Kishore Kumar Healed Leena Chandavarkar to Forget Great Bereavement in Her Life dgtl
bollywood
মধুচন্দ্রিমার দিনই গুলিবিদ্ধ প্রথম স্বামী, ২১ বছরের বড় কিশোর কুমারই ছিলেন নায়িকা লীনার সঙ্গী
কিশোরও কার্পণ্য করতেন না লীনার ঠোঁটের কোণে হাসি আনতে। তাঁর ফোন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন লীনা। একদিন হাসিঠাট্টার মধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার ভঙ্গিতে কিশোর বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ১০:১৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
বিয়ের মাত্র ১১ মাসের মধ্যে হারিয়েছিলেন প্রথম স্বামীকে। দ্বিতীয় বিয়ের পরও দাম্পত্যের স্বাদ পেলেন মাত্র সাত বছর। জীবনের দুঃসময়ে আঁকড়ে ধরেছেন খড়কুটোকেই। তার পরেও জীবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই অতীতের নায়িকা লীনা চন্দভরকরের।
০২১৯
কোঙ্কনি সেনা আধিকারিকের পরিবারে লীনার জন্ম কর্নাটকে, ১৯৫০ সালের অগস্টে। অল্প বয়স থেকেই শুরু করেন মডেলিং। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার মূল পর্বে পৌঁছন। তার পরই পা রাখেন সিনেমায়।
০৩১৯
প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ সুনীল দত্তের হাত ধরে। ১৯৬৮ সালে তাঁর প্রথম ছবির নাম ছিল ‘মন কা মিত’। সুনীলের স্ত্রী নার্গিস প্রায় হাতে ধরে লীনাকে শিখিয়েছিলেন নায়িকা হয়ে ওঠার খুঁটিনাটি।
০৪১৯
১৯৬৯ থেকে ১৯৭৯ সাল অবধি, এক দশক ধরে বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন লীনা। কাজ করেছেন প্রায় সব প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পেয়েছিল রাজেশ খন্না-লীনার ছবি ‘মেহবুব কি মেহন্দি’। দিলীপকুমার-সায়রাবানুর সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছিলেন ‘বৈরাগ’ ছবিতে।
০৫১৯
লীনার ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য হল ‘সাস ভি কভি বহু থি’, ‘প্রীতম’, ‘দিল কা রাজা’, ‘আনহোনি’, ‘বিদাই’, ‘চোর চোর’ এবং ‘সরফরোশ’। ১৯৮৯ সালে তিনি শেষ অভিনয় করেন ছবিতে। তার পর তাঁকে দেখা গিয়েছে রিয়্যালিটি শো-এ।
০৬১৯
পেশাগত জীবনে পরিচিতির পাশাপাশি একইসময়ে ব্যক্তিগত জীবনে এসেছে শোকের ছায়া। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে গোয়ার নামী রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে সিদ্ধার্থ বান্ডোডকরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল লীনার। বিয়ের ১১ দিন পরে তাঁদের মধুচন্দ্রিমায় যাওয়ার কথা ছিল। সে দিনই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
০৭১৯
নিজের বন্দুক পরিষ্কার করছিলেন সিদ্ধার্থ। তখনই আচমকা গুলি লেগে যায় তাঁর পেটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। কয়েক মাস পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িও যান। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ আর হতে পারেননি। প্রায় ১১ মাস যুদ্ধের পরে হার মানেন চিকিৎসকরা। ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে প্রয়াত হন সিদ্ধার্থ।
০৮১৯
এই শোকের ধাক্কায় মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন ছাব্বিশের তরুণী, লীনা। তিনি ফিরে যান বাবা মায়ের কাছে। কিন্তু সেখানেও শান্তি পাননি। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী সবার কাছে তিনি তখন ‘অশুভ’। দিন কয়েকের মধ্যেই নামের পাশে বসল ‘মাঙ্গলিক’ পরিচয়।
০৯১৯
মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য লীনা ঠিক করলেন আবার কাজ করবেন। ফিরলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। একটু একটু করে অভিনয় করতে শুরু করলেন। এ রকম সময়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হল কিশোরকুমারের। ক্রমে আলাপ গভীর হল। এক সাক্ষাৎকারে লীনা পরে জানিয়েছিলেন, তখন কিশোরকুমারের সঙ্গে কথা বললে মনে হত শোকের ক্ষত কিছুটা প্রশমিত হল।
১০১৯
কিশোরও কার্পণ্য করতেন না লীনার ঠোঁটের কোণে হাসি আনতে। তাঁর ফোন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেন লীনা। একদিন হাসিঠাট্টার মধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার ভঙ্গিতে কিশোর বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।
১১১৯
লীনার মতামত জানার আগেই বেঁকে বসলেন তাঁর বাবা-মা। একে তো কিশোরকুমার বয়সে লীনার থেকে ২১ বছরের বড়। তার উপর আগে তিন বার বিয়ে করেছেন তিনি। এমন পাত্রের সঙ্গে কি মেয়ের বিয়েতে মত দেওয়া যায়?
