Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Ranga Billa case

রঙ্গা-বিল্লার কিস্‌সা, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেনের পুত্র-কন্যাকে দিল্লির রাস্তায় অপহরণ করে খুন!

১৯৭৮ সালে দিল্লির বুকে ঘটে গিয়েছিল সেই ভয়ঙ্কর কাণ্ড। ভাই এবং বোনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল জঙ্গল থেকে। গ্রেফতার করা হয় দুই অপহরণকারীকে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৮
Share: Save:
০১ ১৬
photo of Geeta and Sanjay Chopra kidnapping case

১৯৭৮। ২৬ অগস্ট, শনিবার। সপ্তাহান্তের সন্ধ্যায় সে দিন রাজধানীতে বৃষ্টি নেমেছিল। বৃষ্টি মাথায় করেই অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ‘যুব বাণী’ কেন্দ্রে শো করতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ভাই-বোন। আর তার পরই ঘটে গেল এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। প্রথমে অপহরণ, আর তার পর খুন। নয়াদিল্লিতে ভাই এবং বোনের হত্যাকাণ্ড সেই সময় নাড়িয়ে দিয়েছিল।

ছবি সংগৃহীত।

০২ ১৬
photo of Geeta and Sanjay Chopra kidnapping case

ভাইয়ের নাম সঞ্জয় চোপড়া। আর তার দিদির নাম গীতা চোপড়া। সেই সময় নয়াদিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল ১৬ বছরের গীতা। আর তার ১৪ বছরের ভাই সঞ্জয় ছিল মডার্ন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র।

ছবি সংগৃহীত।

০৩ ১৬
photo of Ranga Billa case

গীতা এবং সঞ্জয়কে অপহরণ করে খুন করা হয়েছিল। যাঁরা এই কাজ করেছিলেন, তাঁদের এক জনের নাম রঙ্গা ওরফে কুলজিৎ সিংহ এবং অপর জনের নাম বিল্লা ওরফে জসবীর সিংহ। এই হত্যাকাণ্ড গীতা এবং সঞ্জয়ের অপহরণের ঘটনা বা রঙ্গা-বিল্লা কাণ্ড নামেও পরিচিত। ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন?

ছবি সংগৃহীত।

০৪ ১৬
photo of Geeta and Sanjay Chopra kidnapping case

সঞ্জয় এবং গীতার বাবা মদনমোহন চোপড়া সে সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন। সেই সূত্রে দিল্লির ধৌলা কুয়ান এলাকায় নৌবাহিনীর আধিকারিকদের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন মদনমোহন।

ছবি সংগৃহীত।

০৫ ১৬
photo of al india radio

১৯৭৮ সালের ২৬ অগস্ট রেডিয়োতে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার জন্য ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিল গীতা। কথা ছিল অনুষ্ঠান শেষের পর রাত ৯টা নাগাদ তাদের আনতে যাবেন গীতার বাবা।

ছবি সংগৃহীত।

০৬ ১৬
representative photo of kidnap

সে দিন সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোয় গীতা এবং সঞ্জয়। বাড়ি থেকে বেরোনোর পর রেডিও স্টেশনে যাওয়ার পথেই অঘটন ঘটে যায়। গীতা এবং সঞ্জয়কে অপহরণ করা হয়।

প্রতীকী ছবি।

০৭ ১৬
photo of Geeta and Sanjay Chopra kidnapping case

পথে ভগবান দাস নামে এক ব্যক্তি একটি সরষে হলুদ রঙের গাড়ি দেখতে পান। গাড়ির ভিতর থেকে এক নাবালক এবং নাবালিকার চিৎকার শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্কুটার থেকে নেমে গাড়িটির কাছে যান তিনি।

ছবি সংগৃহীত।

০৮ ১৬
representative photo of bike

গাড়ির কাছে গিয়ে ভগবান দেখেন যে, এক নাবালিকা চালকের চুল ধরে টানাটানি করছে। গাড়ির অন্য এক আরোহীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে এক নাবালক। সেই গাড়িতে ওই নাবালিকাই ছিল গীতা এবং নাবালক ছিল সঞ্জয়। কিন্তু তাদের উদ্ধার করতে পারেননি ভগবান নামে ওই ব্যক্তি।

প্রতীকী ছবি।

০৯ ১৬
representative photo of harassment

ওই গাড়িটি দেখে থামানোর চেষ্টা করেন আরও কয়েক জন। কিন্তু সকলেই ব্যর্থ হন। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। অভিযোগ ওঠে, প্রথমে নাকি তেমন তৎপরতা দেখায়নি পুলিশ। গতি বাড়িয়ে গীতা-সঞ্জয়কে নিয়ে গাড়িতে করে পালান অপহরণকারীরা। অর্থাৎ রঙ্গা এবং বিল্লা।

প্রতীকী ছবি।

১০ ১৬
representative photo of man

ওই দিন রাত ১০টা ১৫ মিনিটে উইলিংডন হাসপাতালে যান অপহরণকারীরা। বিল্লার মাথায় চোট ছিল। চিকিৎসকদের তাঁরা জানান যে, কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছিল। সেই কারণেই আহত হন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশও। যেখানে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন রঙ্গা এবং বিল্লা, সেখানে তাঁদের নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। কিন্তু সেই জায়গায় হামলার কোনও চিহ্ন দেখতে পাননি পুলিশকর্মীরা।

প্রতীকী ছবি।

১১ ১৬
representative photo of police

এর পর দুই অপহরণকারীকে মন্দির মর্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন রাত দেড়টা। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে তাঁদের থানায় যেতে বলা হয়। কিন্তু আর থানায় যাননি তাঁরা। এর পরই তাঁদের দেওয়া ঠিকানায় হানা দেয় পুলিশ। তদন্তকারীরা দেখেন যে, ঠিকানাটি ভুয়ো। অর্থাৎ, পুলিশকে বোকা বানিয়ে তত ক্ষণে কেটে পড়েছেন ওই দুই অপহরণকারী।

ছবি সংগৃহীত।

১২ ১৬
photo of Geeta and Sanjay Chopra kidnapping case

দুই অপহরণকারী যখন পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন, তত ক্ষণে গীতা এবং সঞ্জয়কে না পেয়ে থানায় ছুটেছেন তাঁদের বাবা, মা। শনিবার রাত ৮টায় ছেলেমেয়ের অনুষ্ঠান শুনবেন বলে রেডিয়ো চালিয়েছিলেন গীতার বাবা। কিন্তু ওই সময় অন্য এক নাবালিকার অনুষ্ঠান হচ্ছিল। প্রথমে ভাবলেন যে, ভুল রেডিয়ো চ্যানেল চালিয়েছেন। এর পরই পৌনে ৯টা নাগাদ স্কুটার নিয়ে রেডিয়ো অফিসে যান গীতার বাবা। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন যে, গীতা এবং সঞ্জয় রেডিয়ো স্টেশনে যাননি।

ছবি সংগৃহীত।

১৩ ১৬
representative photo of crime

গীতা এবং সঞ্জয়ের খোঁজ শুরু করেন তাঁদের বাবা, মা। যোগাযোগ করা হয় আত্মীয়দের বাড়িতে। কিন্তু কোথাও তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাত ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ পুলিশকে বিষয়টি জানান গীতার বাবা। এর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। এই ঘটনার ২ দিন পর অর্থাৎ, ২৮ অগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় দিল্লি সংলগ্ন একটি জঙ্গল থেকে গীতা এবং সঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার করেন এক গোপালক। খবর দেন পুলিশে। তার পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে গীতা এবং সঞ্জয়ের দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহ চিহ্নিতকরণের জন্য ডাকা হয় গীতার বাবা এবং মাকে। তাঁরা দেহ শনাক্ত করেন। এই ঘটনা সেই সময় রাজধানীতে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

১৪ ১৬
representative photo of arrest

কয়েক সপ্তাহ বাদে গ্রেফতার করা হয় দুই অপহরণকারী রঙ্গা এবং বিল্লাকে। ৮ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের। কালকা মেলে করে যাচ্ছিলেন ওই ২ অপহরণকারী। আগরার কাছে যমুনা সেতুতে ট্রেনটি যখন গতি কমিয়েছিল, সেই সময়ই তাতে উঠে পড়েন রঙ্গা এবং বিল্লা। যে কামরায় তাঁরা ওঠেন, সেটি সেনা জওয়ানদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। রঙ্গা এবং বিল্লাকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন জওয়ানরা। এই নিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে তাঁদের বচসাও বাধে। সেই সময় ল্যান্সনায়েক এ ভি শেঠি রঙ্গা এবং বিল্লার ছবি সংবাদপত্রে দেখে তাঁদের চিনতে পেরে যান। পরে তাঁরাই ওই ২ অপহরণকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, মুক্তিপণের জন্যই সঞ্জয় এবং গীতাকে অপহরণ করেছিলেন রঙ্গা এবং বিল্লা। কিন্তু অপহরণের পর তাঁদের মনে হয় যে, সঞ্জয় এবং গীতার পরিবারের সম্পদ তেমন নেই। প্রথমে রঙ্গা এবং বিল্লা বয়ানে জানিয়েছিলেন যে, খুনের আগে তাঁরা গীতাকে ধর্ষণ করেছেন। পরে অবশ্য এই বক্তব্য প্রত্যাহার করেন তাঁরা। ফরেন্সিক তদন্তেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রতীকী ছবি।

১৫ ১৬
representative photo of court order

এর পর শুরু হয় বিচারপর্ব। রঙ্গা এবং বিল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় দিল্লির আদালত। যাকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। এর পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। ১৯৮১ সালের ২১ এপ্রিল তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।

প্রতীকী ছবি।

১৬ ১৬
representative photo of death penalty

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রঙ্গা এবং বিল্লার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পান কয়েক জন সাংবাদিক। শীর্ষ আদালত বলেছিল যে, যদি দোষীরা চান, তা হলে তাঁরা সাক্ষাৎকার দিতে পারেন। ১৯৮২ সালের ৩০ জানুয়ারি বিল্লার সাক্ষাৎকার নেন ৫ সাংবাদিক। তবে সাক্ষাৎকার দিতে চাননি রঙ্গা। ১৯৮২ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁদের ফাঁসি হয়। এর আগে, ১৯৭৮ সালে ১৬ বছরের কমবয়সিদের জন্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসাবে ২টি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ‘দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার’। ওই দুই পুরস্কারের নাম ‘সঞ্জয় চোপড়া পুরস্কার’ এবং ‘গীতা চোপড়া পুরস্কার’।

প্রতীকী ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE