Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
South Korea

South Korean Wig Industry: কেনেডির স্ত্রীও পরেছেন, পরচুলা-অর্থনীতি কী ভাবে বদলে দিল দক্ষিণ কোরীয় মহিলাদের জীবন

ষাটের দশকে সেই উপহারকেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন সে দেশের বহু মহিলা। তা থেকে গড়ে উঠেছিল পরচুলা তৈরির কারখানা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৪:০৭
Share: Save:
০১ ২১
সন্তানের মাথায় এক ঢাল ঘন কালো চুল আসলে মা-বাবার থেকে পাওয়া মূল্যবান উপহার। চিরাচরিত ভাবে এমনই ধারণা দক্ষিণ কোরীয়দের। তবে ষাটের দশকে সেই উপহার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন সে দেশের বহু মহিলা। তা থেকে গড়ে উঠেছিল পরচুলা তৈরির কারখানা। সেই পরচুলা রফতানি করেই দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রশাসকেরা। তবে এই উজ্জ্বল অধ্যায়েও ছিল গাঢ় অন্ধকার।

সন্তানের মাথায় এক ঢাল ঘন কালো চুল আসলে মা-বাবার থেকে পাওয়া মূল্যবান উপহার। চিরাচরিত ভাবে এমনই ধারণা দক্ষিণ কোরীয়দের। তবে ষাটের দশকে সেই উপহার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন সে দেশের বহু মহিলা। তা থেকে গড়ে উঠেছিল পরচুলা তৈরির কারখানা। সেই পরচুলা রফতানি করেই দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রশাসকেরা। তবে এই উজ্জ্বল অধ্যায়েও ছিল গাঢ় অন্ধকার।

০২ ২১
যে মহিলাদের তৈরি পরচুলা রফতানি করে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক দশা শুধরে গিয়েছিল, সেই শ্রমজীবীদের কাজের যথার্থ মূল্য দিতে রাজি ছিলেন না মালিকপক্ষ। শ্রমের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ষাটের দশকে গড়ে উঠেছিল মহিলা শ্রমিকদের একাধিক ইউনিয়ন।

যে মহিলাদের তৈরি পরচুলা রফতানি করে দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক দশা শুধরে গিয়েছিল, সেই শ্রমজীবীদের কাজের যথার্থ মূল্য দিতে রাজি ছিলেন না মালিকপক্ষ। শ্রমের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে ষাটের দশকে গড়ে উঠেছিল মহিলা শ্রমিকদের একাধিক ইউনিয়ন।

০৩ ২১
পরচুলার কারবারে প্রভূত মুনাফায় অর্থনৈতিক শক্তিধর হওয়ার পাশাপাশি বদল ঘটেছিল দক্ষিণ কোরীয় মহিলাদের আর্থ-সামাজিক জীবনেও।

পরচুলার কারবারে প্রভূত মুনাফায় অর্থনৈতিক শক্তিধর হওয়ার পাশাপাশি বদল ঘটেছিল দক্ষিণ কোরীয় মহিলাদের আর্থ-সামাজিক জীবনেও।

০৪ ২১
পঞ্চাশের দশকে দীর্ঘ যুদ্ধের পর দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল কোরিয়া। জন্ম হয়েছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার। ১৯৫৩ সালে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরের দশকে দেশের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা শুরু করেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসক। সে সময় আমজনতার জীবনেও ঘটেছিল আমূল পরিবর্তন।

পঞ্চাশের দশকে দীর্ঘ যুদ্ধের পর দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল কোরিয়া। জন্ম হয়েছিল উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার। ১৯৫৩ সালে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরের দশকে দেশের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা শুরু করেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসক। সে সময় আমজনতার জীবনেও ঘটেছিল আমূল পরিবর্তন।

