Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Vineyard

অগ্ন্যুত্পাতে ধ্বংস হয়েছিল গোটা দ্বীপ, আজ সেখানেই তৈরি হয় বিশ্বের সেরা ওয়াইন

অগ্ন্যুৎপাতের জেরে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় গোটা দ্বীপ। লাভার স্রোতের নীচে হারিয়ে গিয়েছিল একরের পর একর চাষযোগ্য জমি। এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়াইনের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে দ্বীপটি।

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১০:৫৮
Share: Save:
০১ ১২
অগ্ন্যুৎপাতের জেরে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় গোটা দ্বীপ। লাভার স্রোতের নীচে হারিয়ে গিয়েছিল একরের পর একর চাষযোগ্য জমি। সে প্রায় দুশো বছর আগের ঘটনা। আজও কালো ছাই এবং পাথরে ঢাকা বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে তার মধ্যেই প্রাণের রসদ খুঁজে পেয়েছেন মানুষ। এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়াইনের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে দ্বীপটি।

অগ্ন্যুৎপাতের জেরে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল প্রায় গোটা দ্বীপ। লাভার স্রোতের নীচে হারিয়ে গিয়েছিল একরের পর একর চাষযোগ্য জমি। সে প্রায় দুশো বছর আগের ঘটনা। আজও কালো ছাই এবং পাথরে ঢাকা বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে তার মধ্যেই প্রাণের রসদ খুঁজে পেয়েছেন মানুষ। এখন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ওয়াইনের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে দ্বীপটি।

০২ ১২
অতলান্তিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত লাঞ্জারত দ্বীপটি অগ্ন্যুৎপাত প্রবণ বলে পরিচিত। ১৪০২ সাল নাগাদ সেখানে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু ১৭৩০ – ১৭৩৬ সালের মধ্যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলি জেগে উঠতে শুরু করে। তাতে প্রায় দশটি গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১৮২৪ সালেও একবার লাভা উদ্গীরণ হয় সেখানে।

অতলান্তিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত লাঞ্জারত দ্বীপটি অগ্ন্যুৎপাত প্রবণ বলে পরিচিত। ১৪০২ সাল নাগাদ সেখানে জনবসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। কিন্তু ১৭৩০ – ১৭৩৬ সালের মধ্যে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিগুলি জেগে উঠতে শুরু করে। তাতে প্রায় দশটি গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১৮২৪ সালেও একবার লাভা উদ্গীরণ হয় সেখানে।

০৩ ১২
সেই থেকে কালো ছাই এবং পাথরে ঢাকা লাঞ্জারত দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছপালা তেমন নেই বললেই চলে। জায়গা বিশেষে মাটির রংও আলাদা। এদিক ওদিক জ্বালামুখ, বিশাল আকারের গর্ত এবং নানা রকমের পাথরের স্তূপ চোখে পড়ে। আর তার মধ্যেই যেন মরুদ্যানের মতো জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠেছে আঙুরের খেত।

সেই থেকে কালো ছাই এবং পাথরে ঢাকা লাঞ্জারত দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা। গাছপালা তেমন নেই বললেই চলে। জায়গা বিশেষে মাটির রংও আলাদা। এদিক ওদিক জ্বালামুখ, বিশাল আকারের গর্ত এবং নানা রকমের পাথরের স্তূপ চোখে পড়ে। আর তার মধ্যেই যেন মরুদ্যানের মতো জায়গায় জায়গায় গড়ে উঠেছে আঙুরের খেত।

০৪ ১২
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এক সময় কৃষিকাজই লাঞ্জারতের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল। কিন্তু অগ্ন্যুৎপাতের পর সমস্ত উর্বর জমি নষ্ট হয়ে গেলে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু কালো ছাই এবং পাথুরে জমিতেও বিশেষ কিছু গাছ বেড়ে উঠতে পারে বলে পরে বুঝতে পারেন তাঁরা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, এক সময় কৃষিকাজই লাঞ্জারতের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল। কিন্তু অগ্ন্যুৎপাতের পর সমস্ত উর্বর জমি নষ্ট হয়ে গেলে দিশাহারা হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। কিন্তু কালো ছাই এবং পাথুরে জমিতেও বিশেষ কিছু গাছ বেড়ে উঠতে পারে বলে পরে বুঝতে পারেন তাঁরা।

