজ করেছেন।
০৫২৪
নাৎসি শিবিরগুলিতে বন্দিদের অভিযোগ, একাধিক মহিলা বন্দিকে ধর্ষণ করতেন ইরমা। সেই সঙ্গে চালাতেন অমানুষিক নিষ্ঠুরতা। তাঁর বিরুদ্ধে বন্দিদের খুন করারও অভিযোগ উঠেছিল।
০৬২৪
আউশভিৎজ়ের বন্দিরা জানিয়েছিলেন, রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে না পড়া পর্যন্ত ইহুদি মহিলাদের চাবুক মেরে চলতেন ইরমা। ইহুদি বন্দিদের মৃত্যু হলে তাঁদের চাম়ড়া ছাড়িয়ে নাকি বাতিদানের ‘শেড’ তৈরির কাজে লাগাতেন। নিষ্পাপ চোখের ওই সুন্দরীই যে এত নৃশংস কাজ করতে পারেন, তা মনে করেও শিউরে ওঠেন জ়িজ়েলা।
০৭২৪
বন্দিদশার বিবরণ দিতে গিয়ে ইরমার কথা তুলে ধরেছেন জ়িজ়েল। তিনি লিখেছেন, ‘‘ইরমার মতো এত সুন্দরী কখনও দেখিনি। তার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ ছিল নিখুঁত। পরীদের মতো স্বচ্ছ মুখাবয়ব। নীলবর্ণের চোখ দু’টিতে এত নিষ্কপটতা, যে কল্পনা করা যায় না। ইরমা গ্রিজ় ছিলেন আমার দেখা সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং কল্পনাতীত বিকৃতমতি।’’
০৮২৪
ইরমার পুরো নাম ছিল ইরমগার্দ ইলজ়ি ইডা গ্রিজ়। ১৯২৩ সালের ৭ অক্টোবর জার্মানির উত্তরাঞ্চলে ভ্রেকেন নামের একটি ছোট গ্রামে জন্ম হয়েছিল তাঁর।
০৯২৪
বার্লিন থেকে প্রায় ৮১ কিলোমিটার দূরে মেকেলবার্গ এলাকায় বসবাস করতেন ইরমার মা-বাবা তথা ডেয়ারিকর্মী বার্টা এবং অ্যালফ্রেড গ্রিজ়। তাঁদের তৃতীয় সন্তান ছিলেন ইরমা।
১০২৪
বেলসেন মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই স্কুলের সহপাঠীদের হাতে অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন ইরমা। ওই মামলায় সাক্ষ্যদানের সময় তাঁর বোন হেলেন জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক স্কুলে সহপাঠীদের ভয়ে সিঁটিয়ে থাকলেও ইরমা প্রতিবাদ করেননি। বরং স্কুল থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে আসতেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা ছাড়ার নেপথ্যে সহপাঠীদের অত্যাচার অন্যতম কারণ ছিল বলেও দাবি করেন হেলেন।
১১২৪
স্কুল ছাড়ার আগেই আরও অঘটনের সম্মুখীন হয়েছিলেন কিশোরী ইরমা। তিন মেয়ে, দুই ছেলে-সহ স্বামীর সঙ্গে ভালই কাটছিল বার্টার। তবে ১৯৩৬ সালে হয় অঘটন। স্থানীয় এক পানশালা মালিকের কন্যার সঙ্গে অ্যালফ্রেডের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আত্মহত্যা করেন ইরমার মা। সে সময় ইরমার বয়স মোটে ১৩।
১২২৪
মায়ের মৃত্যুর বছর দুয়েক পর একটি সংস্থায় ছ’মাস কাজ করেছিলেন ইরমা। সেখান থেকে একটি দোকানে এবং পরে নাৎসি জার্মানির আধাসামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি হাসপাতালে কাজ নেন। বছর দুয়েক সেই হাসপাতালেই কাজ করেছেন তিনি।
১৩২৪
ছোটবেলায় বহু কিশোর-কিশোরীর মতো নাৎসি একনায়ক অ্যালফ্রেড হিটলারের ভক্ত ছিলেন ইরমা। দু’বোনের মতোই নাৎসি পার্টির যুব সংগঠন ‘লিগ অফ জার্মান গার্লস’-এ যোগদানের ইচ্ছাও ছিল। তবে বাবার চোখরাঙানিতে তা হয়ে ওঠেনি।
১৪২৪
১৭ বছরের জন্মদিন পালনের আগেই অবশ্য ইরমা বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। হিটলারের আধাসামরিক বাহিনী শুটজ়স্টাফির মহিলা কর্মীদের প্রশিক্ষণে যোগ দেন। র্যাভেনসব্রাকের কনসেনট্রেশন শিবিরের অদূরেই অনুশীলন চলতে সংগঠনের ইরমাদের।
১৫২৪
