How Israel defied Iran's drone and missile attacks dgtl
Iran-Israel Conflict
ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯% ধ্বংস আকাশেই! তবু ইজ়রায়েলে হামলাকে ‘সফল’ বলে অভিযান শেষ করল ইরান
ইজ়রায়েলের আকাশে চরকি খাওয়া ইরানের একের পর এক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। আক্রমণে না গিয়েও শুধু প্রতিরক্ষা করে যুদ্ধে কী ভাবে সাফল্য পাওয়া যায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
মাত্র এক দিনের যুদ্ধ! আরও ভাল করে বললে বলা চলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার হামলা। শনিবার মধ্যরাতে হামলার পর রবিবার সকালেই ইরান জানিয়ে দেয়, ইজ়রায়েলে হামলায় তারা ইতি টানছে। ৩০০টির বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে নিক্ষেপ করে তেহরান। তবে ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ার আগেই প্রায় সব ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস হয়ে যায়।
০২১৮
ইজ়রায়েলের আকাশে চরকি খাওয়া ইরানের একের পর এক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে ধ্বংস করে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। আক্রমণে না গিয়েও শুধু প্রতিরক্ষা করে যুদ্ধে কী ভাবে সাফল্য পাওয়া যায়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েল। ইরানের হামলা ঠেকিয়ে এখন আলোচনায় ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
০৩১৮
মূলত ত্রিস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ইরানি হামলা মোকাবিলা করেছে ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি দাবি করেছেন, ইরানের ছোড়া ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৯৯ শতাংশই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
০৪১৮
ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে বেশ কয়েকটি স্তর। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা তিনটি ভাগ নিয়ে। অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম, ডেভিড’স স্লিং এবং আয়রন ডোম। এ ছাড়াও প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এবং আয়রন বিমের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে ইজ়রায়েলের কাছে।
০৫১৮
অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম কী? ইরানের বিরুদ্ধে সাফল্য পাওয়ার পর এই প্রতিরোধী ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন দেশে আলোচনা চলছে। কী ভাবে এই ব্যবস্থা নিজেদের অস্ত্রভান্ডারে যুক্ত করা যায়, তা-ও বিবেচনা করছে অনেকেই। মূলত দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেমের বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার।
০৬১৮
আশির দশক থেকে এই ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে হাত দেয় ইজ়রায়েল এবং আমেরিকা। আমেরিকার সাহায্যেই ইজ়রায়েল নিজেদের দেশে এই ব্যবস্থা তৈরি করেছে। অ্যারো ১ এবং অ্যারো ২ সিস্টেম চালু হয় পর পর। তবে এখন ইজ়রায়েলের অস্ত্রভান্ডারের শক্তি বৃদ্ধি করেছে অ্যারো ৩। ইরানি হামলা প্রতিরোধ করতে এই ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে বলেই খবর।
০৭১৮
২০১১ সালে অ্যারো ৩ সংস্করণের সফল পরীক্ষা করে ইজ়রায়েল। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ইজ়রায়েল এই ব্যবস্থার ব্যবহার করে। শব্দের চেয়েও ন’গুণ বেশি গতিতে বিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে ছুটে যেতে পারে ‘অ্যারো ৩’। দু’হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে এই অস্ত্র। বায়ুমণ্ডলের সর্বস্তরে অ্যারো ৩ অবাধ বিচরণ করতে পারে।
০৮১৮
বাইরে থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র অল্প এবং মাঝারি দূরত্বে থাকলে সে ক্ষেত্রে অ্যারো ২ সিস্টেম কার্যকরী হয়। অল্প এবং মাঝারি দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই অকেজো করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। তবে দূরের ক্ষেপণাস্ত্রকে কাবু করতে পারে একমাত্র অ্যারো ৩।
০৯১৮
‘অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম’ ছাড়া ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্য স্তরগুলি হল আয়রন ডোম এবং ডেভিড’স স্লিং। মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ইজ়রায়েলের সেনা ব্যবহার করে ডেভিড’স স্লিং ব্যবস্থা। আর স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেয় আয়রন ডোম।
