Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Fisherman

মাছ ধরতে গিয়ে নির্জন দ্বীপে দু’মাস বন্দি ১৫ ভারতীয়, ভাগ্যিস দেখতে পেল ব্রিটিশ জাহাজ

বিপদকে তাঁরা ভয় পান না। মৃত্যুকেও নয়। কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর মাঝে এ ভাবে যে আটকে থাকতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এডিসন ডেভিস আর অগাস্টিন নিমাস।

সংবাদ সংস্থা
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪৭
Share: Save:
০১ ১৮
তাঁদের পেশা সমুদ্রে মাছ ধরা। ঝড়-বাদল-উত্থান-পতন জীবনের নিত্যসঙ্গী। বিপদকে তাঁরা ভয় পান না। মৃত্যুকেও নয়। কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর মাঝে এ ভাবে যে আটকে থাকতে হবে, তাও স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এডিসন ডেভিস আর অগাস্টিন নিমাস। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখ থেকে ঘরে ফিরে এসেছেন দুই মৎস্যজীবী। বেঁচে ফেরার সেই গল্প সিনেমার থেকে কম নয়।

তাঁদের পেশা সমুদ্রে মাছ ধরা। ঝড়-বাদল-উত্থান-পতন জীবনের নিত্যসঙ্গী। বিপদকে তাঁরা ভয় পান না। মৃত্যুকেও নয়। কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর মাঝে এ ভাবে যে আটকে থাকতে হবে, তাও স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি এডিসন ডেভিস আর অগাস্টিন নিমাস। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মুখ থেকে ঘরে ফিরে এসেছেন দুই মৎস্যজীবী। বেঁচে ফেরার সেই গল্প সিনেমার থেকে কম নয়।

০২ ১৮
গত ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ ভারত উপকূল থেকে মাছ ধরার জন্য রওনা দেন এডিসন আর অগাস্টিন। দলে ছিলেন মোট ১৫ জন। পরিবারকে বলেছিলেন, বড়দিনে ফিরে আসবেন। একসঙ্গে উদ্‌যাপন করবেন।

গত ২৭ নভেম্বর দক্ষিণ ভারত উপকূল থেকে মাছ ধরার জন্য রওনা দেন এডিসন আর অগাস্টিন। দলে ছিলেন মোট ১৫ জন। পরিবারকে বলেছিলেন, বড়দিনে ফিরে আসবেন। একসঙ্গে উদ্‌যাপন করবেন।

০৩ ১৮
তার পর অনেক দিন কেটে গিয়েছে। পরিবার তাঁদের কোনও খোঁজ পায়নি। মৎস্যজীবীদের পক্ষে এটা অস্বাভাবিক নয়। মাসের পর মাস তাঁরা এ ভাবে সমুদ্রে ভেসে বেড়ান। কোনও খোঁজ মেলে না।

তার পর অনেক দিন কেটে গিয়েছে। পরিবার তাঁদের কোনও খোঁজ পায়নি। মৎস্যজীবীদের পক্ষে এটা অস্বাভাবিক নয়। মাসের পর মাস তাঁরা এ ভাবে সমুদ্রে ভেসে বেড়ান। কোনও খোঁজ মেলে না।

০৪ ১৮
বড়দিন আসে। চলেও যায়। তখনই চিন্তা বাড়তে থাকে পরিবারের। বুঝে পান না কী হয়েছে? এক বার পরিবারের সদস্যদের মনে হয়, কোনও ঘূর্ণিঝড়ে হয়তো নৌকা উল্টে গিয়েছে। সকলের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের পূর্বাভাস তাঁদের কানে আসেনি।

বড়দিন আসে। চলেও যায়। তখনই চিন্তা বাড়তে থাকে পরিবারের। বুঝে পান না কী হয়েছে? এক বার পরিবারের সদস্যদের মনে হয়, কোনও ঘূর্ণিঝড়ে হয়তো নৌকা উল্টে গিয়েছে। সকলের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের পূর্বাভাস তাঁদের কানে আসেনি।

