In which path Supreme Court dismissed Calcutta High Court’s order to terminate 32000 primary teachers in West Bengal dgtl
Primary Teacher Recruitment
হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে সুপ্রিম কোর্ট! কোন পথে স্বস্তিতে ‘চাকরিচ্যুত’রা?
৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই রায়কেই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ১৭:০৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছিলেন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁদের পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী বেতন দেওয়া হবে। আগামী চার মাসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ইন্টারভিউতে পাশ করলে আবার চাকরি ফিরে পাবেন চাকরিচ্যুতরা। আর তা না করতে পারলে হারাতে হবে চাকরি। কিন্তু শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই রায়কেই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
০২২৪
মে মাসে রাজ্যে এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সেই সংখ্যা বদলে যায় ৩২ হাজারে। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশ। এক সপ্তাহের মাথাতেই সেই মামলায় নতুন রায় দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চ রায় শোনানোর পর শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন চাকরিহারারা। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতেই হাই কোর্টের সব রায় খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নতুন করে মামলাটির শুনানি হবে হাই কোর্টে।
০৩২৪
কিন্তু কোন পথে হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে শীর্ষ আদালতে গড়াল প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলা? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
০৪২৪
২০১৬ সালের প্রাথমিকের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন, মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে অনেকেই চাকরিতে ঢুকেছেন এবং তাঁরা প্রশিক্ষণহীন।
০৫২৪
মামলাতে উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্কও। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউয়ের সময় তাঁদের ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, যাঁরা অনৈতিক ভাবে চাকরিতে ঢুকেছেন তাঁদের বেশ কয়েক জনের ক্ষেত্রে সেই ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়নি।
০৬২৪
এর পর বিভিন্ন জেলায় যাঁরা পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদের তলব করে গোপন জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।
০৭২৪
২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল মোট ৪২,৫০০। যার মধ্যে প্রশিক্ষিতদের নিয়ে কখনই বিতর্ক ছিল না। বাকি ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
০৮২৪
তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ-ও জানিয়েছিলেন, আগামী চার মাসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নিয়োগের ইন্টারভিউতে পাশ করলে আবার চাকরি ফিরে পাবেন চাকরিচ্যুতরা। আর তা না করতে পারলে হারাতে হবে চাকরি।
০৯২৪
পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, চাকরি হারানো শিক্ষকেরা ৪ মাস স্কুলে যেতে পারবেন। তবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী।
১০২৪
তবে এর মধ্যেই মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩৬ হাজার নয়, ৩০ হাজার ১৮৫। ছাপার (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) ভুলের কারণে এই বিভ্রান্তি হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রায় সংশোধন করে বলেন, ‘‘সংখ্যাটা ৩২ হাজারের কাছাকাছি হবে।’’
১১২৪
এর পর রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনও হয় বিচারপতির। তবে অবশেষে তিনি জানিয়ে দেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই।
১২২৪
চাকরি বাঁচানোর আশায় এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন ওই শিক্ষকদের একাংশ। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা করা হয়।
১৩২৪
মামলার শুনানির সময় বিচারপতি তালুকদার বলেন, ‘‘একক বেঞ্চ তো আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কাউকে তো নেকড়ের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। তা হলে সমস্যা কোথায়?’’
১৪২৪
তবে, ডিভিশন বেঞ্চে চাকরি বাতিলের বিপক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে চাকরিহারাদের তরফে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুরনো একটি মন্তব্যকে তুলে ধরা হয়।
১৫২৪
মামলার শুনানি চলাকালীন ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।’’ চাকরিচ্যুতরা ডিভিশন বেঞ্চে দাবি করেন, বিচারপতির সেই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, চাকরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত তিনি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন।
১৬২৪
চাকরিহারাদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা ডিভিশন বেঞ্চে এ-ও জানান, আদালতের নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের রিপোর্টে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য উঠে আসেনি, যার জন্য এত সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করতে হবে।
১৭২৪
যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, আদালত তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেয়নি বলেও দাবি করেন চাকরিহারাদের আইনজীবী। ক্ষতির মুখে পড়া প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলেই চাকরি বাতিলের এত বড় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
১৮২৪
চাকরিহারাদের তরফে যুক্তি দেওয়া হয় যে, পর্ষদের সেই সময়কার বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, নিয়োগের ২ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে প্রার্থীদের। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অপ্রশিক্ষিত হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে এ ক্ষেত্রে আইন ভেঙে কোনও নিয়োগ হয়নি বলে তাঁরা দাবি করেছিলেন।
১৯২৪
এর পর বিচারপতি তালুকদার এবং বিচারপতি ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়।
২০২৪
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, চাকরিহারারা চার মাসের জন্য পার্শ্বশিক্ষকের হারে বেতন পাবেন। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ তার নির্দেশে জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বহাল থাকবে এবং তাঁরা আগের কাঠামো অনুসারেই বেতন পাবেন।
২১২৪
তবে ডিভিশন বেঞ্চ একক বেঞ্চের রায়কে বহাল রেখে এ-ও জানায়, এই ৩২ হাজার শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে, এই ৩২ হাজার জনের চাকরিজীবনে ছেদ পড়বে না।
২২২৪
ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানিয়েছিল, অগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলা আবার শুনবে ডিভিশন বেঞ্চ।
২৩২৪
এর পর কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিচ্যুতদের একাংশ এবং পর্ষদ কর্তৃপক্ষ। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী এবং কে ভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়।
২৪২৪
শুক্রবার শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল নিয়ে হাই কোর্টের সব নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে না। বেতনও পাবেন আগের নিয়মেই। তবে সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানিয়েছে, আবার নতুন করে মামলাটির শুনানি হবে হাই কোর্টে। হাই কোর্টের নতুন ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার বিচার করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে।