Ditipriya Roy, the iconic Rani Rashmoni of Bengali serial loves to spend time with books dgtl
Ditipriya Roy
সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে বেশি পছন্দ গল্পের বই, ইমেজ বদলে নায়িকা হতে লুক বদলাচ্ছেন ‘রানিমা’
পর্দার রানি রাসমণি এবং বাস্তবের দিতিপ্রিয়া রায় চলেন হাত ধরাধরি করে।
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতাশেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
শৈশবেই হাতেখড়ি অভিনয়ে। এখন পড়ার বইয়ের সঙ্গেই সহবাস ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যের। উচ্চমাধ্যমিকে ৮২ শতাংশ নম্বর পাওয়ার প্রথম সেলিব্রেশন ছিল বাবা মায়ের সঙ্গে বাবুঘাটে সন্ধ্যা নামতে দেখা। পর্দার রানি রাসমণি এবং বাস্তবের দিতিপ্রিয়া রায় চলেন হাত ধরাধরি করে।
০২২৩
প্রথম অভিনয়ের সুযোগ আড়াই বছর বয়সে। বাবার অনুমতিতে সেই প্রথম ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়া। এই বয়স থেকেই মেয়ের পুরোদস্তুর অভিনয়ে চলে যাওয়া, চাননি বাবা অলোকশঙ্কর রায়। কিন্তু বিধাতাপুরুষের লিখে দেওয়া জীবনের চিত্রনাট্য পরিবর্তন করা যায়নি।
০৩২৩
‘এই ঘর এই সংসার’ ধারাবাহিক থেকে তিনি ডাক পেলেন দেবাংশু সেনগুপ্তের ‘মা’ ধারাবাহিকে। আজকের রানিমা তখন ‘আয়েষা’ চরিত্রে জনপ্রিয়। পাঠভবন স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে অভিনয়। এক সময়ে সপ্তাহে দু’দিন স্কুলে যেতেন। বাকি দিনগুলো শ্যুটিং।
০৪২৩
শ্যুটের মাঝেই সিনেমা দেখা, আড্ডা দেওয়া, ব্যাডমিন্টন খেলা চলে স্টুডিয়ো পাড়ায়। স্টুডিয়োটাই তাঁর ঘর বাড়ি। সংসারের বর্ধিত প্রশাখা। পরে ‘দুর্গা’ ধারাবাহিকে কাজ করতে গিয়েই প্রিয় ‘গোগো’ ওরফে আজকের 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি' ধারাবাহিকের মথুরবাবুর (গৌরব চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে আলাপ হয় দিতিপ্রিয়ার।
০৫২৩
ধারাবাহিক থেকে ছবিতে ডাক। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজকাহিনি’, অনুরাগ বসুর টেলিভিশন সিরিজ ‘স্টোরিজ বাই রবীন্দ্রনাথ ট্যাগোর’-এ অভিনয় করেছেন তিনি। মাধ্যম যা-ই হোক না কেন, তাঁর বিচরণ সহজাত। এর পরেই ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’।
০৬২৩
সাড়ে ৩ বছর ধরে চলছে ধারাবাহিক, 'করুণাময়ী রাণী রাসমণি'। অসাধারণ অভিনয়ে এক নম্বরে পৌঁছে দিয়েছেন ধারাবাহিককে। ধারাবাহিকে তাঁর মেয়েরা তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। কিন্তু দিতিপ্রিয়া রায়ের জাদুময় উপস্থিতিতে মুগ্ধ গ্লোবাল বাঙালি।
০৭২৩
আগে বাংলা টেলিপর্দায় আর কোনও নাবালিকা অভিনেত্রীকে ত্রিশোর্ধ্ব মায়ের চরিত্রে এত সফল ভাবে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। রানির চরিত্রে দিতিপ্রিয়া রায় বাংলা ধারাবাহিকের দুনিয়ায় নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক।
০৮২৩
প্রথমে কেউ ভাবেননি, এই ধারাবাহিক ৩ বছরের বেশি চলবে। প্রথম স্লটে সন্ধে সাড়ে ৬টায় রাসমণিকে রাখাও হয়নি। ভাবেননি কেউ, রাসমণির সব বয়সের চেহারাতেই দিতিপ্রিয়া থাকবেন।
০৯২৩
দিতিপ্রিয়া জানিয়েছেন, তাঁকে বলা হয়েছিল মাস তিনেক তিনি এই ধারাবাহিকে অভিনয় করবেন। কিন্তু দর্শকের দাবিতে দিতিপ্রিয়ার সব বয়সের রানিমা। বিধবা হওয়ার পরেও চ্যানেল যে আর রানি বদল করবে না, তা নিজেই টের পেয়েছিলেন ‘রানিমা’।
১০২৩
অক্ষরজ্ঞানহীন রাসমণির উত্থান আর লড়াইকে দর্শক নিজের জয় হিসেবেই দেখেছেন। চ্যানেল প্রচুর টাকা খরচ করেছে এই ধারাবাহিকে। আর রাসমণির জীবনীকার থেকে আর্কাইভাল যা তথ্য পাওয়া যায় তার মাধ্যমেই ইতিহাসের রাসমণিকে চিন্ময়ী রূপ দিয়েছেন দিতিপ্রিয়া।
১১২৩
রাসমণি নিয়ে ধারাবাহিক যদিও এই প্রথম নয়। ‘রাজেশ্বরী’ ধারাবাহিকে রাসমণি হিসেবে অনুরাধা রায় যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিলেন। কিন্তু দিতিপ্রিয়ার কাছে ফিকে হয়ে গিয়েছে অতীতের সব রেকর্ড।
