From gloves to condoms inspiring designer proves all waste can have a new future dgtl
Factory waste
দস্তানা থেকে কন্ডোম, পরিবেশ বাঁচাতে আবর্জনা থেকে তুলে এনে নতুন রূপ দেন শুভি
দস্তানা হোক বা পুরনো হাঁড়ি-কড়াই। এমনকী ওষুধের প্যাকেট থেকে কন্ডোম— কিছুই বাদ যায় না। বর্জ্য থেকে তুলে এনে এ সবের সঙ্গে নিজের সৃজনশীলতা মিশিয়ে নতুন রূপ দেন নয়ডার মেয়ে।
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লিশেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১১:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৬
‘বর্জ্যের যুগ’-এ বাস করছি আমরা। বিজ্ঞানীদের এই কথাটা খুব একটা ভুল নয়। প্রমাণ মিলেছে পরিসংখ্যানে। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর গোটা দুনিয়ায় ২০১ কোটি টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এ বার এই বর্জ্য যদি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়? তা হলে কিন্তু অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
০২১৬
ক্রমে এই বর্জ্যের পরিমাণ বাড়বে। আশঙ্কা, ২০৫০ সালে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে মোট ৩৪০ কোটি টন বর্জ্য উৎপন্ন হবে।
০৩১৬
প্রত্যেক মানুষ দিনে ০.১১ কেজি থেকে ৪.৫৪ কেজি বর্জ্য উৎপাদন করে। এই পরিমাণ আবার নির্ভর করে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা উপর। যিনি যত ধনী, তিনি তত পরিমাণ বর্জ্য রোজ উৎপাদন করেন।
০৪১৬
যত বর্জ্য উৎপন্ন হয় এই পৃথিবীতে, তার ৩৩ শতাংশের এমন ভাবে প্রক্রিয়াকরণ হয় যে, তাতে পরিবেশেই ক্ষতি হয়।
০৫১৬
দিল্লি হোক বা গাজিপুর, মুম্বই হোক বা বদলাপুর, ভারতে যে কোনও শহরেই ঘুরলে দেখা যাবে ১০ থেকে ৩০ মিটার দীর্ঘ আবর্জনার পাহাড় গড়ে উঠেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে গোটা শহরে। বাড়ছে রোগ।
০৬১৬
এ সবই ভাবিয়েছিল নয়ডার শুভি সাচানকে। পেশায় টেক্সটাইল ডিজাইনার। তাঁর মনে হয়েছিল, অনেক বর্জ্যই ফের তুলে এনে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়। তা দিয়ে ঘর সাজানো যায় বা কোনও কাজেও ব্যবহার করা যায়। সেই কাজটিই করেছিলেন শুভি।
০৭১৬
শুভির কথায়, ‘‘অনেকেই বোঝেন না, ফেলে দেওয়া অনেক কিছুই ফের তুলে এনে ব্যবহার করা যায়। খুব কম খরচেই এগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়। শুধু কল্পনাশক্তি এবং ইচ্ছাশক্তি দরকার।’’
০৮১৬
সিডি, বই বা ডেটার লাইব্রেরির মতো ‘মেটেরিয়াল’-এর একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন শুভি। গবেষণাগার থেকে কারখানা, মল থেকে শ্যুটিংয়ের সেট— সব জায়গা থেকে বর্জ্য কুড়িয়ে আনেন শুভি। এমনকী লোকজনের বাড়ি থেকেও নোংরা কুড়িয়ে এনে জমা করেন নিজের লাইব্রেরিতে।
০৯১৬
নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে সে সব পুরনো, ভাঙা জিনিসপত্রকে নতুন রূপ দেন শুভি। নিজের লাইব্রেরিতে রেখে দেন পুরনো থেকে গড়া নতুন সে সব জিনিস। কেউ চাইলে রূপান্তরের ‘আইডিয়া’-ও তিনি বিক্রি করেন।
১০১৬
শুভির কথায়, ‘‘বিভিন্ন কলকারখানা থেকে এক-পাঁচ কেজি বর্জ্য সংগ্রহ করি। পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে পাঠাই। সেখানে দেখা হয়, ওই বর্জ্যের কোন উপাদান আমরা ফের ব্যবহার করতে পারি। তার পর মাথা খাটিয়ে ওই ফেলে দেওয়া অংশ দিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করে ফেলি।’’
১১১৬
সে সব দেখার পর অনেকেরই খুব ভাল লাগে। তাঁরা শুভির পরামর্শ নিতে আসেন। তালিকায় থাকেন কলা বিভাগ এবং স্থাপত্য শিল্পের পড়ুয়া, ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, গয়নার নকশাকাররা। এর পর তাঁরাও সেই বর্জ্য দিয়ে নতুন জিনিস তৈরির চেষ্টা করেন।
১২১৬
শুভি নিজেই জানিয়েছেন, এমন এমন বর্জ্য তিনি কুড়িয়ে এনে এমন জিনিস তৈরি করেছেন, যা অনেকেই ভাবতে পারেন না। শুভি ফেলে দেওয়া সুতির দস্তানা দিয়ে প্যাকেজিংয়ের জিনিস তৈরি করেছেন। নতুন এক ধরনের তন্তু (ফ্যাব্রিক)-ও তৈরি করেছেন। সেই তন্তু দিয়ে দড়ি বানিয়েছেন শুভি। ওই দড়ি দিয়ে চেয়ার, টেবিল-সহ বিভিন্ন আসবাব গড়েছেন তিনি।
১৩১৬
আরও একটি ফেলে দেওয়া জিনিসকেও পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছেন শুভি। এমনিতে পুরনো তামা, ইস্পাত, ব্রোঞ্জের হাড়ি, কড়াই ফেলে দেন মহিলারা। অনেকে আবার সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করে দেন কোনও বাসন বিক্রেতা বা পুরনো জিনিস সংগ্রাহকের কাছে। কিন্তু কলকারখানায় লক্ষ লক্ষ কিলো তামা, ইস্পাত, ব্রোঞ্জ ফেলে দেওয়া হয়। সেগুলি তুলে এনে ধাতব পাতে পরিণত করেছেন শুভি। সেই দিয়ে নানা জিনিস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
১৪১৬
একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার বাতিল কিছু সামগ্রী দিয়েও নতুন কিছু জিনিস তৈরি করে ফেলেছেন শুভি। ওষুধের বাতিল প্যাকেটগুলি থেকে অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিক সংগ্রহ করেছেন তিনি। সেই থেকে তৈরি তন্তু বুনে ব্যাগ তৈরি করছেন হায়দরাবাদের কাছে ওয়ারাঙ্গলের কয়েক জন তাঁতি।
১৫১৬
বাতিল কন্ডোম ব্যবহার করেও নিত্যনতুন জিনিস তৈরি করেছেন শুভি। একটি সংস্থায় যত কন্ডোম তৈরি হয়, তার চার থেকে পাঁচ শতাংশ বাতিল হয়ে যায়। সেগুলির প্রক্রিয়াকরণ করে জামাকাপড়ের উপর নকশার কাজ করা হচ্ছে। সবটাই শুভির মস্তিষ্কপ্রসূত।
১৬১৬
শুভি জানিয়েছেন, এই সবটাই তিনি করে থাকেন পরিবেশ রক্ষার জন্য। তিনি চান, তাঁর মতোই এই বিষয়ে এগিয়ে আসুন আরও মানুষ। তার ‘মেটেরিয়াল লাইব্রেরি’ থেকে প্রক্রিয়াজাত বর্জ্য নিয়ে যান। দরকারে পরামর্শ নিয়ে সেগুলিকেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হোক। এতে বাঁচবে পরিবেশ। বাঁচবে খরচও।