ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, পার্টিতে ঢুকেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রসিকতা করতে থাকেন শাহরুখ। কিন্তু সে সময় তাঁর রসিকতা মোটেও ভাল ভাবে নেননি সলমন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২০ ১৬:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
বলিউডে তারকাদের মধ্যে ঝগড়া নতুন কথা নয়। তারকাদের গ্ল্যামার ও পরিচিতির সঙ্গে তাঁদের বিবাদের প্রভাবও গুরুতর হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। সে রকমই একটি বিবাদের সাক্ষী ছিল বলিউড, ২০০৮ সালে। বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন স্বয়ং শাহরুখ খান এবং সলমন খান।
০২২০
ক্যাটরিনা কইফের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত পার্টিতে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন দুই খান। এর পর গোটা বলিউডই দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। আজ, দুই তারকার মধ্যে সৌজন্য বজায় থাকলেও ঝগড়ার স্মৃতি ভোলেননি কেউই।
০৩২০
শাহরুখ এবং সলমন কেরিয়ার শুরু করেছিলেন প্রায় একইসঙ্গে। প্রথম থেকেই তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের সুর প্রথম বার কাটে ঐশ্বর্যা রাইকে ঘিরে।
০৪২০
সলমনের সঙ্গে ঐশ্বর্যার প্রেম যখন তুঙ্গে, তখনও শাহরুখের সঙ্গে অ্যাশ এবং সল্লু দু’জনেরই সম্পর্ক ভাল ছিল। ‘চলতে চলতে’ সিনেমায় ঐশ্বর্যাকেই প্রথম সুযোগ দেন শাহরুখ। কিন্তু শেষ অবধি সলমনের আপত্তিতে সেই ছবিতে কাজ করতে পারেননি ঐশ্বর্যা।
০৫২০
সলমন-ঐশ্বর্যা ব্রেক আপের সময় ঐশ্বর্যার পাশে ছিলেন শাহরুখ। এর পর সলমনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ফাটল ধরে। দু’জনে ঝামেলাতেও জড়িয়ে পড়েন। তবে ২০০৪ সালে ফরহা খানের বিয়ের অনুষ্ঠানে পুরনো বিবাদ মিটিয়ে নেন দুই তারকাই।
০৬২০
সলমনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে শাহরুখের সঙ্গে চুটিয়ে কাজ করেন ঐশ্বর্যা। ‘দেবদাস’ ছবির পরে তাঁদের জুটি ছিল সুপারহিট। এ সময় শাহরুখ নিজেও ছিলেন কেরিয়ারের শীর্ষে। অন্য দিকে একের পর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় সলমন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন।
০৭২০
তবে ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ্যে না এনে কাজ করে যাচ্ছিলেন সলমন। শাহরুখের সঙ্গে সৌজন্যও বজায় ছিল। দু’জনে একে অন্যের ছবিতে ক্যামিয়ো ভূমিকাতেও অভিনয় করেন।
০৮২০
ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে সলমন আঁকড়ে ধরেন ক্যাটরিনাকে। বলিউডে পরিচিতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অনেক সাহায্য করেছিলেন ক্যাটকে। ২০০৮ সালে ‘নমস্তে লন্ডন’, ‘সিং ইজ কিং’, ‘ওয়েলকাম’ ‘পার্টনার’-সহ ক্যাটরিনার বেশ কিছু ছবি পর পর হিট হয় বক্স অফিসে।
০৯২০
ক্যাটরিনার সে বছরের জন্মদিন স্মরণীয় করে রাখতে ১৬ জুলাই বান্দ্রার এক রেস্তরাঁয় জমকালো পার্টির আয়োজন করেন সলমন। তাঁর আমন্ত্রণে হাজির ছিলেন টিনসেল টাউনের বহু তারকা। পার্টিতে শাহরুখের পৌঁছতে বেশ কিছুটা দেরি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে জানান, তত ক্ষণে সলমন নেশায় বুঁদ।
১০২০
ইন্ডাস্ট্রির অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, পার্টিতে ঢুকেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রসিকতা করতে থাকেন শাহরুখ। কিন্তু সে সময় তাঁর রসিকতা মোটেও ভাল ভাবে নেননি সলমন।
১১২০
পার্টিতে শাহরুখকে একটি ছবির পরিকল্পনাও জানান সলমন। সলমনই সেই ছবি তৈরি করবেন বলে ভেবেছিলেন। তিনি সেখানে শাহরুখকে অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় কাজের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শাহরুখ সেই প্রস্তাব শোনামাত্রই ফিরিয়ে দেন।
১২২০
তাঁর এই প্রত্যাখ্যান ভাল লাগেনি সলমনের। কারণ শাহরুখ যত বার বলেছেন তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে অভিনয় করেছেন। শোনা যায়, এর পর শাহরুখের রিয়্যালিটি শো ‘ক্যয়া আপ পাঁচভি পাস সে তেজ হ্যায়?’ নিয়ে রসিকতা শুরু করেন সলমন।
১৩২০
শাহরুখের সঞ্চালনায় সেই শো ছিল ব্যর্থ। টিআরপি-ও ভাল ছিল না। সেই সূত্র ধরে সলমন বলতে থাকেন যে শাহরুখ টেলিভিশনে ব্যর্থ। অন্য দিকে তাঁর ‘দশ কা দম’ অনেক বেশি সফল। দুই তারকার জবাব এবং পাল্টা জবাবে পরিস্থিতি ক্রমেই গরম হতে থাকে।
১৪২০
বাক বিতণ্ডার মধ্যেই শাহরুখ নাকি নাম না করে পরোক্ষে ঐশ্বর্যার প্রসঙ্গ তোলেন। প্রাক্তনকে নিয়ে সরাসরি ইঙ্গিতে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি সলমন। অভিযোগ, পার্টিতে সবার সামনেই তিনি শাহরুখের কলার চেপে ধরেন। স্থান-কাল-পাত্র ভুলে দুই তারকার মধ্যে নাকি হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায়।
১৫২০
সে সময় গৌরী খান, ক্যাটরিনা কইফ এবং আমির খান চেষ্টা করেও তাঁদের নিরস্ত করতে পারেননি। দুই তারকার বিবাদের খবর হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে বান্দ্রার ওই রেস্তরাঁর সামনে সংবাদ মাধ্যমের ভিড় জমে যায়। ক্যামেরায় ধরাও পড়ে গৌরীকে নিয়ে পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন বিধ্বস্ত শাহরুখ। অন্য দিকে সলমনের পাশে বসে গাড়িতে কাঁদছেন ক্যাটরিনা!
১৬২০
ঝগড়ার পরে বলিউড কার্যত দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। করিনা কপূর, সইফ আলি খান, অক্ষয়কুমারের মতো তারকারা ছিলেন সলমনের পাশে। আবার কর্ণ জোহর, যশ চোপড়া, জাভেদ আখতাররা ঝুঁকেছিলেন শাহরুখের দিকে।
১৭২০
এর পর শাহরুখকে উদ্দেশ করে একাধিক তির্যক মন্তব্য করেছেন সলমন। তবে শাহরুখ সে পথে যাননি। তিনি বরং কর্ণ জোহরের শো-এ এসে এই প্রসঙ্গে নিজের দোষ স্বীকার করেন। প্রকাশ্যে ক্ষমাও চান। তবে তাঁর কথায় সলমনের মন ভেজেনি। তিনি উল্টে বলেন, শাহরুখ এ সব প্রচার পেতে করছেন।
১৮২০
এর পর দীর্ঘ দিন শাহরুখ-সলমন একে অন্যকে এড়িয়ে যেতেন। শেষে ২০১৩ সালে তাঁরা মুখোমুখি হন বাবা সিদ্দিকির দেওয়া ইফতার পার্টিতে। ৫ বছর পরে একই ফ্রেমে ধরা দেন বিবদমান দুই তারকা। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন। সলমনের বাবা সেলিম খানের সঙ্গেও কথা বলেন শাহরুখ।
১৯২০
২০১৪ সালে সলমনের বোন অর্পিতার বিয়েতেও শাহরুখ-সলমনের ছবি ভাইরাল হয়। দু’জনের হৃদ্যতাপূর্ণ শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দেয় এ বার তাঁরা ঝগড়া মিটিয়ে নিতে চান। ধীরে ধীরে তাঁদের সম্পর্ক সহজ হয়ে ওঠে। সলমনের ছবি ‘টিউবলাইট’-এ শাহরুখ এবং শাহরুখের ছবি ‘জিরো’-তে সলমন ক্যামিয়ো ভূমিকায় অভিনয় করেন।
২০২০
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, এই সৌজন্য শুধুমাত্র পেশাদারি ক্ষেত্রে। দুই তারকার মধ্যে নয়ের দশকের সুসম্পর্ক ফিরে আসেনি। যখন ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগত শাহরুখের অভিভাবক ছিলেন সেলিম খান। তাঁদের বাড়িতেও নাকি কিছু দিন ছিলেন শাহরুখ। সেই সুসম্পর্ক ধরা পড়েছিল ‘করণ অর্জুন’ এবং পরে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর অনস্ক্রিন রসায়নেও। এত দিন পর সেই অবস্থানে ফিরে যাওয়া নাকি দু’জনের ক্ষেত্রেই কার্যত অসম্ভব।