০৫ ১৮
শেষ পর্যন্ত ২ জানুয়ারি ঘরে ফেরেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের থেকেই শোনা যায় ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। নৌকায় যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছিল। তাই দীর্ঘ দিন আটকে ছিলেন ব্রিটিশ ভারত মহাসাগর এলাকার অন্তর্ভুক্ত একটি জনহীন দ্বীপে। শেষে তাঁদের উদ্ধার করে একটি ব্রিটিশ ভেসেল।

শেষ পর্যন্ত ২ জানুয়ারি ঘরে ফেরেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের থেকেই শোনা যায় ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। নৌকায় যান্ত্রিক গোলযোগ হয়েছিল। তাই দীর্ঘ দিন আটকে ছিলেন ব্রিটিশ ভারত মহাসাগর এলাকার অন্তর্ভুক্ত একটি জনহীন দ্বীপে। শেষে তাঁদের উদ্ধার করে একটি ব্রিটিশ ভেসেল।

০৬ ১৮
তামিলনাড়ুর থেঙ্গাপত্তনম বন্দর থেকে কাঠের নৌকায় রওনা হয়েছিলেন ১৫ জন মৎস্যজীবীর দলটি। নৌকার নাম ছিল ক্রিশা মোল।

তামিলনাড়ুর থেঙ্গাপত্তনম বন্দর থেকে কাঠের নৌকায় রওনা হয়েছিলেন ১৫ জন মৎস্যজীবীর দলটি। নৌকার নাম ছিল ক্রিশা মোল।

০৭ ১৮
রওনা হওয়ার পর সপ্তম দিন নৌকার ইঞ্জিন ভেঙে যায়। তার পর গভীর সমুদ্রের দিকে এগোতে থাকে। এ ভাবে পাঁচ দিন চলার পর শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা অগাস্টিনদের দেখতে পায়।

রওনা হওয়ার পর সপ্তম দিন নৌকার ইঞ্জিন ভেঙে যায়। তার পর গভীর সমুদ্রের দিকে এগোতে থাকে। এ ভাবে পাঁচ দিন চলার পর শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের একটি নৌকা অগাস্টিনদের দেখতে পায়।

০৮ ১৮
শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের নৌকাটি অগাস্টিনদের নৌকাটিকে টেনে অগভীর সমু্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে জলের গভীরতা ছিল ২৬ ফুট। ওই জায়গায় গিয়ে নোঙর ফেলে নৌকাটি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের নৌকা ভারতীয় জলসীমানায় প্রবেশ করতে পারে না। তাই সেখানকার মৎস্যজীবীরা পরামর্শ দেন, অন্য ভারতীয় মৎস্যজীবীদের নৌকাকে ওয়্যারলেস বার্তা পাঠাতে।

শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের নৌকাটি অগাস্টিনদের নৌকাটিকে টেনে অগভীর সমু্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে জলের গভীরতা ছিল ২৬ ফুট। ওই জায়গায় গিয়ে নোঙর ফেলে নৌকাটি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের নৌকা ভারতীয় জলসীমানায় প্রবেশ করতে পারে না। তাই সেখানকার মৎস্যজীবীরা পরামর্শ দেন, অন্য ভারতীয় মৎস্যজীবীদের নৌকাকে ওয়্যারলেস বার্তা পাঠাতে।

০৯ ১৮
অনেক চেষ্টা করে তিন দিন পর একটি ভারতীয় নৌকা অগাস্টিনদের বার্তার জবাব দেয়। কিন্তু সেই নৌকার ইঞ্জিন ততটা শক্তিশালী নয়। সেটি ক্রিশা মোলের মতো বড়সড় নৌকা টানতে ব্যর্থ হয়।

অনেক চেষ্টা করে তিন দিন পর একটি ভারতীয় নৌকা অগাস্টিনদের বার্তার জবাব দেয়। কিন্তু সেই নৌকার ইঞ্জিন ততটা শক্তিশালী নয়। সেটি ক্রিশা মোলের মতো বড়সড় নৌকা টানতে ব্যর্থ হয়।

১০ ১৮
ক্রিশা মোলের মালিকও ছিলেন নৌকায়। তিনি গিয়ারবক্সটিকে সাহায্যকারী নৌকায় তুলে দেন। আর বাকি মৎস্যজীবীরা সিদ্ধান্ত নেন, নোঙরটিকে সেখানেই ফেলে যাবেন। এর ফলে নৌকা হালকা হয়ে যাবে। ফলে সাহায্যকারী নৌকাটি অনায়াসে ক্রিশা মোলকে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে।

ক্রিশা মোলের মালিকও ছিলেন নৌকায়। তিনি গিয়ারবক্সটিকে সাহায্যকারী নৌকায় তুলে দেন। আর বাকি মৎস্যজীবীরা সিদ্ধান্ত নেন, নোঙরটিকে সেখানেই ফেলে যাবেন। এর ফলে নৌকা হালকা হয়ে যাবে। ফলে সাহায্যকারী নৌকাটি অনায়াসে ক্রিশা মোলকে দড়ি দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে।

১১ ১৮
কিন্তু বিপত্তির এখানেই শেষ নেই। মাঝসমুদ্রে একটি দড়ি যায় ছিঁড়ে। তিন দিন পর, ১৯ ডিসেম্বর ঝড়ে আরও একটি দড়ি ছিঁড়ে যায়। ফলে সাহায্যকারী নৌকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ক্রিশা মোল।

কিন্তু বিপত্তির এখানেই শেষ নেই। মাঝসমুদ্রে একটি দড়ি যায় ছিঁড়ে। তিন দিন পর, ১৯ ডিসেম্বর ঝড়ে আরও একটি দড়ি ছিঁড়ে যায়। ফলে সাহায্যকারী নৌকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ক্রিশা মোল।

১২ ১৮
নিমাস নামে এক মৎস্যজীবীর কথায়, ‘‘ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া তখন কোনও উপায় ছিল না।’’ জিপিএসে দেখা যায়, ২৯ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে একটি দ্বীপ। ব্রিটিশ ভারত মহাসাগরের এলাকার অন্তর্ভুক্ত।

নিমাস নামে এক মৎস্যজীবীর কথায়, ‘‘ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া তখন কোনও উপায় ছিল না।’’ জিপিএসে দেখা যায়, ২৯ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে একটি দ্বীপ। ব্রিটিশ ভারত মহাসাগরের এলাকার অন্তর্ভুক্ত।

১৩ ১৮
নৌকার সঙ্গেই ছিল ডিঙি। তাতে খাবার চাপিয়ে ওই দ্বীপের দিকেই এগোতে থাকেন ন’জন। ঠিক হয় বাকিদের পরে নিয়ে আসা হবে। বাকি পাঁচ জন মৎস্যজীবী ক্রিশা মোলেই অপেক্ষা করছিলেন।

নৌকার সঙ্গেই ছিল ডিঙি। তাতে খাবার চাপিয়ে ওই দ্বীপের দিকেই এগোতে থাকেন ন’জন। ঠিক হয় বাকিদের পরে নিয়ে আসা হবে। বাকি পাঁচ জন মৎস্যজীবী ক্রিশা মোলেই অপেক্ষা করছিলেন।

১৪ ১৮
সাত জনকে ওই দ্বীপে রেখে দু’জন মৎস্যজীবী বাকি পাঁচ জনকে নিতে আসেন গভীর সমুদ্রে। তত ক্ষণে ক্রিশা মোল স্রোতে ভেসে গিয়েছে। অনেক খুঁজেও ক্রিশা মোলকে দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত অনেক খোঁজ করে ওই পাঁচ জনকে ডিঙিতে চাপিয়ে দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন বাকি দু’জন।