০৫ ২১
১৯৫০ থেকে ’৫৩ সাল পর্যন্ত দুই কোরিয়ার যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল আমজনতা। টানাটানির সংসারে দু’পয়সা আয়ের জন্য মেয়ের চুল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন কাং চায়ে অ্যানের মা-ও। সে সব দিনের কথা আজও ভোলেননি ৬৮ বছরের কাং।

১৯৫০ থেকে ’৫৩ সাল পর্যন্ত দুই কোরিয়ার যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল আমজনতা। টানাটানির সংসারে দু’পয়সা আয়ের জন্য মেয়ের চুল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন কাং চায়ে অ্যানের মা-ও। সে সব দিনের কথা আজও ভোলেননি ৬৮ বছরের কাং।

০৬ ২১
শৈশব থেকে কাংয়ের চুলের প্রশংসা করতেন তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠার আগেই ঘন কালো চুলে ছাত্রীটির ঘাড় ঢাকা পড়েছিল। তবে ওই বয়সে তার চুল ছেঁটে বিক্রি করে দেন মা। সে দুঃখ আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন কাং। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘সে সময় চুল ছাঁটাতে একেবারে রাজি ছিলাম না। তবে বড়রা আমার চুল কেটে দিয়েছিলেন। তখন এতটাই আঘাত পেয়েছিলাম যে আজও সে দিনটার কথা স্পষ্ট মনে রয়েছে।’’

শৈশব থেকে কাংয়ের চুলের প্রশংসা করতেন তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠার আগেই ঘন কালো চুলে ছাত্রীটির ঘাড় ঢাকা পড়েছিল। তবে ওই বয়সে তার চুল ছেঁটে বিক্রি করে দেন মা। সে দুঃখ আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন কাং। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘সে সময় চুল ছাঁটাতে একেবারে রাজি ছিলাম না। তবে বড়রা আমার চুল কেটে দিয়েছিলেন। তখন এতটাই আঘাত পেয়েছিলাম যে আজও সে দিনটার কথা স্পষ্ট মনে রয়েছে।’’

০৭ ২১
কেন শৈশবে তাঁর চুল ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল, তা অবশ্য পরে বুঝতে অসুবিধা হয়নি কাংয়ের। শ্রমজীবীদের মহল্লা বলে পরিচিত আহেইয়ন-ডংয়ে থাকতেন তাঁরা। বাবা ছিলেন মেকানিক। জামাকাপড় সেলাই করে আয় করতেন মা। তাতেও সংসারের দুর্দশা ঘুচত না। সঙ্গে আরও দু’একটা চাকরি করতে হত তাঁর মাকে।

কেন শৈশবে তাঁর চুল ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল, তা অবশ্য পরে বুঝতে অসুবিধা হয়নি কাংয়ের। শ্রমজীবীদের মহল্লা বলে পরিচিত আহেইয়ন-ডংয়ে থাকতেন তাঁরা। বাবা ছিলেন মেকানিক। জামাকাপড় সেলাই করে আয় করতেন মা। তাতেও সংসারের দুর্দশা ঘুচত না। সঙ্গে আরও দু’একটা চাকরি করতে হত তাঁর মাকে।

০৮ ২১
কাংয়ের পাড়াপড়শিদের মতো টানাটানির সংসার ছিল তাঁদের। বস্তুত, যুদ্ধের জেরে আর্থিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল দেশের বেশির ভাগ বাসিন্দা। কাংয়ের কথায়, ‘‘যুদ্ধের পর আমাদের সকলেরই আর্থিক দুর্দশা শুরু হয়েছিল। সে সময় ভাবতাম, আমরা এত হতদরিদ্র কেন? আমাদের আশপাশের সকলেই বা কেন এত গরিব?’’

কাংয়ের পাড়াপড়শিদের মতো টানাটানির সংসার ছিল তাঁদের। বস্তুত, যুদ্ধের জেরে আর্থিক ভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল দেশের বেশির ভাগ বাসিন্দা। কাংয়ের কথায়, ‘‘যুদ্ধের পর আমাদের সকলেরই আর্থিক দুর্দশা শুরু হয়েছিল। সে সময় ভাবতাম, আমরা এত হতদরিদ্র কেন? আমাদের আশপাশের সকলেই বা কেন এত গরিব?’’

