রাতারাতি সাড়া জাগালেও ২২ গজ থেকে কেন হারিয়ে গেলেন এই দীর্ঘদেহী পেসার? জ়িম্বাবোয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কণ্ঠ তোলার জেরেই কি ওলোঙ্গার ক্রিকেটজীবনে অকালে দাঁড়ি পড়েছিল?
০৩১৯
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে শারজায় ৫০ ওভারের একটি টুর্নামেন্টে আগুনে বাউন্সার দিয়ে সচিনকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এককালের সতীর্থ অজয় জাডেজা পরে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ওলোঙ্গার কাছে উইকেট খুইয়ে দু’রাত ঘুম ছিল না সচিনের চোখে।
০৪১৯
১৯৯৮ সালে শারজার মাটিতে কোকা কোলা কাপের আসর বসেছিল। ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেই ত্রিপাক্ষিক টুর্নামেন্টে ছিল ওলোঙ্গার জ়িম্বাবোয়ে।
০৫১৯
ওলোঙ্গার ক্রিকেটজীবনে শারজায় সচিনের উইকেটটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে রয়েছে। সেই উইকেটের পর খ্যাতির আলো জ্বলে ওঠে ওলোঙ্গার ক্রিকেটজীবনে।
০৬১৯
ওই টুর্নামেন্টের পরের বছর ওলোঙ্গাদের হাতে ৩ উইকেটে হেরেছিল ভারত। তবে এ বার আরও নামী মঞ্চে। ১৯৯৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে জ়িম্বাবোয়ের কাছে হেরে ‘সুপার সিক্স’ থেকে বিদায় নেয় মহম্মদ আজহারউদ্দিনের দল। সে ম্যাচে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন ওলোঙ্গা।
০৭১৯
তবে ২২ গজে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁর কেরিয়ার। ওলোঙ্গার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন স্থায়ী ছিল মোটে আট বছর। ২০০৩ সালে অবসর নেন তিনি।
০৮১৯
শারজায় প্রাথমিক পর্বের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার তিন বছর আগেই অবশ্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটেছে ওলোঙ্গার। অভিষেকেই বেশ কয়েকটি নজির গড়েছিলেন তিনি।
০৯১৯
১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নামার সময় ওলোঙ্গার বয়স ছিল ১৮। সে সময় জ়িম্বাবোয়ের জার্সিতে সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। পরে ২০০১ সালে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন হ্যামিল্টন মাসাকাডজ়া। টেস্টে অভিষেকের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫২ দিন।
১০১৯
জ়িম্বাবোয়ের জাতীয় দলে প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ হিসাবে জায়গা পেয়েছিলেন ওলোঙ্গা। ৩০টি টেস্টে ৬৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ৫০টি এক দিনের ম্যাচে পেয়েছেন ৫৮ উইকেট। সব মিলিয়ে ১২৬টি শিকার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।
১১১৯
টেস্টে তাঁর সেরা প্রদর্শন— ৮৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট। অন্য দিকে, এক দিনের ম্যাচে ওই একই সংখ্যক উইকেট নিতে ১৯ রান খরচ করেছিলেন ওলোঙ্গা। সেটিই ছিল ওয়ান ডে-তে তাঁর সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।
১২১৯
জ়িম্বাবোয়ের ক্রিকেটীয় ইতিহাসের ‘সোনার সময়ে’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রবেশ ওলোঙ্গার। তবে প্রতিভা সত্ত্বেও তাঁর কেরিয়ারে আচমকাই দাঁড়ি পড়ল কেন? অনেকের মতে, ২০০৩ সালে আইসিসি বিশ্বকাপের মঞ্চে রাজনৈতিক কণ্ঠ খোলার জেরেই সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে তাঁর কেরিয়ার।
১৩১৯
ওই টুর্নামেন্টে নামিবিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে কালো ব্যান্ড পরে মাঠে নেমেছিলেন ওলোঙ্গা এবং তাঁর দলের অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। অনেকের দাবি, জ়িম্বাবোয়ের ক্রিকেটীয় লোকগাথায় ‘পোস্টার বয়’ হওয়ার আগেই বুমেরাং হয়ে যায় ওলোঙ্গার সেই সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি।
১৪১৯
জ়িম্বাবোয়েতে তৎকালীন রবার্ট মোগাবে সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র অভিযোগ তুলেছিলেন ওলোঙ্গা এবং ফ্লাওয়ার। সে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি জোর করে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমিদখলের অভিযোগও তোলেন তাঁরা। এর প্রতিবাদে হাতে কালো ব্যান্ড বেঁধে মাঠে নেমেছিলেন ওলোঙ্গারা।
১৫১৯
ঘটনাচক্রে, ওই প্রতিবাদের পর আর কোনও দিন ক্রিকেট মাঠে পা রাখতে পারেননি ওলোঙ্গা এবং ফ্লাউয়ার— দু’জনেই। ওলোঙ্গার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ ওঠে। একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি খুনের হুমকিও পেয়েছিলেন তিনি।
১৬১৯
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের বছরেই দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে পাড়ি দেন ওলোঙ্গা। ২০০৩ সাল থেকে ১২ বছর ব্রিটেনে নির্বাসনে ছিলেন তিনি।
১৭১৯
২০১৫ সালে ব্রিটেন ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ার পথে পা বাড়ান। তত দিনে অ্যাডিলেডে স্ত্রী টারার সঙ্গে সংসার পেতেছেন। দম্পতির দুই মেয়েও রয়েছে।
১৮১৯
অ্যাডিলেডে থাকার সময় জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন ওলোঙ্গা। ব্যাটারদের এককালের ত্রাস তত দিন গায়ক। ২০১৯ সালে ‘দ্য ভয়েস অফ অস্ট্রেলিয়া’ নামে টেলিভিশন শোয়ে অংশ নেন।
১৯১৯
ওই প্রতিযোগিতায় অ্যান্টনি ওয়ারলো-র ‘দিস ইজ় দ্য মোমেন্ট’ গানে আরও এক বার নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ওলোঙ্গা। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। আজকাল অপেরাগায়ক হিসাবে খ্যাতি কুড়োচ্ছেন ওলোঙ্গা।