Actress Mona Singh has come a long way from being in TV serial to landing Movie roles dgtl
Mona Singh
এমএমএস কাণ্ডে ভেঙে যায় দ্বিতীয় প্রেম, সিরিয়ালের স্বার্থে বহু দিন নিজেকে ‘লুকিয়ে’ রেখেছিলেন মোনা
ভিড়ের মধ্যেও স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই স্টিগমার ভয় না পেয়ে কেরিয়ারের শুরুতেই বেছে নিয়েছিলেন সাদামাটা একটি চরিত্র। তাতে রাতারাতি পাশের বাড়ির মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন মোনা সিংহ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ১৪:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
ভিড়ের মধ্যেও স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাই স্টিগমার ভয় না পেয়ে কেরিয়ারের শুরুতেই বেছে নিয়েছিলেন সাদামাটা একটি চরিত্র। তাতে রাতারাতি পাশের বাড়ির মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন মোনা সিংহ।
০২২৬
কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে যেমন সাফল্য পেয়েছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা একটা সময় ততটাই কাবু করে ফেলে তাঁকে। ভেঙে যায় একটার পর একটা সম্পর্ক। কিন্তু দর্শক কখনও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি তাঁর থেকে।
০৩২৬
১৯৮১ সালে চণ্ডীগড়ে জন্ম মোনার। কিন্তু বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ায় কখনও এক জায়গায় বেশি থাকা হয়নি। বরং ছোট থেকেই চষে বেরিয়েছেন গোটা দেশ। নাগপুরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর পুণের সেন্ট মীরা’জ কলেজ থেকে স্নাতক হন।
০৪২৬
কলেজে পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত মুম্বই আসা যাওয়া করতেন মোনা। ইচ্ছা ছিল মডেলিংয়ের। সেই সময় একাধিক বিজ্ঞাপনে মুখ দেখানোর সুযোগও পেয়ে যান তিনি। সেই সূত্রেই প্রযোজক একতা কপূরে নজরে পড়ে যান।
০৫২৬
কলম্বিয়ার জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ইয়ো সোয় বেটি, লা ফি’-র অনুকরণে সেইসময় হিন্দিতে ‘জস্সি জ্যায়সি কোয়ি নহি’ সিরিয়াল তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন একতা। সিরিয়ালের নায়িকা জস্সি ওয়ালিয়ার চরিত্রের জন্য অডিশন দেন মোনা এবং তাতে ভাল ভাবেই উতরে যান।
০৬২৬
কিন্তু অডিশনে উতরে গেলেও, তাঁকে একাধিক অদ্ভুত শর্ত দেন একতা। সিরিয়ালে জস্সির চরিত্রটি সাদামাটা একটি মেয়ের। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, দাঁতে ব্রেশ, ছাপা চুড়িদার— এই-ই জস্সির সাজগোজ। দর্শক যাতে মোনাকে সে ভাবেই গ্রহণ করেন, তার জন্য মোনার সামনে এই সব শর্ত রাখেন একতা।
০৭২৬
বলা হয়, সিরিয়ালে জস্সিকে যেমন দেখতে, সে ভাবেই থাকতে হবে মোনাকে। আসলে তিনি কেমন দেখতে, তা কোথাও প্রকাশ পাওয়া চলবে না। সিরিয়ালে তাঁর আসল চেহারা প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত, সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে হাজির হতে পারবেন না তিনি। কোথাও তাঁর কোনও ছবি প্রকাশ পাওয়া চলবে না।
০৮২৬
জস্সির চরিত্রটি দারুণ পছন্দ হয়েছিল মোনার। তাই একতার সেই শর্ত মেনে নেন তিনি। সেই মতো ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিরিয়াল শুরু হয়। সেই সময় চারিদিকে ‘সাঁস-বহু’ মার্কা সিরিয়ালের ছড়াছড়ি। তার মধ্যে ‘জস্সি জ্যায়সি কোয়ি নহি’ ছিল তাজা হাওয়ার মতো।
০৯২৬