০৯ ২১
কাংয়ের মা আর বেঁচে নেই। তবে তাঁর জীবদ্দশায় মাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেননি, কেন শিশুবয়সে তাঁর চুল ছেঁটে দিয়েছিলেন? যদিও এক বার পড়শিদের কাছে মাকে বলতে শুনেছিলেন, মেয়ের চুল বিক্রি করে ঘরের চাল-ডাল-নুডল্‌স কেনেন তিনি। কাং বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, পরিবারের সকলের মুখে অন্ন তুলে দিতে টাকার প্রয়োজন ছিল। ফলে আমার চুল ছাঁটানো নিয়ে মাকে কখনও প্রশ্ন করিনি।’’

কাংয়ের মা আর বেঁচে নেই। তবে তাঁর জীবদ্দশায় মাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেননি, কেন শিশুবয়সে তাঁর চুল ছেঁটে দিয়েছিলেন? যদিও এক বার পড়শিদের কাছে মাকে বলতে শুনেছিলেন, মেয়ের চুল বিক্রি করে ঘরের চাল-ডাল-নুডল্‌স কেনেন তিনি। কাং বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, পরিবারের সকলের মুখে অন্ন তুলে দিতে টাকার প্রয়োজন ছিল। ফলে আমার চুল ছাঁটানো নিয়ে মাকে কখনও প্রশ্ন করিনি।’’

১০ ২১
বস্তুত, কাংয়ের জীবনের প্রথম দশকে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির অন্যতম ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সে দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারেরও কম। ভারতীয় মুদ্রায় যার বর্তমান মূল্য ৭,৬২৭.৭৬ টাকা। সেই দুর্দিনে হঠাৎই মহিলাদের চুলের মূল্য বেড়ে গিয়েছিল।

বস্তুত, কাংয়ের জীবনের প্রথম দশকে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির অন্যতম ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। সে দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারেরও কম। ভারতীয় মুদ্রায় যার বর্তমান মূল্য ৭,৬২৭.৭৬ টাকা। সেই দুর্দিনে হঠাৎই মহিলাদের চুলের মূল্য বেড়ে গিয়েছিল।

১১ ২১
শত শত বছর ধরে যে চুল ছাঁটাকে ‘ট্যাবু’ বলে মনে করত দক্ষিণ কোরীয় সমাজ, তারই প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৯৬৪ সালে। সে বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪৭৪ মেট্রিক টন চুল রফতানি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তা থেকে বিপুল আয়ের পিছনে যে নারীশক্তি ছিল, তা-ও আধুনিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী এক দেশের ভরকেন্দ্রে চলে এসেছিল।

শত শত বছর ধরে যে চুল ছাঁটাকে ‘ট্যাবু’ বলে মনে করত দক্ষিণ কোরীয় সমাজ, তারই প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছিল ১৯৬৪ সালে। সে বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৪৭৪ মেট্রিক টন চুল রফতানি করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তা থেকে বিপুল আয়ের পিছনে যে নারীশক্তি ছিল, তা-ও আধুনিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী এক দেশের ভরকেন্দ্রে চলে এসেছিল।

১২ ২১
‘দ্য এডুকেশন ইউনিভার্সিটি অব হংকং’-এর গ্লোবাল হিস্ট্রির সরকারী অধ্যাপক জেসন পেট্রুলিস জানিয়েছেন, ১৯৫৮ সাল থেকে বিশ্ব জুড়ে পরচুলার কারবারে বিপুল ক্ষেত্র খুলে গিয়েছিল। প্যারিসের ফ্যাশন জগৎ থেকে আমেরিকার কেতাদুরস্ত মহিলারা— সে সময় অনেকেই পরচুলা ব্যবহার করতেন। এমনকি, আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী জ্যাকি কেনেডিও তা পরেছেন। যদিও তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি তিনি।

