Iran Once helped Pakistan with arms to fight against India dgtl
Iran-Pakistan Relation
এক সময়ের ‘খাস দোস্ত’! ভারতের বিরুদ্ধে লড়তে ‘বন্ধু’ পাকিস্তানের হাতে অস্ত্রও তুলে দেয় ইরান
কয়েক দিনের মধ্যে যে দু’দেশ একে অপরের ‘গলা টিপে’ ধরতে উদ্যত হয়েছিল, এক সময় তারা ছিল হরিহর আত্মা। এমনকি, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল ইরান।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১৩০
বালুচিস্তান সীমান্তে একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা আপাতত খানিকটা নিয়ন্ত্রণে। দু’দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া ফাটল কমাতে রাজি হয়েছে উভয় পক্ষই।
০২৩০
সম্প্রতি ইরান এবং পাকিস্তান— উভয়েই বালুচিস্তান সীমান্তে একে অপরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পরেই অশান্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। দু’দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও আন্তর্জাতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়। তবে সেই আবহেই নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক শুধরে নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানায় দুই দেশ।
০৩৩০
কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে যে দু’দেশ একে অপরের ‘গলা টিপে’ ধরতে উদ্যত হয়েছিল, এক সময় তারাই ছিল হরিহর আত্মা। এমনকি, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল ইরান।
০৪৩০
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের আবহে ইরান কী ভাবে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল এবং কী ভাবে তাদের সম্পর্ক মধুর থেকে তিক্ত হয়েছে।
০৫৩০
পাকিস্তানের জন্মের প্রায় পরে পরেই ইরান এবং পাকিস্তান সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট স্বাধীন দেশ হিসাবে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বকে সবার প্রথম স্বীকৃতি দেয় ইরান। ১৯৫০ সালের মে মাসে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে দুই ‘বন্ধু’।
০৬৩০
১৯৫৬ সালে প্রতিবেশী দেশের সফরে গিয়েছিলেন ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শাহ রেজা পহলভি। তিনিই ছিলেন পাকিস্তান সফরে আসা প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান। এর পরে পরেই তেহরানে দূতাবাস চালু করে পাকিস্তান।
০৭৩০
ভারত যখন আরবের দেশগুলির নেতা হিসাবে মিশরকে সমর্থন করে, ভারতের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইরান। ইরানের অবস্থানকে সমর্থন জানাতে এগিয়ে এসেছিল প্রতিবেশী পাকিস্তান।
০৮৩০
ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে ইরান এবং পাকিস্তান ১৯৫৫ সালে কমিউনিস্ট বিরোধী জোট, ‘সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সেন্টো)’ তৈরি করে।
০৯৩০
এর পর ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের দোসর হিসাবে ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল ইরানকে। পাকিস্তানের ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসাবে তাদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল ইরান।
১০৩০
১৯৬৫ সালের যুদ্ধবিরতির পর, ইরানের বিদেশ মন্ত্রক নিজেদের বিবৃতিতে বলেছিল, ‘‘পাকিস্তানের উপর ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’’
১১৩০
১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর বিশ্ববাজার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয় পাকিস্তান। তখনও পরিত্রাতা হিসাবে এগিয়ে আসে ইরান। জার্মানি থেকে অস্ত্র এনে পৌঁছে দেয় পাকিস্তানের হাতে।
১২৩০
পাকিস্তান যখন পশ্চিমের দেশগুলি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারছে না, তখন ইরান পশ্চিম জার্মানির কাছ থেকে অনেক এফ-৮৬ যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া গাড়ি এবং গোলাবারুদ কিনেছিল। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার নথি বলছে, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ইরান থেকে পাকিস্তানে ‘হোম ডেলিভারি’ করা হয়েছিল।
১৩৩০
১৯৭১ সালের যুদ্ধেও পাকিস্তানকে ১২টি হেলিকপ্টার, কামান, বন্দুক এবং গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল ইরান। আমেরিকার হাতে থাকা নথি অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে কম দামে তেলও সরবরাহ করেছিল ইরান।
১৪৩০
কিন্তু এত করেও লাভ হয়নি। দুই যুদ্ধেই পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল ভারত। ইরানের তৎকালীন শাহ অবশ্য ১৯৭১ সালের যুদ্ধকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘নির্লজ্জ আগ্রাসন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।
১৫৩০
সেই সময় পৃথক বালুচিস্তানের দাবি তোলা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালাত ইরান এবং পাকিস্তান।
১৬৩০
তবে শাহের শাসনকালের শেষ থেকে ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।
১৭৩০
১৯৭৪ সালে ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান লাহোর সফর এড়িয়ে যান। মনে করা হয়, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মর গদ্দাফিকে পাকিস্তান আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলেই ইরানের তরফে পাকিস্তান সফর বাতিল করা হয়।
১৮৩০
এর পর ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের পর আমেরিকা পালিয়ে যান পহলভি। পহলভির সঙ্গে যে পাকিস্তান সরকারের খাস ‘দোস্তি’ ছিল তারা ইরানের নতুন শাসকদের স্বীকৃতি দেয়।
১৯৩০
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন শাসকদের জমানায় পাকিস্তানের ইরানস্তুতি আর কাজে দেয়নি। ধীরে ধীরে চিড় ধরতে থাকে দু’দেশের সম্পর্কে।
২০৩০
১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে শাসকের আসনে বসেন পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়া-উল-হক। জিয়ার অধীনে, পাকিস্তানে সুন্নিদের প্রভাব বাড়তে থাকে। অন্য দিকে, ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর ইরান আদ্যোপান্ত ভাবে শিয়া রক্ষণশীল ধর্মীয় শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
২১৩০
সেই থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু হয়ে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হওয়ার প্রধান কারণ, উভয় দেশের মধ্যে সুন্নি এবং শিয়া সংক্রান্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজন।
২২৩০
উল্লেখযোগ্য যে, সংঘাতে জড়িয়ে পড়া ইরান এবং পাকিস্তান দুই দেশের বিরুদ্ধেই এর আগে একাধিক বার সীমান্ত এলাকায় হামলা চালায় এমন জঙ্গি গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
২৩৩০
ইরান এবং পাকিস্তানের প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ দীর্ঘ দিন ধরেই ইসলামাবাদ এবং তেহরানের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই সীমান্তবর্তী ৯০০ কিলোমিটার এলাকা মাদক পাচার ও সন্ত্রাসবাদের মুক্তাঞ্চল বলেও বার বার অভিযোগ উঠেছে।
২৪৩০
এই ৯০০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বালুচিস্তান অঞ্চল, যা উভয় দেশ জুড়ে বিস্তৃত। ওই বিস্তৃত এলাকায় আধিপত্য রয়েছে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের। এরা দীর্ঘ সময় ধরে পৃথক বালুচিস্তানের দাবিতে বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। ওই সংগঠনগুলির কার্যকলাপ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে।
২৫৩০
ইরানের অভিযোগ, পাকিস্তান সীমান্তের দিকে থাকা সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ অল অদল দীর্ঘ দিন ধরে দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
২৬৩০
আমেরিকার এক গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তার মতে, জইশ অল অদল ২০১৩ সাল থেকে ইরানে একাধিক হামলা চালিয়েছে। ইরানের বহু সরকারি আধিকারিককে ‘খুন এবং অপহরণের’ সঙ্গেও তারা জড়িত।
২৭৩০
২০১৩ সালের অক্টোবরে, জইশ অল অদলের জঙ্গিরা ইরানের ১৪ জন সীমান্তরক্ষীকে হত্যা করে। ২০১৯ সালে ইরানের আধাসামরিক গোষ্ঠী, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড-এর উপর একটি আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল। যাতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই বছর ইরানের ১৪ জন সেনাকে অপহরণের অভিযোগও রয়েছে ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
২৮৩০
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের যে পতন সম্প্রতি লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার অন্যতম কারণ হিসাবে ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)’-এর কার্যকলাপকেই দেখছেন কূটনীতিকরা।
২৯৩০
টিটিপি একটি পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গি সংগঠন। ইসলামাবাদের অভিযোগ টিটিপি আদ্যোপান্ত পাকিস্তান বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাদের সমর্থন জোগায় তালিবান।
৩০৩০
এ ছাড়াও পাকিস্তান থেকে আফগান উদ্বাস্তুদের নির্বাসন এবং আফগানিস্তানের পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের উপর ভিসা নিয়ে কড়াকড়ির জন্যও দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা গিয়েছে।