Gujarat Bridge Collapse: Many Killed Week After Renovation during Narendra Modi's visit in his home state dgtl
Gujarat Bridge Collapse
পায়ে হাঁটার সেতু ভেঙে এত মানুষের মৃত্যু! মোদীর উপস্থিতিতেই কি ‘নজির’ গড়ল মোদীর গুজরাত?
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ গুজরাতের মোরবী জেলার মাচ্ছু নদীর উপর ওই ঝুলন্ত সেতুটি ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেতুতে একসঙ্গে পাঁচশো জন উঠে পড়ার জেরেই এই বিপর্যয় ঘটেছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ১০:২৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের উন্নয়নের বিজ্ঞাপনে কি গভীর অস্বস্তি জাগিয়ে দিল মোরবির পায়ে হাঁটা সেতুর ভেঙে পড়ার ঘটনা? সোমবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই ঘটনায় ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
০২২৩
পায়ে হাঁটার সেতু ভেঙে এত মৃত্যুর ঘটনা কি আগে ঘটেছে? গুগলে ‘ফুট ব্রিজ কোল্যাপস্’ লিখে সার্চ দিলে যা বেরোচ্ছে, তাতে এত মৃত্যুর ‘নজির’ মিলছে না।
০৩২৩
রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ গুজরাতের মোরবী জেলার মাচ্ছু নদীর উপর ওই ঝুলন্ত সেতুটি ভেঙে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেতুতে একসঙ্গে পাঁচশো জন উঠে পড়ার জেরেই এই বিপর্যয় ঘটেছে।
০৪২৩
রবিবার রাত পর্যন্ত বহু মানুষ নিখোঁজ ছিলেন। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, নদীতে পড়ে গিয়ে জখম অবস্থাতেই সাঁতরে ডাঙায় ওঠার চেষ্টা করছেন অনেকে। কিছু মানুষকে ভাঙা সেতুর রেলিং ধরে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়। আবার অনেকেই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন।
০৫২৩
প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চললেও, পরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশ গিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। জখমদের ভর্তি করানো হয় স্থানীয় হাসপাতালে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, সেতুর উপরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পর্যটক।
০৬২৩
২০১৯ সালে মুম্বইয়ের কসাব সেতুতেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সেতুর কংক্রিটের পাটাতনের একটা বড় অংশ ভেঙে রাস্তায় পড়ে দুই মহিলা-সহ ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত অন্তত ৩৪।
০৭২৩
সিএসটি-র ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উত্তর প্রান্তের সঙ্গে এই সেতু জুড়েছে উল্টো দিকের বিটি লেনকে। কাছেই একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের দফতর। অফিস টাইমের ভিড়েই ভেঙে পড়েছিল ১৯৮৪ সালে তৈরি এই পায়ে হাঁটার সেতু। ভেঙে পড়া চাঙড়ের আঘাতে রাস্তাতেও জখম হয়েছেন অনেকে।
০৮২৩
২৬/১১-তে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস স্টেশন (সিএসটি)-এ তাণ্ডব চালানোর পরে এই সেতু পেরিয়েই নাকি কামা হাসপাতালে গিয়েছিল লস্কর জঙ্গি আজমল কসাব। তার পর থেকেই সেতুটি ‘কসাব ব্রিজ’ নামে পরিচিত।
০৯২৩
২০১৭ সালে মুম্বইয়ের এলফিনস্টন রোড স্টেশনের সংযোগকারী পায়ে হাঁটার সেতুতে যে ঘটনা ঘটেছিল, তা অবশ্য একটু আলাদা। সে বার সেতু ভেঙে না পড়লেও, ব্রিটিশ আমলের জীর্ণ, সরু ওই সেতুতে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন আট মহিলা-সহ ২২ জন। আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩৯ জন।
১০২৩
প্রবল বৃষ্টি আর দমবন্ধ ভিড়ের মধ্যে পর পর দু’টো গুজব ওই বিপদ ডেকে এনেছিল। সকাল প্রায় পৌনে ১১টা। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বহু যাত্রী তখন সেতুতে উপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই সময়েই নাকি গুজব রটে— ভিড়ের চাপে সেতুর একটা দিক ভেঙে পড়ছে।
১১২৩
গুজবের আতঙ্কে শুরু হয় ঠেলাঠেলি। বৃষ্টিতে এমনিতেই পিছল ছিল সেতু। অনেকে পড়ে যান। আর উঠতে পারেননি।
১২২৩
যাত্রী ও পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি ছিল, ওই সময় বিস্ফোরণের মতো একটি জোরালো শব্দ হয়। কিছু লোক চিৎকার করে বলেন, ‘‘শর্ট সার্কিট হয়েছে। লোহার ব্রিজে বিদ্যুৎ চলে আসতে পারে।’’ তা শুনেই যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। যার জেরে অত বড় বিপর্যয় ঘটে। কেউ কেউ রেলিং টপকেও ঝাঁপ দিতে যান নীচে।
১৩২৩
ঘটনাচক্রে, মাত্র দু’দিন আগে ভিড়ে ঠাসা ওই ফুটব্রিজটির ছবি টুইট করেছিলেন মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনের এক নিত্যযাত্রী। তৎকালীন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে ছবিটা ‘ট্যাগ’ করে লিখেছিলেন, ‘কিছু করুন।’
১৪২৩
বিদেশেও পায়ে হাঁটার সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরেই ঘটেছে। মেক্সিকোয়। গত জুন মাসে উদ্বোধনের সময়েই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল কিউয়েরনাভাকা শহরের একটি পায়ে হাঁটার সেতু। প্রায় ১০ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে নীচে পড়ে জখম হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন।
১৫২৩
ঘটা করে ঝুলন্ত সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন ওই শহরের মেয়র হোসে লুইস। উদ্বোধনের পর ব্যবহারের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। মেয়র এবং তাঁর স্ত্রী-সহ জনা কুড়ি সেই সেতুতে ওঠেন। সেতু দিয়ে পারাপার করতে গিয়েই সেটি ভেঙে পড়ে।
১৬২৩
উদ্বোধনের সময়েই সেতু ভেঙে পড়ার আরও একটি ঘটনা ঘটেছে চলতি বছরে। কঙ্গোয়।
১৭২৩
বর্ষাকালে অস্থায়ী সেতু দিয়ে নদী পারাপারে দুর্ঘটনা এড়াতে তৈরি করা একটি স্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়। সরকারি আধিকারিকেরা যখন লাল ফিতে কেটে উদ্বোধন করতে যান, ঠিক সেই মুহূর্তেই সেতুটি ভেঙে পড়ে। যদিও এই ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি। কেউ গুরুতর জখমও হননি।
১৮২৩
ঘটনাচক্রে, রবিবার গুজরাতের যে সেতুটি ভেঙে পড়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের পর সেটিও মাত্র চার দিন আগেই নতুন করে চালু হয়েছিল। পাঁচ দিনের মাথাতেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। সুতরাং, মেরামতিতে গলদ ছিল কি না, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে।
১৯২৩
এই ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে গুজরাত সরকারও।
২০২৩
১৮৭৯ সালে তৈরি হয়েছিল সেতুটি। মেরামতির জন্য সাত মাস বন্ধ ছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচনের জন্য তড়িঘড়ি সেতুটি চালু করা হয়েছে।
২১২৩
সামনেই গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রবিবারই তিন দিনের গুজরাত সফরে এসেছেন মোদী। তার মধ্যেই এই বিপর্যয়।
২২২৩
বেশ কিছু বছর ধরেই গুজরাতকে দেশের ‘উন্নয়ন মডেল’ হিসাবে দেখানো হয়। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই। মোরবি-কাণ্ড কি সেই বিজ্ঞাপনে নতুন জোরালো প্রশ্ন তুলে দিল? দুটো উত্তর আসছে। আসবে।
২৩২৩
কেউ বলবেন, গোটাটাই বিজ্ঞাপন। আসলে অন্তঃসারশূন্য। কেউ বলবেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দুর্ভাগ্যজনক একটা দুর্ঘটনা। গুজরাত, মডেল তো বটেই।