‘দ্য এডুকেশন ইউনিভার্সিটি অব হংকং’-এর গ্লোবাল হিস্ট্রির সরকারী অধ্যাপক জেসন পেট্রুলিস জানিয়েছেন, ১৯৫৮ সাল থেকে বিশ্ব জুড়ে পরচুলার কারবারে বিপুল ক্ষেত্র খুলে গিয়েছিল। প্যারিসের ফ্যাশন জগৎ থেকে আমেরিকার কেতাদুরস্ত মহিলারা— সে সময় অনেকেই পরচুলা ব্যবহার করতেন। এমনকি, আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী জ্যাকি কেনেডিও তা পরেছেন। যদিও তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি তিনি।

১৩ ২১
পরচুলা তৈরির কারবারে গোড়ার দিকে ইউরোপীদের চুল ব্যবহার করা হলেও ষাটের দশকের মাঝামাঝি সে বাজার দখল করতে শুরু করে ভারত, চিন, ভিয়েতনাম-সহ দুই কোরিয়ার মতো এশীয় দেশগুলি। মূলত এশীয় বাজার থেকে সস্তায় কাঁচামাল আসায় এই কারবারের ভরকেন্দ্রে বদল ঘটেছিল বলে মত পেট্রুলিসের।

পরচুলা তৈরির কারবারে গোড়ার দিকে ইউরোপীদের চুল ব্যবহার করা হলেও ষাটের দশকের মাঝামাঝি সে বাজার দখল করতে শুরু করে ভারত, চিন, ভিয়েতনাম-সহ দুই কোরিয়ার মতো এশীয় দেশগুলি। মূলত এশীয় বাজার থেকে সস্তায় কাঁচামাল আসায় এই কারবারের ভরকেন্দ্রে বদল ঘটেছিল বলে মত পেট্রুলিসের।

১৪ ২১
দক্ষিণ কোরিয়ায় ষাটের দশকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বড়সড় অবদান ছিল পরচুলার। কাং বলেন, ‘‘আমাদের মহল্লায় চুল সংগ্রহকারীরা ঘুরে বেড়াতেন। এমনকি, সেলুনেও ঢুঁ মারতেন তাঁরা। সেলুনে কাটা চুল তাঁদের কাছে বিক্রির জন্য পনিটেল করে ঝুলিয়ে রাখা হত।’’

দক্ষিণ কোরিয়ায় ষাটের দশকে বিদেশি মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বড়সড় অবদান ছিল পরচুলার। কাং বলেন, ‘‘আমাদের মহল্লায় চুল সংগ্রহকারীরা ঘুরে বেড়াতেন। এমনকি, সেলুনেও ঢুঁ মারতেন তাঁরা। সেলুনে কাটা চুল তাঁদের কাছে বিক্রির জন্য পনিটেল করে ঝুলিয়ে রাখা হত।’’

১৫ ২১
চুলের ব্যবসা করে অনেকেই আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। এই কারবারে শুধু যে সমাজের নিম্নবর্গের মহিলারাই জড়িত ছিলেন, তা নয়। সোলের অবস্থাপন্ন পরিবারের সদস্য হলেও এই কারবারে চলে এসেছিলেন চ্যাং সুন হওয়া ও তাঁর পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘আমার ঠাকুরমা তাঁর চুল ছাঁটতেন না বটে। তবে চুল আঁচড়ানোর পর তাঁর ঝরে পড়া চুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন।’’

চুলের ব্যবসা করে অনেকেই আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন। এই কারবারে শুধু যে সমাজের নিম্নবর্গের মহিলারাই জড়িত ছিলেন, তা নয়। সোলের অবস্থাপন্ন পরিবারের সদস্য হলেও এই কারবারে চলে এসেছিলেন চ্যাং সুন হওয়া ও তাঁর পরিবার। তিনি বলেন, ‘‘আমার ঠাকুরমা তাঁর চুল ছাঁটতেন না বটে। তবে চুল আঁচড়ানোর পর তাঁর ঝরে পড়া চুল সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন।’’

১৬ ২১
হাইস্কুলে পড়ার সময় রাষ্ট্রের নির্দেশ অনুযায়ী নিজের চুল ছাঁটাতে বাধ্য হয়েছিলেন চ্যাং। তিনি জানিয়েছেন, মনে হয়েছিল যেন একটি অঙ্গহানি হল! তবে দেশের আধুনিকীকরণে সে ত্যাগও মাথায় পেতে নিয়েছিলেন বহু মহিলা।

হাইস্কুলে পড়ার সময় রাষ্ট্রের নির্দেশ অনুযায়ী নিজের চুল ছাঁটাতে বাধ্য হয়েছিলেন চ্যাং। তিনি জানিয়েছেন, মনে হয়েছিল যেন একটি অঙ্গহানি হল! তবে দেশের আধুনিকীকরণে সে ত্যাগও মাথায় পেতে নিয়েছিলেন বহু মহিলা।

১৭ ২১
সাধারণ মহিলাদের সেই ত্যাগ বৃথা যায়নি। ১৯৭০ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরচুলা তৈরির কারবার ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ১৯৬৪ সালে সব মিলিয়ে যা থেকে আয় হয়েছিল ১৪ হাজার ডলার। ’৭০-এ তার বার্ষিক মুনাফা দাঁড়ায় ৯.৩ কোটি ডলার। বস্তুত, দক্ষিণ কোরিয়ার মোট রফতানির ৯.৩ শতাংশই হল পরচুলা। এবং তা সে দেশের দ্বিতীয় রফতানিকারক দ্রব্য।

সাধারণ মহিলাদের সেই ত্যাগ বৃথা যায়নি। ১৯৭০ সালের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরচুলা তৈরির কারবার ফুলেফেঁপে উঠেছিল। ১৯৬৪ সালে সব মিলিয়ে যা থেকে আয় হয়েছিল ১৪ হাজার ডলার। ’৭০-এ তার বার্ষিক মুনাফা দাঁড়ায় ৯.৩ কোটি ডলার। বস্তুত, দক্ষিণ কোরিয়ার মোট রফতানির ৯.৩ শতাংশই হল পরচুলা। এবং তা সে দেশের দ্বিতীয় রফতানিকারক দ্রব্য।

১৮ ২১
গোড়ার দিকে অসংগঠিত ভাবে ঘরে ঘরে এই কারবার শুরু হয়েছিল। তবে পরে পরচুলা তৈরির কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছিল অসাম্য এবং শোষণের কাহিনিও। ষাটের দশকের শেষ ভাগে চিন-সহ পড়শি দেশগুলি থেকে চুল আমদানি করে পরচুলা তৈরি শুরু হয়েছিল ওই কারখানাগুলিতে। সে সময় কর্মী হিসাবে নামমাত্র মজুরিতে হাজার হাজার কমবয়সি মেয়েদের নিয়োগ করতেন কারখানার মালিকেরা।

গোড়ার দিকে অসংগঠিত ভাবে ঘরে ঘরে এই কারবার শুরু হয়েছিল। তবে পরে পরচুলা তৈরির কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছিল অসাম্য এবং শোষণের কাহিনিও। ষাটের দশকের শেষ ভাগে চিন-সহ পড়শি দেশগুলি থেকে চুল আমদানি করে পরচুলা তৈরি শুরু হয়েছিল ওই কারখানাগুলিতে। সে সময় কর্মী হিসাবে নামমাত্র মজুরিতে হাজার হাজার কমবয়সি মেয়েদের নিয়োগ করতেন কারখানার মালিকেরা।

১৯ ২১
কমবয়সি ও স্বল্পশিক্ষিত মেয়েদের হাতে মজুরির দু’পয়সা এলেও শোষণের শিকার হতেন তাঁরা। পেট্রুলিস বলেন, ‘‘পরচুলা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় খুঁটিনাটির বদলে শুধু তা তৈরির দিকটিই কমবয়সি মেয়েদের শেখাতেন কারখানার মালিকেরা। ফলে শ্রমিক হিসাবে কাজ করলেও কারখানার উচ্চপদে আসীন হতে পারতেন না ওই মেয়েরা। তাঁদের কোনও নির্দিষ্ট বেতন ধার্য করা ছিল না। পরচুলার তৈরির সংখ্যার ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হত।’’

কমবয়সি ও স্বল্পশিক্ষিত মেয়েদের হাতে মজুরির দু’পয়সা এলেও শোষণের শিকার হতেন তাঁরা। পেট্রুলিস বলেন, ‘‘পরচুলা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় খুঁটিনাটির বদলে শুধু তা তৈরির দিকটিই কমবয়সি মেয়েদের শেখাতেন কারখানার মালিকেরা। ফলে শ্রমিক হিসাবে কাজ করলেও কারখানার উচ্চপদে আসীন হতে পারতেন না ওই মেয়েরা। তাঁদের কোনও নির্দিষ্ট বেতন ধার্য করা ছিল না। পরচুলার তৈরির সংখ্যার ভিত্তিতে মজুরি দেওয়া হত।’’

২০ ২১
তবে ধীরে ধীরে মালিকপক্ষের এই ‘চতুর’ শোষণের ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু হয়েছিল। নিজেদের আর্থিক অবস্থায় বদল ঘটাতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ইউনিয়ন গড়ে তোলেন মহিলারা। ১৯৭৯ সালে কর্মীছাঁটাই এবং মজুরির দাবিতে ওয়াইএইচ ট্রেড নামে এক রফতানিকারক সংস্থায় বিক্ষোভ দেখায় সেখানকার ওয়াইএইচ লেবার ইউনিয়ন। সে সময় তাঁদের দাবিপূরণ না হলেও কোরিয়ান উইমেন ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভিত গড়ে দিয়েছিল। পরে আরও দু’টি ইউনিয়ন গড়েন মহিলা কর্মীরা।

তবে ধীরে ধীরে মালিকপক্ষের এই ‘চতুর’ শোষণের ছবিটা স্পষ্ট হতে শুরু হয়েছিল। নিজেদের আর্থিক অবস্থায় বদল ঘটাতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ইউনিয়ন গড়ে তোলেন মহিলারা। ১৯৭৯ সালে কর্মীছাঁটাই এবং মজুরির দাবিতে ওয়াইএইচ ট্রেড নামে এক রফতানিকারক সংস্থায় বিক্ষোভ দেখায় সেখানকার ওয়াইএইচ লেবার ইউনিয়ন। সে সময় তাঁদের দাবিপূরণ না হলেও কোরিয়ান উইমেন ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভিত গড়ে দিয়েছিল। পরে আরও দু’টি ইউনিয়ন গড়েন মহিলা কর্মীরা।

২১ ২১
বিশ্ব জুড়েই পরচুলা তৈরির কারবার আড়েবহরে বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২০ সালে তা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আজও মহিলা কর্মীদের সংখ্যা বেশি। ভারত, বাংলাদেশ, চিন এবং তাইল্যান্ডের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়াতেও এটি বিদেশি মুদ্রায় আয়ের অন্যতম উপায়। তবে তার জন্য কম মূল্য চোকাতে হয়নি সে দেশের মেয়েদের!

বিশ্ব জুড়েই পরচুলা তৈরির কারবার আড়েবহরে বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২০ সালে তা ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আজও মহিলা কর্মীদের সংখ্যা বেশি। ভারত, বাংলাদেশ, চিন এবং তাইল্যান্ডের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়াতেও এটি বিদেশি মুদ্রায় আয়ের অন্যতম উপায়। তবে তার জন্য কম মূল্য চোকাতে হয়নি সে দেশের মেয়েদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy