Umoja, men are banned to stay in this village dgtl
Kenya
পুরুষদের নো এন্ট্রি, পুত্র সন্তানও ১৮ বছরের বেশি থাকতে পারে না মহিলাদের এই গ্রামে
কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সাম্বুরু। এই গ্রামে সাম্বুরু আদিবাসীদের বাস। এ ছাড়াও তুর্কানা এবং অন্যান্য আদিবাসীও থাকেন কয়েক জন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:১৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম সাম্বুরু। এই গ্রামে সাম্বুরু আদিবাসীদের বাস। এ ছাড়াও তুর্কানা এবং অন্যান্য আদিবাসীও থাকেন কয়েক জন।
০২২৩
বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের নানা আদিবাসী মহিলাদের মতো সাম্বুরু মহিলারাও সমাজের পিছিয়ে পড়া সারিতে ছিলেন। তাঁদের গণ্য করা হত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে। সাম্বুরুর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের প্রায় নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন পুরুষেরা।
০৩২৩
কিছু সামাজিক কুপ্রথার জন্য তাঁদের যৌনাঙ্গহানি, অকথ্য নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে যেতে হত। জোর করে নাবালিকাদের বিয়েও দিয়ে দেওয়া হত। এমনকি একাধিক পুরুষের ধর্ষণের শিকারও হতেন তাঁরা। অথচ তাঁদের কথা শোনার জন্য কেউ ছিলেন না।
০৪২৩
এমনকি স্বামীর ইচ্ছা হলে স্ত্রীকে হত্যাও করতে পারতেন। মহিলাদের পাশে দাঁড়ানোর ছিলেন না কেউ। বরং স্বামীকে সমর্থন করার জন্য আরও অনেক পুরুষ তৈরি থাকতেন। মহিলাদের জন্য এ রকমই নিষ্ঠুর ছিল সাম্বুরু। মূলত স্বামীর সম্পত্তি হয়েই জীবন কাটাতেন সেখানকার মহিলারা।
০৫২৩
এই নির্যাতন সহ্য করতে করতে এক সময় দেওয়ালে পিঠ থেকে গিয়েছিল সাম্বুরু মহিলাদের। গড়ে উঠল উমোজা— মহিলাদের নিজস্ব গ্রাম। যেখানে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
০৬২৩
১৯৯০ সালে রেবেকা ললোসলি নামে মহিলা নির্যাতিত এবং বিতাড়িত আরও কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে এই পুরুষমুক্ত গ্রাম গড়ে তুলেছিলেন।
০৭২৩
রেবেকা নিজেও একজন নির্যাতিতা। সাম্বুরুতে নিযুক্ত সেনারা নির্যাতন চালাত মহিলাদের উপর। তাঁদের নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন সেনারা। যখন তখন মহিলাদের তুলে নিয়ে গিয়ে চলত ধর্ষণ।
০৮২৩
এক সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার সাম্বুরু মহিলা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। স্বামীদেরও তাঁরা পাশে পাননি। স্বামীরা উল্টে তাঁদের বাড়িছাড়া করেছিলেন। সেই দলে রেবেকাও ছিলেন। এমন আশ্রয়হীন ১৫ জন মহিলাকে নিয়েই নিজেদের জন্য আশ্রয় গড়ে তোলেন রেবেকা।
০৯২৩
এখন সাম্বুরুর সমস্ত নির্যাতিতারা এই উমোজাতেই আশ্রয় নেন। এই গ্রামে শুধুমাত্র মহিলাদের কথাই চলে। মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচেন তাঁরা।
১০২৩
বহু অন্তঃসত্ত্বাও এখানে ঠাঁই নেন। যদি তাঁরা পুত্র সন্তানের জন্ম দেন, তা হলে সন্তানের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত সেই সন্তান এই গ্রামে থাকার অনুমতি পায়। ১৮ বছর হয়ে গেলে তাঁকে উমোজা ছাড়তে হয়। শর্ত এমনই।
১১২৩
উমোজা গড়ে তোলাটা সহজ ছিল না রেবেকাদের কাছে। মহিলাদের আধিপত্য কিছুতেই মানতে পারছিলেন না পুরুষেরা। রেবেকাদের অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে। একজোট হয়ে লড়েছেন তাঁরা।
১২২৩