১০১৮
আমেরিকার সহযোগিতায় ইজ়রায়েল তৈরি করেছে ডেভিড’স স্লিং ব্যবস্থা। লেবাননের হিজ়বুল্লার মতো গোষ্ঠীর দখলে থাকা মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ইজ়রায়েল এই অস্ত্র ব্যবহার করে। ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ছোড়া রকেটকে গুলি করার জন্য ব্যবহার করা হয় ডেভিড’স স্লিং।
১১১৮
অ্যারো এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম, ডেভিড’স স্লিং ছাড়াও ইজ়রায়েলের অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে আরও এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। ২০০৬ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লার আক্রমণ প্রতিরোধ করতেই আয়রন ডোম তৈরি করেছিল ইজ়রায়েল। এই ব্যবস্থা তৈরি করতেও ইজ়রায়েল সাহায্য পেয়েছে আমেরিকার।
১২১৮
স্বল্প-পাল্লার রকেটগুলিকে গুলি করে নামাতে ইজ়রায়েল আয়রন ডোম ব্যবহার করে। এই অস্ত্র নিয়ে ইজ়রায়েল সেনাবাহিনী রীতিমতো গর্ব করে। দাবি করা হয়, এই অস্ত্রের সাফল্যের হার ৯০ শতাংশেরও বেশি।
১৩১৮
এ ছাড়াও প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এবং আয়রন বিমও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়। ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকেই ইজ়রায়েল এই ব্যবস্থা ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। প্রাথমিক ভাবে ইরাক থেকে ছোড়া স্কাড ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতেই প্যাট্রিয়ট সিস্টেম ব্যবহার করত ইজ়রায়েল।
১৪১৮
ইজ়রায়েল যুদ্ধবিমানে আয়রন বিম ব্যবহার করা হয়। অত্যাধুনিক লেজ়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা নেয় আয়রন বিম।
১৫১৮
বিশ্বের অনেক দেশের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছে ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা রুখে দিল ইরানি হামলা। ইজ়রায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, শনিবার মধ্যরাতে ৩০০-এর বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইজ়রায়েলের দিকে ছুড়েছে ইরান। ইতিমধ্যে এই হামলার মোকাবিলায় আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স-সহ একাধিক দেশকে পাশে পেয়েছে ইজ়রায়েল।
১৬১৮
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা থেকেই সবচেয়ে বেশি সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইজ়রায়েল। ওয়াশিংটন যেমন কোটি কোটি টাকার সামরিক তহবিল জোগান দেয় ইজ়রায়েলকে, তেমনই অস্ত্র-প্রতিরক্ষা তৈরি করতেও সহায়তা করে। ২০১৬ সালে আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলি সরকার তৃতীয় বারের মতো সমঝোতায় সই করেছে। ১০ বছরের এই চুক্তির অধীনে আমেরিকা, ইজ়রায়েলকে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেবে।
১৭১৮
প্রযুক্তিগত ভাবে এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান হল এফ-৩৫। ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনীতেও রয়েছে এই যুদ্ধবিমান। গত বছরে ৩৬টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনেছিল নেতানিয়াহু সরকার। আরও ৭৫টি কিনতে চলেছে ইজ়রায়েল। হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে এই সব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী।
১৮১৮
ইরানি হামলা প্রতিরোধ করলেও এখনও পাল্টা হামলার পথে যায়নি ইজ়রায়েল। পাল্টা হামলার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আমেরিকা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। ইরানের হামলার পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং পরিস্থিতির তদারকি করেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্তা সংবাদমাধ্যমে জানান, বাইডেন ফোনে নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ‘‘ইরানের বিরুদ্ধে কোনও আক্রমণাত্মক অভিযানে অংশ নেবে না আমেরিকা। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের কোনও আক্রমণকে সমর্থনও করবে না।’’ তাই অনেকেই মনে করছেন, ইরান আবার হামলা না করলে পাল্টা হামলার পথে হাঁটবে না নেতানিয়াহু সরকার।