Hollywood director Howard Hughes, singer Red Lane and many others who prefer living inside airplanes dgtl
Living Inside Airplane
ইটকাঠের বাড়িতে নয়, শখ করে ঘরসংসার বিমানেই, তালিকায় হলিউড খ্যাতনামী থেকে আম আদমি
আস্ত বিমানেই ঘরসংসার। তাতেই হাত-পা ছড়িয়ে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। বা বলা ভাল, তেমনটা আগেও করেছেন অনেকে। আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হলেও এমন করেছেন খ্যাতনামী চিত্রপরিচালক থেকে অখ্যাতরা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
ইটকাঠ বা সিমেন্টের বাড়িতে আস্তানা নয়। আস্ত বিমানের ভিতরে ঘরসংসার। তাতেই হাত-পা ছড়িয়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। বা বলা ভাল, তেমনটা আগেও করেছেন অনেকেই। আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুত মনে হলেও এ তালিকায় নাম উঠেছে হলিউডের খ্যাতনামী চিত্রপরিচালক থেকে অখ্যাত আম আদমি।
০২২০
আগুনের গ্রাসে নিজের ঘরবাড়ি হারিয়ে বোয়িং বিমানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমেরিকার রূপটানশিল্পী জো অ্যান ইউসেরি। যেমন ভাবা, তেমন কাজ! তড়িঘড়ি একটি পুরনো বোয়িং ৭২৭ কিনে ফেলেন। সেখানেই নতুন করে সংসার সাজাতে থাকেন।
০৩২০
বোয়িং বিমানে ঘরসংসার পাতার ভাবনাটা জোয়ের মাথায় ঢুকিয়েছিলেন তাঁর শ্যালক। পেশায় যিনি ছিলেন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার। ভাঙাচোরা পুরনো জিনিসপত্র, ফেলে দেওয়া লোহার ছাঁটের সঙ্গে বোয়িং বিমানটিরও সদ্গতি হওয়ার কথা ছিল। তবে ভাগাড়ে ফেলে দেওয়ার আগে সেটিকে কিনে নেন জো।
০৪২০
মিসিসিপির বেনোয়া শহরে নিজের এক টুকরো জমি ছিল জোয়ের। পুরনো বিমানটি কিনে সেটিকে সেখানেই নিয়ে যান তিনি। মাস ছয়েক ধরে বিমানটি আশপাশ থেকে অন্দরের বেশির ভাগ মেরামতিও করেন নিজের হাতে। এর পর সেটিকে বাসযোগ্য করে তোলেন।
০৫২০
মাস ছয়েক পরে পুরনো বিমানটির যেন নবজন্ম হয়েছিল। সাজানোগোছানো বিমানের ভিতরে ছিল দেড় হাজার বর্গফুটের বিশাল ড্রয়িং রুম, তিনটে শোয়ার ঘর, দুটো বাথরুম। বিমানের ককপিটের জায়গায় আস্ত একখানা টাবও রেখেছিলেন জো।
০৬২০
বিমানের ভোল পাল্টাতে সব মিলিয়ে তখনকার দিনে জোয়ের খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার ডলার। আজকালকার দিনে ভারতীয় মুদ্রায় যা ২৪ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা কিছু বেশি।
০৭২০
১৯৯৫ থেকে ’৯৯ সাল পর্যন্ত ওই বিমানে বসবাস করেছিলেন জো। বিমানটিকে ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় তা এমনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেটির আর মেরামত করা যায়নি। ফলে তার পর থেকে বিমানে বসবাসের চিন্তা ছাড়তে হয়েছিল জো অ্যান ইউসেরিকে।
০৮২০
জোয়ের ‘অচিরাচরিত’ জীবনযাত্রা উঠে এসেছিল বহু সংবাদমাধ্যমে। তা নাকি অনেককে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তেমনই এক জনের নাম শোনা গিয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তিনি হলেন ব্রুস ক্যাম্পবেল।
০৯২০
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে একটি রেডিয়োর অনুষ্ঠানে জোয়ের কথা জানতে পেরেছিলেন ব্রুস। পেশা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ব্রুসের ব্যক্তিগত বিমানচালনার লাইসেন্স রয়েছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘এক বার রেডিয়ো শুনতে শুনতে গাড়ি চালিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিলাম। রেডিয়োতে জো অ্যানকে নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। তা শুনে মনে হয়েছিল, কী অসাধারণ কাহিনি! পরের দিন থেকেই ওই রকম ভাবে বিমানে থাকব বলে এ ধার-ও ধার ফোন করতে শুরু করে দিয়েছিলাম।’’
১০২০
আজকাল আমেরিকার ওরেগনের হিলসবোরোর জঙ্গলে নিজস্ব বিমানে থাকেন ব্রুস। তিনি জানিয়েছেন, কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে বিমানের ভিতরেই তাঁর ঘরসংসার। তাঁর মতে, এ ভাবে বসবাসের কথা চিন্তাভাবনার জন্য জোয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।
১১২০
কুড়ি বছর ধরে বোয়িং ৭২৭ বিমানে রয়েছেন ব্রুস। তিনি বলেন, ‘‘চিরাচরিত ভাবে কোনও বাড়ির ভিতরে আর কখনই থাকতে পারব না।’’ বিমানে সংসার পাতার জন্য গাঁটের বহু কড়িও গচ্চা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
১২২০
সব মিলিয়ে তখনকার সময় বিমানে ঘর পাততে ২২০,০০০ ডলার খরচ করতে হয়েছিল ব্রুসকে। এখন যার ভারতীয় মুদ্রায় অর্থমূল্য ১ কোটি ৮০ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার বেশি। তার মধ্যে ওই বিমানটি কিনতেই বেশির ভাগ অর্থ খরচ হয়েছিল।
১৩২০
ব্রুস জানিয়েছেন, বোয়িং ৭২৭ বিমানটি ছিল গ্রিসের অলিম্পিক এয়ারওয়েজ়ের। ওই বিমান সংস্থার মালিক তথা ধনকুবের ব্যবসায়ী অ্যারিস্টটল ওনাসিসও নাকি ১৯৭৫ সালে সেটি ব্যবহার করেছিলেন। ব্রুস বলেন, ‘‘বিমানটির যে এই ইতিহাস রয়েছে, তা আগে জানতাম না। এ-ও জানি না, এটা কত বছরের পুরনো। আধুনিক বিমানের তুলনায় এটা বেশ নিম্নমানের। তবে এতে ঘরসংসার পাতা বোধ হয় সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত।’’
১৪২০
নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা থাকলেও পুরনো বিমানেই থেকে গিয়েছিলেন ব্রুস। এর পর বছর দুয়েক ধরে সেটির অন্দরসজ্জা চালিয়ে যান। তবে শাওয়ার তৈরি করতে একটি প্লাস্টিকের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হয়েছিল। সেই সঙ্গে এমন একটি সোফায় বিছানা পেতেছিলেন, যেটি ছড়িয়ে দিলে খাটে বদলে যায়।
১৫২০
গ্রীষ্মকালে ওরেগনের জঙ্গলে ওই বিমানে কাটালেও হাড়কাঁপানো শীতে জাপানের মিয়াজ়াকি শহরে নিজের আস্তানায় চলে যান ব্রুস। সেখানে তাঁর একটা ছোটখাটো অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। যদিও অতিমারি পর্বে পুরনো বিমান ছেড়ে জাপানে পা রাখতে পারেননি তিনি।
১৬২০
জো বা ব্রুসের মতো অনেকেই বিমানে জীবন কাটিয়েছেন। টেক্সাসের জো অক্সলিনের তো আবার একটি নয়, তেমন ধরনের দু’টি বিমান রয়েছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে টেক্সাসের ব্রুকশায়ারের নিজের জমিতে এমডি-৮০ এবং ডিসি-৯, এই জোড়া বিমানে সংসার করছেন তিনি।
১৭২০
জো জানিয়েছেন, তাঁর বিমানের ভিতর রয়েছে ১০x১৮ ফুটের মাস্টার বেডরুম। তাতে ২টি টিভি অনায়াসে রাখা যায়। এতটাই জায়গা, যে ঘুরেফিরে বেড়াতে অসুবিধা হয় না তাঁর। ডাইনিং রুমে ৪ জন হাত-পা খেলিয়ে বসতে পারেন। যদিও একটা আক্ষেপ রয়েছে। এ ‘সংসারে’ খোলা জানলা পাওয়া যায় না। ফলে টাটকা বাতাস পেতে মাঝেমধ্যেই বিমানের দরজা খুলে রাখেন তিনি।
১৮২০
জো বা ব্রুসের মতো আম আদমিদেরও আগে বিমানকে ঘর বানিয়েছিলেন হলিউডের ধনকুবের পরিচালক হাওয়ার্ড হিউজ়। খামখেয়ালিপনার জন্য খ্যাতিমান প্রয়াত হিউজ়ের একটি বোয়িং ৩০৭ স্ট্র্যাটোলাইনার ছিল। সেই ‘উড়ন্ত পেন্টহাউস’টিকে সাজাতে বিপুল অর্থ খসিয়েছিলেন হিউজ়। যদিও তার পরিমাণ কত, তা জানা যায়নি।
১৯২০
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে হিউজ়ের বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ১৯৮০ সালে সেটি কিনে নেন ডেভ ড্রিমার নামে ফ্লরিডার এক বাসিন্দা। তাতে বছর কুড়ি বসবাসের পর ২০১৮ সালে সেটি ফ্লরিডা এয়ার মিউজ়িয়ামে দান করেছিলেন।
২০২০
হিউজ়ের মতোই বিমানে থাকতেন আমেরিকার প্রয়াত কান্ট্রি গায়ক রেড লেন। গায়ক হওয়ার আগে বিমানের যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ করতেন তিনি। সত্তরের দশকের শেষ ভাগে একটি ডিসি-৮ বিমানকে নিজের মতো করে সাজিয়েগুছিয়ে সেখানেই আস্তানা গেড়েছিলেন। এক বার টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই বিমানে ঘুম ভাঙার পর কখনই মনে হয়নি অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করি।’’