অল্প দিনের মধ্যেই সিরিয়ালটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জস্সির চরিত্রে মোনাকে পছন্দ হয় দর্শকের। কিন্তু বাস্তবে মোনাকে কেমন দেখতে তখনও পর্যন্ত কেউ আঁচ করতে পারেননি। বরং সিরিয়ালের গল্প অনুযায়ী মোনার আসল চেহারা যখন সামনে আসে, তখন সকলেই অবাক হয়ে যান।
১০২৬
২০০৬ সালের ৪ মে পর্যন্ত সিরিয়ালটি চলেছিল। সেই সময়ও টিআরপি-র দৌড়ে সকলের থেকে এগিয়ে ছিল সিরিয়ালটি। তার পরে আরও একাধিক সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ পান মোনা। কিন্তু শুধুমাত্র টিভি সিরিয়ালে নিজেকে বেঁধে রাখতে চাননি তিনি। ২০০৬ সালে নাচের রিয়ালিটি শো ‘ঝলক দিখলা জা’ জিতে নেন তিনি।
১১২৬
এর পর অ্যাওয়ার্ড ফাংশন এবং রিয়ালিটি শো সঞ্চালোনায় হাত দেন মোনা সিংহ। ‘ঝলক দিখলা জা,’ ‘এন্টারটেইনমেন্ট কে লিয়ে কুছ ভি করেগা’-র মতো অনুষ্ঠান সঞ্চালোনা করেন তিনি।
১২২৬
কিন্তু কিন্তু করলেও ২০০৮ সালে ‘রাধা কি বেটিয়াঁ কুছ কর দিখায়েগি’-তে রৌনক কপূরের চরিত্রে দেখা যায় মোনাকে। সে বছরই বড় পর্দায় তাক লাগিয়ে দেন তিনি। করিনা কপূরের দিদির চরিত্রে ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে সকলের। এর পর ‘উট পটাঙ্গ’, ‘জেড প্লাস’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করলেও, সেগুলির কোনওটিই ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর মতো সাফল্য পায়নি।
১৩২৬
তবে পেশাগত জীবন ঠিকঠাক চললেও, ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন মোনা। জস্সির সময় থেকে অভিনেতা তথা ‘ব্যান্ড অব বয়েজ’-এর সদস্য কর্ণ ওবেরয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মোনার। ‘জস্সি জ্যায়সি কোয়ি নহি’-তেও মুখ দেখিয়েছিলেন কর্ণ।
১৪২৬
সেই সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা যেত মোনা ও কর্ণকে। এমনকি লিভ-ইনও করতেন তাঁরা। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। গত বছর সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে মুখ খোলেন কর্ণ। তিনি জানান, ‘‘আমি মোনার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম। ও খুব ভাল মেয়ে। ভাল অভিনেত্রীও। তখন বয়স অল্প ছিল। ও খুব ছটফটে মেয়ে। সেই সময় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়নি। কেরিয়ারও ভাল চলছিল। তাই কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চেয়েছিল।’’
১৫২৬
তবে কর্ণের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক নিয়ে কোনওদিনই মুখ খোলেননি মোনা। গত বছর কর্ণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে, সংবাদমাধ্যমে তাঁর নাম ঘুরেফিরে উঠে আসতে শুরু করে। সেই সময়ও নীরব ছিলেন মোনা।
১৬২৬
কর্ণের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর বেশ কয়েক বছর সিঙ্গলই ছিলেন মোনা। তার পর তাঁর জীবনে আসেন বিদ্যুৎ জামওয়াল। বলিউডে তখন নিজের জায়গা তৈরি করতে মরিয়া বিদ্যুৎ। সেই সময় মোনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরে প্রচারের আলোয় চলে আসেন বিদ্যুৎ।
১৭২৬
বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও কোনওদিন মুখ খোলেননি মোনা। তবে এ নিয়ে কোনও রাখঢাক করেননি বিদ্যুৎ। সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানান, মোনার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার থেকে অভিনেতা হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় বেশি ইচ্ছুক তিনি।
১৮২৬
শোনা যায়, সম্পর্ক নিয়ে বেশ সিরিয়াসই ছিলেন মোনা। বিদ্যুৎকে বিয়ের পরিকল্পনাও করছিলেন তিনি। কিন্তু ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসেবে বিদ্যুৎ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলে, দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তাতে শেষ পেরেক হয়ে দাঁড়ায় একটি এমএমএস।
১৯২৬
২০১৩-য় ইন্টারনেটে একটি ভিডিয়ো ছড়ায়, তাতে নগ্ন অবস্থায় যে তরুণীকে দেখা যায়, তাঁকে হুবহু মোনা সিংহের মতো দেখতে। মোনা সিংহের নামেই ওই ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। কিন্তু মোনা জানান, ভিডিয়োর ওই তরুণী তিনি নন। বরং অন্য কারও শরীরে তাঁর মুখের ছবি মর্ফ করে বসানো হয়েছে।
২০২৬
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হলে ডিজিটাল এক্সপার্টরাও মোনার দাবিকেই সমর্থন করেন। পুলিশও জানায়, মোনার ছবি বিকৃত করে ভিডিয়োটি বানানো হয়েছে। যদিও কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল, আজও তা জানা যায়নি।
২১২৬
এই এমএমএস কাণ্ডের সময়ও মোনার পাশেই ছিলেন বিদ্যুৎ। এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে, এক সাংবাদিককেই ধমক দেন তিনি। সেই সময় বিদ্যুৎ বলেন, ‘‘এই ধরনের প্রশ্ন করে আপনারাই বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। আপনারাই এ সব দেখেন এবং তা নিয়ে কথাও বলেন। এই ধরনের অশ্লীলতা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’’
২২২৬
তবে এই এমএমএসই মোনা ও বিদ্যুতের সম্পর্কে ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শোনা যায়, বলিউডে নিজের পরিচিতি গড়তে তখন মরিয়া বিদ্যুৎ। সেই অবস্থায় মোনার এই এমএমএস কাণ্ডে কোনও ভাবেই নিজেকে জড়াতে চাননি তিনি। এতে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন বিদ্যুৎ। সেই কারণেই দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে এমএমএস কাণ্ড সামনে আসার ঢের আগে থেকেই তাঁদের সম্পর্কের তাল কাটতে শুরু করেছিল বলেও দাবি করেন কেউ কেউ।
২৩২৬
বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পর ফের কাজে মনোনিবেশ করেন মোনা। ‘ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা’ সিরিয়ালের মাধ্যমে টেলিভিশনে ফেরেন তিনি। তার পর একে একে ‘ইতনা করো না মুঝে প্যায়ার,’ ‘প্যায়ার কো হো জানে দো,’ ‘কবচ...কালি শক্তিয়োঁ সে’-র মতো সিরিয়াল করেন তিনি।
২৪২৬
এর পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও হাত পাকাতে শুরু করেন মোনা। ২০১৮-য় ‘কেহনে কো হমসফর হ্যায়,’ ‘ইয়ে মেরি ফ্যামিলি’ এবং ২০১৯-এ ‘এমওএম- মিশন ওভার মার্স’-এ মুখ্য ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে।
২৫২৬
তবে কাজে ফিরলেও, যে একতা কপূরের হাত ধরে তাঁর বলিউডে আসা, গত কয়েক বছরে মোনার সঙ্গে একতার সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। পার্টি হোক বা বাড়ির পুজো, আগে একতা কপূরের বাড়িতে প্রায়শই দেখা যেত মোনা সিংহকে। ক্লাবে, রেস্তরাঁয় এক সঙ্গে আড্ডা দিতেও যেতেন তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একে অপরকে আনফলো করেন তাঁরা। বালাজির প্রযোজনায় তৈরি ‘এমওএম- মিশন ওভার মার্স’-এর প্রচারেও অংশ নেননি মোনা। কিন্তু তাঁদের মনোমালিন্যের কারণ এখনও জানা যায়নি।
২৬২৬
গত বছর ডিসেম্বরে ব্যাঙ্কার শ্যাম রাজগোপালনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোনা। এই মুহূর্তে সংসার নিয়েই ব্যস্ত তিনি। পাশাপাশি অভিনয়ও চালিয়ে যাচ্ছেন। শোনা যাচ্ছে, আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডায়’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে।