Iran girl alleges sexual punishment for not wearing hijab dgtl
Iran Hijab Row
পোশাক খুলতে বাধ্য করে পুলিশ, হিজাব না পরলেই ‘যৌন শাস্তি’! বিস্ফোরক ইরানি তরুণী
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হন মেরি। বর্তমানে তিনি আমেরিকায়। মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে সংবাদমাধ্যমের কাছে মেরি মুখ খুলেছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২২ ১১:১০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
ইরানের এক মুসলিম পরিবারে জন্মেছিলেন মেরি মহম্মদি। পরে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করেন। ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন মেরি। তার পর থেকেই দেশের মাটিতে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ।
০২১৮
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য হন মেরি। বর্তমানে বাস করছেন আমেরিকায়। মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে সংবাদমাধ্যমের কাছে মেরি মুখ খুলেছেন। তাঁকে দেশের মাটিতে কী কী সহ্য করতে হয়েছিল, রাখঢাক না করেই সে সব জানিয়েছেন।
০৩১৮
মেরির দাবি, ২০২০ সালে এক বার ঠিক মতো হিজাব না পরার ‘অপরাধে’ তাঁকে আটক করেছিল পুলিশ। রাখা হয়েছিল তেহরানের কাছেই একটি ডিটেনশন সেন্টারে।
০৪১৮
সেই ডিটেনশন ক্যাম্পে তাঁকে পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মেরি। যদিও সেখানে সকলেই ছিলেন মহিলা, তবু প্রশাসনের এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি।
০৫১৮
মেরির অভিযোগ, ইরানে মেয়েদের দমিয়ে রাখার জন্য যৌন হেনস্থার আশ্রয় নেয় প্রশাসন। নানা ভাবে মেয়েদের হুমকি দেওয়া হয়। এটাই ইরান সরকারের প্রতিবাদী স্বর দমনের কৌশল।
০৬১৮
ইরানে মুসলমান মেয়েদের সঙ্গে অমুসলমান মেয়েদেরও হিজাব পরতে হয়। দেশের আইন অনুযায়ী তা বাধ্যতামূলক। মেরি ধর্ম পরিবর্তন করার পরও তাঁকে তাই হিজাব পরে মাথা ও শরীরের বাকি অংশ ঢেকে রাখতে হত।
০৭১৮
২৪ বছর বয়সি এই ইরানি সমাজকর্মী জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে একটি বাসে তেহরান যাচ্ছিলেন তিনি। গরম লাগায় মাথা থেকে হিজাব কিছুটা সরিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে এগিয়ে আসেন এক আদ্যোপান্ত হিজাব পরিহিতা মহিলা। তিনি মেরিকে কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকতে বলেন।
০৮১৮
কিন্তু অপরিচিত ওই মহিলার কথায় রাজি হননি তরুণী। তিনি বাসেই তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ওই মহিলা তাঁকে আক্রমণ করেন বলেও অভিযোগ। মেরির মুখ কেটে গিয়েছিল।
০৯১৮
রক্তাক্ত মুখ নিয়ে তিনি থানায় গিয়েছিলেন বিচার চাইতে। কিন্তু অভিযোগ, তাঁর কথায় পুলিশ কান দেয়নি। তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। অভিযুক্ত মহিলাকে ছেড়ে দিয়ে মেরিকে থানায় আটকে রাখা হয়েছিল।
১০১৮
মেরি জানিয়েছেন, ইরানে নীতিপুলিশির বাড়বাড়ন্তে তিনি এবং তাঁর মতো স্বাধীনচেতা মেয়েরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গোঁড়া মুসলমানরাও মেয়েদের উপর একই ভাবে ছড়ি ঘোরান। ফলে দেশে মেয়েদের স্বাধীন ভাবে বাঁচার পরিবেশই নেই।
১১১৮
২০১৭ সালে ইসলাম ত্যাগ করে মেরি খ্রিস্টান হয়েছিলেন। তার পর থেকেই জীবনের নানা ক্ষেত্রে তাঁকে বাধার সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় কোনও কারণ ছাড়াই তাঁকে বরখাস্ত করে। ধর্মের কারণে কাজও হারান মেরি।
১২১৮
তিনি জানিয়েছেন, যে স্বাস্থ্যচর্চা কেন্দ্রে তিনি চাকরি করতেন, অতিমারির সময় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেখানে আর তাঁকে ফেরানো হয়নি।
১৩১৮
ইরানে মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই ধরনের দমনমূলক আইনের বিরুদ্ধে যাঁরা মুখ খোলেন, তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয় বলে দাবি করেছেন ‘দেশছাড়া’ মেরি। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবাদীদের উপর যৌন শোষণ ইরানের প্রশাসনের অন্যতম হাতিয়ার।
১৪১৮
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানীতে ২২ বছরের তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যু হয়। তার পর থেকে দেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। অভিযোগ, হিজাব না পরার অপরাধে তাঁকে আটক করা হয়েছিল। মেরির মতোই তিনিও প্রশাসনের চোখরাঙানির শিকার হয়েছিলেন। পুলিশি হেফাজতেই মাহশার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। দেশ জুড়ে তার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়।
১৫১৮
মাহশার মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নামেন ইরানের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সাধারণ মানুষ। মেয়েরা প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়ে, মাথার চুল কেটে ফেলে প্রতিবাদে শামিল হন। আন্দোলনকারীদের উপর ইরান সরকারের নিরাপত্তারক্ষীদের অত্যাচারের খবরও প্রকাশ্যে এসেছে।
১৬১৮
ইরানের সংবাদমাধ্যমে মাহশা-মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে অন্তত ৪০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়। তবে অসমর্থিত সূত্রে দাবি, মাহশা-কাণ্ডে পথে নামা প্রতিবাদীদের ২৩০ জনকে খুন করেছেন নিরাপত্তারক্ষীরা।
১৭১৮
মেরির মতে, ইরানবাসীর আর চুপ করে থাকলে চলবে না। ইরানে বিপ্লব প্রয়োজন। মাহশা-কাণ্ডের পর যে আন্দোলন দেশ দেখেছে, তেমন আরও ঝাঁঝালো আন্দোলন ইরানে বিপ্লব ঘটাতে পারবে বলে মনে করেছেন মেরি।
১৮১৮
একই সঙ্গে মেরির ধারণা, তাঁর দেশের জনগণ জেগে উঠেছে। বিপ্লবের সে দিন আর বেশি দেরি নেই। ইরানের ইতিহাসে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, মনে করছেন মেরি।