Human feaces dumped in water tank for dalit, In Tamil Nadu the state that once saw protest against casteism dgtl
Casteism
জলের ট্যাঙ্কে ভাসছে মল, সেই জল খাচ্ছেন মানুষ! দলিত বিদ্বেষের নমুনা শিউরে ওঠার মতো
ঘটনাটি শুনে সরেজমিনে তদন্তে আসেন জেলাশাসক। তবে বিদ্বেষের বহর দেখে চমকে যান। জানতে পারেন, উচ্চবর্গীয়দের এমন বহু ‘অত্যাচার’ই দিনের পর দিন সহ্য করে আসছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা।
সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদশেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
এ রাজ্যে দলিতদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল ১০০ বছর আগে। তামিলনাড়ুর দ্রাবিড় আন্দোলন, পেরিয়ার আন্দোলন এখনও রাজনীতির পরতে পরতে জড়িয়ে। অথচ ১০০ বছর পর সেই তামিলনাড়ুরই এক গ্রামে দলিত বিদ্বেষের নমুনা দেখে চমকে গেল স্থানীয় প্রশাসন।
০২১৯
গ্রামটিতে সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গীয় মানুষজনের বাস। বড়জোর শ’খানেক সদস্যের একটি গোষ্ঠী। তাঁদের ব্যবহার করার জলের ট্যাঙ্কের ভিতরে সম্প্রতিই কেউ ফেলে গিয়েছে মলের স্তূপ।
০৩১৯
ওই ট্যাঙ্কের জলই পানীয় হিসাবে ব্যবহার করেন গ্রামের মানুষ। গত বেশকিছু দিন যথারীতি সেই জল খেয়েওছেন তাঁরা। কিন্তু গ্রামের শিশুরা হঠাৎ অসুস্থ হতে শুরু করায় পানীয় জল নিয়ে সন্দেহের কথা জানান গ্রামের চিকিৎসক। তাতেই প্রকাশ্যে আসে গোটা বিষয়টি।
০৪১৯
খবর যায় জেলাশাসকের কাছে। ঘটনাটি শুনে সরেজমিনে তদন্তে আসেন তিনি। তবে এসে দেখেন বিদ্বেষের শেষ এখানেই নয়! উচ্চবর্গীয়দের এমন বহু ‘অত্যাচার’ দিনের পর দিন সহ্য করে আসছেন এ গ্রামের বাসিন্দারা।
০৫১৯
ওই গ্রামেরই একটি চায়ের দোকানে আজও উচ্চবর্গীয়দের সঙ্গে বসে চা খেতে পারেন না জনজাতি শ্রেণিভুক্ত বাসিন্দারা। শুধু তা-ই নয়, উচ্চবর্গীয় যে কাপে চা খান, সেই কাপও ব্যবহার করার অধিকার নেই তাঁদের। চায়ের দোকানে তাঁদের জন্য রাখা থাকে অন্য কাপ। দোকানে এসে চা খেতে হলে সেই কাপেই চা ঢেলে খান তাঁরা।
০৬১৯
এমনকি, এ গ্রামের জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্তদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকারও নেই। দলিতদের স্পর্শ করাতে এখনও ঘৃণার চোখে দেখা হয় এই গ্রামে।
০৭১৯
তামিলনাড়ুর ওই গ্রামটির নাম ইরায়ুর। পুরুকোট্টাই জেলার এই গ্রামের বাসিন্দারা জেলাশাসক কবিতা রামুর দ্বারস্থ হন মঙ্গলবার। তাঁরা জানান, গ্রামে তাঁদের সম্প্রদায়ের ব্যবহারের জন্য যে ১০ হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্কটি করে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই প্রচুর পরিমাণে মানব বর্জ্য ভেসে থাকতে দেখেছেন তাঁরা।
০৮১৯
গ্রামের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসকের কথা শুনে পানীয় জলের ট্যাঙ্কটি পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন গ্রামেরই কয়েকজন। তবে ট্যাঙ্কে উঠে যা দেখেন, তাতে চমকে যান তাঁরা।
০৯১৯
গ্রামবাসীরা অভিযোগে জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কের ভিতরে এত বেশি পরিমানে মলের স্তূপ ফেলা হয়ছিল যে পুরো জলটাই হলুদ হয়ে গিয়েছিল।
১০১৯
গ্রামের এক রাজনৈতিক এবং সমাজকর্মী মোক্ষ গুনাভালাগান জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কের ঢাকনাটি খোলা ছিল। ট্যাঙ্কের নীচের জমিতে যে বেড়া এবং তালাবন্ধ গেটের ব্যবস্থা ছিল, তা-ও ভাঙা ছিল। কিন্তু বিষয়টি খেয়াল করেননি কেউই। তবে অনুমান, অন্তত ৭ দিন আগে ঘটেছে ঘটনাটি। কারণ তখনই প্রথম অসুস্থ হয়ে পড়েছিল গ্রামের এক শিশু। তার পরও যদিও ওই জল পান করা বন্ধ করেননি গ্রামবাসীরা।
১১১৯
কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক কবিতা রামু। তবে অভিযুক্তদের খুঁজতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
১২১৯
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ গ্রামে জাতপাতের ভেদাভেদ এবং ছুঁৎমার্গের সংস্কার চলে আসছে অন্তত তিন প্রজন্ম ধরে। এই সংস্কারের জন্যই আজ অবধি মন্দিরে গিয়ে ভগবানের মূর্তির মুখদর্শন করতে পারেননি গ্রামের তরুণ-তরুণীদের অনেকেই। এমনকি, জন্ম থেকেই চায়ের দোকানে ভিন্ন কাপের বন্দোবস্ত দেখে আসছেন অনেক মধ্যবয়সীও।
১৩১৯
জেলাশাসক কবিতা স্থানীয়দের কাছে এই অভিযোগ শোনার পরই ওই চায়ের দোকানে অভিযান চালান। জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্তদের চা খাওয়ার ভিন্ন বন্দোবস্ত দেখে অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করা হয় চায়ের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে।
১৪১৯
জেলাশাসক ছাড়াও ওই অভিযানে ছিলেন জেলা পুলিশের প্রধান। চায়ের দোকানের পর ওই গ্রামের ১০০ জনের জনজাতি গোষ্ঠীটির প্রত্যেককে নিয়ে এর পর মন্দিরে হাজির হন তাঁরা। গ্রামবাসীদের চিনিয়ে দিতে বলেন, কারা মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেয় তাঁদের। সেখানেও একপ্রস্ত নাটকের মুখোমুখি হন সবাই।
১৫১৯
সে সময় মন্দিরে ঈশ্বরের আরাধনা চলছিল। গ্রামবাসীদের নিয়ে জেলাশাসক এবং পুলিশ প্রধান সেখানে পৌঁছতেই এক উচ্চবর্গীয় মহিলা চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, তাঁর উপর দেবতা ভর করেছে এবং দেবতা কোনও নিম্নবর্গীয় মানুষকে মন্দির চত্বরে ঢুকতে দিতে চান না!
১৬১৯
পুলিশ ওই মহিলার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করে। জেলাশাসকের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন গ্রামবাসীরা।
১৭১৯
ওই গোষ্ঠীরই এক সদস্য ২২ বছরের সিন্ধুজা বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকের ছাত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই প্রথম মন্দিরে ঈশ্বরের মূর্তিটি কেমন দেখতে তা জানতে পারলাম। আশা করি এই সুবিধা আর আমাদের থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’’
১৮১৯
১৮ বছর আগে এই গ্রামে বিয়ে হয়ে এসেছিলেন ৪০ বছরের লতা। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম আমি মন্দিরের ভিতরে ঢুকলাম। ঈশ্বরের মুখ দেখলাম। আশা করছি এই দেখা শেষ দেখা নয়।’’
১৯১৯
প্রসঙ্গত, প্রায় ১০০ বছর আগে ভারত স্বাধীন হওয়ারও আগে রামাস্বামী পেরিয়ার এই তামিলনাড়ুতেই দলিতদের মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলন পরে পেরিয়ার আন্দোলন হিসাবে জনপ্রিয় হয়। পরে ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ ছুঁৎমার্গের বিরুদ্ধেও শুরু হয় দ্রাবিড়ীয় আন্দোলন, যা স্বাধীনতা উত্তর তামিলনাড়ুতে পরবর্তীকালে রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে। সেই ভূমিতেই এই জাতিবিদ্বেষের ঘটনা তাই আরও বেশি বিস্ময় জাগাচ্ছে।