০৫ ১২
ছাই এবং লাভা নির্গত পদার্থ মিশে সেখানকার জমি খানিকটা স্পঞ্জের মতো হয়ে গিয়েছে। জল ঢাললে তাড়াতাড়ডি শুষে নিলেও, মাটি ভিজে থাকে অনেক ক্ষণ। আবার ছাইয়ের স্তরও মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

ছাই এবং লাভা নির্গত পদার্থ মিশে সেখানকার জমি খানিকটা স্পঞ্জের মতো হয়ে গিয়েছে। জল ঢাললে তাড়াতাড়ডি শুষে নিলেও, মাটি ভিজে থাকে অনেক ক্ষণ। আবার ছাইয়ের স্তরও মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

০৬ ১২
আমেরিকান ও আফ্রিকান প্লেট বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে অতলান্তিক মহাসাগরের শীতল বাতাস যেমন ঢোকে, তেমনই আফ্রিকার গরম আবহাওয়ার প্রভাবও পড়ে মাটিতে, আঙুর চাষের জন্য যা আদর্শ পরিবেশ। তাই ভেবে চিন্তে সেখানে আঙুর খেত তৈরি করার উদ্যোগ শুরু হয়।

আমেরিকান ও আফ্রিকান প্লেট বিচ্ছিন্ন হয়ে গড়ে ওঠা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে অতলান্তিক মহাসাগরের শীতল বাতাস যেমন ঢোকে, তেমনই আফ্রিকার গরম আবহাওয়ার প্রভাবও পড়ে মাটিতে, আঙুর চাষের জন্য যা আদর্শ পরিবেশ। তাই ভেবে চিন্তে সেখানে আঙুর খেত তৈরি করার উদ্যোগ শুরু হয়।

০৭ ১২
কিন্তু তাতেও বাধা আসে। অতলান্তিকের প্রবল হাওয়ায় আঙুর গাছের নরম ডাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমনকি মাটি সুদ্ধ গাছ উপড়ে যাওয়ারও পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা থেকে বাঁচতে অভিনব উপায় খুঁজে বার করেন স্থানীয় কৃষকরা।

কিন্তু তাতেও বাধা আসে। অতলান্তিকের প্রবল হাওয়ায় আঙুর গাছের নরম ডাল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এমনকি মাটি সুদ্ধ গাছ উপড়ে যাওয়ারও পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা থেকে বাঁচতে অভিনব উপায় খুঁজে বার করেন স্থানীয় কৃষকরা।

০৮ ১২
চারাগাছ পোঁতার আগে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে অগভীর চ্যাপ্টা আকারের গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে গাছ বসাতে শুরু করেন তাঁরা। এর ফলে গাছকে না ছুঁয়ে হাওয়া গর্তের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে পাথরের স্তূপ গড়ে উঠেছিল যত্রতত্র, সেখান থেকে পাথর নিয়ে ওই গর্তের চারিদিকে দেওয়ালও তুলে দেওয়া হয়। তবে উচ্চতা এমন রাখা হয়, যাতে গাছের উপর ছায়া না পড়ে কোনও ভাবে।

চারাগাছ পোঁতার আগে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে অগভীর চ্যাপ্টা আকারের গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে গাছ বসাতে শুরু করেন তাঁরা। এর ফলে গাছকে না ছুঁয়ে হাওয়া গর্তের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে যে পাথরের স্তূপ গড়ে উঠেছিল যত্রতত্র, সেখান থেকে পাথর নিয়ে ওই গর্তের চারিদিকে দেওয়ালও তুলে দেওয়া হয়। তবে উচ্চতা এমন রাখা হয়, যাতে গাছের উপর ছায়া না পড়ে কোনও ভাবে।

০৯ ১২
সেই থেকে এ ভাবেই একের পর এক আঙুর খেত গড়ে উঠেছে লাঞ্জারত দ্বীপে। এগুলিকে ঘিরে রমরমা বেড়েছে ওয়াইন ব্যবসার। স্বাদে-গন্ধে বিশ্বের অন্য ওয়াইনের থেকে যা একেবারেই আলাদা। আবার দামও তুলনামূলক কম। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, স্পেন তো বটেই, আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এই দ্বীপে তৈরি ওয়াইন যথেষ্ট জনপ্রিয়।

সেই থেকে এ ভাবেই একের পর এক আঙুর খেত গড়ে উঠেছে লাঞ্জারত দ্বীপে। এগুলিকে ঘিরে রমরমা বেড়েছে ওয়াইন ব্যবসার। স্বাদে-গন্ধে বিশ্বের অন্য ওয়াইনের থেকে যা একেবারেই আলাদা। আবার দামও তুলনামূলক কম। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, স্পেন তো বটেই, আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও এই দ্বীপে তৈরি ওয়াইন যথেষ্ট জনপ্রিয়।

১০ ১২
লাঞ্জারতের সবচেয়ে পুরনো ওয়াইনারি এল গ্রিফতো ১৭৭৫ সালে গড়ে ওঠে। রেড এবং হোয়াইট— দুই ধরনের ওয়াইনই তৈরি করে তারা। এমনকি একটি মিউজিয়ামও রয়েছে তাদের, যেখানে লাঞ্জারত দ্বীপে আঙুর চাষের ইতিহাস সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে।

লাঞ্জারতের সবচেয়ে পুরনো ওয়াইনারি এল গ্রিফতো ১৭৭৫ সালে গড়ে ওঠে। রেড এবং হোয়াইট— দুই ধরনের ওয়াইনই তৈরি করে তারা। এমনকি একটি মিউজিয়ামও রয়েছে তাদের, যেখানে লাঞ্জারত দ্বীপে আঙুর চাষের ইতিহাস সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে।

১১ ১২
২০১৮-র হিসাবে লাঞ্জারতের মোট জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। অভিনব উপায়ে আঙুর চাষ পদ্ধতি দেখতে সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকে সেখানে। বিভিন্ন ওয়াইনারিগুলিতে তাঁদের জন্য আলাদা ভাবে ওয়াইন টেস্টিংয়ের ব্যবস্থাও থাকে। গাড়ির বদলে উটের পিঠে চড়ে দুর্গম এলাকা ঘুরে দেখান তাঁরা।

২০১৮-র হিসাবে লাঞ্জারতের মোট জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। অভিনব উপায়ে আঙুর চাষ পদ্ধতি দেখতে সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকে সেখানে। বিভিন্ন ওয়াইনারিগুলিতে তাঁদের জন্য আলাদা ভাবে ওয়াইন টেস্টিংয়ের ব্যবস্থাও থাকে। গাড়ির বদলে উটের পিঠে চড়ে দুর্গম এলাকা ঘুরে দেখান তাঁরা।

১২ ১২
এই মুহূর্তে ওয়াইনের জন্য বিশ্ব জুড়ে সুনাম রয়েছে ইতালির তাস্কানির। তবে স্বাদে, গন্ধে তাদের টেক্কা দিতে প্রস্তুত লাঞ্জারত দ্বীপে তৈরি বিভিন্ন সংস্থার ওয়াইন।

এই মুহূর্তে ওয়াইনের জন্য বিশ্ব জুড়ে সুনাম রয়েছে ইতালির তাস্কানির। তবে স্বাদে, গন্ধে তাদের টেক্কা দিতে প্রস্তুত লাঞ্জারত দ্বীপে তৈরি বিভিন্ন সংস্থার ওয়াইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy