India has helped Maldives many times during crisis dgtl
India-Maldives Relationship
খোঁজও নেয়নি নতুন ‘বন্ধু’! সুনামি থেকে কোভিড, বিপদে বার বার মলদ্বীপকে রক্ষা করেছে ভারত
মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্কের সূত্রপাত। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। যার পর থেকেই দলে দলে মলদ্বীপ বয়কটের ডাক দিতে শুরু করেছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
ভারত মহাসাগরের উপরে ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপ। সেখানে মোট দ্বীপের সংখ্যা ১,১৯২টি। ভারত থেকে এই পড়শি দেশের দূরত্ব মাত্র ২,১৪২ কিলোমিটার।
০২২৩
শীত হোক বা গ্রীষ্ম, যে কোনও ছুটি কাটাতে ভারতীয় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মলদ্বীপ। বলিউড তারকাদের প্রায়ই এই দ্বীপরাষ্ট্রের মোহময়ী সমুদ্রতট থেকে ছবি পোস্ট করতে দেখা যায় সমাজমাধ্যমে।
০৩২৩
সম্প্রতি সেই মলদ্বীপই উঠে এসেছে বিতর্কের কেন্দ্রে। ভারতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে ওই ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। দলে দলে নেটাগরিকেরা ডাক দিচ্ছেন ‘বয়কট মলদ্বীপ’।
০৪২৩
মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্কের সূত্রপাত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরকে কটাক্ষ করে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে মলদ্বীপের ওই তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে।
০৫২৩
ঘরে বাইরে সমালোচনার মুখে মলদ্বীপ সরকার ওই তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করেছে। কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। মলদ্বীপে যাওয়ার বিমানের বুকিং, হোটেল বুকিং বাতিল হয়ে গিয়েছে হু হু করে।
০৬২৩
১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছিল মলদ্বীপ। সেই সময় স্বতন্ত্র দ্বীপরাষ্ট্র হিসাবে তাকে প্রথম যে দেশগুলি স্বীকৃতি দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারত। তার পর থেকে ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
০৭২৩
সুনামি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সঙ্কট, বার বার বন্ধুর মতো পড়শি মলদ্বীপের পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। রাশি রাশি অর্থসাহায্য সমুদ্র পেরিয়ে গিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রে।
০৮২৩
মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের মিত্রতার অতীত স্মরণ করলে প্রথমেই উঠে আসে ১৯৮৮ সালের কথা। সে বছর শ্রীলঙ্কার জঙ্গি সংগঠন লিবারেশন টাইগার অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর সহযোগিতায় মলদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ এবং সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন আবদুল্লা লুথুফি।
০৯২৩
ভারতের সহযোগিতায় সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিল মলদ্বীপ সরকার। ভারতীয় বাহিনী মলদ্বীপে জঙ্গিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে রুখে দিয়েছিল সামরিক অভ্যুত্থান। সেই গোপন মিশনের সাঙ্কেতিক নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ক্যাকটাস’।
১০২৩
২০১৮ সালে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইব্রাহিম সোলি। তিনি ভারতঘেঁষা ছিলেন। সোলির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মলদ্বীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।
১১২৩
ঠিক এক মাস পরে ভারতে আসেন সোলি। তাঁর দেশকে ১৪০ কোটি ডলার অর্থসাহায্যের ঘোষণা করে ভারত। যার মধ্যে পাঁচ কোটি ডলার ঘোষিত ভাবে মলদ্বীপ সরকারের বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১২২৩
মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয় ভারত। ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভারত থেকেই পান মলদ্বীপ সৈনিকেরা। গত ১০ বছরে ১৫০০ জনের বেশি সৈনিককে ভারত প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল মলদ্বীপের সেনার।
১৩২৩
মলদ্বীপে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে ভারত। ১৯৯৫ সালে সেখানে ভারতের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল। ২০১৭ সালে মোদী সরকারের সহায়তায় হাসপাতালটির সংস্কারের কাজও করা হয়।
১৪২৩
মলদ্বীপ ইনস্টিটিউট অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন ১২ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করে দিয়েছে ভারত সরকার। ১৯৯৬ সালে ওই প্রতিষ্ঠান মলদ্বীপ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
১৫২৩
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-মলদ্বীপ ফ্যাকাল্টি অফ হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম স্টাডিজ়-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং মলদ্বীপের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দুল গায়ুম।
১৬২৩
২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত ছিল মলদ্বীপের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য-সঙ্গী। ভারত থেকে সে দেশে রফতানি করা হয় প্রযুক্তি এবং শিল্পজাত দ্রব্য, ওষুধপত্র, নির্মাণ সামগ্রী এবং বিবিধ কৃষিজাত দ্রব্য।
১৭২৩
২০০৪ সালের সুনামিতে তছনছ হয়ে গিয়েছিল মলদ্বীপ। ১০০ জনের বেশি মানুষ সেখানে মারা গিয়েছিলেন। সেই সময়ে বন্ধুর মতো দ্বীপরাষ্ট্রের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভারত।
১৮২৩
মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নেমে এসেছিল ভয়াবহ সঙ্কট। মালের জল এবং নিকাশি সংস্থায় বিধ্বংসী আগুন লেগে গিয়েছিল। যার ফলে সারা দেশে তীব্র জলসঙ্কট তৈরি হয়। সেই সময়েও মলদ্বীপ পাশে পেয়েছিল ভারতকে।
১৯২৩
২০২০-২১ সালে বিশ্ব জুড়ে কোভিড অতিমারির সময়ে মলদ্বীপে জরুরি ওষুধপত্র পাঠিয়েছিল নয়াদিল্লি। এমনকি, চিনের উহান প্রদেশে আটকে পড়া মলদ্বীপের ন’জন বাসিন্দাকে ভারত উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়েছিল।
২০২৩
কোভিডের সময়ে মলদ্বীপে ত্রাণ হিসাবে ৫৮০ টন খাবার এবং ৫০ হাজার হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট (যা কোভিডের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল) পাঠিয়েছিল ভারত সরকার।
২১২৩
কোভিডের পরবর্তী সময়ে মলদ্বীপের অর্থনীতি প্রায় ভেঙে পড়ে। তীব্র সঙ্কটের দিনেও ত্রাতা হয়েছিল ভারতই। ২০২২ সালে ভারত মলদ্বীপকে ১০ কোটি ডলার অর্থসাহায্য করে। যা অর্থনৈতিক দিক থেকে দেশটিকে সচল করে তুলেছিল আবার।
২২২৩
মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অবনতি ঘটে সম্প্রতি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু চিনপন্থী বলে পরিচিত। নির্বাচনের প্রচারে তিনি ভারতের বিরোধিতা করেছিলেন বলেও শোনা যায়।
২৩২৩
ক্ষমতায় আসার পরেই মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাকে সরে যেতে বলেন মুইজ্জু। নতুন ‘বন্ধু’ চিনের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন তিনি। বর্তমানেও তিনি চিনেই রয়েছেন। এক সপ্তাহব্যাপী সফরে গিয়েছেন তিনি। মলদ্বীপের চিনের ঘনিষ্ঠতা ভারত থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।