Hezbollah underground missile city in Lebanon Israel may start ground operation dgtl
Israel Hezbollah War
সুড়ঙ্গের ‘ক্ষেপণাস্ত্র শহরে’ লুকিয়ে হিজবুল্লার যোদ্ধারা, লেবাননে ঢুকলে মূল্য দিতে হবে ইজ়রায়েলকে?
দক্ষিণ লেবাননের পাথুরে এলাকায় মাটির গভীরে সুড়ঙ্গ কেটে ‘ক্ষেপণাস্ত্র শহর’ বানিয়েছে হিজবুল্লার জঙ্গিরা। ইজ়রায়েলের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
পশ্চিম এশিয়ায় বারুদের গন্ধ। নতুন করে ইজ়রায়েল ও লেবাননের মধ্যে ছড়াচ্ছে যুদ্ধ। প্রতিবেশী দেশটিতে ছড়িয়ে থাকা ইরান সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লার কোমর ভাঙার পণ করেছে ইহুদি সেনা। যা মোটেই সহজ হবে না বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
০২২২
আমেরিকা ও ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, দক্ষিণ লেবাননের গ্রামীণ এলাকায় পাথুরে জমির নীচে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সেনাঘাঁটি তৈরি করেছে শিয়াপন্থী হিজবুল্লা। সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে তাঁদের গেরিলা বাহিনী।
০৩২২
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গোপনে জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে মাটির নীচে মাইলের পর মাইল সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠী। সেখানেই মজুত রয়েছে মারাত্মক সব ক্ষেপণাস্ত্র। যার অধিকাংশই ইরান থেকে চোরাপথে পৌঁছেছে হিজবুল্লার ডেরায়।
০৪২২
হিজবুল্লার এই সুড়ঙ্গগুলি এতটাই চওড়া যে এর ভিতরে অনায়াসেই চলাফেরা করতে পারে রকেট লঞ্চার দিয়ে সাজানো ফৌজি ট্রাক বা সাঁজোয়া গাড়ি। সুড়ঙ্গের মধ্যে বসেই চালানো যায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। গোয়েন্দারা তাই হিজবুল্লার গুপ্ত ঘাঁটিগুলিকে মাটির নীচের ‘ক্ষেপণাস্ত্রের শহর’ বলে বর্ণনা করেছেন।
০৫২২
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সুড়ঙ্গগুলিতে চোখ বন্ধ করে হাঁটাচলা করতে পারে হিজবুল্লার যোদ্ধারা। এগুলিকে গেরিলা যুদ্ধের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে তারা সিদ্ধহস্ত। অর্থাৎ, এর থেকে বেরিয়ে শত্রুর উপর হামলা চালিয়ে চোখের নিমেষে আবার সুড়ঙ্গে ঢুকে গায়েব হয়ে যেতে পারে তারা।
০৬২২
হিজবুল্লার এই মাটির নীচের ক্ষেপণাস্ত্র শহরের তিনটি অংশ রয়েছে। সেগুলি হল বাঙ্কার, ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম ও কমান্ড সেন্টার। ভূপৃষ্ঠের গভীরে যা জালের মতো বিস্তৃত। সুড়ঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি আবার নানা ভাবে সংযুক্ত। ফলে জঙ্গিদের কাছে অনায়াসেই নির্দেশ পাঠাতে পারেন হিজবুল্লার নেতারা।
০৭২২
ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হিজবুল্লাকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী জঙ্গিগোষ্ঠী বলে মনে করা হয়। এদের হাতে রয়েছে ২ লক্ষ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট। এ ছাড়া একটি সংগঠিত ড্রোন বাহিনী রয়েছে তাদের। যা ইজ়রায়েলের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে।
০৮২২
সম্প্রতি, দক্ষিণ লেবাননে যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। তাতে হিজবুল্লার একাধিক গুপ্ত ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে ইহুদি সেনা। পাল্টা লেবাননের দাবি, হিজবুল্লাকে শেষ করার নামে শহর এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানছে ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা।
০৯২২
অন্য দিকে হিজবুল্লা জানিয়েছে, ইহুদি সেনার আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে তাদের দু’জন শীর্ষ কমান্ডার। এই আবহে লেবাননে ঢুকে হামলা চালাতে পারে ইজ়রায়েলের স্থলবাহিনী। শেষ পর্যন্ত ইহুদি রাষ্ট্রটি সেই সিদ্ধান্ত নিলে যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
১০২২
বিশেষজ্ঞদের দাবি, লেবাননে ঢুকে হিজবুল্লাকে শেষ করতে হলে জঙ্গিগোষ্ঠীটির মাটির নীচের ক্ষেপণাস্ত্র শহর গুঁড়িয়ে দিতে হবে ই়জ়রায়েলকে। সে ক্ষেত্রে গেরিলা যুদ্ধের মুখোমুখি হবে ইহুদি ফৌজ। তখন শিয়াপন্থী জঙ্গিদের হাতে নাস্তানাবুদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাঁদের।
১১২২
তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে গাজ়ায় হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে ইজ়রায়েলি স্থলবাহিনী (আইডিএফ)। ইরান সমর্থিত এই জঙ্গিরাও মাটির নীচের সুড়ঙ্গেই লুকিয়ে থাকতে ভালবাসে। তাদের খুঁজে খুঁজে খতম করার একাধিক ভিডিয়ো গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক বার প্রকাশ করে আইডিএফ।
১২২২
ইহুদি ফৌজের প্রকাশ করা তেমনই একটি ভিডিয়োতে হামাসের কয়েক কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ উড়ে যেতে দেখা গিয়েছে। আর এই কাজে বিশেষ ধরনের এক বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে আইডিএফ। সুড়ঙ্গে মুখ দিয়ে সেই বিস্ফোরক ভিতরে পাঠিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় তাঁরা।
১৩২২
তা ছাড়া হিজবুল্লার গতিবিধি সম্পর্কে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা ‘মোসাদ’ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল বলেই মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালানোর পর এই জঙ্গিদের নিয়ে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে ইহুদি সেনা। সেখানে কী ভাবে শহরে আবাসনগুলির বেসমেন্টকে ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম হিসাবে হিজবুল্লা ব্যবহার করছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।
১৪২২
তার পরও লেবাননে ঢুকলে আইডিএফকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে মনে করেন অনেক সমর বিশেষজ্ঞ। কারণ, প্রথমত হিজবুল্লার সুড়ঙ্গ হামাসের মতো সরু নয়। দ্বিতীয়ত, গেরিলা যুদ্ধে তারা হামাসের চেয়ে অনেক বেশি পটু।
১৫২২
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের উপর মারাত্মক হামলা চালায় হামাস। ইহুদি রাষ্ট্রটিতে ঢুকে নির্বিচারে নিরীহ নাগরিকদের হত্যা করে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। এর পর অনেককে অপহরণ করে গাজ়ায় নিয়ে যায় তারা।
১৬২২
ওই ঘটনার পরই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ফলস্বরূপ প্রথমে গাজ়ায় বিমান হামলা চালায় ইহুদি ফৌজ। তার পর ধীরে ধীরে সেখানে ঢুকতে শুরু করে স্থলবাহিনী।
১৭২২
ইজ়রায়েল পাল্টা মার শুরু করতেই হামাসের সমর্থনে এগিয়ে আসে হিজবুল্লা। দক্ষিণ লেবানন থেকে ইহুদি রাষ্ট্রটির শহর লক্ষ্য করে মাঝেমধ্যেই রকেট হামলা চালাচ্ছে তারা। যার অধিকাংশই মাঝ আকাশেই ধ্বংস করেছে আয়রন ডোম নামের ইজ়রায়েলি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।
১৮২২
কিন্তু তা সত্ত্বেও হিজবুল্লার ছোড়া কয়েকটি রকেট গোলান হাইট্স ও তেল আভিভে আছড়ে পড়ার ছবি সামনে এসেছে। ফলে প্রাণ হারান কয়েক জন ইজ়রায়েলি নাগরিক। ফলে বাধ্য হয়ে দেশের উত্তর দিকের শহর-গ্রাম খালি করতে হয়েছে ইহুদিদের।
১৯২২
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি লেবানন জুড়ে হয় পেজার, ওয়াকিটকি ও সোলার প্যানেস বিস্ফোরণ। তাতে গুরুতরভাবে আহত হন প্রায় তিন হাজার জন। ইজ়রায়েলি গুপ্তচরদের হ্যাকিংয়ের ভয়ে হিজবুল্লা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেব ব্যবহার করে এই পেজার ও ওয়াকিটকি। যা ভাঙতে ইহুদিদের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ওই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
২০২২
লেবাননে পেজার হামলার পর রীতিমত ক্ষেপে ওঠে হিজবুল্লা। বদলা নিতে পাল্টা ইজ়রায়েলের উপর মারাত্মকভাবে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় এই জঙ্গিগোষ্ঠী। তবে আয়রন ডোম থাকায় সেগুলি ইহুদি দেশটির খুব বেশি লোকসান করতে পারেনি।
২১২২
ওই ঘটনার পর লেবাননে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে ইজ়রায়েল। হিজবুল্লার ক্ষেত্রেও একই ধরনের যুদ্ধনীতি ইহুদিরা অবলম্বন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিবেশী দেশটিতে ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে আইডিএফ ঢুকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
২২২২
পশ্চিম এশিয়ায় সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় দু’পক্ষকে ২১ দিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ রাখার আর্জি জানায় আমেরিকা ও ফ্রান্স। যা পত্রপাট খারিজ করে দিয়েছেন ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।