প্রশিক্ষণের পর ১৯ বছর বয়সে র্যাভেনসব্রাকের শিবিরে রক্ষীর কাজে নিযুক্ত হন ইরমা। সেই শিবিরে বন্দিদের উপর নজর রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। তবে কন্যার এ কাজে যোগদানের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ছিলেন না অ্যালফ্রেড। সে বছরেই তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে দেন।
১৬২৪
পরের বছর ১৯৪৩ সালে ইরমাকে বদলি করা হয় আউশভিৎজ়ে। নাৎসি জমানার সবচেয়ে কুখ্যাত সেই শিবিরেও রক্ষীর কাজ পেয়েছিলেন তিনি। হিটলারের মতাদর্শে বিশ্বাসী ইরমার পদোন্নতি হতে দেরি হয়নি।
১৭২৪
শুটজ়স্টাফিরতে সিনিয়র সুপারভাইজ়ার পদে বসানো হয়েছিল ইরমাকে। সে সময় ওই সংগঠনের মহিলাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ছিল সেটি। ১৯৪৫ সালে আউশভিৎজ় থেকে বেলসেন শিবিরের ওয়ার্ডেনের দায়িত্ব পান তিনি। আউশভিৎজ় থেকে অসংখ্য বন্দিকে নতুন শিবিরে নিয়ে গিয়েছিলেন ইরমা।
১৮২৪
১৯৪৫-এর ১৭ এপ্রিল ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন ইরমা-সহ শুটজ়স্টাফির ৪৫ জন সদস্য। এর পর তাঁদের বিরুদ্ধে জার্মানির লুনবার্গে মামলা শুরু হয়। বেলসেন মামলা নামে পরিচিত ওই মামলার প্রথম পর্বে ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি হয়েছিল।
১৯২৪
ইরমার পক্ষে ব্রিটিশ সামরিক আইনের আওতায় ওই পর্বের শুনানিতে সওয়াল করেছিলেন মেজর এল ক্যানফিল্ড। আদালতে সাক্ষ্যদানের সময় ইরমার নৃশংসতার বিবরণ দিয়েছিলেন নাৎসি শিবিরের থাকা বহু ইহুদি। তাঁর অত্যাচারের কাহিনি উঠে এসেছে আউশভিৎজ়ের এককালের বন্দি ওলগা লেনগিয়েলের ‘ফাইভ চিমনিস’ নামে আত্মকথায়।
২০২৪
ওলগার দাবি, একাধিক নাৎসির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন ইরমা। আউশভিজ়ের গ্যাস চেম্বারে বন্দিদের পাঠানো বা তাঁদের উপর নির্মম পরীক্ষানিরীক্ষা করার জন্য ‘মৃত্যুর দেবদূত’ নামে পরিচিত চিকিৎসক জোসেফ মেলগেলের সঙ্গেও নাকি তাঁর সম্পর্ক ছিল। ওলগার মতে, ঈর্ষাবশত বেছে বেছে সুন্দরী বন্দিদের উপর অত্যাচার করতেন ইরমা।
২১২৪
নাৎসি জমানা নিয়ে গবেষণাকারী অধ্যাপক ওয়েন্ডি আডেল-মারি সার্টির দাবি, মহিলাদের স্তনের প্রতি বিকৃত আকর্ষণ ছিল ইরমার। বহু ইহুদি বন্দিকে ধর্ষণ করেছেন তিনি। বন্দিদের উপর নিজের কুকুরকে ছেড়ে দিতেন। বন্দিদের উপর ক্রমাগত চাবুক চালানো বা বুট দিয়ে লাথি মারাও তাঁর নিত্যদিনের শখ ছিল।
২২২৪
‘জিউয়িশ ভার্চুয়াল লাইব্রেরি’ নামে একটি ওয়েবসাইটের দাবি, অত্যাচারের পর বন্দিদের মৃত্যু হলে তাঁদের চামড়া ছাড়িয়ে নিতেন তিনি। এর পর সেগুলি নিজের বাড়ির একাধিক বাতিদানে লাগিয়ে রাখতেন।
২৩২৪
বেলসেন মামলা চলাকালীন ইরমার নামের সঙ্গে একাধিক তকমা জুড়ে গিয়েছিল। কারও মতে, তিনি ছিলেন ‘আউশভিৎজ়ের হায়েনা’। কেউ বা তাঁকে ‘সুন্দরী পশু’ বলে ডাকতেন। নাৎসি জমানার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত মহিলা যুদ্ধপরাধীর’ তকমাও জুটেছে তাঁর।
২৪২৪
ন’সপ্তাহের শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ হিসাবে বার বার হিসাবে দাবি করেন ইরমা। তবে ইরমা ও তাঁর দুই সহকর্মী জোয়ানা বোরমান, এলিজ়াবেথ ফোলকেনরাথ-সহ আউশভিৎজ় এবং বেলসেনের আট পুরুষকর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। ওয়েন্ডির দাবি, ১৯৪৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর ফাঁসিকাঠে ওঠার আগের রাত থেকে ভোর পর্যন্ত জোয়ানার সঙ্গে নাৎসি গান গাইতে থাকেন ইরমা।