১২১৯
শেষে তাঁদের মন জয় করতে অবতীর্ণ হলেন কিশোরকুমার স্বয়ং। লীনার বাড়িতে এসে তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে কথা নয়, সরাসরি গান শোনাতে লাগলেন। এখনও লীনার মনে পড়ে, বাড়ির সবাই যত ক্ষণ না মত দিয়েছিলেন, কিশোর গান শুনিয়ে গিয়েছিলেন।
১৩১৯
কিন্তু পরিবারের সবার মত পাওয়ার পরেও বিয়েতে বিলম্ব। তখনও কিশোরকুমারের সঙ্গে তাঁর তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালির খাতায়কলমে ডিভোর্স হয়নি। যোগিতার সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পরে কিশোরকুমার বিয়ে করেন লীনাকে, ১৯৮০ সালে। দু’বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের একমাত্র ছেলে সুমিতের।
১৪১৯
কিশোরকুমারের সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল ১৯৮৭ সালের, দীপাবলির কাছাকাছি একদিন। তার আগেও দীপাবলিতে অন্ধকার হয়েছে লীনার জীবন। এক দীপাবলিতে আত্মঘাতী হয়েছিলেন তাঁর ভাই। সুমিতের জন্মের পরেই দীপাবলিতে চিরতরে চলে গিয়েছিলেন লীনার মা।
১৫১৯
জীবন যেন বার বার দীপাবলিকেই বেছে নিয়েছে লীনার জীবনকে আঁধারে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য। দিনটা ছিল ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর। সকাল থেকেই কিশোরকুমার বলছিলেন, তাঁর দুর্বল লাগছে। উদ্বিগ্ন লীনা ডাক্তারকে খবর দিতে চান। এর পরেও মজা করে কিশোরকুমার বলেন, “তুমি যদি ডাক্তারকে খবর দাও, আমার কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হবে!”
১৬১৯
এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। এর পর বিছানায় শুয়ে পড়েন তিনি। তখনও লীনা ভেবেছেন, কিশোর বোধহয় মজা করছেন। যেমন তিনি সবসময় করতেন। ভুল ভাঙল কিছু ক্ষণের মধ্যেই। লীনা বুঝলেন, তিনি আরও একবার নির্বান্ধব হলেন। তখন ছেলে সুমিতের বয়স মাত্র পাঁচ বছর।
১৭১৯
জীবনের এই কঠিন পরীক্ষার সময় লীনার পাশে ছিলেন অমিতকুমার। তিনি-ই ছায়ার মতো আগলে রেখেছিলেন ভাই, সুমিতকে। বৈমাত্রেয় নয়, তাঁদের দু’জনের বন্ধন হার মানিয়ে দেয় নিজের ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কের টানকেও।
১৮১৯
স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে অমিত থাকেন লীনা এবং ভাই সুমিতের সঙ্গেই। দুই ছেলেকে নিয়ে লীনার এখন ভরপুর সংসার। তাঁদের বন্ধন বলিউডের অনেকের কাছেই ঈর্ষণীয়। অমিতের মা, প্রয়াত রুমা গুহঠাকুরতাকেও অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন লীনা। স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী রুমার সঙ্গে লীনার সম্পর্কের মাঝে আসেনি তিক্ততার রেশ।
১৯১৯
লীনা মনে করেন, জীবন যে ভাবে এসেছে, সে ভাবে তার মুখোমুখি হওয়ার নামই বেঁচে থাকা। কিশোরকুমার তাঁকে বলতেন, ভালবাসার কথা মুখে বলে বোঝানো যায় না, বরং সেটা উপলব্ধি করতে হয়। এই অনুভবটুকু দিয়েই বন্ধুর জীবনকে মসৃণ করে নিয়েছেন লীনা।