সাত জনকে ওই দ্বীপে রেখে দু’জন মৎস্যজীবী বাকি পাঁচ জনকে নিতে আসেন গভীর সমুদ্রে। তত ক্ষণে ক্রিশা মোল স্রোতে ভেসে গিয়েছে। অনেক খুঁজেও ক্রিশা মোলকে দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত অনেক খোঁজ করে ওই পাঁচ জনকে ডিঙিতে চাপিয়ে দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন বাকি দু’জন।

১৫ ১৮
দ্বীপে পৌঁছে নতুন সমস্যায় পড়লেন মৎস্যজীবীরা। খাওয়ার মতো ১০ দিনের রেশন রয়েছে। কিন্তু পানীয় নেই। সমুদ্রের জল দিয়েই তাঁরা রান্না শুরু করলেন। দ্বীপে ছিল অনেক নারকেল গাছ। সেখান থেকে নারকেল পেরে সেই জল খেয়েই কাটতে লাগল এডিসন আর অগাস্টিনদের।

দ্বীপে পৌঁছে নতুন সমস্যায় পড়লেন মৎস্যজীবীরা। খাওয়ার মতো ১০ দিনের রেশন রয়েছে। কিন্তু পানীয় নেই। সমুদ্রের জল দিয়েই তাঁরা রান্না শুরু করলেন। দ্বীপে ছিল অনেক নারকেল গাছ। সেখান থেকে নারকেল পেরে সেই জল খেয়েই কাটতে লাগল এডিসন আর অগাস্টিনদের।

১৬ ১৮
পাঁচ দিন পর, ২৭ নভেম্বর খুব দূরে তাঁরা একটি ব্রিটিশ জাহাজ দেখতে পান। মৎস্যজীবীরা গাছে লাল কাপড় বেঁধে নাড়তে থাকেন, যাতে দূরের জাহাজ তাঁদের দেখতে পারেন।

পাঁচ দিন পর, ২৭ নভেম্বর খুব দূরে তাঁরা একটি ব্রিটিশ জাহাজ দেখতে পান। মৎস্যজীবীরা গাছে লাল কাপড় বেঁধে নাড়তে থাকেন, যাতে দূরের জাহাজ তাঁদের দেখতে পারেন।

১৭ ১৮
দু’ঘণ্টা পর ওই জাহাজ থেকে পানীয় জল আর ফলের ঝুড়ি নিয়ে দ্বীপে দেখা করতে আসেন দু’জন মৎস্যজীবী। এর পর দ্বীপে আটকে থাকা মৎস্যজীবীদের ডিঙিতে চাপিয়ে নিজেদের জাহাজে নিয়ে যান।

দু’ঘণ্টা পর ওই জাহাজ থেকে পানীয় জল আর ফলের ঝুড়ি নিয়ে দ্বীপে দেখা করতে আসেন দু’জন মৎস্যজীবী। এর পর দ্বীপে আটকে থাকা মৎস্যজীবীদের ডিঙিতে চাপিয়ে নিজেদের জাহাজে নিয়ে যান।

১৮ ১৮
সেখানে গিয়ে প্রায় এক মাস পর স্নান করেছিলেন ওই ১৫ জন মৎস্যজীবী। পেট ভরে খেয়েছিলেন। এর পর ২ জানুয়ারি মৎস্যজীবীদের ভিঝিনজাম বন্দরে নিয়ে এসে ভারতীয় উপকূলরক্ষীদের হাতে তুলে দেন ব্রিটিশ জাহাজের কর্মীরা। এর পর ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী ১৫ জন মৎস্যজীবীর নাম, পরিচয় খতিয়ে দেখে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরেন ১৫ জন।

সেখানে গিয়ে প্রায় এক মাস পর স্নান করেছিলেন ওই ১৫ জন মৎস্যজীবী। পেট ভরে খেয়েছিলেন। এর পর ২ জানুয়ারি মৎস্যজীবীদের ভিঝিনজাম বন্দরে নিয়ে এসে ভারতীয় উপকূলরক্ষীদের হাতে তুলে দেন ব্রিটিশ জাহাজের কর্মীরা। এর পর ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী ১৫ জন মৎস্যজীবীর নাম, পরিচয় খতিয়ে দেখে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরেন ১৫ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy