Fifa world cup 2022 Argentina vs France: Goalkeeper Emiliano Martinez, nicknamed ‘Dibu’ creates so many controversies dgtl
Emiliano Martínez
মেসিদের ‘পাগলা দিবু’, কখন যে কী করে বসেন! মার্তিনেসের কিছু কীর্তি
রবিবার রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মার্তিনেসের নাচ অনেকেই দেখে থাকবেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে নোরা ফতেহির নাচের থেকে সেই নাচ কম আকর্ষণীয় ছিল না। শরীরটাকে অদ্ভুত ভাবে বাঁকিয়ে-চুরিয়ে গ্যালারিতে বসা সমর্থকদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন দিবু।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
কাতারের মতো গোঁড়া দেশ। সেখানে বিশ্বকাপ ফুটবলের পুরস্কার দেওয়ার মঞ্চে উপস্থিত দেশের রাজা। এমিলিয়ানো মার্তিনেস কি না তাঁর সামনেই দাঁড়িয়ে সদ্য পাওয়া সোনার দস্তানা চেপে ধরলেন দু’পায়ের সংযোগস্থলে! পাগল নাকি— অঙ্গভঙ্গি দেখে ভেবেছিলেন অনেকেই। তবে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষককে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন, তাঁরা বলছেন তাঁদের প্রিয় ‘ম্যাড ম্যান’ যে এর চেয়েও বড় কোনও পাগলামি করে বসেননি, এই অনেক।
০২১৮
৩০ বছরের যুবক মার্তিনসের পাগলামির নজির কিছু কম নেই। তাঁর মুকুটে ‘ম্যাড ম্যান’ নামের পালকটি হয়তো নতুন, তবে তার বহু দিন আগে থেকেই সেঁটে গিয়েছে আরও একটি নাম— দিবু। ১৬ বছরের মার্তিনেসের ওই নাম দিয়েছিলেন তাঁর কেরিয়ারের প্রথম ক্লাব ইন্ডিপেন্ডিয়েন্টের সতীর্থরা। ‘দিবু’ সেই সময়ের আর্জেন্টিনার এক জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র। তবে মার্তিনেসের কার্টুনের মতো হাবভাব কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা ইন্ডিপেন্ডিয়েন্ট দেখেনি। দেখেছে কাতার বিশ্বকাপ।
০৩১৮
ম্যাডম্যান মার্তিনেসকে নিয়ে বিতর্কের শুরু ফিফা বিশ্বকাপের পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে। তবে দিবু তাঁর চরিত্রে ঢুকে গিয়েছিলেন অনেক আগেই। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালের পর সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন রেফারিকে। লিওনেল মেসিও সে দিন রেফারিকে নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু সংযত ছিলেন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে অ্যাস্টন ভিলার হয়ে খেলা মার্তিনেস সে সব সৌজন্যের ধার ধারেননি।
০৪১৮
ম্যাচ শেষে তিনিও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘এই রেফারি কোনও কাজের নন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ওঁর উদ্দেশ্য ছিল একটাই— নেদারল্যান্ডসকে জেতানো। ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন। অকারণ ফ্রি-কিকও দেন। মনে হচ্ছিল পারলে উনি ম্যাচটাই তুলে দেবেন ওদের হাতে।’’
০৫১৮
ম্যাচের পর আর্জেন্টিনাকে আক্রমণ করে অনেক কথা বলেছিলেন ডাচ কোচ। মেসি জবাব দেননি। মার্তিনেস অবশ্য চুপ করে থাকেননি। বলেছিলেন, ‘‘আমার মনে হয় এ বার ওর মুখটা বন্ধ রাখা উচিত।’’
০৬১৮
রবিবার রাতে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মার্তিনেসের নাচ অনেকেই দেখে থাকবেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে নোরা ফতেহির নাচের থেকে সেই নাচ কম আকর্ষণীয় ছিল না। শরীরটাকে অদ্ভুত ভাবে বাঁকিয়ে-চুরিয়ে গ্যালারিতে বসা সমর্থকদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন দিবু। মুখেচোখে অবিশ্বাস, অথচ শরীরে উন্মাদনার ঢেউ। দু’গোলে এগিয়ে থেকে বিশ্বকাপ জয়ের দোরগোড়ায় যখন আর্জেন্টিনা পৌঁছে গিয়েছিল, একা মার্তিনেসই আগাম উদ্যাপন শুরু করে দিয়েছিলেন ।
০৭১৮
আবার এই মার্তিনেসই টাইব্রেকারে শট নিতে আসা ফ্রান্সের ফুটবলারের সামনে এসে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করেন। শট নিতে আসা চুয়ামেনির পায়ের সামনে থেকে বল নিয়ে চলে আসেন গোলপোস্টের ভিতরে। তার পর সেখান থেকেই দূরে ছুড়ে দেন বল। এই সব আচরণের জন্য অবশ্য হলুদ কার্ডও দেখতে হয়েছে তাঁকে। তবে মার্তিনেস শুধরোননি।
০৮১৮
গোল বাঁচিয়ে গোলরক্ষক ফুটবল মাঠে পাগলামি করবেন, এতে অস্বাভাবিক কী আছে? কিন্তু মার্তিনেস সেই উৎসবের সীমা বার বার অতিক্রম করেছেন। তবে কাতার বিশ্বকাপ এবং তার বছর দেড়েক আগের কোপা আমেরিকা দেখেছে, মার্তিনেস গোল বাঁচিয়ে আনন্দ করলেও গোল খেয়ে ভেঙে পড়েন না। বরং গোল খেয়ে মার্তিনেস আরও নির্বিকার থাকেন। সেটা আরও বিরক্তিকর। তাঁর স্নায়ুর উপর কোনও ভাবেই চেপে বসতে পারে না বিপক্ষ। বরং তিনিই সময়ে-অসময়ে তাঁদের স্নায়ুতে চাপ দেন।