এমন নয় যে উমোজার মহিলারা বাইরে বার হন না। তাঁদের সমস্ত জায়গায় যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। বাজার করা, ঘুরে বেড়ানো সবই করে থাকেন। তাঁদের কথা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠল উমোজা।
১৩২৩
পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠার ফলে তাঁদের উপার্জনের রাস্তাও খুলে যায়। সমস্ত দিক থেকেই স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন মহিলারা। সাম্বুরুর পুরুষরা যা মানতে পারছিলেন না কিছুতেই।
১৪২৩
তাঁরাও আলাদা পুরুষ-গ্রাম গড়ে তুলে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। খুব চেষ্টা করেছিলেন যাতে পর্যটকেরা উমোজাতে না যান, যাতে মহিলাদের উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু পুরুষ-গ্রামের পরিকল্পনা সাফল্য পায়নি।
১৫২৩
উমোজার বাড়তে থাকা জনপ্রিয়তা আরও হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়াতে থাকে পুরুষদের কাছে। একাধিকবার তাঁদের গ্রামে আক্রমণ করে ঘর-বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। মামলা করে মহিলাদের দখলে থাকা ওই জমি ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়।
১৬২৩
কিন্তু যত বেশি আঘাত তাঁদের উপর করা হয়েছে, ততটাই বুমেরাং হয়ে তা ফিরে এসেছে পুরুষদের উপর। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসে রাষ্ট্রপুঞ্জ, কেনিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রক। আইনত ওই উমোজার জমি এখন মহিলাদের।
১৭২৩
অর্থ দিয়ে সাহায্যের পাশাপাশি উপার্জনের বিভিন্ন উপায় জানাতে মহিলাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় এখানে। পর্যটনের পাশাপাশি কুটির শিল্প এবং চাষবাস করেও তাঁরা উপার্জন করেন এখন।
১৮২৩
নিজেদের জমি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছেন তাঁরা। তার ভিতরে মাটি, গোবর আর ঘাস দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে থাকেন। মহিলাদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি আরও বহু সামাজিক কাজে নিযুক্ত তাঁরা। অনাথ শিশুদের বড় করেন তাঁরা।
১৯২৩
এখন সাম্বুরু পুরুষদেরও ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে উমোজা। তবে শুধুমাত্র ঘুরে দেখার জন্য। রাত্রিযাপনের কোনও অনুমতি নেই তাঁদের।
২০২৩
শেষ ২০১৫ সালে লোকগণনা হয়েছিল এখানে। সেই অনুযায়ী, তখন ৪৭ জন মহিলা এবং শ’দুয়েক শিশু ছিল উমোজায়।
২১২৩
সাম্বুরুর শিশুরা যেখানে শৈশব কাটায় গবাদিপশু বিচরণ করিয়ে। উমোজার শিশুরা পড়াশোনা শেখে। উমোজাতে তাদের জন্য স্কুলও রয়েছে একটা।
২২২৩
২০১৫ সালে কেনিয়ায় এসেছিলেন বারাক ওবামা। উমোজার এই গ্রামে ঘুরে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “বিশ্ব জুড়েই মহিলাদের দমিয়ে রাখার একটি রীতি রয়েছে। মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করা হয়। এ সমস্ত কু-রীতিনীতি বদলানোর প্রয়োজন। অঙ্গহানি, বালিকা বিবাহের মতো প্রথাগুলো অনেক পুরনো। এই শতাব্দীতে এগুলোর কোনও জায়গা থাকা উচিত নয়।”
২৩২৩
২০১৫ সালে কেনিয়ায় এসেছিলেন বারাক ওবামা। উমোজার এই গ্রামে ঘুরে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “বিশ্ব জুড়েই মহিলাদের দমিয়ে রাখার একটি রীতি রয়েছে। মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করা হয়। এ সমস্ত কু-রীতিনীতি বদলানোর প্রয়োজন। অঙ্গহানি, বালিকা বিবাহের মতো প্রথাগুলো অনেক পুরনো। এই শতাব্দীতে এগুলোর কোনও জায়গা থাকা উচিত নয়।”