১২২৩
ব্যক্তিজীবনের মেগা কনটেন্ট আর ইতিহাস, দুটো এসে মিশেছে রানিমার অভিনয়ে। তাই তাঁর এত প্রতিপত্তি। রানি রাসমণির সব বয়সের চরিত্রেই দিতিপ্রিয়াকে সাদরে গ্রহণ করেছেন দর্শক।
১৩২৩
রাসমণির যোগিনী হওয়ার পর্বে দিতিপ্রিয়ার জনপ্রিয়তা যেন আরও বেড়েছে। এক মেয়ের জীবনে দাম্পত্য, একার সংসার, জমিদারি চালনা, অধ্যাত্মবাদ সব জুড়ে আছে। এত বৈচিত্রই রাসমণির তুমুল জনপ্রিয়তার কারণ। জানবাজারে রাসমণির বর্তমান পরিবার দিতিপ্রিয়াকে সাদরে গ্রহণ করেছে।
১৪২৩
একদিকে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে অবিরাম ট্রোলিং। ‘রক্কে করো রগুবীর’ মিমে ছয়লাপ সোশ্যাল মিডিয়া। তাতে দিতিপ্রিয়ার হেলদোল নেই। তিনি মনে করেন তাঁর হেটাররা তাঁকে আরও জনপ্রিয় করেছে।
১৫২৩
নীরবে কাজ করে যাওয়াই দিতিপ্রিয়ার অমোঘ উত্তর হেটারদের। সেই ধারাতেই তিনি এ বার প্রথম বার অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বড় পর্দায়। ‘কহানি’-র পরিচালক সুজয় ঘোষের কন্যা দিয়া অন্নপূর্ণা ঘোষের ছবি ‘বব বিশ্বাস’। সেই ছবিতেই এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘রানি রাসমণি’। বব বিশ্বাসের মেয়ের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে।
১৬২৩
স্বভাব লাজুক দিতিপ্রিয়া কিন্তু পর্দার বাইরেও প্রয়োজনে রানি রাসমণি হয়ে ওঠেন। ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যান প্রত্যন্ত গ্রামে। লকডাউনের সময় সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা, জটলা দেখে তিনি সরাসরি প্রতিবাদ করে প্রতিবেশীদের একটি অংশের কদর্য ভাষার শিকার হন।
১৭২৩
সিরিয়াল পাড়ায় কাজ করলেও এক সময় খুব চুপচাপ থাকতেন তিনি। সংলাপ ছাড়া মুখ খুলতেন না। পাঠভবনের সাহিত্য সভা, বাইশে শ্রাবণ তাঁর বড় প্রিয়। সরস্বতী পুজো নয়, মাঘোৎসব দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা দিতিপ্রিয়া 'রানিমা'-র পরে কোনও ব্রাহ্ম মহিলার চরিত্রে অভিনয় করতে চান।
১৮২৩
‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ এর মতো শোতেও কোনও জমকালো পোশাক নয়, সাদা কালো শাড়ি আর ফুলহাতা কালো ব্লাউজে তিনি উপস্থিত। শ্যুটিং আর পড়াশোনা ছাড়া রঙের দুনিয়ায় ডুবে থাকেন রাসমণি।
১৯২৩
মা বাবা চান তাঁদের অভিনেত্রী কন্যা বন্ধুদের সঙ্গে হ্যাং আউট করুন। কিন্তু মেয়ের সে দিকে মন নেই। পোষ্য পপকর্ণের সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি ভালবাসেন তিনি।
২০২৩
বন্ধু, হুল্লোড় আর ইনস্টাগ্রামের চেয়ে বই তাঁর প্রিয়। লকডাউনে খালেদ হুসেইনির উপন্যাস ‘দ্য কাইট রানার’ পড়ে তিনি জেনেছেন আমিরের কথা। এই লেখা পড়তে পড়তে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন বালক আমিরের সুখ-দুঃখের সঙ্গে।
২১২৩
সম্প্রতি নিজের চেহারায় বদল এনেছেন। চুল ছোট করে কাটা। রানিমা থেকে সরে আসার ভাবনা আছে মনে। জানেন ধারাবাহিক এক দিন শেষ হবে। এ বার এমন চরিত্র করতে চান যাতে রাশভারী ইমেজটা সম্পূর্ণ মুছে যায়।
২২২৩
টালিগঞ্জের অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন সোশিওলজি বা তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে ভবিষ্যতে পড়ার। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রের আগামী ছবি ‘অভিযাত্রিক’-এ নায়িকার ভূমিকায় তাঁকে দেখা যাবে।
২৩২৩
ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সাবেকিয়ানার মেলবন্ধনে আপাতত দিতিপ্রিয়ায় বুঁদ বাঙালির সান্ধ্যকালীন অবসর। সাংসারিক কূটকচালি থেকে টিআরপি-র চুম্বক এক প্রাচীন আখ্যানে। যে আখ্যান দেখিয়েছে গ্রাম্য কিশোরী থেকে দাপুটে কর্ত্রীতে রূপান্তর। বয়সের বেড়াজাল পেরিয়ে এই উত্তরণে চাবিকাঠি হল অভিনয় আর অভিনীত চরিত্রের প্রতি ভালবাসা। সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন বঙ্গজ বিনোদনের নতুন শীর্ষ, দিতিপ্রিয়া রায়।