০৯১৮
মার্তিনেসের এমন চাপ তৈরির উদাহরণ আরও আছে। কোপার সেমি ফাইনালেও আর্জেন্টিনা বনাম কলম্বিয়ার খেলা টাইব্রেকারে গিয়েছিল। গোলপোস্টের সামনে দাঁড়ানো কলম্বিয়ার তারকা ইয়েরি মিনাকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়েছ।’’
১০১৮
আর্জেন্টাইন গোলরক্ষকের এই বেপরোয়া আত্মবিশ্বাসই সমর্থকদের প্রিয়। অনেকটা ‘কিং কং’-এর বুক বাজানোর মতো বিপক্ষকে কাবু করে লাফান তিনি। আবার গোল খেয়ে হাসেন। এই অদ্ভুত মেজাজের কাছেই বিশ্বকাপে একের পর এক কাত হয়েছে ক্রোয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স। এমনকি কোপায় যুযুধান প্রতিপক্ষ ব্রাজিলও। মেসি তখনই বলেছিলেন এই মার্তিনেস অসাধারণ। এক বিস্ময় বালক। এই মার্তিনেস দেশের জন্য বিশ্বকাপ এনেই ছাড়বে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী মিলেছে।
১১১৮
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের পর মার্তিনেসের সঙ্গে ফ্রান্সের তারকা কিলিয়ান এমবাপের একটি মুহূর্ত ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে হতাশ হয়ে মাঠে বসে থাকা এমবাপেকে সান্তনা দিচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ। হঠাৎ সবুজ জার্সি পরে মার্তিনেস হাজির হলেন সেখানে। এই পর্যন্ত দেখে যখন দর্শকের মনে কী হবে কী হবে ভাব, তখন মার্তিনেস তাঁর লম্বা চেহরাটা ঝুঁকিয়ে দিলেন এমবাপের কাছে। বাড়িয়ে দিলেন ডান হাতটি।
১২১৮
এমবাপে কিছুটা অবাক, কিছুটা নিস্পৃহ ভাবে সেই হাত ধরেন। এর পরেই মার্তিনেস ঝাঁকাতে শুরু করেন এমবাপের হাত। কয়েক সেকেন্ড ও ভাবেই হাত ঝাঁকানোর পরে ফরাসি তারকার কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে যান মার্তিনেস।
১৩১৮
এই বিশ্বকাপেরই আরও একটি ভিডিয়োর কথা না বললেই নয়। সেটা ছিল কাপ নিয়ে ফেরার পর আর্জেন্টিনার সাজঘর। সেখানেও রয়েছেন আগের ভিডিয়োর দুই মূল চরিত্র। তবে এক জনকে দেখা যাচ্ছে, আর এক জনকে দেখা যাচ্ছে না।
১৪১৮
কাঁধে হাত দিয়ে রেলগাড়ি চালাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। আলভারেজ, ডি-মারিয়া, মার্তিনেস, মেসি সবাই ছিলেন। হঠাৎ একটা হুইসলের শব্দ। ‘‘শ্শশশশশশশ...’’ বলে উঠলেন মার্তিনেস। তার পর বললেন, ‘‘এক মুহূর্তের নৈঃশব্দ্য প্রয়াত এমবাপের জন্য।’’ তার পরেই একগাল হেসে আবার শুরু হল সেলিব্রেশন। নিছকই ‘মজা’। তবে এমন মজা করা বোধ হয় ‘ম্যাডম্যান’ মার্তিনেসের পক্ষেই সম্ভব।
১৫১৮
প্রিয় দিবুকে নিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টিনার প্রাক্তন স্ট্রাইকার সের্জিয়ো আগুয়েরো। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা ওকে ম্যাডম্যান বলি। তবে মার্তিনেসের ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বিস্মিত করে ওর টিমের সঙ্গে মিশে থাকা। সাধারণত গোলকিপাররা আলাদা প্রশিক্ষণ নেয়। ফলে দলের বাকিদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ থাকে না। নিজেদের জগতে বাস করে ওরা। কিন্তু দিবু যখন আমাদের কাছে এল, আমরা তখনই বুঝে গিয়েছিলাম ও আদ্যন্ত পাগল। তবে ভাল, মজার পাগল। আমাদের প্রিয় পাগল।’’
১৬১৮
আগুয়েরো স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘‘প্র্যাকটিসে যখন আমরা পেনাল্টি মারি ও সমানে আমাদের উপর চিৎকার করে যায়। হয়তো শট নিতে আসা ফুটবলারকে আচমকাই বলে উঠল ‘কাম অন কিক মি...’।’’
১৭১৮
মার্তিনেসের প্রাক্তন এক সতীর্থ বলেছেন, ‘‘তখনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ওর মধ্যে একটা অন্য রকম আত্মবিশ্বাস আছে। আর ওই পাগলামি আসলে ওর আত্মবিশ্বাস থেকেই তৈরি। আমরা জানতাম ও যদি মনে করে ও কিছু করবে, তা হলে ও সেটা করেই ছাড়বে।’’
১৮১৮
তবে মার্তিনেসের পাগলামি নিয়ে যে যা-ই বলুন, আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি একটি অন্য দিক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মাঠে বা বা মাঠের বাইরে মার্তিনেস যা-ই করুক, ও দলকে একটা বাড়তি নিরাপত্তা দেয়। এটা আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেসিরা জানে ও গোলটা সামলে নেবে। তাই ওরাও চাপমুক্ত হয়ে সেরা খেলাটা খেলতে পারে।’’’