Greenland shark may not have sex until they are 150 year old dgtl
Greenland Shark
১৫০ বছর বয়স না হলে সঙ্গমে সক্ষম হয় না এই প্রাণী, তা হলে বাঁচে কত বছর?
১৭৮৯ সালে যখন জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন, তখনও ছিল তারা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও সাক্ষী থেকেছে তারা। কোনও শিল্প-স্থাপত্য নয়, তারা জীবিত প্রাণী।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৩৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৭
১৬৬৫ সালে যখন লন্ডনে প্লেগ মহামারিতে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন, তখনও ছিল তারা। ১৭৮৯ সালে যখন জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেন, তখনও ছিল তারা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও সাক্ষী থেকেছে তারা। কোনও শিল্প-স্থাপত্য নয়, তারা জীবিত প্রাণী। তারা গ্রিনল্যান্ডের হাঙর।
০২১৭
নাম গ্রিনল্যান্ডের হাঙর হলেও শুধু গ্রিনল্যান্ডেই থাকে না। ক্যারিবিয়ান সাগরেও দিব্যি খেলে বেড়ায় তারা। তবে বরফশীতল সাগর, মহাসাগরের গভীরেই তাদের চলাচল। সূর্যের মুখ দেখতে তারা সাঁতরে উপরে ওঠে না সাধারণত। সাধারণত মাইনাস ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকাই তাদের পছন্দ।
০৩১৭
মানুষের কাছে বহু বছর পর্যন্ত অধরাই ছিল তারা। ১৯৯৫ সালে প্রথম বার এই হাঙরের ছবি তুলতে সক্ষম হন গবেষকরা। তারও ১৮ বছর পর প্রথম বার এই প্রাণীর ভিডিয়ো ধরা পড়ে।
০৪১৭
গ্রিনল্যান্ডের হাঙর যখন পূর্ণবয়স্ক হয়, তখন তাদের আকার হয় সাদা হাঙরের (গ্রেট হোয়াইট) মতো। তবু সাদা হাঙরের সঙ্গে অনেক ফারাক রয়েছে গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম সমনিওসাস মাইক্রোসেফালাস। কয়েকশো বছর বাঁচে এই হাঙর। আর অন্তত দেড়শো বছর না হলে সঙ্গম করতে পারে না।
০৫১৭
গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের পেশিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন। তাই এই মাছ খেলে মারাত্মক নেশা হতে পারে। এই মাছ শিকার করে তাই রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। তার পরেই খাওয়া যায়।
০৬১৭
গ্রিনল্যান্ডের এই হাঙর নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী পিটার জি বুশনেল। তিনি জানিয়েছেন, এই পৃথিবীতে যত প্রাণী রয়েছে, তার মধ্যে সম্ভবত সব থেকে বেশি বছর বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর। কত বছর বাঁচে এরা? বুশনেলের দাবি, চারশো বছর বা তার বেশি সময়ও বাঁচতে পারে এই হাঙর।
০৭১৭
কোনও গ্রিনল্যান্ডের হাঙর যদি স্বল্প সময়ও বাঁচে, তা হলেও তা ২৭২ বছরের কম নয়। বাওহেড তিমি গড়ে ২১১ বছর বাঁচে। তার থেকেও বেশি বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর।
০৮১৭
বুশনেল জানিয়েছেন, গ্রেট হোয়াইট হাঙর বাঁচে ৮০ থেকে ৯০ বছর। বয়সে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর তাদের বৃদ্ধ পিতামহের মতো।
০৯১৭
কী ভাবে এত বছর বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর? বুশনেল জানিয়েছেন, তার নেপথ্যে রয়েছে দু’টি কারণ। এই হাঙরের বিশাল আকার আর ঠান্ডা আবহাওয়া।
১০১৭
বিজ্ঞানী বুশনেল জানিয়েছেন, রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়লে বেশি কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া তাড়াতাড়ি হয়। আর ঠান্ডার কারণে কিছু বিক্রিয়া খুব ধীরে হয়। এমনকি কখনও কখনও তা বন্ধ হয়ে যায়। গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের শরীরে কলাগুলি ঠান্ডায় প্রায় জমে যায়। সে কারণে বেশ কিছু বিক্রিয়া অনেক দেরিতে হয়। এমনকি বিপাকক্রিয়াও ধীরে হয়।
১১১৭
বিপাকক্রিয়ার কারণে শরীরের খাবার শক্তিতে পরিণত হয়। এই বিপাকক্রিয়া ছোট প্রাণীর মধ্যে খুব দ্রুত হয়। আর বড় প্রাণীর মধ্যে ধীরে হয়। ধীরে বিপাকক্রিয়া হল বলে অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াও ধীরে হয়। একই কারণে বয়সবৃদ্ধিও (এজিং) হয় ধীরে। যে কারণে ইঁদুরের থেকে হাতি অনেক বেশি বছর বাঁচে।
১২১৭
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জর্জ এইচ বার্জেসও বুশনেলের সঙ্গে সহমত। তাঁর মতে, যা মনে করা হচ্ছে, তার থেকেও হয়তো বেশি বছর বাঁচে গ্রিনল্যান্ডের হাঙর। বুশনেল গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ২৮টি স্ত্রী হাঙরকে নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই হাঙরগুলির বয়স ২৭২ থেকে ৫১২ বছর।
১৩১৭
বয়স যত বাড়ে, তত হাঙরের বৃদ্ধি কমে যায়। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, যে হাঙর যত দীর্ঘ, তার বয়স তত বেশি।
১৪১৭
বিজ্ঞানীদের দাবি, একটি হাঙরের ১৫০ বছর বয়স না হলে সে সঙ্গমে সক্ষম হয় না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গভীর সমুদ্রে বিচরণকারী বেশির ভাগ প্রাণীই বহু বছর বাঁচে। ঠান্ডার কারণেও তাদের আয়ু বাড়ে। বহু বছর বাঁচে বলে তাদের প্রজনন ক্ষমতা আসে অনেক বয়সে। যেমন গ্রিনল্যান্ডের হাঙরের ক্ষেত্রে হয়েছে।
১৫১৭
শত শত বছর বেঁচে থাকলেও গ্রিনল্যান্ডের হাঙর কিন্তু বিপজ্জনক নয়। মানুষকে আক্রমণ করেছে বলে প্রমাণ পাননি গবেষকরা। স্থানীয়রা অনেক সময় দাবি করেন, মাছ ধরার ছোট নৌকা (কায়াক) দেখলে হামলা করে তারা। তবে গবেষকরাই এই দাবি মানেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, মানুষ আক্রমণ না করলে এই হাঙর হামলা চালায় না।
১৬১৭
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের হাঙর খুব ভাল ডুবুরি। ২২০০ মিটার (৭,২১৮ ফুট) পর্যন্ত গভীরে চলে যায় তারা।
১৭১৭
গবেষকদের অনেকেই গ্রিনল্যান্ডের হাঙরকে সমুদ্রের শকুন বলে থাকেন। তার কারণ এদের খাদ্যাভ্যাস। হেন কোনও জিনিস নেই, যা এই হাঙর খায় না। মূলত সিল আর মাছ খায় তারা। তবে তা না পেলে যা প্রাণী পায়, সবেরই মাংস খায় এরা। কোনও কিছুই ফেলে দেয় না। অনেক গবেষকই মনে করেন, সব কিছু খেতে পারে বলেই এরা শত শত বছর বেঁচে রয়েছে। কোনও দিন খাদ্যাভাবে ভোগে না।