From college dropout to billionaire at 32, Sukesh Chandrasekhar dated Jacqueline Fernandez, gave expensive gifts to Nora Fatehi dgtl
Jacqueline Fernandez
Sukesh Chandrasekhar - Jacqueline Fernandez: জ্যাকলিনের সঙ্গে হোটেলবাস! বহু নায়িকাকে দামি উপহার, প্রতারক সুকেশের নায়িকা স্ত্রীও জেলে যান
সুকেশ তিহাড় থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জ্যাকলিন দেখা করতে এসেছিলেন সুকেশের সঙ্গে। ব্যক্তিগত বিমানে অভিনেত্রীকে আনতে পাঠিয়েছিলেন সুকেশ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
দু’টি ছবি। তার একটিতে বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ তাঁকে চুম্বন করছেন। অন্যটিতে তিনি ঠোঁট ছুঁইয়েছেন জ্যাকলিনের গালে। দু’টি দৃশ্যেই জ্যাকলিনের মুখে হাসি। চোখ বুজে এসেছে। অথচ জ্যাকলিনের সঙ্গী আবেগের মুহূর্তেও বেশ সক্রিয়। আইফোনে তুলে রেখেছেন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি। যে ছবি কিছু দিন পরেই ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। যা দেখে শ্রীলঙ্কার সুন্দরীকে ডেকে পাঠায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
০২২৩
জ্যাকলিনের এই প্রেমিকের নাম সুকেশ চন্দ্রশেখর। বয়স ৩২। ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা মামলায় সম্প্রতি সুকেশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিল্পপতি শিবেন্দ্র সিংহের স্ত্রী অদিতি সিংহকে বোকা বানিয়ে ওই টাকা আদায় করেন সুকেশ। তবে এই প্রথম নয়। সুকেশের বিরুদ্ধে আরও বহু প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর পাল্লায় পড়ে বোকা বনেছেন খ্যাতনামী থেকে শুরু করে দুঁদে রাজনীতিবিদরাও।
০৩২৩
সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে তামিল রাজনীতির পরিচিত নাম টি টি ভি দিনকরণের কথা। একদা জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ ভি কে শশিকলার বোনের সন্তান দিনকরণ। তাঁকে বোকা বানিয়ে ৫০ কোটি টাকা পকেটস্থ করেছিলেন সুকেশ। তামিল রাজনীতিতে তখন মসনদ নিয়ে টানাটানি চলছে। দিনকরণ চেয়েছিলেন জয়ললিতার নির্বাচনী চিহ্ন জোড়াপাতাটি নিজের দলের জন্য পেতে। সেই খবর কানে আসে সুকেশের। নির্বাচন কমিশনে চেনাশোনা আছে জানিয়ে মোটা টাকা আদায় করেন দিনকরণের থেকে। অনেক পরে ভুল বুঝতে পারেন ওই রাজনীতিবিদ। তত দিনে অবশ্য সুকেশ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। ক্ষিপ্ত দিনকরণ পুলিশে অভিযোগ করেন সুকেশের বিরুদ্ধে।
০৪২৩
সেই সুকেশ সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন। ইডি তদন্ত শুরু করেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে তদন্ত যতই এগিয়েছে, ততই অবাক হয়েছেন তদন্তকারীরা। দেখা গিয়েছে, সুকেশের জীবনের প্রতি মোড়েই রয়েছে নাটক, বেপরোয়া মনোভাব। আর একটাই শখ— কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া।
০৫২৩
তবে ইদানিং আরও একটা শখ চেপে বসতে শুরু করেছিল। বলিউড ভক্ত সুকেশের ইচ্ছে হয়েছিল বলিউডের নায়িকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর। দামি উপহার দিয়ে, বিপদে পড়া নায়িকাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করে সেই পথ প্রশস্ত করতে শুরু করেছিলেন সুকেশ। জ্যাকলিন তারই শিকার।
০৬২৩
সুকেশের আইনজীবী জানিয়েছেন, বলিউড অভিনেত্রীকে দামি অলঙ্কার, পোশাক থেকে শুরু করে আদরের পোষ্য— সবই দিয়েছিলেন সুকেশ। এর মধ্যে সাতটি বিড়ালছানাও ছিল। যার একটির দাম ন’লক্ষ টাকা।
০৭২৩
জ্যাকলিনকে ৫২ লক্ষ টাকা দামের একটি ঘোড়াও উপহার দিয়েছিলেন সুকেশ। এ ছাড়া উপহারের তালিকায় ছিল কাচের দামি বাসনও। জ্যাকলিনকে সব মিলিয়ে কম করে ১০ কোটি টাকার উপহার দিয়েছিলেন সুকেশ।
০৮২৩
অভিযোগ, জ্যাকলিনের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা হত সুকেশের। এমনকি একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার হয়ে সুকেশ যখন তিহার জেলে, তখনও নিয়মিত কথা বলেছেন দু’জনে। যদিও জ্যাকলিন সুকেশের জেলে থাকার কথা জানতেন কি না, তা স্পষ্ট নয় আইনজীবীর কথায়।
০৯২৩
ইডি-র জেরাতে জ্যাকলিন অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁকে অন্ধকারে রেখে তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনিও অন্যদের মতোই সুকেশের শিকার।
১০২৩
তথ্য বলছে, জ্যাকলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকাকালীনই বলিউডের আরও তিন জন নায়িকাকে দামি উপহার পাঠিয়ে পরিচয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সুকেশ। এই তালিকায় নোরা ফতেহি ছাড়াও আরও অন্তত দু’জন শীর্ষস্থানীয় নায়িকা আছেন।
১১২৩
নোরাকে একটি দামি বিএমডব্লু গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন সুকেশ। নোরা সেই উপহার গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি নোরাকে একটি দামি আইফোনও উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন সুকেশ। এমনটা জানিয়েছেন সুকেশের আইনজীবীই।
১২২৩
আইনজীবীর দাবি, এই নায়িকারা প্রয়োজন মতো সুকেশের থেকে সুবিধা নিয়েছেন। এখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। যদিও এ প্রসঙ্গে ইডি নোরাকে ডেকে পাঠালে তিনি বলেন, সুকেশের সঙ্গে কোনও দিনই তাঁর ব্যক্তিগত স্তরে কোনও সম্পর্ক ছিল না। তিনি তদন্তে যা যা সাহায্য দরকার তা করতে রাজি।
১৩২৩
কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেই উপার্জন করতেন সুকেশ। কী করে পারতেন? তাঁর রহস্যোদ্ঘাটন করেছেন এক তদন্তকারী অফিসার। সুকেশকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছিলেন তিনি। পরে জানান, সুকেশ এত ভাল কথা বলতে পারেন যে, তাঁর সঙ্গে কেউ যদি আধ ঘণ্টাও সময় কাটায়, তবে তিনি সুকেশের সব কথা বিশ্বাস করতে রাজি হয়ে যাবেন।
১৪২৩
সম্ভবত সেই কথার জালেই ফেঁসেছিলেন জ্যাকলিন থেকে দিনকরণ বা অদিতি। অদিতির স্বামী শিবেন্দ্র এখন জেলে। সুকেশ সম্ভবত তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অদিতিকে।
১৫২৩
এ কাজে সুকেশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জেলের কিছু কর্মীও। সুকেশকে জেলের ভিতর মোবাইল ফোন দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা। কয়েদিদের অনেককেও দলে টেনেছিলেন সুকেশ। তদন্তকারীদের ধারণা, কথার জোরেই এঁদের বশ করেছিলেন বছর ৩২-এর ওই প্রতারক।
১৬২৩
সুকেশ যখনই প্রতারণা করেছেন, নিজের পরিচয় দিয়েছেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী হিসেবে। কখনও তিনি নির্বাচন কমিশনের অফিসার, কখনও কোনও মন্ত্রির কার্যালয়ের আধিকারিক, কখনও আবার কোনও সরকারি দফতরের সর্বেসর্বা। প্রয়োজন অনুযায়ী বদলে যেত পরিচয়। শেষ বার অদিতির কাছে তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্মী বলে। এমনকি ফোনে অদিতিকে বিনীত ভাবে কথা বলতে বলেছিলেন সুকেশ। জানিয়েছিলেন, অদিতির ফোনের রেকর্ডিং স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুনতে পারেন। তাই তিনি যেন সে কথা মাথায় রেখে কথা বলেন।
১৭২৩
তবে পরিচয় যা-ই হোক সুকেশ কথা শেষ করতেন ‘জয় হিন্দ’ বলে। তদন্তকারীদের দাবি, এ ভাবে সম্ভবত নিজের সরকারি পরিচয়টিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে চাইতেন সুকেশ। সফলও হতেন।
১৮২৩
১৭ বছর বয়স থেকে এই পদ্ধতিতেই একের পর এক প্রতারণা করে আসছেন। ২০০৭ সালে প্রথম নিজেকে সরকারি আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সরকারি কাজ করে দেওয়ার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আদায় করেন। পরের বছর একই ভাবে ১০০ জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ধরা পড়ে যান সুকেশ। তবে ধরা পড়লেও পিছিয়ে আসেননি।
১৯২৩
স্কুলের পড়াশোনা কোনও মতে শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তত দিনে ধনী হওয়ার সহজ রাস্তা দেখে ফেলেছেন সুকেশ। তাই পড়াশোনায় মাঝপথেই ইতি টানেন।
২০২৩
বার বার প্রতারণা করেছেন। ধরাও পড়েছেন। তবে দমে যাননি সুকেশ। বরং ছাড়া পেয়েই আবার নতুন করে শুরু করেছেন নিজের কাজ। সুকেশের মনে হয়েছিল এক বার ধরা পড়ে যাওয়ার পর আর এ কাজে পিছিয়ে আসা অর্থহীন।
২১২৩
বলিউডের ভক্ত সুকেশ বিয়েও করেছেন এক নায়িকাকেই। তাঁর স্ত্রী লীনা মডেল-অভিনেত্রী। ‘ম্যাড্রাস ক্যাফে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন লীনা। ২০১০ সালে সুকেশের সঙ্গে আলাপ। ২০১৫ সালে বিয়ে করেন দু’জনে। তবে পরে সুকেশের প্রতারণাচক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন লীনাও। কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিন বার জেলে যেতে হয় লীনাকে।
২২২৩
এর পর দু’জনে মুম্বইয়ে চিটফান্ডের ব্যবসা ফেঁদে বসেন। এ বার প্রতারণা করে হাতে আসে ২০ কোটি টাকা। গ্রেফতার হন। জামিন পান। ফের শুরু হয় সুকেশের কাজ।
২৩২৩
সুকেশের এই বার বার ধরা পড়া, ছাড়া পাওয়া এবং পুরনো কাজে ফিরে যাওয়া দেখে অবাক হয়েছেন তদন্তকারীরা। কী ভাবে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটিয়েও সহজে ছাড়া পেয়েছে সুকেশ তা-ও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন এটা দেখে যে, প্রতি বার ধরা পড়ার পর আরও বড় লক্ষ্য স্থির করেছেন সুকেশ। সাফল্যও পেয়েছেন। কিন্তু কিসের জোরে সে এটা করেছেন সেটা এখনও তদন্তকারীদের কাছে রহস্য।